Golperjogot

Golperjogot

শেষ ঠিকানা তুমি – থ্রিলার প্রেমের গল্প পর্ব 6 | Love Story

Shes Thikana Tumi

Riya Singh { Part 6 }

তুইও ও তো আমাকে কিছু লুকিয়েছিস সেটা কি অভিযোগ করেছি আমি বল দেখি! (অনু)

অনু বলা কথায় অরিন্দমের আর কিছু বলার থাকলো না এটা সত্যি যে ও লুকিয়েছে অনেক কিছুই। তাই বোনকে কিছু বললো না পাশ কাটিয়ে উঠে গেল।

কি রে বল? কথাগুলো এড়িয়ে গেলি কেন? বল না কি লুকিয়েছিস আমার থেকে? বলতে পারবি তো! (অনু)

এরপরের দিন গুলো তে অনু নিজের ফাঁকা সময়ে অয়ন্তিকার সাথে কাটাতে শুরু করলো। যদিও জানে ওর দাদার কোনকিছুই জানতে বাকি নেই তবুও…অন্যান্য দিনের মতো আজকেও নার্সিংহোমের রিসেপশনে এসে দাঁড়ালো ওখানের মেয়েটা ওকে চিনে গেছে তাই রোজকার মতো আজকে বললো একটু দাঁড়াও ম্যাডাম আসছে। তফাৎ এটাই শুরুর দিনে অ্যাপয়েনমেন্ট লাগলেও আজকে সেটা জরুরি নয়।

অয়ন্তিকার জন্য অপেক্ষা করতে করতে ওর মনে পড়লো সেইদিনের দুটো দিন পরেই এইভাবে বসে ছিল এরপর অয়ন্তিকার কাছে গেলে অয়ন্তিকা ওকে দেখে একেবারে অবাক হয়ে যায়,

 

এটা তুমি অনু! আমি সত্যি দেখছি তাই না! (অয়ন্তিকা)হ্যা ঠিক দেখছো আমি অনু অয়ন্তিকা দি, দেখো ছুঁয়ে সত্যি এসেছি তোমার কাছে। (অনু)

অয়ন্তিকার ধারণা ছিল না যে ও অনুকে সুস্থ অবস্থায় দেখতে পাবে,যেহেতু কটা দিন না হলেও একটা মাসের কাছাকাছি ছিল। সেইদিন গুলো ও চেষ্টার কমতি রাখেনি। তবুও ও খুশি অনু সুস্থ হয়ে গেছে। তাই অনুর সাথে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলার পর জিজ্ঞেস করলো মিস্টার স্যানাল এর কথা।

দাদাকে না জানিয়ে এসেছি দি কি ভাবছো? অনুর কথায় ওর হুঁশ ফিরলো।

এইসব শুনে অনুকে বললো অয়ন্তিকা,তোমার এটা করা উচিত হয়নি, যত ই হোক উনি তোমার দাদা।ওর কি উচিত হয়েছে বলো যেগুলো করেছে। তাহলে আমিও যা করছি ঠিক করছি ।(অনু)

অয়ন্তিকার মনে হলো অনু ছোট মানুষ, ওকে হয়তো সবটা না বলার জন্যে অভিমান করেছে। সেটা হয়তো মিস্টার স্যানাল তাড়াতাড়ি মিটিয়ে ফেলবে।

এরপর প্রায় দিনই অনু অয়ন্তিকার কাছে আসতো, সময় কাটতো। অয়ন্তিকার ও ওর সাথে সময়গুলো কাটাতে ভালো লাগতো ধীরে ধীরে ওরা খুব ভালো বন্ধু হয়ে উঠেছিল।

ম্যাম শুনছেন আপনাকে ডক্টর অয়ন্তিকা থাকছে ,শুনছেন.

এক নার্সের ডাকে বাস্তবে ফিরে এলো অনু, তারপর অয়ন্তিকার কেবিনে ঢুকে দেখলো। হাসিমুখে অয়ন্তিকা ওকে দেখছে। ওকে দেখে অয়ন্তিকা হঠাৎ করে বলে উঠলো,

বাড়ি থেকে ঝগড়া করে এসেছিস নাকি ?

তুমি কি করে বুঝে যাও বলোতো? হুঁ দাদার সাথে করেছি। আজ ছুটি কলেজের তোমার সাথে দেখা করবো জানে আস্তে দেবে না বলে তাই।(অনু)

ওদের সম্পর্ক টা দুটো বান্ধবীর মতো গভীর তাই অনু কে এখন তুই বলে অয়ন্তিকা। যেহেতু ও ছোট আর অয়ন্তিকা বড় তাই বলেছিল নিজের বোন হলে তো তুই ডাকতে ওটাই বলবে এবার থেকে। অয়ন্তিকা হেসে সায় দিয়েছিল তাতে।

বোস এখানে , আমি আরেকটা পেশেন্ট দেখে বেরোবো বুঝলি তুই এখানে ই থাক। ( অয়ন্তিকা)

এরপর সব পেশেন্ট দেখে দুজনে একসাথে একটা রেস্টুরেন্টে খাওয়ার পর গঙ্গার ধারে একটা জায়গা বেছে বস পড়লো। অনু তাকিয়ে থাকতে থাকতে আনমনে অয়ন্তিকা কে বললো,

আচ্ছা দি কখনো কাউকে তোমার পছন্দ হয়নি ?

অয়ন্তিকার অনুর কথা শুনে মুখের সামনে একটা মুখ আবছা ভেসে উঠলো বটে কিন্তু আবার মিলিয়ে গেল। তাই দায়সারা গোছের উত্তর দিয়ে বললো,

সব পছন্দ ভালো লাগা থেকে ভালোবাসা হবে এমন তো কোন কথা নেই। ওগুলো সময় হলে আসবে তখন ভাববো। এই মুহূর্তে না বলাই যায়।

সেরকম ইতিবাচক উত্তর না পেয়ে অনুর মন টা খচখচ করে উঠলো কিরকম অগোছালো কথাগুলো। যেন কিছুই অর্ধেক অংশ থাকার পর বাকিটা তালগোল পাকানো। তাই আরো একবার বললো,

কাউকে ভালোবাসাতে ইচ্ছে করেনি কখনো তোমার? ধরো একতরফা এরকম কিছু…

অনুর কথা অর্ধেক রেখেই অয়ন্তিকা বললো,কিছু কথা গোপন থাক, ছাড় না বাড়ি ফিরব। চল উঠি নয়তো তোর দাদা বলবে তার বোন কে লুকিয়ে রেখেছি। বিসনেসম্যান বলে কথা!

তুমিও না! তবে কথাটা কি এড়িয়ে যেতে চাইতো দি? নাকি বলতে চাও না আপন না বলে। বলো না?

অনুর কথার উত্তরে কি বলবে ভেবে পেলো না অয়ন্তিকা। ওর মনে এই গত কটা মাস কি চলছে সেটায খোঁজ ও কাউকে দিতে চাইছে না। চাপাআ ভালো তাই হেসে বললো,

না না তুই তো ছোট বোন আমার। ফিরি চল।

Related Story

বাড়ি ফিরে এসে অয়ন্তিকা বহুদিন পর ওর ডায়েরি খুলে বসলো এখানে লুকিয়ে রেখেছে ওর গোপন কিছু কথা। যার খোঁজ কারোর কাছে নেই। অরিন্দমের বাড়ি থেকে ফিরে আসার পর যে অনুভূতি গুলো দানা বেঁধে ছিল সেগুলো বহুদিন পর মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো। অনেক কষ্ট করে অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করে বারান্দার চেয়ারে গা এলিয়ে দিলো। রাতটা এইভাবে কাটুক অন্তত চোখ বন্ধ করলে যে মানুষের দেখা পায় সেটা না হলেই ভালো ওর জন্য।

অনু ও আজ অয়ন্তিকার কথায় কিরকম সন্দেহ খুঁজে পেয়েছে। আসলে কি জন্য অয়ন্তিকার এই বাড়িতে আসা পুরোপুরি স্পষ্ট নয় ওর কাছে, তবু এর সাথে ওর দাদার আরো অদ্ভুত কথাবার্তা আর অয়ন্তিকার অগোছালো ব্যবহারের যোগসূত্র তো অবশ্যই আছে। তাই এইগুলো কে মিলিয়ে কিছু ঘটনা যে ওর অসুস্থ থাকাকালীন সময়ে ঘটেছে সে নিশ্চিত ও ।আর যার জন্য ওর সুস্থতা তাকে আজীবনের জন্য নিজের বাড়িতে দাদার জীবনের মধ্যে একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসাতে চায় ও। এতে ওর একা দাদাটা সঙ্গী পাবে।

বোন হিসেবে ও চায় কেউ ওর এই বদমেজাজি দেখানো মানুষের ভিতরের নরম মানুষ কে ভালুবাসুক। এই পরিবারের মধ্যে খুশি আসুক।বাড়িটা ঝলমলে হোক। তার জন্য ওর দাদা আর অয়ন্তিকা দির একসাথে হওয়া জরুরি।

কিছু একটা ভেবে ওর মুখে হাসি ফুটে উঠল হঠাৎ করে। ওর মাথায় অনেকদিন দুষ্টু বুদ্ধি গুলো কিলবিল করেনি আজ করছে কিছু একটা….

সেইদিন অনুর সাথে কথা বলার পরেও অরিন্দম লক্ষ্য করেছে কিছু একটা জিনিস এর অভাব ওকে ভাবাচ্ছে। কিসের ও জানে না ? খালি মনে পড়ে দুটো ডাগর চোখ যেটা এই বাড়িতে অয়ন্তিকার শেষ দিন ছিল সেই দিনেই দেখেছিল তারপর থেকে ওই চোখদুটো ওকে টানে।

কিন্তু নিজেকে দমিয়ে অনুভূতি গুলো বাড়তে না দিয়ে চেষ্টা করলো না ভাবার, তবুও কেন যে বারবার ওই চোখদুটো ছলছল করছে দেখে ওর বুকের কাছে চিনচিনে ব্যথা হয়। আজ আর বোধহয় ঘুম আসবে না ওর এপাশ ওপাশ না করে ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়লো। দাদার ঘরে এতো রাতে আলো জ্বলতে দেখে ঘুম থেকে উঠে জল আনতে গিয়ে অনুর চোখে পড়তে ও গিয়ে দেখলো অরিন্দম কিছু একটা করছে।

Related Story

কি রে দাদা ঘুমোসনি? ঘুমোবি না? রাতজাগা ভালো না কিন্তু শরীরের জন্য ।(অনু)এই না আর কাজ ও ছিল করছি,তুই শুয়ে পড় গিয়ে। (অরিন্দম)কিছু লুকাচ্ছিস? নাকি নিজের থেকে আড়াল করছিস আবার?

অনুর কথার উত্তরে কি বলবে ভেবে পেলো না অরিন্দম।ওকে চুপ থাকতে দেখে অনু বললো,

যা সত্যি মানতে শেখ। অস্বীকার করলে তোর ই ক্ষতি, যত জলদি মানতে পারবি নিজেকে বুঝবি ওটাই ভালো হবে।

বোনের কথাগুলো শুনে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলো অরিন্দম, এক এক সময়ে ছোট হলেও বড়দের মতো কথাবার্তা বলে ওর বোন। কে জানে কি চলছে মনে, হয়তো বোনের কথাগুলো ঠিক আবার….

দাদার দিকে তাকিয়ে অনু বুঝলো কিছু টা সমস্যা সমাধান ও করেই ফেলেছে।

Click Here For Next :– চলবে

Writer :- Riya Singh

Leave a Comment