Golperjogot

Golperjogot

Sad Short Story ভালোবাসি কিন্তু বলতে পারিনি | বাংলা অনুগল্প

ভালোবাসি কিন্তু বলতে পারিনি

Raj

প্রতিদিনের মত আজও ছেলেটি এপ্রন হাতে বাস- স্ট্যান্ড এ দাড়িয়ে বাস এর জন্য ওয়েট করছে।

লিজা আজও তাকে দেখল।

সে মেডিকেল এর স্টুডেন্টদেরকে দুই চোখে দেখতে পারেনা। কেননা, সে নিজে মেডিকেল এ চান্স পায়নি।

কিন্তু এই ছেলেটাকে একটু অন্য রকম লাগে তার।

অন্যান্য মেডিকেল এর স্টুডেন্টদের কে দেখলে তার মাঝে যেমন বিরক্তি আসে এই ছেলেটিকে দেখলে তেমন বিরক্তি আসে না। বরং এই ছেলেটিকে দেখার জন্যই লিজা প্রতিদিন একই বাস স্ট্যান্ড এ আসে। অন্য কোন পথ দিয়ে যাতায়াত না করে এই পথ দিয়েই আসে সে।

Sad Short Story

লিজা মেয়েটা একটু অন্যরকম ছিল। অন্যরকম বলতে, সে এমন ভাব করে যেন প্রেম-ভালবাসার ধারে কাছে সে নেই। কিন্তু মনে মনে সে এক ধাপ এগিয়ে।

বাস স্ট্যান্ড এর ওই ছেলেটার নাম ছিল রনি।

রনিও লিজা কে চুপচাপ লক্ষ করত। মাঝে মাঝেই তাদের একে অপরের সাথে চোখাচোখি হত।
বাস এ রনি যখন দেখত লিজা দাড়িয়ে আছে আর সে বসে আছে তখন নিজের সিটটাও ছেড়ে দিত।

কিন্তু তারা কখনও একে অপরের সাথে কথা বলেনি। এমনকি তারা একে অপরের নামটাও জানতোনা।

লিজা প্রতিদিনই হাজারও বুদ্ধি বের করত রনির সাথে কথা বলার কিন্তু কাজের সময় আর বুদ্ধিকে কাজে লাগাতে পারতোনা।

প্রতিদিনের মত আজও লিজা চিন্তা করতে লাগল ব্যাপারটি নিয়ে।

যেহেতু লিজা একটু চাপা স্বভাবের , তাই
সে এই ব্যাপারে কারও কাছে পরামর্শও চায়নি।

দুদিন বাদেই ১৪ই ফেব্রুয়ারী।

সে ঠিক করল ওই দিনই ছেলেটিকে সব বলবে ও।

যেই লিজা জীবনে কখনও ফুল কেনেনি, সে-ই ১৪ই ফেব্রুয়ারী সকালে নিজে ফুল কিনতে গেল।

নিজের পছন্দের ফুল হাতে নিয়ে সে বাস স্ট্যান্ড এ দাড়িয়ে আছে ছেলেটির অপেক্ষায়…

বেশিরভাগ সময় বাস স্ট্যান্ড এ ছেলেটিকেই আগে আসতে দেখা যেত। আগে দেখা না গেলেও ১০-২০ মিনিটের মধ্যে চলে আসত। কিন্তু আজ ৪০ মিনিট দাড়িয়ে থাকার পরেও ছেলেটির কোন খবর নেই।

আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল লিজা। কিন্তু এর পরেও ছেলেটির কোন দেখা নেই।
নিজেকে খুব বোকা মনে হল লিজার।

মনে মনে ভাবল…
“ছেলেটির হয়তো প্রেমিকা আছে। না, হয়তো কেন হবে। অবশ্যই আছে। মেডিকেল এ পড়ে, দুই দিন বাদে ডাক্তার হবে। দেখতেও তো খারাপ নয়।

প্রেমিকা থাকবেনা কেন?? ১৪ই ফেব্রুয়ারীতে প্রেমিকাকে ছেড়ে সে এই বাস স্ট্যান্ড এই বা আসবে কেন???”

ওই দিন লিজা চলে গেল। ঠিক করল আর কোন দিন ওই বাস স্ট্যান্ড এই যাবেনা। না সে আর যায়নি… গেলেও অনিচ্ছাকৃত ভাবে।

তবে যখনই সে ওই বাস স্ট্যান্ড পার হয়েছে তখনই বাসের অপেক্ষায় দাড়িয়ে থাকা মানুষ গুলোর দিকে তাকিয়ে থেকেছে।

কিন্তু রনি কে দেখেনি…

কিছুদিন পর লিজার বিয়ে ঠিক হল। বিয়েটি ঠিক করল লিজার মা। লিজা কোন আপত্তি করে নি। যদিও সে রনি কে ভুলতে পারেনি। বিয়ের পর কিছুদিন ভালই কাটল। তারপর একদিন লিজা তার বরের ঘরে একটি ছবি খুজে পেল। ছবিতি দেখে আঁতকে উঠল লিজা।

এটি সেই ছেলের ছবি।

লিজা তার বরের কাছে জানতে চায়…

“ছেলেটি কে?? ”

জবাবে তিনি জানান…

“ছেলেটির নাম রনি। মেডিকেল এ পড়ত। বছর ২ আগে ১৪ই ফেব্রুয়ারী তে সে রোড এক্সিডেন্ট এ মারা যায়।

মারা যাওয়ার সময় তার হাতে ফুল ছিল আর ছিল একটি চিঠি… তার সাথে নাকি প্রতিদিন এক মেয়ের দেখা হত বাস স্ট্যান্ড এ।

সে তাকে Propose করার জন্যই ওই দিন বাস স্ট্যান্ড এ যাচ্ছিল।
দুঃখের বিষয় সে মেয়েটির নাম বলতে পারেনি।

কোন ঠিকানাও দিতে পারেনি…

সব শোনার পর লিজা নিজার খুব কষ্ট হয় | তারপর আস্তে সব স্বাভাবিক হয়ে যায় |

কিছু কিছু গল্পের সমাপ্তি হয়না অসমাপ্তই থেকে য়ায়

Writer: Raj

Leave a Comment