ভালোবাসি দুজনে
Imtihan Imran { পর্ব ১ }
যেখানে দাঁড়িয়ে আছো,ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকো,এক পা সামনে বাড়ালেই আমার হাতে থাকা বন্দুক থেকে গুলি বের হয়ে,তোমার বুক ছিদ্র করে বের হয়ে যাবে।
" বাবা আমি দাঁড়িয়ে আছি।নড়ছি না,তুমি গুলি করবে না।
বাবার কথা শুনে সিজান হকচকিয়ে কথাটা বলল।
"হাত উঁচু করে দাঁড়াও।আসামীরা কীভাবে দাঁড়ায়।সেটাও জানো না দেখছি।
" বাবা আমি তো আসামী না।
"হায়!হায়!ভাইজান।এটা কী কাম করতেছেন?পোলাডার দিকে বন্দুক তাক করে ধরে রাখছেন ক্যা?
খালা কথাটা বলতে বলতে সিজানের সামনে দাঁড়ালো পিঠ দিয়ে।
" সালেহা সামনে থেকে সরে দাঁড়াও,নাহলে আগে তোমাকে গুলি করবো।
"আল্লাহ!ভাইজান ভুলেও এই কাম করিয়েন না,আমি সরে যাইতেছি।
"খালা তুমি বেঈমানের বেঈমান।আমার প্রতি তোমার কেমন ভালোবাসা দেখা হয়ে গেছে।
" নিজে বাঁচলে বাপের নাম,তুই শিক্ষিত পোলা হইয়াও এটা জানস না।ভাইজান পোলাডার দেখি কোনো শিক্ষা জ্ঞান নাই।
"চুপ করো খালা।আম্মা তুমি কিছু বলবা না?বাবা আমারে এভাবে দাঁড় করিয়ে রাখছে কেনো?আমি কী দোষ করলাম?
" তুই কোনো দোষ করস নাই?ওরে সাধু রে।তুই বলে ভার্সিটিতে গিয়ে পড়াশোনার নাম করে মেয়েদের সাথে ইটিশ পিটিশ করস?
"না বাবা।কে বললো এই মিথ্যা কথাটা?
" ফারিন বলল।
"জানতাম ও ছাড়া আর আছে কে আমার শত্রু?
" ও তোর শত্রু না,তোর বউ হবে।
"ও মিথ্যা বলছে,আমি কারো সাথে ইটিশ পিটিশ করি নাই।
" মিথ্যা কথা না।ও ছবি তুলে প্রমান দিয়েছে।এই দেখো.।
"বাবা এইটা তো আমার বন্ধু।
" বন্ধু না ছাই যেটাই হোক।আজকে তোমার বাসায় যায়গা নাই।বাহিরে থাকো।
"বাবা কিছু খেয়ে যাই।
" না তোমার খাওয়াও বন্ধ।
"আচ্ছা যাচ্ছি।আমার এতো খাওয়ার ইচ্ছা নাই।
" হাই হাই ভাইজান পোলাডারে বাইর কইরা দিতেছেন।দিস ইস মাছ।
"খালা দিস ইস মাছ না,এটা দিজ ইজ টু মাচ হবে।
" ওই হইলো,যা তো বাইরে যাও।বেশি ইংরেজি ফুটাইস নাহ।
সিজান আহম্মেদ বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে।বাবা মাহমুদ চৌধুরী,মা জাহানারা চৌধুরী।আর খালা সালেহা বেগম,যিনি এই বাসায় কাজ করেন।আর হচ্ছে ফারিন জান্নাত,সিজানের হবু বউ।দুজনে সেম ইয়ার।
তিনবছর আগে ফারিনরা,সিজানদের উপরতলায় বাড়াটিয়া হয়ে এসেছে।সেই প্রথম থেকেই ফারিন,সিজানের বাবা-মায়ের মন জয় করে এসেছে।আর তাই বাবা-মা তাদের ছেলের জন্য এই মেয়েটাকে বউ করে আনতে চায়।
"
সিজান বাড়ির সামনে একটা বাঁশের বেঞ্চিতে বসে আছে।এমনসময় ফারিন পাশে এসে দাঁড়াল।সিজান উপস্থিতি টের পেয়েও না পাওয়ার ভান করল।
"এতো ভাব নেওয়ার কী আছে?আমি এসেছি দেখো না?
"তুমি আসলে কি এখন আমাকে নাচতে হবে?
" যাহ বাবা! বেশি বুঝো কেনো?আমি কখন তোমাকে নাচতে বললাম?
"ঢঙ না করে বলো,বাবারে কী উল্টাপাল্টা কানপোরা দিছো?
" যা সত্যি তাই বললাম। আমারে রেখে অন্য মেয়েরে নিয়ে ঘুরবা,তা আমি ফারিন থাকতে হতে দিতে পারি না।
" কোথায় ঘুরলাম?জাস্ট ক্যান্টিনেই তো গেলাম।আর ও আমার ফ্রেন্ড ওরে নিয়া ঘুরতেই পারি।এখানে সমস্যা কী?
" ওইসব আমি বুঝিনা। তোমার আশেপাশে আমি কোনো মেয়েরে সহ্য করতে পারব না। তাই মেয়েদের সাথে ঘোরা তোমার নিষেধ। আর আমার কথা অমান্য করে যদি ঘুরো, তাহলে আঙ্কেল রে বলে দিবো।
" বলে দিয়েন আপনার আঙ্কেল রে। আপনার আঙ্কেল আমার কচু টা করবে।
"দেখে তো বুঝাই যাচ্ছে কচু টা করছে নাকী ঘর থেকে বের করে দিয়েছে।
" যাও তো সামনে থেকে।
" কাধে গিটার কেনো?বাসায় রেখে আসতে পারলে না?
"বাসায় তো ঢুকতেই দিলো না।
" আহারে আমার জামাই টা।
" ওই জামাই কে? আমি এখনো কারো জামাই হই নাই।
" জামাই হতে কতক্ষন? আর আমি তোমার আমি নিজের জামাই হিসেবে মেনে নিয়েছি।
" তাই, তাহলে চলো বাসর টা সাইরা ফেলি।
" ইশ! বাসর করার খুব শখ তাই না?লুচু বেডা।
" তুমি সামনে থেকে যাবা,নাকী একটা কিছু করে বসবো।
"কী করবা? কিস করবা?
" দাঁড়াও তোমারে কিস করাচ্ছি।
সিজান আর কিছু বলাএ আগেই ফারিন প্রগাঢ়পাড়।
"
ইমরানের পেটে ক্ষুদায় ছোঁ ছোঁ করছে। অথচ এখনো কেউ খাবার নিয়ে আসতেছে না। এমন তো আগে কখনো হয়নি।এতোক্ষণে তো খাবার এসে যাওয়ার কথা।
এরকম অনেকদিন হয়েছে,ইমরানকে বাইরে থাকতে দিয়ে,কিছুক্ষণ পর সবাই লাইন ধরে একজনের পর একজন চুপিসারে খাবার এনে ইমরানকে খাওয়ায়।কিন্তু আজকে আসছে না কেনো?
আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর মিম এবং খালা দুজনে থালাভর্তি করে খাবার নিয়ে আসে।
"খালা তোমারব বা বললাম,ওর জন্য খাবার না আনতে।
" এ্যা!বেডি তুই কইলে আমি হুনমু নাকী?আমার পোলাডারে কী আমি না খাওয়ায় রাখমু?বুঝছস বাজান এই মাইয়াডা সবাইরে মানা কইরা দিছে, যেনো তোর জন্যি কেউ খাবার নিয়ে না আসে।
"খালা তোমার কানে কী তুলা ছিলো?তুমি শুনো নাই আমি বলছি ওর জন্য আমি খাবার নিবো?
"হুনছি হুনছি।হুনছি দেইখাই তাড়াতাড়ি করে খাবার নিয়ে আসলাম।পোলাডারে কী না কী খাওয়াস?
" আমার জামাইরে আমি ভালো খাবার'ই খাওয়াবো।তুমি যাও তো খালা খাবারটা নিয়ে।বেশি কথা বলো।
"ওই ছেমড়ি তুই বেশি কথা বলবি না।তুই তোর খাওয়ার টা নিয়ে যা।আমার বাজান আমার খাবার টাই খাবে।
সিজান বসে বসে দুজনের ঝগড়া দেখছে।এই খালা আর ফারিন একে অপরকে একদম'ই দেখতে পারেনা।দেখা হলেই কিছু না কিছু নিয়ে ঝগড়া করবেই।
" ওই ইমরান,তুমি আমার আনা খাবারটা খাবে তাই না?
"হুম।
" কী তুই আমার আনা খাবার খাবি না?
"ওহো খালা দুজনের আনা খাবার" ই খাবো।অনেক ক্ষুদা লাগছে,দেও তো।
"আহারে পোলাডার কী ক্ষিদাই না লাগছে,দুজনের আনা খাবারডা খাইতে চায়।
ইমরান খালার আনা খাবার টা খেয়ে খালাকে বিদায় করল।খালা মিমকে একটা মুখ ভেংচি দিয়ে চলে যায়।
" দে এবার তোর খাবার টা দে।
"আমি খাওয়াই দিবো।(ফারিন সিজানের পাশে বসতে বসতে কথাটা বলল)
" লাগবে না।আমার হাত আছে খেতে পারবো।
"আমি তো জানি তোমার হাত আছে।আমার তোমাকে খাওয়াই দিতে ইচ্ছে করছে,তুমি বোঝো না?
" আচ্ছা খাওয়া।
"হু।(খুশি হয়ে)
ফারিন এক লোকমা এক লোকমা করে সিজানের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে।সিজানকে দেখে বোঝা যাচ্ছে খুব মোজা করেই খাচ্ছে।
" এতো খাও তুমি।তারপরেও যে মোটা হও না?
"তুই কী আমাকে মোটা হওয়ার অভিশাপ দিচ্ছিস?
" আল্লাহ!না সেটা না।এতো খাবার খেলে তো মানুষ মোটা হয়ে বল হয়ে যায়।কিন্তু তুমি এতো ফিট থাকো কীভাবে?
"কারন ম্যাডাম আমি নিয়মিত জিম করি।
" জিম করলে মোটা হয় না?
"জি না।ফিট থাকা যায়।
খাওয়া শেষ হলে ফারিন,সিজানকে বিদায় দিয়ে ঘরব চলে যায়। আর এইদিকে সিজান একলা বসে বসে আকাশের তারা গোনার বৃথা চেষ্টা করছে। কারম আকাশে একটা তারাও দেখা যাচ্ছে না।
সন্ধ্যা থেকে আকাশ মেঘলা। এখন আবার আকাশে গুড়ুম গুড়ুম শব্দ হচ্ছে।বৃষ্টি শুরু হবে বোঝা যাচ্ছে।
বলতে না বলতে বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়।অন্যান্য ছেলের বৃষ্টি পছন্দ কীনা জানি না,কিন্তু সিজানের বৃষ্টি অনেক প্রিয়।বৃষ্টি হলেই সে ভেজার লোভ সামলাতে পারে না। আজও তার ব্যাতিক্রম না, সিজান বসে বসে বৃষ্টিতে ভিজছে।আর গিটারে টুংটাং আওয়াজ তুলছে।
সিজান অসম্ভব ভালো গান গায়। তার স্বপ্ন একদিন সে অনেক বড় গায়ক হবে।ভার্সিটিতে তার গান শুনার জন্য সবাই পাগলপ্রায় হয়ে যায়।কলেজে কোনো গান মানেই সিজানের গান অবশ্যই থাকবে। থাকতে হবে। গিটারের টুংটাং আওয়াজের সাথে সিজান নিজেত কন্ঠে গান ধরে।
সারে সা সা সারে সাসা সারে গা মা পানি,
সারে সা সা সারে সাসা সারে প্রেমের কাহিনী।
রিমঝিম ধারাতে,চায় এই মন হারাতে;
এই ভালোবাসাতে আমাকে পাষাতে।
এলো মেঘ চেয়ে এলো ঘিরে বৃষ্টি সুরে সুরে সোনায় রাগিনী,
মনে স্বপ্ন এলোমেলো একি শুরু হলো প্রেমের কাহিনী।
রিমঝিম ধারাতে,চায় এ মন হারাতে;
রিমঝিম ধারাতে,চায় এই মন হারাতে.....।
সিজান চোখ বন্ধ করে গিটারেরে টুংটাং আওয়াজের সাথে গানটি গাচ্ছে।তার চুল বেয়ে টুপ টুপ করে বৃষ্টির পানি পড়ছে।
ফারিন ছাতা নিয়ে এসে দাঁড়িয়ে মুগ্ধ হয়ে সিজানের কন্ঠে গানটি শুনছে।
সিজান গান গাওয়া শেষ হলে,চোখ খুলে খেয়াল করে ফারিন ছাতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
"কেমন লাগলো গান?
Related Story
" খুব বাজে।তোমার গান শুনলে,গান শুনার ইচ্ছাটাই মরে যায়।
"হাহা হাসাইলি। যেখানে সিজানের কন্ঠে গান শুনার জন্য সবাই হুমড়ি খেয়ে এসে পড়ে, সেখানে তোর কথা অনেক হাইস্যকর।
" সবাই গানের কী বুঝে? সবাইর ব্রেন কী আমার মতো নাকী?
"একদম ঠিক বলেছিস। তোর ব্রেন একদম পঁচা।
"আচ্ছা বাদ দেও। এবার বলো এভাবে মেয়েদের মতো বৃষ্টিতে ভিজতেছ কেনো?
" তুই জানিস না?আমার বৃষ্টিতে ভিজতে অনেক ভালো লাগে।