ভালোবাসার কান্না বাংলা অনুগল্প
আসফি জাহান ইফতি
“কি করছে আমার ফারিয়া? ( পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো সজিব )
” আরে আরে কি করছো কি? ( ছাড়াতে চেষ্টা করে বললো ফারিয়া )
“তোমার সমস্যা কি আমি আমার বউকে জড়িয়ে ধরেছি হু।
“এই যে মিস্টার আমি এখনো আপনার বউ হয়নি, তাই বউ ডাকা নিষেধ জড়িয়ে ধরা তো কঠোরভাবে নিষেধ।
“তো কি হয়েছে কয়দিন পর তো আমারি বউ হবা তখন দেখিয়ে দিবো মজা।( চোখ টিপ মেরে )
“হুহ আগে বউ হয়ে নিহ তারপর দেখা যাবে।( ভেংচি দিয়ে )
“তুমি তো আমার বউ হতেই চাও নাহ, আমিই শুধু বারবার বলছি। ওকে আমি বিয়ে বাদ করে দিচ্ছি। ( ফারিয়া কে ছেড়ে দিয়ে বললো সজিব )
Sad Love Story
ফারিয়া মুখ বাকা করে তাকিয়ে আছে সজিবের দিকে। সজিব ফারিয়ার কোনো সাড়াশব্দ নাহ পেয়ে এবার জোর গলায় বললো,
“যাচ্ছি আমি
ফারিয়ার এবারো কোনো হেলদোল নেই দেখে সজিব যেতে লাগলো,
সজিব: এইরে আটকাবে না নাকি ধ্যাত বেশি চালাকি করতে যাই। ( মনে মনে )
সজিব এসে দরজার পিছনে লুকাইয়া ছিলো,
ফারিয়া: এহহ চলে গেলো সত্তি সত্তি। আজকে পাই শালারে।( দরজার দিকে যেতে যেতে বললো )
সজিবের কান পর্যন্ত কথাগুলো যায়। সজিব পারছে নাতো হেসে দিচ্ছে কিন্তু আটকে রাখছে হাসি। ফারিয়া দরজার কাছে যেতেই সজিব লাফ দিয়ে সামনে চলে আসে, ফারিয়া ভয় পেয়ে পিছনে পড়ে যেতে নেয় কিন্তু সজিব ফারিয়ার কোমড় ধরে ফেলে।
সজিব: খুব তো ভাব নিয়ে দাড়িয়ে ছিলে। এখন কি হলো।(ফারিয়ার মুখের কাছে মুখ নিয়ে)।
ফারিয়া: নিজে কম করেছেন। খুব তো যাচ্ছিলেন বিয়ে ভাঙতে আর কিনা চোরের মতো দরজার পিছনে দাড়িয়ে আছে, হু ( ভেংচি দিয়ে )।
সজিব: আমাকে তো এবার যেতে হবে, দিবে নাকি একটা উম্মাহ( ঠোঁট দেখিয়ে )।
ফারিয়া: যাহ লুচু কোথাকার( সজিব ধাক্কা দিয়ে এক দৌড়ে চলে যায় )।
সজিব দাড়িয়ে হেসে দেয়।
“সজিব আর ফারিয়া দুজন দুজনকে অনেক ভালোবাসে। তাদের পরিবারও তাদের মেনে নিয়েছে। ফারিয়া বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে তাই মেয়েকে কোনো কষ্ট দিতে চায় নাহ। সজিব আর রাহা ভাইবোন। সজিবের বাবা মায়ের ও একটা ছেলে তাই তারা খুব ধুমধাম করে বিয়ে দিবে। কিছুদিন পরেই তাদের বিয়ে।
Sad Short Story
আজ সজিব, ফারিয়া, রাহা ও ফারিয়ার মামা মিলে ওদের বিয়ের কেনাকাটা করতে যাবে। তাই সজিব ও রাহা আগেই ফারিয়াদের বাসায় চলে আসে।
সুমি(ফারিয়ার মা): কেমন আছো বাবা? রাহা মা তুমি কেমন আছো?
সজিবব: জি আলহামদুলিল্লাহ।
রাহা: আন্টি বেশ আছি, আপনাদের দোয়ায়। আর এমনিতেই অন্নেক হ্যাপ্পি, একমাত্র ভাইয়ের বিয়ে বলে কথা।
সুমি: আচ্ছা তোমরা বস আন্টি নাস্তা নিয়ে আসি।
রাহা: নাহ নাহ আন্টি, বসবোহ নাহ একদম। প্রচুর শপিং করতে হবে। ভাবি কই? ও ভাবি ও ভাবিইইইইই ( চিৎকার করে ডাকতে ডাকতে উপরে চলে যায় )
সুমি: পাগল মেয়ে একটা।
কিছুক্ষণ পর রাহা ফারিয়াকে নিয়ে চলে আসে।
রাহা: ভাইয়া চল চল
সজিব: তুই এতো লাফাচ্ছিস কেনো শাকচুন্নি?
রাহা: যা ইচ্ছে বল, আজ কিছু বলবো নাহ হু।
সুমি: ফারিয়া তোর মামা বাজারে আছেন।
রাহা: আচ্ছা আন্টি আসি।
সুমি: যাও।
ওরা ওদের মামাকে মার্কেট এ গিয়ে পায়। ওরা শপিংমলে ডুকে বিয়ের সব কেনাকাটা করে। রাহাও প্রচুর শপিং করে। হঠাৎ রাহা রাজিবের সাথে ধাক্কা খায়। রাহা রেগে যায়।
রাহা: কোন খাম্বার খাম্বা আমারে ধাক্কা দিলো। ( পিছনে তাকিয়ে )
রাহা রাজিবকে দেখে বলে,
রাহা: তুমি?
রাজিব: তুমি কি করছো?
রাহা : শপিং করতে এসেছি।
এসময় সজিব রাজিবকে দেখে জড়িয়ে ধরে,
সজিব: আরে বন্ধু অনেকদিন পর দেখা হলো। কি অবস্থা?
রাজিব: এইতো ভালো, তোর?
সজিব: এইতো আমিও আছি, তা আমার বোনকে চিনিস?
রাজিব: ও তোর বোন?
সজিব: হুম
রাহা সজিবের পিছন থেকে রাজিবকে ইশারা দিয়ে বারণ করতেছে যেনো সজিবকে কিছু নাহ বলে। ( আসলে রাজিবব রাহার বয়ফ্রেন্ড। রাহা রাজিব কেউই জানত নাহ সজিব যে রাজিবের ফ্রেন্ড বা রাজিবের বন্ধু )
সজিব: এই রাহা তুই ওকে কি ইশারা দিচ্ছিস?
রাহা: ককই নাহ তো ভাইয়া।
রাজিব: তা তোর তো বিয়ে, এইটা নিহ ভাবি ? ( ফারিয়াকে দেখিয়ে )
সজিব: হুম
তারা আরো কিছুক্ষণ কথা বললো। পরে সবাই বাড়ি চলে আসে।
Sad Story for Love
আজ সজিব আর ফারিয়ার গায়ে হলুদ। সবাই খুব আনন্দে আছে। রাহা তো পারে নাহ কি করতে কি করে। রাহা ফারিয়াদের বাড়িতেও এসেছে তার কাজিনদের সাথে। আবার চলেও যায়। এরই মাঝে মাঝে আবার সজিব শুধু ফারিয়াকে ফোন দেয়।
ফারিয়া: ওহ তুমি এতো ফোন দিচ্ছো কেনো, যপন আমি ভিন গ্রহে আছি।
সজিব: ভিনগ্রহের থেকেও জটিল কোনো জায়গায় আছো নাহ জানি আজ কতো সুন্দর লাগছে। কেউ যদি টেনে নিয়ে যায়।
ফারিয়া: হয়েছে সাহেব এখন ডং রাখুন আমি যাই।
এভাবে গায়ে হলুদ নাচে গানে কেটে গেলো।
পরেরদিন সকালে…….
সজিবদের বাড়িতে..
রাহা: ভাইয়া ও ভাইয়া, উঠবি তুই নাকি গায়ে পানি ঢালবো। আজ নাকি এই ছাগলের বিয়ে আর সে এতোক্ষণ পর্যনৃত ঘুমুচ্ছে।
সজিব: একদম চুপ কর শাকচুন্নি, চিল্লিয়ে কান গরম করে দিচ্ছে। আরদিন তো দশজনে মিলেও উঠাতে পারে নাহ।
রাহা: কম কথা বল, তাড়াতাড়ি উঠ।
ফারিয়াদের বাড়িতে…
সুমি: মা চল তোকে গোসল করিয়ে দিই।
ফারিয়া: চলো।
ফারিয়া গোসল সেরে তার রুমে এসে বসে থাকে। মাঝে তার কাজিনরা আসে।
জিবা: ফারিয়া তো আজকে জামাইয়ের ঘরে চলে যাবে। আমি কবে যাবো। মনে হয় নাহ আমার কপালে জামাই জুটবে।
ফারিয়া: তোর ন্যাকামো আর গেলো নাহ
রিতু: যাবেও নাহ। ও চঞ্চলই থাকবে হা হা হা।
সজিবকে কে যেনো ফোন দিলো তাই সজিব বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে।
ফারিয়া ও তাদের বাড়ির সবাই অনেক্ষণ যাবত অপেক্ষা করছে বর আসার জন্য। তাদের দেরি দেখে তারা সজিবের আব্বুকে ফেন করে। সজিবের আব্বু বলে এইতো এসে পড়বে। এর মাঝে কয়েকজনকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ফারিয়াকে সাজানোর জন্য রাহাও আসে।
Bangla Valobashar Golpo
এদিকে সজিবের মা- বাবা চিন্তায় পড়ে যায় সজিব আসছে নাহ দেখে।
হঠাৎ একটা গাড়ি এসে তাদের বাড়ির সামনে থামলো। একজন লোক এসে জানালো গাড়ির ভিতরের লোকটাকে কি চিনেন।
সজিবের বাবা মা গিয়ে যা দেখলো তারা পাথর হয়ে গেলো। তারা কিছু বলতে পারছে নাহ। সজিবের কাজিনরা এসে তাদের শান্ত করলো। সবাই কান্নায় ভেঙে পড়লো তারপর ওই গাড়িতে উঠে সবাই ফারিয়াদের বাড়ি গেলো।
ফারিয়াদের বাড়ির সামনে গাড়ি থামতেই রাহা দৌড়ে যায়।
রাহা সজিবকে দেখে একটা চিৎকার দেয়। ওর চিৎকার শুনে সবাই দৌড়ে আসে। ফারিয়া কোনোমতে ভিড় ঠেলে আসে। সে দেখে সবাই চুপ হয়ে আছে। সজিবের আব্বু আম্মু অশ্রুশিক্ত নয়নে উদাস হয়ে বসে আছে। রাহাতো একবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এখন পাথর হয়ে বসে আছে। সবার মাঝে শোকের ছায়
ফারিয়ার মনে এক অজানা বিয়োগ ব্যাথা হানা দিয়ে উঠে।
সে দৌড়ে গাড়ির কাছে যায়।
সে চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। জ্ঞান আসলে।
ফারিয়া: সজিব আমার সজিব কোথায়। আমি সজিবের কাছে যাবো।( চিৎকার করে করে )
ফারিয়ার কাছে ডক্তারের কথামতো ডেডবডি আনা হয়। হ্যাঁ সেটা সজিবেরই ডেডবডি, সে বেঁচে নেই কার এক্সিডেন্ট এ মারা গেছে।
ফারিয়া সজিবকে দেখে পাগলের মতো করতে থাকে।
ফারিয়া: সজিব সজিব। কথা বলছো নাহ কেনো। এই দেখো তোমার ফারিয়া বউ সেজে বসে আছে। কথাাাা বলোওওও। সজিবববববব। এটা কেমন বিচার করলে খোদা। ফিরিয়ে দাও সজিবকে, আমার সজিবকে ফিরিয়ে দাও।
আবার জ্ঞান হারায় ফারিয়া।
সজিবের মা বাবা আর রাহার অবস্থাও খারাপ তাদের একমাত্র ছেলে আর নেই।
ফারিয়া আর কীভাবে ভালো থাকবে। সেতো পৃরায় পাগল। তার হৃদয়ে যে কান্না সে তা কীভাবে মুছবে। পারবে নাহ সে। সে বেঁচে থাকতেও মারা গেছে।
সমাপ্ত
Writer: Asfi Jahan Iffti
খুব সুন্দর লাগলো৷ আশা করি আরো সুন্দর সুন্দর গল্প আমাদের কে উপহার দিবেন৷