Golperjogot

Golperjogot

ভিলেন – থ্রিলার প্রেমের গল্প পর্ব 25 | Villain Bangla Story

ভিলেন – পার্টঃ২৫
Mona Hossain

মেঘলাঃ আপনি কে জানি না তবে আপনার সাথে আমার কথা বলাটা জরুরী কোথায় পাব আপনাকে?
আপনি কি আমায় ভালোবাসেন যদি বেসে থাকেন সামনে এসে কেন বলছেন না আপনার এই অদ্ভুত ভালোবাসা যে আমার জীবন নরক করে তুলছে বুঝতে পারছেন না আমি এত প্রেসার আর নিতে পারছি না সত্যিই পারছি না কথাগুলি বলতে বলতে কাঁদতে কাঁদতে কখন ঘুমিয়ে গিয়েছি জানি না।

পরদিন সকালে ভাইয়ার জন্য নাস্তা নিয়ে হাসপাতালে গেলাম ভেবেছিলাম আমি খাবার নিয়ে গেলে হয়ত ভাইয়া খুশি হবে কিন্তু সেখানে গিয়ে মনে হল আমি যেন ক্ষমার অযোগ্য কোন অপরাধ করে ফেলেছি।

আকাশঃ তুই আবার এসেছিস কেন?

মেঘলাঃ খাবার টা…

আকাশঃ নিকুচি করেছে তোর খাবারের…নাবিল এখানে ছিল না? ও কি আমাকে না খায়িয়ে রাখত?
এত বড় হয়েছিস এখনো স্কুলে পরিস তাও তোর লজ্জা করে না তাই না? এভাবে ফাঁকি দিলে তো তুই ৮০ বছরেও স্কুলের গন্ডি পার হতে পারবি না।

মেঘলা এবার রেগে গেল
মেঘলাঃ না হতে পারলে নাই তাতে তোর কি পড়াশুনা করতেই হবে এটা কোথাও লিখা আছে?

আকাশঃ বাহ বাহ মুখে দেখছি খই ফুটছে…কি ভেবেছিস পড়াশুনা না করে কারো ঘাড়ে চেপে সারাজীবন পায়ের উপড় পা তুলে কাটিয়ে দিবি তাই না…?? জ্বি না এত সহজ না মুর্খ মেয়েকে কেউ বিয়ে করবে না আর বিয়ে না দিতে পারলে তো আমার ঘাড়েই সারাজীবন পড়ে থাকবি সেটা আমি কি করে মেনে নিব?

মেঘলাঃ এ্যা কি আমার চাকরীজীবি রে…নিকুচি করেছে তোর খরচে চলার কোন ইচ্ছা নেই আমার, আমার বর আছে বুঝলি..??

কথা টা শুনে আকাশ আর নাবিল দুজনেই অবাকের চরম সীমায় পৌছে গেল।

আকাশঃ কি আছে তোর? আবার বল শুনতে পাই নি.

নাবিল বুঝতে পারল এখন মেঘলার কপালে দুঃখ আছে তাই তাড়াহুড়ো করে এগিয়ে এসে বলল কিছু বলে নি,মেঘলা বের হ তোর স্কুলের দেরি হয়ে গিয়েছে তাড়াতাড়ি যেতে হবে… বলেই মেঘলাকে বের করে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল।

আকাশঃ নাবিল কি করছিস ডাক ওকে. কি বলল শুনি একটু…এত সাহস পায় কোথায় আমার মুখে মুখে কথা বলার..??

নাবিলঃ পাগল ছাগল নিয়ে আমার হয়েছে যত জ্বালা, তোরা ২ টাই সাইকো কখন কি বলিস কি করিস কোন ঠিক ঠিকানা নেই।

আকাশঃ ও বুঝে শুনে বলল তো আমি ওর কেউ না ওর বর আছে তাই না? আচ্ছা আমিও দেখি এই বর ওকে কতটা ভাল রাখতে পারে..



এদিকে,
মেঘলাঃ আমাকে পেয়েছে টা কি শুনি এত সকালে উঠে কত কষ্ট করে রান্না করলাম আর বিনিময়ে আমাকে মুর্খ বলল আরও কত কি বলে অপমান করল।আমার যেন কোন আত্মসম্মানেই নেই।
যা তোকে আর ভালবাসব না ভালবাসার শখ আমার মরে গেছে এর চেয়ে নীরবেই ভালো আমার কত খেয়াল রাখে একবারো অপমান করে না…

এদিকে আকাশ রাগে গজ গজ করছে
আকাশঃ হাতে ব্যাথা না থাকলে আজ মেঘলার খবর করে ছেড়ে দিত কিন্তু তা পারছে না বলে রাগে নিজেই নিজের মাথার চুল ছিড়ছে..

নাবিলঃ হয়েছে আর রাগ দেখাতে হবে না নে খেয়ে নে..

আকাশঃ এই ডায়নিবুড়ির খাবার আমি খাব না সরা সামনে থেকে।ভালোর জন্য বল্লাম স্কুলে যেতে আর জবাবে কি বলল শুনলি?

নাবিলঃ আপনিও ভালভাবে বলেন নি সুন্দর করে বল্লেই হত,আর ওর হাতের খাবার খেতে না পারলে একটু পর তো নিজেই সোসাইড করার উপক্রম করবি, চিনি না আমি তোকে?সালা নে খা এখানে ফ্রিজ নেই যে তোর রাগ থামা পর্যন্ত খাবার রাখা যাবে।

আকাশঃ তো রাগ করব না তো কি করব? ওকে মানা করেছি না রান্না ঘরে যেতে তবুও গেল কেন…

নাবিলঃ তোর মতই ত্যাড়া তাই গেল…আর মেয়েদের ত রান্না করতেই হয় নাহলে বর কে খাওয়াবে কি করে?কষ্ট হলেও এর মধ্যে তৃপ্তি আছে।

আকাশঃ তা নাহয় বুঝলাম কিন্তু রান্না করে যে ভুতের মত কাল হবে তখন?
আচ্ছা সেটাও নাহয় মেনে নিলাম কোথাও নিয়ে বের হব না কারো সামনেও নিব না অসুবিধা নেই কিন্তু আমার বাচ্চাগুলা যে উগান্ডার বাচ্চাদের মত দেখতে হবে তখন কি হবে…?? তুই ত বলবিই তুই তো চাস আমার বাচ্চারা কাল হোক..

নাবিল হাসিতে গড়াগড়ি খেতে খেতে বলল…ভাই তুই থাম আর হাসাস নে হাসতে হাসতে আমি এখন শহিদ হয়ে যাব, ও গড কি পরিমান ছেলে মানুষ তোরা ভাবা যায়…

আকাশঃ দেখিস তোকে আমি শাকচুন্নির সাথে বিয়ে দিব…

নাবিলঃহা হা হা আচ্ছা দিস,আর তা না পারলে তোর আর মেঘলার উগান্ডার মত বাচ্চাদের আমার বাচ্চাদের সাথে বিয়ে দিস ঠিক আছে?
এখন খেয়ে নে পাগলা আমি গিয়ে দেখি তোকে কোনভাবে বাসায় নেয়ার পারমিশন পাই কিনা…

আকাশঃ হুম দেখ গিয়ে যদি পারমিশন দেয় খুব ভাল হয় বাসায় নাহয় বেড রেস্টেই থাকব।

নাবিল চলে গেল…






এদিকে মেঘলার হটাৎ মনে পড়ল নীরবকে ত ভিলেন তুলে নিয়ে গিয়েছিল তাই তাড়াতাড়ি নীরব কে ফোন দিল।

নীরবঃ হ্যা মেঘলা বলো?

মেঘলাঃ ফোন ধরেছো মানে ঠিক আছো আচ্চগা কোথায় তুমি..??

নীরবঃ হাসপাতালে…

মেঘলাঃ মানে কি…

নীরবঃ মানে টা তো আমিও জানি না কাল এরা কারা ছিল সেটাও জানি না এই মাস্ক পড়া ছেলেটাই বা কে ছিল কারন ছাড়াই ধুলাই দিয়ে চলে গেল।আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই সব ঘটে গেল।

মেঘলাঃ কোন হাসপাতালে আছো বলো আমি আসব।

নীরবঃ সিটি হাসপাতাল ২০৪ নাম্বার বেড।

মেঘলাঃ কি…?? ২০৩ নাম্বার বেডে তো আকাশ ভাইয়া আছে।

নীরবঃ ওমা আকাশের আবার কি হল…??

মেঘলাঃ এক্সিডেন্ট তোমাকে সব বলব আগে আসি।

নীরবঃ হুম এসো আমাকে মেরে ওরাই আবার হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়ে গিয়েছে।

মেঘলাঃ তারমানে ভাইয়াকেও ওরাই…

নীরবঃ কিছু কি বলছো শুনতে পাচ্ছি না।

মেঘলাঃ কিছু না থাক আসছি…




কিছুক্ষন পর মেঘলা আকাশের বেডের সামনে যাচ্ছিল নাবিল সেটা লক্ষ্য না করলেও আকাশের চোখ এড়াতে পারে নি মেঘলা..

আকাশঃ সামনে দিয়ে কে গেল রে..??

নাবিলঃ হাসপাতালে কত মানুষ আছে

আকাশঃ মেঘলাকে দেখলাম মনে হল…

নাবিলঃ আরে না ও এতক্ষনে চলে গিয়েছে।

আকাশঃ একবার বাইরে গিয়ে দেখতো।

নাবিল গিয়ে দেখে আসল কিন্তু মেঘলা রুমে ঢুকে গিয়েছে তাই পেল না।

এর মধ্যেই ডাক্তার এসে বলল আকাশকে বাসায় নিয়ে যেতে পারবে তবে কয়েকদিন বেড রেস্টে থাকতে হবে নাবিল সব ফরমালিটি শেষ করে এসে আকাশ কে নিতে আসল।

আকাশ নাবিলের উপড় ভর ধীরে ধীরে হাঁটতে লাগল।
হঠাৎ আকাশ থেমে গেল..

নাবিলঃ কি রে দাঁড়িয়ে গেলি যে… কষ্ট হচ্ছে? বসবি একটু..??

আকাশ গম্ভির গলায় উত্তর দিল হুম কষ্ট খুব কষ্ট হচ্ছে রে…আচ্ছা বসলে কি বুকের বাম পাশের ব্যাথা কমে নাবিল?

নাবিল অবাক হয়ে আকাশের দিকে তাকাল আর দেখল আকাশের ছল ছল চোখে তাকিয়ে আছে।
নাবিল আকাশের দৃষ্টির দিকে চোখ রাখল আর দেখল নীরব বেডে শুয়ে আছে মেঘলা বসে বসে কাঁদছে।

নাবিল আকাশকে সাত্ত্বনা দেয়ার জন্য বলল,
নাবিলঃ এই যুগে এগুলা ব্যাপার নাকি..?? বোকা মন খারাপ করছিস কেন.. ফ্রেন্ড থাকতে পারে না?

আকাশঃ এটাই মেঘলার বর তাই না?

নাবিল যদিও নীরব কে চিনে কিন্তু বলল না উল্টে বলল কি জানি আমি চিনি না।

আকাশ হেসে বলল আমার সাথে লুকুচুরি করিস?আজ থেকে ১,৪৭১ দিন আগে ছেলেটাকে দেখেছিলাম মেঘলার হাত ধরে দাঁড়িয়ে ছিল সেই দৃশ্য আমি এখনো ভুলি নি কোনদিন ভুলব ও মা এই চেহেরা ভুল হওয়ার নয়।

নাবিলঃ আকাশ মেঘলাকে ডাকব..?

আকাশঃ প্রশ্নই আসে না প্রতিটা মানুষের নিজের মত চলাফেরা করার অধিকার আছে। চল আমরা যাই। আমাদের দেখলে মেঘলা হয়ত তার হাজবেন্ডের সাথে ফ্রিলি সময় কাটাতে পারবে না হাজার হোক বড় ভাই তো নাকি।

নাবিলঃ আকাশ….কিসব বলছিস বিয়েই হয়নি কিসের বর।

আকাশঃ এটা আমার নয় মেঘলার কথা…নাবিল চল প্লিজ আমার দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে তুই তো দেখি ভুলেই গেছিস আমি অসুস্থ।

নাবিল বুঝল আকাশ খুব কষ্ট পেয়েছে কারন আকাশ রেগে গেলে ভাংচুর করে চেঁচামেচি করে আর রাগের মাত্রা বেশি বেড়ে গেলে না কষ্ট পেলে একদম চুপ হয়ে যায় আর কিছু বললেও খুব শান্ত গলায় বলে যেমন টা এখন বলল।

তাই আর কথা না বাড়িয়ে আকাশ কে নিয়ে বেরিয়ে গেল।

চলবে….!!!

Leave a Comment