Golperjogot

Golperjogot

ভিলেন – থ্রিলার প্রেমের গল্প পর্ব 23 | Villain Bangla Story

ভিলেন – পার্টঃ২৩
Mona Hossain

এমন আচমকা এমন ঘটনা জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না তাই স্কুলে না গিয়ে বাসায় ফিরে আসলাম আর এসেই দেখি সবাই ড্রয়িং রুমে বসে আছে,

বুঝতে পারছি কিছু একটা ঘটেছে বুক ধুরুধরু করে কাঁপছে তাই এগিয়ে গিয়ে ছোট মাকে জিজ্ঞাসা করলাম, কি হয়েছে ছোট মা? সবাই এভাবে বসে আছে কেন?

ছোট মাঃ আরে বলিস না ঈষান হাতে ব্যাথা পেয়েছে।

কথাটা শুনেই আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেল।

মেঘলাঃ ক ক কিভাবে ব্যাথা পেয়েছে?

ছোট মাঃ জগিং করতে গিয়েছিল হটাৎ নাকি ছিনতাই কারী আক্রমন করে আর ঈষানের ফোন নিয়ে নেয় আর তখন হাতাহাতিতে ঈষানের হাতে লেগেছে।

আমার বোঝার বাকি রইল না এই ছিনতাইকারী সেই মুখোশ ধারী ভিলেন।

এবার আমার মনে পড়ল ভিলেন বলেছিল তার নেক্সট টার্গেট আকাশ তাই তাড়াতাড়ি চারদিকে আকাশ কে খুঁজতে লাগলাম কিন্তু ভাইয়া কোথাও নেই তাই ওকে না পেয়ে মনের ভিতরে অস্থিরতা শুরু হয়ে গেল।

মেঘলাঃ ছোট মা আকাশ ভাইয়া কোথায়?

ছোট মাঃ ও তো অনেক আগেই বেরিয়েছে এখনো আসে নি।

মেঘলা দৌড়ে গিয়ে আকাশ কে ফোন দিল।

আকাশ ফোন ধরতেই মেঘলা বলে উঠল…ভাইয়া কোথায় তুই..??

আকাশঃ উফফ তুই…??? কেন ফোন করেছিস? আর তোকে বলেছি না আমাকে ভাইয়া বলবি না…

মেঘলাঃ আচ্ছা বলব না তুই যা বলবি তাই বলে ডাকব কিন্তু এখন তুই বাসায় আয় প্লিজ।

আকাশঃ কেন কি হয়েছে..??

মেঘলাঃ কিছু হয়নি তবে তুই এখন না আসলে অনেক কিছু হবে..

আকাশঃ কি হবে?

মেঘলা চেঁচিয়ে উঠে বলল, তোকে আসতে বলেছি না এত প্রশ্ন করিস কেন? তুই এখনী আসবি…

আকাশঃ তুই পাগল হয়ে গিয়েছিস এতদিন পর ফ্রেন্ডদের কাছে এসেছি আর এখন তোর কথায় বাসায় যেতে হবে? ফোন রাখ আমি আসতে পারব না।

মেঘলাঃ আসবি না তো…???

আকাশঃ প্রশ্নই উঠেনা তুই কে যে তোর কথা আমাকে শুনতে হবে? ফোন রাখ…

মেঘলাঃ আচ্ছা দেখ তাহলে এবার আমি কি করি…

আকাশঃ এই মেঘলা না না কিছু করিস না আমি এখনি আসছি..

মেঘলাঃ তাড়াতাড়ি আসবি কিন্তু…

আকাশ ফোন রেখে দিল।

মেঘলাঃ যাক ও সুস্থ আছে তাহলে আর চিন্তা নেই একবার বাসায় আসলে ওকে আর বের হতে দিব না, (মনে মনে)

মেঘলা ফোন রেখে আকাশের আসার জন্য অপেক্ষা করছে…তখনি লেন লাইনে ফোন আসল মেঘলা ফোন ধরল,ফোন ধরতেই অপর পাশ থেকে,

– এই নাম্বার যার তাকে কি আপনি চিনেন?

মেঘলাঃ হ্যা এটা তো আকাশ ভাইয়ার নাম্বার কিন্তু আপনি কে?

-এই ফোনের মালিকের এক্সিডেন্ট হয়েছে আমরা তাকে সিটি হাসপাতালে নিয়ে এসেছি আপনার নাম্বারটা কল লিস্টের প্রথমে ছিল তাই কল দিলাম আপনারা তাড়াতাড়ি চলে আসুন

মেঘলা ডুকরে কেঁদে উঠল,
ছোট মাঃ কিরে মেঘলা তোর আবার কি হল…??

মেঘলাঃ ভ ভ ভাই ভাইয়ার এক্সিডেন্ট হয়েছে ছোট মা..কথাটা শুনে সবাই অস্থির হয়ে গেল কারন আকাশ বাসার সবার আদরের তাই সবাই তাড়াতাড়ি হাসপাতালে গেল মেঘলাও গেল..

আকাশ বেডে শুয়ে আছে তার হাত ভেংগে গিয়েছে…

সবাই আকাশকে জিজ্ঞাস করছে এসব কি করে হল..
আকাশের বড় কোন ক্ষতি হয় নি তাই কেউ কাঁদছে না শুধু মেঘলা সবার পিছনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চোখের জল ফেলছে।

আকাশঃ কি উল্টা পাল্টা প্রশ্ন করছো?এক্সিডেন্ট কিভাবে হয়?যেভাবে হওয়ার সেভাবেই হয়েছে তাই বলে মরা কান্না করার কিছু নেই আর এক ফোঁটা চোখের জল পড়লে খুব খারাপ হবে বলে দিলাম।

সবাই অবাক হল কারন কেউ ত কাঁদছে না।

রুবিনা বেগমঃ কে কাঁদছে কার জল..এখানে তো কেউ কাঁদছে না??

আকাশ রাগি ভাব নিয়ে মেঘলাকে দেখিয়ে বলল এই ন্যাকাটাকে এখানে কে নিয়ে এসেছে?আর এখানে
এত ভিড় করার কিছু নেই সবাই বাসায় যাও বিশেষ করে এই ন্যাকারানীকে নিয়ে যাও কান্না কাটি আমার একদম সহ্য হয় না।

রুবিনা বেগমঃ এই কাঁদবি না? এমন ভাব দেখাচ্ছিস যেন আকাশকে শুধু তুই এই ভালবাসিস আমরা কেউ বাসি না..

আকাশঃ সবি ভাব আমাকে ইম্প্রেস করার জন্য ন্যাকামি করছে।এসব করে কোন লাভ নেই।

মেঘলাঃ অভিনয় করে কি কান্না করা যায়?

আকাশঃ মুখে মুখে কথা বলিস? রুম থেকে বের হ বলতেছি…

নিলিমাঃ কথা কানে যায় নি?দাঁড়িয়ে আছো কেন আকাশ এমনিতেই অসুস্থ ওকে রাগিয়ে দিও না যাও এখান থেকে।

মেঘলাঃ তোমরা কেমন মানুষ..?? আমি কি কাউকে বিরক্ত করছি? কাউকে কাঁদাচ্ছিও তো না সবার পিছনে দাঁড়িয়ে আছি তবুও তোমাদের সমস্যা?

আকাশঃ তুই থাকলে আমার অনেক সমস্যা,তোর কান্না আমার সহ্য হয় না তুই এভাবে কাঁদতে থাকলে আমিও সবার সামনে কেঁদে দিব তুই তো সেটা বুঝবি না। তাই তোকে এখান থেকে বের করে দিতে হবে (মনে মনে)

মেঘলার কথা শেষ হওয়ার আগেই আকাশ বলল নিলিমা ওকে রুম থেকে বের করে দাও তো বড্ড বেশি কথা বলে।নিলিমা গিয়ে মেঘলাকে রুম থেকে বের করে দিল।

মেঘলা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে নিশব্দে কাঁদতে লাগল

মেঘলাঃআমি এই ভিলেন কে কিছুতেই ছাড়ব না আর একবার দেখা হোক শুধু…

ছোট মাঃ আজ কি যে হয়ে গেল ঈষানের সাথেও দুর্ঘটনা ঘটল আকাশের সাথেও ঘটল..

সবাই আকাশের সাথে কিছুক্ষন কথা বলার পর ডাক্তার এসে বলল সবাই এভাবে ভীড় জমাবেন না পেসেন্টের হাতে ব্যাথা পেয়েছে বড় কোন ক্ষতি হয় নি তাই যেকোন একজন উনার সাথে থাকুন বাকিরা চলে যান।

ছোট মাঃ ঠিক আছে আমি থাকছি ভাবি তুমরা যাও।

আকাশের মাঃ কি বলছো আমি ওর মা আমি থাকব তোমরা যাও

মেঘলা বাইরে থেকে শুনছিল তার খুব ইচ্ছা করছে বলতে যে সে থাকবে কিন্তু আকাশ ওকে রুমেই এলাউ করে নি তাই এখন থাকতে দিবে না এটা ভেবে ভয়ে বলতে পাড়ল না।

নিলিমাঃ খালামনি তোমরা সবাই যাও আমি থাকি আকাশের খেয়াল রাখব তোমাদের বয়স হয়েছে কষ্ট হবে..

আকাশের মাঃ তুই থাকবি সেটা তো খুবি ভাল কথা তাহলে তুই ই থাক।




আকাশঃ তোমরা কেউ এই থাকবে না আমার দেখা শুনা করার জন্য মেঘলা থাকবে…

কথাটা শুনে মেঘলা চমকে উঠল…

মেঘলাঃ আমি কি সত্যি শুনলাম..??

নিলিমাঃ কি সব বলছো..?? ও থাকবে কেন।

রুবিনা বেগমঃ ঠিকি ত ও থাকবে কেন?

আকাশঃ ধরে নাও ও কাজের মেয়ে জন্যই থাকবে বাসার কাজের মেয়ে থাকতে অন্যরা কষ্ট করবে কেন? সবাই যাও

নিলিমাঃ কিন্তু…

আকাশঃ আমি এক কথা ২ বার বলি না কোন সিধান্ত নিলে সেটা কোন কারনে বদলাই না তাই অযথা কথা বাড়িও না…

একে একে সবাই চলে গেল…

মেঘলা দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে পর্দার আড়াল থেকে তাকিয়ে আছে..

আকাশ অন্য দিকে তাকিয়ে আছে সেদিকে তাকিয়ে থেকেই বলল,
চোখ মুখে পানি দিয়ে ফ্রেশ হয়ে ভিতরে আয়…

মেঘলা তাই করল…

আকাশঃ বস..

মেঘলা দূরে রাখা চেয়ারটায় বসতে চাইল..

আকাশ হাত দিয়ে ইশারা করে কাছে এসে বসতে বলল..

মেঘলা এসে বসল..

আকাশঃ কাঁদছিলি কেন?

মেঘলাঃ….
তার আবার কান্না পাচ্ছে..

আকাশঃ উফফ আবার?

মেঘলাঃ কি করব আমার কান্না পাচ্ছে।

আকাশঃ একহাত বাড়িয়ে বলল আয়…

মেঘলা আকাশের বাহুডোরে নিজেকে জড়িয়ে নিয়ে আকাশের বুকে মুখ গুঁজে কেঁদে দিল।

আকাশঃ তুই এত ইমোশনাল কেন মেঘলা…??

মেঘলা উত্তর দিল না সে একমনে কেঁদেই চলেছে..

আকাশঃ কান্না বন্ধ করবি? নাহলে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিব কান্না বন্ধ কর… তুই কাঁদলে আমার ভাল লাগে না বুঝিস না?

মেঘলা কান্না মুছতে মুছতে বলল আমার সাথে তুই এখন এমন করিস কেন?

আকাশঃ তোকে কষ্ট দিতে ভাল লাগে তাই..

মেঘলাঃ তুই খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিস…

আকাশ হেসে বলল তাই বুঝি…??

মেঘলাঃ হুম হুম শুধু অপমান করিস…

আকাশঃ তাহলে প্রতিবাদ করিস না কেন?

মেঘলাঃ কেঁদেই কূল পাইনা প্রতিবাদ কখন করব..

আকাশঃ যেদিন অপমান করার পরেও কাঁদবি না সেদিন থেকে আর অপমান করব না…

মেঘলাঃ মানে…??

আকাশঃ ধুর কি বলে ফেললাম (মনে মনে)
কই কিছু না তো আমি কিছু বলি নি..

মেঘলাঃ কি যেন বললি…

আকাশঃআবার তুই করে বলছিস একটা থাপ্পড় মারব চুপ আর একটাও কথা বলবি না…

মেঘলা এতক্ষন আকাশের বুকে শুয়ে শুয়ে কথা বলছিল এবার উঠে যেতে চাইল।

আকাশঃ উম ম্যাডামের রাগ হয়েছে …কেন যে মানা করি সেটা তো বুঝবে না
ফাযিল মেয়ে আমার যে ভাল লাগছে এটাও কি বুঝে না?(মনে মনে)
কিরে উঠছিস কেন?

মেঘলাঃ কাজের মেয়ের মালিকের বুকে শুয়ে থাকাটা মানায় না…

আকাশঃ কি বললি?

মেঘলাঃ কথাটা আমার নয় আপনারি…বলেই
মেঘলা উঠতে গেল..

আকাশ চিৎকার করে বলল আহ..মেরে ফেললি…

মেঘলা ভয় পেয়ে গেল
মেঘলা কি হয়েছে..??

আকাশঃ নড়ে উঠলি হাতে লাগল..

মেঘলাঃ আ আ আমি বুঝতে পারি নি সরি…

আকাশঃ ঠিক আছে আর নড়িস না..

মেঘলা ঠিক আছে বলে আবার আকাশের বুকে শুয়ে পড়ল।

মেঘলাঃ এবার ঠিক আছে..??

আকাশঃ হুম…একদম নড়বি না।

মেঘলাঃ আচ্ছা নড়ব না…

আকাশঃতোকে কিভাবে শিক্ষা দিতে হয় আমি জানি এবার দেখি কিভাবে উঠিস..??(মনে মনে)

মেঘলা আকাশের বুকে শুয়ে থাকতে থাকতেই ঘুমিয়ে গেল।

আকাশ মেঘলার কপালে চুমু খেয়ে বলল পাগলি একটা…!!!

চলবে..!!!

Leave a Comment