Shes Thikana Tumi
Riya Singh { Part 2 }
হ্যালো, অরি আমি ডক্টর আঙ্কেল বলছি ।ব্যস্ত আছো? (ডক্টর)
নানা আঙ্কেল বলুন আমি শুনছি। ( অরিন্দম)
দেখো ডক্টর বসু রাজি আছে, তুমি একবার ওনার সাথে কথা বলে নিও কেমন, নম্বরটা নোট করে রেখো ফোনে পাঠিয়েছি।আর একবার আমাকে তবু কনফার্ম করবে সবটা শুনলে বোধহয় আরো একবার ওনার পক্ষে বেশি হেল্পফুল হতো আর কি ! ( ডক্টর )
বেশ তাই হবে আঙ্কেল। আমি ফোন করে নেবো রাখছি। ( অরিন্দম)
রাখলাম তাহলে, বাকি আপডেট আমাকে দিও পরে পরে।( ডক্টর)
ডক্টরের ফোনটা রেখে, আজ আর অফিসে গেল না। যেহেতু মিস বসু আসবে। সেই কারণে হোক আজ বাড়িতে থাকার কথা ভেবেই অফিসে জানিয়ে দিলো আজ ও যাচ্ছে না ।
সাহেব আজ বাড়ী থাকবেন ঠিক করসেন,তাহলে সকালের খাবার খেতে বসবেন কি? ( রামু কাকা)
আমি আজ অনুর সাথে ই খাবো কাকা, জানো আমাদের অনুর জন্য ডক্টর অ্যাপয়েন্ট করেছি উনি আজ আসবে ।তুমি একটু পরেই না হয় খাবার রেডি করবে। আমি অনু কে ডাকি আগে।
এবার হয়তো আমাদের ছোট মামণি ভালো হয়ে যাবে, যাই যাই আমার কাছে যাই ( রামু কাকা)
রামু বিচে যেতে বলে নিজের রুম থেকে বেরিয়ে অরিন্দম অনুর রুমে গেল। অনুও তখন ঘুমিয়ে, আস্তে করে ওকে ডেকে ফ্রেশ করতে পাঠিয়ে একেবারে খাওয়ার টেবিলে বসালো। যেহেতু ওর মেন্টাল হেলথ কন্ডিশন ভালো নয় ,ভিতরে থেকে অনেকটা শকে আছে তাই সেরকম কথাবার্তা না বললেও দাদার কথামতো খেয়ে নেয়। কলিংবেল বেজে উঠলে দরজার ওপারে মানুষ টাকে দেখে অরিন্দম চিনতে পারলো, উনিই অনুর সাইকোলজিস্ট মিস অয়ন্তিকা বসু। দেখে তো অনুর থেকে একটু বড় মনে হলো। সবকিছু ঠিকঠাক মনে হলো। অনু কে ওর ঘরে পাঠিয়ে ও অয়ন্তিকা কে ডাইনিং হলের সোফাতে বসতে বলে রামু কাকাকে কিছু খাওয়ার ব্যবস্থা করতে বললো।
নমস্কার আমি অয়ন্তিকা বসু, রাজীব আঙ্কেল আমাকে আপনার কথা বলেছেন। কিছুটা ডিটেলস আমার একজন পেশেন্ট এর ব্যাপারে দরকার থাকলে উনি আমাকে প্রায় পুরোটাই বলেছেন। ( অয়ন্তিকা)
অরিন্দমের আঙ্কেলের কথামতো কমবয়সী হলেও আচরণে বরং অনেকটাই বড়দের বুদ্ধি সুলভ,আর কথাবার্তার মধ্যে মিষ্টি হাসি বিশেষ হাসলে গালের টোল দুটোর সাথে চোখের ও হেসে ওঠা বেশি ইউনিক। ওনার উপস্থিতি চারদিকের গুমোট ভাবটা কিভাবে ম্লান করে দেয়। এরকম ডক্টর দেখে এমনিতেই পজিটিভ ভাইভ চলে আসবে , সেখানে পেশেন্ট এর সুস্থ হয়ে ওঠা স্বাভাবিক ব্যাপার বলেই মনে হয়।
পোশাকি শালীনতা আর মার্জিত ব্যবহার যেন অয়ন্তিকাকে আরো সুন্দর না ঠিক মায়াবী করে তুলেছে।
শুনছেন, আপনি কোথায় হারিয়ে গেলেন? (অয়ন্তিকা)
অয়ন্তিকার স্বর কানে যেতেই অরিন্দম বাস্তবে ফিরে এলো, ঘোর কাটিয়ে উঠে নিজের গাম্ভীর্য বজায় রেখে বলে উঠলো,
আঙ্কেল এর থেকে যখন সবটা শুনেই নিয়েছেন, আশা করি বুঝতে আপনার কোন অসুবিধা নেই। আর সত্যি বলতে সেই দিনে আমি উপস্থিত ও ছিলাম না বিসনেসের কাজে বাইরে, এমার্জেন্সি এসব শুনে ফিরে এসে দেখি সবটা।গোপনে আমি ইনভেস্টিগেশন চালিয়ে যাচ্ছি। তাছাড়া আমি চাই আপনি এই কাজটা খুব যত্ন করে করুন বোন ছাড়া আমার আপন কেউ নেই, যেহেতু অনেকটা স্পেশাল তাই আপনি এই বাড়িতে থেকেই এই ট্রিটমেন্ট গুলো করুন।
অয়ন্তিকা এই কথার উত্তরে একটাই কথা বললো,
মিস্টার স্যানাল সবকিছু আগে থেকেই একাই ঠিক করার পুরনো অভ্যাস আছে নাকি! থাকলে একটু বদলে নিন। সবকিছু জিনিস দুতরফে আলোচনা করে ঠিক করতে হয় একা একা সব ভাবলে চলে না।
কাজটাকে আপনি শুধু কাজ হিসেবে ভেবে দেখলে আপনাকে প্রয়োজন নেই আমার। অন্য কাউকে খুঁজে নেবো।আপনি আস্তে পারেন ( অরিন্দম)
অন্য কারোর প্রয়োজন হলে আপনি আঙ্কেলের কথা শুনতেন না আমি ও জানি আপনিও জানেন আপনার বোনের ঠিক করতে আমাকেই জরুরি । তাহলে বেকার বেকার এতো তর্ক কিসের? (অয়ন্তিকা)
আমি মনে মনে আপনি আসতে পারেন আপনাকে আমার দরকার নেই। মনে হলেও বা আপনার এত ইন্টারেস্ট কেন এত সহজে রাজি হয়ে গেলেন। (অরিন্দম)
প্রথমত আমি ওনাকে অনেক সম্মান করি পার্সোনাল ভাবে রিকোয়েস্ট করেছেন,সেই হিসেবে আমি এসেছি আর আমার মনে হয় মলেস্টেশন বা রেপ ভিকটিম রা কোনদিন দোষী হয়না,এই অপরাধ গুলো ওদের সাথে অন্যায়ভাবে করা হয়েছে আমার জন্য কেউ যদি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে তাতে আখেরে আমার মনের স্যাটিসফেকশন ব্যস ।(অয়ন্তিকা)
শুধু কেস না দেখে আপন ভেবে সবটা দেখলে আমি খুশি হবো (অরিন্দম)
চেষ্টা করব যতটা সম্ভব ওর বন্ধু হতে সবথেকে বড় কথা একজন দিদি হয়ে বোন হিসেবে যতটা শক্ত করে ওকে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যায় সে চেষ্টার কোনো রকম কমতি রাখবো না আপনার যদি মনে হয় আমি এসবের যোগ্য তাহলে আপন করে নিতে পারেন আমার কোন অসুবিধা নেই। (অয়ন্তিকা)
প্রতিকার সহজ সোজাসাপ্টা কথাগুলো অরিন্দম কে আচ্ছন্ন করে দিলো ওর বলা কথাগুলো শুনে ,বেশ ভরসাযোগ্য মনে হলেও। শেষ একবার যাচাই করে নিতে মন চাইলো,
তাহলে আপনি গ্যারান্টি দিচ্ছেন আমার বোন কে আপনি সুস্থ করে তুলবেন? (অরিন্দম)
আশ্বাস দিতে পারি যে আমার চেষ্টার কোনো রকম কমতি থাকবে না। বাকিটা ভালো বুঝে আপনি যা করবেন, রাজি থাকলে ফোন করবেন তবেই আপনার বোনের সাথে দেখা করবো। এমনিতেও আমার সময় শেষ বেরোতে হবে। (অয়ন্তিকা)
আমার এখনো কথা শেষ হয়নি মিস অয়ন্তিকা বসু, আপনাকে আমি আমার বোনের জন্য অ্যাপয়েন্ট করবো। কাল থেকে তাহলে চলে আসবেন এখানে যতদিন না বোন সুস্থ হচ্ছে, আর একটা কথা কিছু রুলস আপনাকে...
অরিন্দম কে থামিয়ে অয়ন্তিকা ঘাড় নেড়ে বললো,
একটু আগে ই বললাম না মিস্টার স্যানাল একা একা সব ঠিক করা বাজে অভ্যাস। চেঞ্জ করুন জলদি। আপনি বললেই সব হয়না আমাকে দুটো দিন সময় দিতে হবে আমার ও ফ্যামিলি আছে ডক্টয বলে তো আর নিজের মতো চলতে পারিনা। তাদের জানাতে হবে রাজি হতে হবে তারপর আপনি কল করে নেবেন আমাকে। এইবার উঠি একদম সময় নেই আর থ্যাঙ্ক ইউ ফর কফি (অয়ন্তিকা)
Related Story
অয়ন্তিকা চলে যাওয়ার পরেও একভাবে অরিন্দম বসে ছিল, ওনার এই স্ট্রেট ফরোয়ার্ড কথাবার্তা বহুদিন পর বিসনেসম্যান অরিন্দম কে কেমন নাস্তানাবুদ করে ছাড়লো। স্ট্রেঞ্জ !
বিকেল সোয়া পাঁচটা
অয়ন্তিকার মুখ থেকে সম্পূর্ণ কথা শুনে ওর মা চুপ হয়ে গেছে, হাওয়া গরম দেখে অয়ন্তিকা ও কথা বাড়ালো না, বাইরে যত ই ক্যাজুয়ালি বিহেভ করুক ঘরে মা বাবার কাছে ও এখনো ছোট ই তবে রাতেই খাওয়া শেষে বাবা মায়ের চলবে ওদের ঘরে গিয়ে অয়ন্তিকা বুঝলো কোনভাবে হয়তো ওর বাবা মাকে রাজি করিয়ে ফেলেছেন।
শোনো বড় হয়েছো , সবকিছু বোঝো জানো তবুও সাবধানে থাকবেন আমাদের ফোন করবে। দেখা করতে আসবে যত তাড়াতাড়ি পারে মেয়েটাকে সুস্থ করে চলে আসবে কেমন, ( অয়ন্তিকার মা)
আহ গিন্নি... (অয়ন্তিকার বাবা)
মা রাজি হয়ে গেছে সেই আনন্দের চোটে মাকে জড়িয়ে চকাস করে চুমু খেয়ে নিলো। বাবা মুখ টিপে হাসছে দেখে ও বুঝলো মা কে নিয়ে আর চিন্তা নেই।তাই মায়ের আড়ালে বাবাকে থাম্বস আপ দেখিয়ে দিলো।
পরে বাবা অয়ন্তিকার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
জয়ী হয়ে ফিরে এসো, অনেক আশা করে একটা মানুষ ডক্টরের কাছে আসে,তার ভরসার মান রেখো সোনা মা।