Golperjogot

Golperjogot

ভিলেন – এ্যাকশন লাভস্টোরি পর্ব 9 | Villain Bangla Golpo

মেঘলাঃ কিরে হেল্প কর চুপচাপ বসে আছিস কেন?
আকাশ ভেবে চিন্তে বুদ্ধি বের করল,
আকাশঃ আয়…
মেঘলাঃ কোথায় যাব?
আকাশঃ কোথাও না…পিছনে ঘুরে দাঁড়া…
মেঘলাঃ কি করবি?
আকাশঃ জামা খুলতে গেলে তো সাবধানে খুলতে হবে যা চোখ বন্ধ করে সম্ভব না…কিন্তু যদি কেটে ফেলি তাহলে তো চোখ বন্ধ করেই কাটা যাবে তাই না?
মেঘলাঃ বুদ্ধিটা ভাল..?
আকাশ চোখ বন্ধ করে একটা কাঁচি দিয়ে পিছন থেকে মেঘলার টি শার্ট কেটে দিল….
কিন্তু তাতেও আকাশের হাত রীতিমতো কাঁপছে…

মেঘলা আকাশের অবস্থা দেখে হাসিতে রীতিমতো গড়াগড়ি খাচ্ছে…

আকাশ চোখ বন্ধ রেখেই বলল এত হাসির কি হল…

মেঘলাঃ আচ্ছা তুই তো চোখ বন্ধ করে জামা খুলে দিলি কিন্তু পড়াবি কি করে? এখন তো দেখতেই হবে তাই না?

আকাশঃ নির্লজ্জ বেহায়া মেয়ে…

আকাশ অপমান করার জন্যে কথা গুলি বললেও মেঘলার গায়ে লাগল না সে একনাগারে হেসেই চলেছে…

আকাশঃ শোন তোকে আমি চাদর দিয়ে মুড়িয়ে রাখব ড্রেস পড়াব না তবুও তোকে আমি দেখব না না না…

মেঘলাঃ আমার তাতে কোন অসুবিধে নেই রাতে চাদর একপাশে থাকবে আর আমি খালি গায়ে তোর বুকে থাকব।

আকাশ এবার চোখ খুলল তারপর বলল,
তাই বুঝি…?? তা এত ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলছিস কেন? বলনা তুই বড় হয়ে গেছিস তাই এখন তোর কিছু পেতে ইচ্ছা করে…
আমার কোন অসুবিধে নেই ওদিন তো অর্ধেক কাজ করেই ফেলেছি চল বাকিটাও করে ফেলি, বলেই আকাশ মেঘলার দিকে এগিয়ে যেতে লাগল।

মেঘলা আকাশের কথায় ভয় পেয়ে গেল আর নিজের গায়ের চাদর আখরে ধরে বলল…

মেঘলাঃ আ আ আ আমি তো মজা করছিলাম এগিয়ে আসছিস কেন…???

আকাশঃ ওমা ভয় পাচ্ছিস কেন? এখন ভয় পেলে তো হবে না এতক্ষন আমাকে উসকে দিলি এখন পিছিয়ে যাচ্ছিস কেনো…ভয় পাস না ব্যাথা দিব না তুই যেভাবে চাইবি সেভাবেই হবে একদম তোর মন মত…

মেঘলাঃ মম ম মানে কি? কি সব বলছিস?কাছে আসবি না বলে দিলাম…আমি কিন্তু চেঁচাব..

আকাশঃ চেঁচাবে কেন?তুমিই ত চাইলে তাই না? আর এখানে চেঁচালে শুনবেই বা কে?এমন করতে হয় না বেবি কাছে আসো…

মেঘলাঃ আমি এসব করতে চাই নি আমি শুধু তোকে একটু জ্বালাতে চেয়েছিলাম।
ভুল হয়ে গেছে মাফ করে দে আর এমন করব না 😭😭

আকাশঃফাউল মেয়ে মনে থাকবে তো…

মেঘলাঃ থাকবে থাকবে…

আকাশঃ কখন কি বলিস কি করিস নিজেই বুঝিস না তার ছিড়া কোথাকার…থাক থাক আর কাঁদতে হবে না আমি এতও খারাপ না।

মেঘলাঃ তাহলে এভাবে ভয় দেখালি কেন?

আকাশঃ ভয় দেখাই নি আমি জানি কোন রোগের কি ওষধ দিতে হয়। যাই হোক তুই থাক আমি কাউকে ডেকে আনি জামা পরানোর জন্য।

বলেই আকাশ চলে গেল….

মেঘলা এবার বুঝতে পারল সে কি করেছে আর নিজে নিজেই লজ্জা পেল…

বেশ কিছুক্ষন পর একটা মেয়েকে নিয়ে ফিরে এলো..কিন্তু তাতে আরো একটা বিপত্তি ঘটে গেল…মেয়েটা মুটামুটি আকাশের সমবয়সি তাই মেয়েটাকে দেখেই মেঘলার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল…

মেয়েটা ঘরে ঢুকতেই মেঘলা এগিয়ে গিয়ে বলল এই মেয়ে তোমার লজ্জা করে না একটা ছেলের সাথে ঢং করতে?তোমাদের মত মেয়েদের জন্যেই মেয়েদের দুর্নাম হয় আমার সুখ সহ্য হচ্ছে না তাই আমার বর কে কেড়ে নিতে এসেছো তাই না?

মেয়ে তো অবাক সাথে আকাশও।

আকাশঃ কি সব বলছিস?আপু কিছু মনে করবেন না ও আসলে এমনেই…

মেঘলাঃ তুই আমাকে ধমক দিলি তাও এই মেয়েটার জন্যে? কতদিন ধরে চলছে এসব?এই জন্যেই আমাকে এত ইগনোর করিস? আমার চেয়ে ভাল দেখতে তাই না…ঠিক আছে মনে রাখিস? আমিও একদিন সুন্দরী হব তখন তোকে ইগনোর করব..থাক তুই তোর সুন্দরী কে নিয়ে আমি চলে যাচ্ছি।

আকাশঃ জীবনে বহু পাগল দেখেছি কিন্তু তোর মত এক পিসও দেখি নাই… যাচ্ছিস ভাল কথা চাদর পরে না জামা পরে যা.. আর ইনি আমার প্রেমিকা নয় তোকে জামা পরিয়ে দিতেই এসেছিলেন।

মেঘলাঃ মিথ্যা শান্তনা দিবি না জামা পরানোর জন্য কোন মহিলা কে নিয়ে আসতি মেয়ে আনলি কেন…তুই একটা বেইমান আমার ভালবাসার মুল্য দিলি না দেখে নিস তোর কখনো ভাল হবে না।অভিশাপ দিলাম তোর ১২ টা বাচ্চা হবে সবগুলা দেখতে উগান্ডার মত হবে।

কথাগুলি শুনে মেয়েটা হাসতে হাসতে বলল আপনার জিএফ কিন্তু বেশ ইন্টারেস্টিং ভাইয়া তবে পিচ্চি।এবার মেঘলার কাছে গিয়ে বলল,
বোকা মেয়ে উনার যদি আমার সাথে সম্পর্ক থাকত তাহলে কি তোমার কাছে আমাকে নিয়ে আসতো?লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করত…বুঝেছো

মেঘলাঃ অহ আচ্ছা তারমানে ও যখন কলেজে যায় আমাকে না জানিয়ে প্রেম করতে পারে তাই না?

আকাশঃ হয়ে গেল…আপু মাফ চাই ওর ড্রেস চেঞ্জ করতে হবে না আপনি যান ও এভাবেই থাকুক।

মেঘলাঃ মোটেও না তুমি যেও না গো এসো গল্প করি তুমি মেয়েটা ভালো…

আকাশঃ কিছুই বলার নেই তুই জীবনে ঠিক হবি বলে মনে হয় না।

মেয়েটা মেঘলার জামা পরিয়ে দিল এর মধ্যে মেঘলা আকাশের নামে হাজারটা অভিযোগ করে ফেলেছে…

মেয়েটাকে এগিয়ে দিতে গেল আকাশ…

আকাশঃ আপনি কিছু মনে করেন নি তো আপু…??

মেয়েটাঃ মেঘলা আসলেই লাকি এমন বয়ফ্রেন্ড সহজে পাওয়া যায় না। আপনি কত খেয়াল রাখেন ওর..

আকাশঃ ও আমার জীবনের সাথে মিশে গেছে ওকে ছাড়া নিজেকে ভাবতেই পারি না।

মেয়েটাঃ আসলে ও আপনাকে একটু বেশিই ভালবাসে তাই আপনার পাশে কাউকে মানতে পারে না…

আকাশ মেয়েটাকে দিয়ে বাসায় আসার সাথে সাথেই,

মেঘলাঃ আমি আর রিস্ক নিতে পারব না

আকাশঃ কিসের রিস্ক?

মেঘলাঃ তুই আজ আমাকে বিয়ে করবি

আকাশঃ মানে কি?

মেঘলাঃ তুই কবে কোন মেয়ের পাল্লায় পড়ে যাবি এসব আমি মানতে পারব না..এখনি তিনবার কবুল বল…

আকাশঃ এর আগেও বহুবার বলিয়েছিস

মেঘলাঃ আজ আবার বল

আকাশঃ পারবনা…

মেঘলাঃ কেঁদে ফেলব কিন্তু…

আকাশঃ আচ্ছা বাবা কবুল কবুল কবুল
মেঘলাও বলে ফেলল

মেঘলাঃ আজ থেকে তুই আমাকে বউ বলে ডাকবি

আকাশঃ আচ্ছা ডাকব।






কেটে গেছে অনেক দিন,মেঘলার হাত ঠিক হয়ে গিয়েছে এই দিনগুলি আকাশ মেঘলার খুব যত্ন নিয়েছে একজন স্বামীর যা যা দায়িত্ব সবি মুটামুটি পালন করেছে…মেঘলাকে খায়িয়ে দেওয়া ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া গা মুছিয়ে দেওয়া সবি করেছে আকাশ তাই সে সিধান্ত নিয়েছে যখন নিজের পায়ে দাঁড়াবে সে মেঘলাকেই বিয়ে করবে।কারন মেঘলার সাথে তার অনেকটা ঘনিষ্টতা হয়ে গেছে।

মেঘলারা শহরে ফিরে এসেছে বেশ কিছুদিন আগে আকাশ বাসায় বলেছে ট্যুরে ছিল আর মেঘলা হোস্টেলে থাকে তাই নাবিল ছাড়া আর কেউ জানলো না যে আকাশ মেঘলা একসাথে ছিল।ভালভাবেই দিন কাটছিলো….

কিন্তু একদিন সকালে আকাশের ফোনে ফোন আসল।

আকাশঃ হ্যা বল মেঘলা…

মেঘলাঃ তাড়াতাড়ি একবার হাসপাতালে আয়

আকাশঃ কেন কি হয়েছে…

এবার মেঘলা কেঁদে ফেলল,

আকাশঃ কি হয়েছে মেঘলা?

মেঘলা কান্নার জন্যে কিছু বলতে পারল না আকাশ ফোন রেখে হাসপাতালে উদ্দেশ্য রওনা হল,

গিয়ে দেখলো মেঘলা বসে বসে কাঁদছে…

আকাশঃ কিরে ন্যাকারানী আবার কি হল?

মেঘলাঃ ডাক্তার ম্যাম তোকে ডাকছেন ভিতরে যা ভাইয়া।

আকাশঃ কি এমন করেছিস বল ত? আচ্ছা চল গিয়ে দেখি বলে মেঘলাকে নিয়ে আকাশ ডাক্তারের রুমে গেল

আকাশঃ আসতে পারি…??

ডাক্তারঃ হ্যা এসো…??

আকাশ মেঘলা ভিতরে গেল…

ডাক্তার আকাশের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলল তুমিই আকাশ?

আকাশঃ জ্বি হ্যা কিন্তু কেন ম্যাম?

ডাক্তারঃ না মানে তুমি এত ছোট সেটা আমি এক্সপেক্ট করি নি।মেঘলা তো ছোটর চেয়েও ছোট আর তুমিও ছোট। মেঘলা আমাকে সবি বলেছে এখন বুঝতে পারছি এটা কম বয়সের ভুল ছাড়া কিছুই না কিন্তু যা হয়েছে খুব খারাপ হয়েছে।

আকাশঃ ভুল মানে? কি হয়েছে ম্যাম আমি তো কিছু বুঝতে পারছি না।কি রে মেঘলা?

মেঘলা কিছু না বলে নীচ দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলছে।

ডাক্তারঃ আচ্ছা তুমি গত ১ মাস মেঘলার সাথে ছিলে তাই না?

আকাশ অনায়েসে স্বীকার করে বলল হ্যা ছিলাম কিন্তু কেন?

ডাক্তারঃআসলে মেঘলার কিছুদিন যাবৎ কিছু সমস্যা হচ্ছিল তাই কাল আমার কাছে এসেছিল আমি ওকে কয়েকটা পরিক্ষা দিয়েছিলাম এই হল তার রিপোর্ট ওর প্রেগন্যান্সি রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে আকাশ….

কথাটা শুনে আকাশের পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল,আকাশ হতবাক হয়ে গেল।

ডাক্তারঃ তুমরা ২ জনেই অপ্রাপ্ত বয়স্ক বিয়ের বয়স তো হয় নি তাই তোমাদের কি উপদেশ দেয়া উচিত আমি জানি না আমার মনে হয় তুমাদের পরিবারকে ব্যাপারটা জানানো উচিত।

আকাশ কিছুক্ষন চুপ থেকে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল…আমরা এখন আসি ম্যাম…কথাগুলি বলেই আকাশ মেঘলাকে নিয়ে যাওয়া তো দূর ওর দিকে একবারো না তাকিয়ে হনহন করে হেঁটে বাইরে চলে গেলো।

মেঘলার বিষয় টা খারাপ লাগলেও কিছু করার নেই সে চুপচাপ আকাশের পিছু পিছু যেতে লাগল।

মেঘলা হাসপাতালের বাইরে এসে পিছন থেকে আকাশ কে ডাকল।

মেঘলাঃ ভাইয়া…

আকাশ দাঁড়াল মেঘলা ভয়ে ভয়ে আকাশের কাছে গেল কারন আকাশ কে দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে রাগে ফেটে পড়ছে …

আকাশ দাঁতে দাঁত চেপে বলল বাচ্চাটার বাবা কে মেঘলা….???

মেঘলা অবাক হয়ে বলল কিসব বলছিস? কে মানে?

আকাশঃ পেটে বাচ্চা তো এমনি এমনি আসে না তাই না?

মেঘলাঃ গত একমাস তো আমি তোর সাথে ছিলাম তাই না…কথাটা বলার সাথে সাথে আকাশ স্বজোরে মেঘলাকে থাপ্পড় বসিয়ে দিল।

আকাশঃ কি বলতে চাচ্ছিস আমি তোর সাথে কিছু করেছি?ডাক্তারের সামনে তোকে ছোট করতে চাই নি তাই সব চুপচাপ সহ্য করেছি তারমানে তো এই না যে বাচ্চাটার বাবা আমি…আমি তোর সাথে কখন কি করেছি বল?আমি তোর মত খারাপ নই।কার না কার পাপ আমার ঘাড়ে চাপাতে চাইছিস?

মেঘলা গালে হাত দিয়ে বলল,
আমি হয়ত প্রমান দিতে পারব না কারন তুই কখন কিভাবে সুযোগ নিয়েছিস আমি জানি না কিন্তু এটা তো জানি আমি জ্ঞানত কারো সাথে কিছু করি নি।আর আমি এটাও জানি আমি এতদিন তর সাথেই ছিলাম তুই হয়ত আমার ঘুমেত সুযোগ নিয়েছিস ডাক্তার ত আমাকে ঘুমের ওষধ দিয়েছিল তাই না? তুই হয়ত সেই সুযোগটাই নিয়েছিস আর এখন ফেঁসে গিয়ে অন্য সব ছেলেদের মতই নিজের পাপ ঝেড়ে ফেলতে চাইছিস তাই না?

আকাশ আবারও মেঘলাকে থাপ্পড় মারল এবার মেঘলা চিটকে পড়ে গেল ঠোঁট কেটে রক্ত পড়তে শুরু করল কিন্তু আকাশের সেদিকে খেয়াল নেই।

আকাশঃ এতদিন ভাবতাম তুই পাগলামি করিস কিন্তু আজ জানলাম তুই আসলে কি… তুই যে এত টা খারাপ আমার জানা ছিল না।দুশ্চরিত্র, নষ্টা,বেইমান একটা মেয়ে তুই।তোর এই পাপী চেহারা দেখাও পাপ। আমি আর কখনো তোর চেহারাটাও দেখতে চাই না। লজ্জা থাকলে আর কখনো আমার সামনে আসবি না… বিদায় হ চোখের সামনে থেকে ঘৃনা করছে তোকে দেখে….ছি ছি ছি আমার ভাবতেও লজ্জা করছে তুই আমার পরিবারের একজন বলে আকাশ চলে গেল।

মেঘলা সেখানে বসেই কাঁদতে লাগল…
মেঘলাঃ আমি পাগল নই যে জানব না কার সাথে কি করেছি আমি যে কারো সাথে কিছু করি নি সেটা আমি জানি তুই এই কয়দিনে যেকোনো ভাবে সুযোগ নিয়েছিস আমি এটাও জানি এটা তোরেই বাচ্চা কিন্তু নিজের ভবিষ্যতের কথা ভেবে তুই এড়িয়ে যেতে চাইছিস।স্বার্থই কি জীবনের সবকিছু?আমার কথা একবারো ভাবলি না ভাইয়া এই অবস্থায় আমি সমাজে মুখ দেখাব কি করে?আমাকে এতটা অসহায় করে দিয়ে এভাবে আমার হাত টা ছেড়ে দিতে পারলি তুই…??তুই না বলেছিল সমস্ত ঝড় থেকে আমাকে আগলে রাখবি আজ কোথায় গেল সেসব কথা সবার সামনে আমাকে অপমান করতে একবারো বুকে বাঁধল না..??

Leave a Comment