Shes Thikana Tumi
Riya Singh { Part 8 }
অনু ভাবলো কি করে এদের বারবার দেখা করানো যায়? দু'জনেই অনুভূতি সরিয়ে নিজেদের বোকা বানিয়ে কি পাচ্ছে কে জানে?
পরেরদিন সকালে অনু অরিন্দম কে বেরোনোর আগে জিজ্ঞেস করলো,
আমি যদি অয়ন্তিকা দি কে এখানে ডাকি আড্ডা দি তোর কি অসুবিধা হবে? সেই আমি কলেজ শেষ করে বোর হই, দি থাকলে সময় কাটবে।
ব্যস্ত মানুষ ঠিক আমার মতোই উনি, সেখানে ডাকবি তোর সাথে সময় কাটানোর জন্য এটা একটু বেশি হলো বনু, কাজের মানুষ তো দেখ কখনো কখনো করতে পারিস।
বলে অরিন্দম বেরিয়ে গেল।
অরিন্দম গাড়িতে বসে অনুর কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ওর মনে হলো,
বোন এক এক সময় উদ্ভট কিছু জেদ করে, মিস বসু কি ভাববে কে জানে? আমি কি ভিতর থেকে বারণ করে দেবো? তাহলে তো ওনার সাথে কথা বলতে হবে উফফ! কিন্তু এই ভদ্রমহিলা তো আবার আরেক এমনিই সেদিন যা হয়েছিল একটু ক্ষেপে আছে বোধহয়। এমন করে তাকায় যেন ভস্ম করে দেবে আমাকে বাবাগো থাক... কিন্তু এই অরিন্দম স্যানাল ওই পুঁচকে! পুঁচকে না হলেও ছোট তো মেয়েকে ভয় পাবে একদম না। আমাকে সময় করে কথা বলতে ই হবে।
নিজের ভাবনা গুলো থামিয়ে অফিসে গিয়ে অরিন্দম নিজের কাজে মন দিলো এদিকে অনু মোটামুটি একটা পারমিশন পেয়ে গেছে তাই ও অয়ন্তিকাকে ফোন করে বললো,
দি কবে কবে তুমি ফাঁকা থাকবে গো একটু বলো না? আর শোনো আমি তোমাকে খুব মিস করছি কিন্তু হু..
সেটা কিভাবে বলি বলতো? সিডিউল দেখে বলতে হবে তোকে? ফাঁকা হলে জানিয়ে দেবো। কিন্তু আজ আমি ঘরেই থাকছি তুই কি আসবি? আসতে পারিস তাহলে।(অয়ন্তিকা)
না থাক তুমি এসো আমি সারাদিন পড়বো না একটু আড্ডা দেবো বলে। সেই পরীক্ষা কদিন পরে কলেজ যাওয়ার ইচ্ছা ছিল না।(অনু)
আমি যাবো? তোর দাদা...(অয়ন্তিকা)
ওহ ছাড়ো তো ,ভয় পাও নাকি! তোমাকে বললাম আসবে, সেদিন তো এসেও পালিয়ে গেলে তাড়াহুড়ো করে ধুস এইবার একটু থাকবে (অনু)
আচ্ছা ঠিক আছে যাচ্ছি একটু পরে খুশি তো?(অয়ন্তিকা)
অনেক অনেক জলদি এসো।(অনু)
রামু কাকা অনু কোথায় গো? (অয়ন্তিকা)
ছোট মামনি তো ওনার ঘরে ,বললো যে তুমি আসবে তাই খাবার তৈরি করতে। তুমি যাও আমি গিয়ে দিয়ে আসছি জলখাবার (রামুকাকা)
কি রে আসবো ?
অনুর ঘরের দরজায় নক করে অয়ন্তিকা বললো,
তুমিও না দি এসো এসো তোমাকেও কি আবার নক করে আসতে হবে নাকি! (অনু)
হতেই পারে তুই যেভাবে বই ছেড়ে কি সব আকাশ পাতাল ভাবছিলিস তাই একটু জাগিয়ে তুললাম আর কি! (অয়ন্তিকা)
আজ কিন্তু এতো সহজে ছাড়ছি না তোমাকে। সারাটা দিন কাটাবে আমার সাথে তারপর গাড়ি করে তোমাকে আমি তোমার বাড়ি ছেড়ে দিতে বলবো । অবশ্যই দাদা এলে।
না রে আমি চলে যাব। আমি চাই না কেউ আমাকে দেখে অস্বস্তিতে পড়ুক।(অয়ন্তিকা)
ঠিক করে বলোতো তোমরা বন্ধুই তো? মনে হচ্ছে না কিন্তু আমার।(অনু)
প্রথমে একে অপরকে বিরক্ত করা এরপর সারাবাড়ি জুড়ে হুড়োহুড়ি শেষে রান্না ঘরে গিয়ে রান্না। অয়ন্তিকা কে রান্না করতে দেখে অনু বললো,
তুমি সব পারো বলো? একেবারে পারফেক্ট যাকে বলে। আহ কি সুন্দর গন্ধ বেরোচ্ছে বিরিয়ানি খেতে আমার খুব ভালো লাগে তুমি জানো দাদাটা না এসব পছন্দ করেনা ওর বরং পোলাও পছন্দ।
টেস্ট তো কর আগে? (অয়ন্তিকা)
তুমি করেছো মানে ভালোই হবে, তবুও সুযোগ আছে যখন সদ্ব্যবহার করেই ফেলি। এই করে দুজনের একেবারে সন্ধে টাও সুন্দর করে কাটিয়ে ফেললো।অয়ন্তিকা অনু মিলে।
অরিন্দম কে ঘরে ঢুকতে দেখে অয়ন্তিকা তড়িঘড়ি অ্যাপ্রনটা খুলে দিয়ে রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে গেলে ,ওকে উদ্দেশ্য করে অরিন্দম অনুকে বলল কেউ যদি আমাকে ভয় পায় তা আমার কিছু করার নেই আমিও মানুষ বাঘ ভাল্লুক নয় যে কাউকে খেয়ে ফেলবো।
আমি কাউকে দেখে ভয় পাই না আমার সময় হয়ে গেছে বাড়ি যাচ্ছি। আর অযথা কথা বলতে আমি বরাবরই পছন্দ করি না সেটা যদি কেউ বারবার ভুলে যায় আমি মনে করিয়ে দিতে পারব না। (অয়ন্তিকা)
অনুর তো বেশ মজাই লাগছিল অরিন্দম আর অয়ন্তিকার মধ্যে এরকম টম এন্ড জেরির মতো ঝগড়া হতে দেখে ও তাই সেটা থামিয়ে আনতে বললো ড্রাইভার এর সাথে চলে যাও তোমার সুবিধা হবে।
নারে রাস্তাঘাটে অনেক ট্যাক্সি বা গাড়ি পাওয়া যায় টাকা দিলে ওরা ঠিকমত বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসবে।চলি রে।(অয়ন্তিকা)
উফফ দি আসি বলতে হয়।(অনু)
ওহ সরি আসি।(অয়ন্তিকা)
অয়ন্তিকা চলে যাওয়ার পর অরিন্দমের মুখটা দেখে অনু একটু ফিচেল হেসে বললো,
ভুলেও অয়ন্তিকা দির সাথে টেক্কা নিবি না নয়তো এইভাবে হেরে ভুত হবি। এতো দিনে তোর মতো সেয়ানা কাউকে দেখলাম যে তোর মুখের উপর কথা বলে।
এগুলো শুনে অরিন্দম রাগী মুখ করে যখন অনু কে দেখলো, ও কোনরকমে ঢোক গিলে তুলতে বললো,
না মানে বলছি কি...
তোকে আর কিছু বলতেও হবে না অরিন্দমের কথা শুনে অনু চুপ করে গেল। শাওয়ার এর তলায় দাঁড়িয়ে অরিন্দম চোখ বন্ধ করে অয়ন্তিকার কথাগুলো আর মুখের ভাবভঙ্গি গুলো মনে করে হেসে ফেললো। অয়ন্তিকা যখন চোখগুলো বড় করে হাত পা নেড়ে নেড়ে কথা বলে ওকে বেশ মিষ্টি লাগে আর গাল ফুলিয়ে যখন তর্ক করে মনে হয় একটা বাচ্চা কে রাগিয়ে দেওয়া হয়েছে।
মানতেই হবে মিস বসু আপনার সাহস আছে নয়তো আমার সাথে এতো তর্ক বিতর্ক করেও খারাপ অভিজ্ঞতা হয়েও আপনি আমার বোন কে আগের মতোই ভালোবাসেন অরিন্দম নিজের মনেই বললো।
অনু কে রামুকাকা ডেকে যখন বললো নিচে খাওয়ার টেবিলে আজ থেকে খাওয়া দাওয়া করতে হবে তখন আরেকদফা ঝটকাই লাগলো অনুর।তাই নিজে আরো একবার নিশ্চিত করতে রামুকাকাকে বললো,
তুমি ঠিক শুনেছো? দাদা সত্যি!
অরিন্দম অনুর মুখটা দেখে হাসি চেপে রেখে ও বললো,
কি রে খেতে বসেছিস খা ?কি আঁকিবুঁকি কাটছিস কেন?
তোর জন্য অপেক্ষা করছিলাম বোস। অয়ন্তিকা দি বিরিয়ানি রান্না করেছে। খেয়ে দেখ তুই, আমি টেস্ট করেছি ভালো হয়েছে। তুই দেখ কেমন লাগে?
Related Story
হুঁ ভালোই হয়েছে, যদিও আমি খাই না তবু ও...
অরিন্দমকে থামিয়ে দিয়ে অনু বললো,
পছন্দ না করেও অনেকটা খেয়েও ফেললি কিন্তু...
অরিন্দম আর কিছু না বলে উঠে গেল, পিছন থেকে অনু সমানে বলে যাচ্ছে
আজকাল তাহলে তোর বিরিয়ানি পছন্দ হচ্ছে কি বলিস?
অরিন্দম বুঝতে পারছে ওর বোন ওকে রাগাচ্ছে কিন্তু কিছু বললে আরো চেপে বসবে তাই পিছনে তাকিয়ে দেখলো না। এদিকে অনুর তো খুব মজা ধীরে ধীরে সব ওর মনের মতো হচ্ছে।
এদিকে অয়ন্তিকা মনে মনে অরিন্দম কে বকা দিচ্ছে,
হনুমান রাক্ষস একটা,দেখলেই ঝগড়া করতে শুরু করে দেয়।আর আমি কখনো সামনে পড়বো না আর পড়লেও উফফ অয়ন্তিকা তুই ওই লোকটাকে দেখেও এড়িয়ে চলবি নয়তো দেখাই না হোক বা দেখতে পাসনি ভাব ওকে ফাইন।
কি রে তুই একা একা কি বকবক করছিস?
অয়ন্তিকা কে দেখে ওর মা বললো।
কিছু না মা।(অয়ন্তিকা)
এদিকে অয়ন্তিকার মা ভাবছেন মানুষের মনের চিকিৎসা করতে করতে কি আমার মেয়েটাই পাগল হয়ে গেল? কি জানি বাবা এর মতিগতি বুঝি না। আজকাল এর মনে যে কি চলে ?