Golperjogot

Golperjogot

ভিলেন–রোমান্টিক প্রেমের গল্প পর্ব 14 | Villain Bangla Golpo

মেঘলা ফেল ফেল করে তাকিয়ে আছে আকাশের চলে যাওয়ার দিকে…

আকাশের চলে যাওয়ায় মেঘলার মন খুব খারাপ হলেও একজন খুব খুশি হয়েছে সেটা হল নীরব।সে দূর থেকে সবটাই দেখেছে…

আকাশ চলে যাওয়ার পর মেঘলা সেখানে বসেই কাঁদতে শুরু করল…

হটাৎই
_বোকার মত কাঁদছো কেন সবাই তো তুমাকে সার্কাসের জোকার ভাবছে…

কথাটা শুনে মেঘলা অবাক হয়ে সেদিকে তাকাল…

মেঘলাঃ আপনি এখানে…??

নীরবঃ আমি কোথায় আর কেন যাচ্ছি সেটা কয়ফত তুমি চাইতে পারতে যদি কাল আমাদের এনগেইজমেন্ট টা কাল হত,যেহেতু হয় নি তাই সেসব চিন্তা বাদ দিয়ে উঠো তোমাকে বাসায় দিয়ে আসি…

মেঘলাঃ…..

নীরব ধমক দিয়ে বল্ল,কি বল্লাম কথা কানে যায় নি…?? এইটুকু একটা মেয়ে হয়ে প্রেম করতে লজ্জা করে না?

মেঘলা কিছু বলতে পারছে না কারন সে নীরবের আচারনে অবাক হচ্ছে…

নীরবঃ কালকে প্রেম উতলে পড়ছিল আর আজকে ছেড়ে চলে গেল এসব কি ধরনের প্রেম? চোখ মুছো আর বাসায় যাও… তোমারতো এখনো চকলেট খাওয়ার বয়সটাও পার হয় নি বলে মেঘলার হাত ধরে টেনে তুলল নীরব…আর সামনের দিকে হাঁটতে লাগল।

কিন্তু ক্যাফের বাইরে যাওয়ার আগেই আকাশ চলে আসল আর একটানে মেঘলাকে নীরবের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিল…

আকাশ নীরবকে চিনে না এর সাথেই যে মেঘলার বিয়ে ঠিক হয়েছিল সেটাও জানে না তাই মেঘলাকে নীরবের সাথে দেখে আকাশের একটি খারাপ লাগল…

মেঘলাঃ তুই যাস নি…???

আকাশ রাগি ভাব নিয়ে বলল চলে গেলেই ভাল হত মনে হচ্ছে তবে ভাবিস না বিরক্ত করতে আসি নি ফুফিমনিকে বলেছিলাম লাঞ্চের আগেই তোকে পৌঁছে দিব তাই চলে গিয়েও ফিরে আসলাম…

আকাশ যখন মেঘলার সাথে কথা বলছে নীরব হাত বাড়িয়ে বলল হাই আকাশ…

আকাশ নীরবের দিকে একবার তাকিয়ে কিছু না বলেই মেঘলাকে নিয়ে চলে গেল।

রাস্তায় আকাশ মেঘলার সাথে কোন কথা বলল না মেঘলাও না।

বাসার সামনে এসে মেঘলাকে নামিয়ে দিয়ে আকাশ বলল আবারো বলছি বাড়াবাড়ি করবি না সবসময় সাবধানে থাকিস আর ছেলেদের কাছ থেকে দূরে থাকিস মেঘলার মন অনেক খারাপ ছিল তাই কিছু না বলেই বাসার ভিতরে চলে গেল…

আকাশঃ এত ভাব… তুই কি বুঝিস না আকাশ কোন কারন ছাড়া যাচ্ছে না আমি যেতে না যেতেই অন্য একজনের হাত ধরে ফেললি..তাও আমি কথা বলতে চাইলাম পাত্তা না দিয়ে চলে গেলি… কথা গুলি ভাবতে ভাবতে মন খারাপ করে আকাশ বাসায় ফিরল তারপর সব গুছিয়ে নিল…




সন্ধ্যা ৬ টায় আকাশের ফ্লাইট বাসার সবাই তাকে বিদায় জানাতে এয়ারপোর্টে গেল
কিছুক্ষনের মধ্যেই তাকে দেশ ছাড়তে হবে কিন্তু আকাশের চোখ শুধু মেঘলাকেই খুঁজছে.. যদিও আকাশ জানে মেঘলা আসবে না,আসতে চাইলেও তার বাবা আসতে দিবে না তাও বারবার এদিক ওদিক দেখছে আকাশ…

এদিকে মেঘলাঃ আমি যাব মা… বাবাকে বলো এত বাড়াবাড়ি একদম ভালো লাগছে না… ভাইয়া চলে যাচ্ছে আর আমি যাব না এটা হতে পারে না।

মেঘলার মাঃ শুনছো একটু যেতে দাও না মেয়েটা এত করে চাইছে…চলেই তো আসবে.

মেঘলার বাবাঃ আস্কারা দিতে দিতে মেয়েটাকে মাথায় তুমি তুলেছো যেমন মা তার তেমন মেয়ে।কান খুলে শুনে নাও ওদের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই বলে ২ জনকেই ঘরবন্দি করে তার বাবা চলে গেল..

মেঘলা ঘরের ভিতর থেকে চেঁচাচ্ছে দরজা খোলো আমি ভাইয়ার কাছে যাব…
মেঘলা এবার কেঁদে ফেলেছে কাঁদতে কাঁদতে বলল ভাইয়া তুই কি শুনতে পাচ্ছিস না আমি তোকে ডাকছি.. আমাকে নিয়ে যা প্লিজ…



আকাশ ওয়েটিং রুমে বসেছিল হটাৎই চমকে উঠল,

নাবিলঃ কিরে…?? কোনো সমস্যা?

আকাশঃ মেঘলা আমায় ডাকলো না?

নাবিলঃ এখানে মেঘলা কি করে আসবে ও তো ওর বাসায় চলে গেছে…আসার হলে বাসায় এসেই দেখা করত।

আকাশঃ আমি যে স্পষ্ট শুনলাম আমাকে ভাইয়া বলে ডাকল…

নাবিলঃ এটা তোর মনের ভুল..
আকাশঃ ও হতে পারে…

কিছুক্ষন পরেই সকল যাত্রীর উদ্দেশ্যে এনাউন্সমেন্ট করা হলো।

আকাশ সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিল..

সবশেষে নাবিলের কাছ থেকে বিদায় নেয়ার পালা…

আকাশ নাবিলকে জড়িয়ে ধরলো,

নাবিলঃ তোকে মিস করব…

আকাশঃ আমি বুঝি করব না?একমাত্র তুই আর মনিই জানিস আমি কেন যাচ্ছি তানাহলে সবাইলে ছেড়ে আমি কিছুতেই যেতাম না..

নাবিলঃ জানি,সাবধানে যাস

আকাশঃ নিজের খেয়াল রাখিস…

নাবিলঃ রাখব রাখব এবার ভিতরে যা সময় হয়ে গিয়েছে…

আকাশঃ চলে গেল,

নাবিলরাও চলে আসছিল তখন পিছন থেকে..

–নাবিল…!!!

নাবিল পিছনে তাকিয়েই দৌড়ে গেল…

নাবিলঃ কিরে ফিরে আসলি যে ? কিছু রেখে গেছিস?

আকাশঃ আত্মাটাই তো রেখে যাচ্ছি রে…

এবার নাবিল এসে আকাশকে জরিয়ে ধরে বলল, এইটুকু ভরসা করতে পারছিস না? নাবিল থাকতে তোর মেঘলাকে অন্য কারোর হতে দিব না।তুই নিশ্চিন্তে যা…

আকাশঃ আর কোন চিন্তা নেই এবার আমি শান্তিতে যেতে পারব…

নাবিলঃ যা তো পাগলা…

আকাশ চলে গেল…!!!








আকাশ চলে গিয়েছে ২ দিন হয়েছে মেঘলার জীবন এই ২ দিনেই থমকে গেছে…

মেঘলা এই ২ দিনে একবারো আকাশকে ফোন দেয় নি সে আসলে নাম্বারেই জানে না ওদিকে আকাশ অনেকবার ফোন করেও মনি কে লাইনে পায় নি কারন তার ফোন টা মেঘলার বাবা নিয়ে নিয়েছে…

আকাশ নাবিলের কাছে অনেকবার ফোন করেছে মেঘলার খোঁজ নেয়ার জন্যে কিন্তু নাবিল নিজেও মেঘলার কোন খোঁজ জানে না কারন মেঘলা হোস্টেলে না নিজের বাসায়।এভাবেই দিন কাটছিল….




হটাৎ একদিন

মেঘলার বাবাঃ নীলু শুনছো ২ জনেই রেডি হয়ে নাও আমরা তোমাদের বাসায় যাচ্ছি।

মেঘলার মাঃ হটাৎ ওই বাসায় কেন?

মেঘলার বাবাঃ গেলেই জানতে পারবে…

মেঘলার মাঃ আগেই বলো তুমি তো কোন উদ্দেশ্য ছাড়া যাবে না জানি।

মেঘলার বাবাঃ তাহলে সোজাসুজি বলি তোমার বাবা অনেক সম্পত্তি রেখে গেছেন তার সন্তান হিসেবে তোমার সেগুলিতে অধিকার আছে..

মেঘলার মাঃ মানে কি?

মেঘলার বাবাঃ মানে টা তো সহজ তোমার সম্পত্তি তোমার ভাইরা অনেকদিন ব্যবহার করেছে আর না এবার সব নিয়ে আসবে গিয়ে..

মেঘলার মাঃ আমি পারব না…

মেঘলার বাবাঃ আমাকে খারাপ হয়ে বাধ্য করো না নিজের কপালে দুঃখ দেখতে না চাইলে আমি যা বলছি তাই করো তানাহলে তোমার আর তোমার মেয়ে ২ জনের কপালেই দুঃখ আছে বলে দিলাম।

মেঘলা তার বাবার ব্যবহারে অবাক হল কারন তার বাবা আগে এমন ছিল না হটাৎ করেই পরিবর্তন এসেছে তার মধ্যে…

মেঘলার মার হাজারও আপত্তি থাকা সত্তেও শেষনেষ তাকে যেতে হল।মেঘলাও এই সুযোগে আকাশের বাসায় গেল যাতে আকাশের সাথে যোগাযোগ করতে পারে..

মেঘলাদের আসতে দেখে বাসার সবাই খুশি হল তারা ভাবল সব ঝগড়া ঝাটি মিটানোর জন্য তারা এসেছে…

মেঘলাকে দেখে নাবিল একটু বেশিই খুশি হল…কারন সে আজ আকাশের ইচ্ছা পূরন করতে পারবে।

মেঘলা গিয়ে নাবিলের বোন নেহা আর মিলির সাথে গল্প করতে বসলো…

মেঘলাঃ আচ্ছা নেহা আপু আকাশ ভাইয়া ওখানে গিয়ে ফোন করে নি…??

নেহাঃ হ্যা করে তো আজ একটু আগেও করেছিল…

মেঘলাঃ অহ…
তুই আমাকে একটাবার কিভাবে কল করলি না ভাইয়া আর করবিই বা কেন আমি তো কুকুর আমাকে কল করলে তো লায় দেয়া হয়ে যাবে (মনে মনে)

মেঘলা মন খারাপ করে নেহার ঘর থেকে চলে আসলো…

রুম থেকে বেরিয়ে নাবিলের সাথে দেখা হল,

নাবিলঃ মেঘলা শোন…

মেঘলাঃ হুম বল..

নাবিলঃআকাশের সাথে কথা বলবি?

মেঘলাঃ না…ভাল লাগছে না রে ভাইয়া…এখন যাই?

নাবিলঃ কোথায় যাচ্ছিস?

মেঘলাঃ জার্নি করে এসেছি খারাপ লাগছে ফ্রেশ হব।

নাবিল অনেক জোর করার পরেও মেঘলা কথা বলল না।

নাবিলঃ ফ্রেশ হয়ে আমার রুমে একটু আসিস তো…

মেঘলাঃ ঠিক আছে বলে চলে গেল…

মেঘলা আকাশের ঘরে গিয়ে আকাশের ব্যবহার করা সব জিনিস গুলি দেখতে লাগলো… আকাশের সাথে তার কত স্মৃতি মিশে আছে এই ঘরে আজ ঘর টা আছে সব জিনিসপত্রও আগের মতই আছে শুধু আকাশ নেই ভেবেই মেঘলার চোখ ভিজে গেল।

মেঘলা আকাশের বিছানায় শুয়ে কাঁদতে লাগল বেশ কিছুক্ষন পর মেঘলা আকাশের ওয়াশরুমে গিয়ে গোসল করে নিল…

এরিমধ্যে নিচ থেকে চেঁচামেচির আওয়াজ ভেসে আসল মেঘলা নিচে গিয়ে দেখলো বাসার সবাই সেখানে।নাবিলো আছে।

মেঘলার মা আকাশের বাবাকে বলছেন তার সম্পত্তি বুঝিয়ে দিতে এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে ঝামেলা হচ্ছে এক পর্যায়ে আকাশের বাবার সাথে মেঘলার বাবার তুমুল ঝগড়া বেঁধে গেল আর মেঘলার বাবা সবাইকে নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলেন আর সবাইকে আদালতের হুমকি দিয়ে গেলেন।

এই ঝামেলার জন্য নাবিল আর আকাশের সাথে মেঘলার কথা বলাতে পারল না…

কিছুদিনপর মেঘলার বাবা আদালতের আশ্রয় নিয়ে সব পাওনা সম্পত্তি নিয়ে নিলেন তারপর থেকে আকাশের বাসার কেউ এই মেঘলা বা মেঘলার পরবারকে সহ্য করতে পারে না। ২ পরিবার যেন পৃথিবীর ২ মেরু হয়ে গেল।

নাবিল বুঝতে পারছিল এগুলি আকাশকে জানালে আকাশ বিদেশে থাকবে না তাই জানালো না…




আকাশ নাবিল কে প্রশ্ন করেছিল নাবিল বলেছে মেঘলা কথা বলতে চায় না।

আস্তে আস্তে আকাশের কথা বলার ইচ্ছাটাও হারিয়ে গেল কারন আকাশ জানে মেঘলা চাইলেই যোগাযোগ করতে পারত…কিন্তু যেহেতু করেনি তারমানে মেঘলা নিজেই চায় না কথা বলতে তাই আকাশ আর মেঘলার ব্যাপারে জানতে চায় না।
নিজের ভাগ্যকে মেনে নিয়ে পড়াশুনায় মন দিল আকাশ…

আকাশ uk তে তার খালমনির বাসায় থাকে।আকাশের খালামনির ২ মেয়ে নীলিমা,ইষিকা আর ছেলে ঈশান। তারমধ্যে নীলিমা,ঈষিকা ২ জনেই আকাশের জুনিয়র ঈশান, নাবিল,আকাশ সমবয়সী।নীলিমা আকাশকে আগে থেকেই পছন্দ করে যদিও আকাশ মেয়েদের সাথে ততটা মিশে না।

এদিকে মেঘলাকে তার স্কুল ছাড়িয়ে নিয়ে চলে এসেছে তার বাবা।তাদের শহরেই ভর্তি করেছে।

কেটে গেছে ৬ মাস,মেঘলাও আকাশ ভুলতে শিখে গিয়েছে..কারন তার জীবন অনেকটাই বদলে গিয়েছে।

মেঘলার বাবা দিন দিন বদলে যাচ্ছেন তার মার সাথে প্রায় প্রতিদিনেই ঝগড়া করে মেঘলার সাথেও যথেষ্ট খারাপ ব্যাবহার করে…যতক্ষন স্কুলে থাকে ততক্ষনেই শুধু ভাল থাকে মেঘলা বাসায় ফিরা মানেই যন্ত্রনা শুরু.

প্রতিদিনের মতই মেঘলা স্কুলে গিয়েছে,হটাৎই বাসা থেকে তার স্কুলে কল আসল যেন তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে।

মেঘলা স্কুল থেকে বেরিয়ে দেখল নীরব তার জন্য গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে…

মেঘলাঃ আপনি এখানে..???

নীরবঃ তোমাকে নিতে এসেছি…

মেঘলাঃ আপনি কেন?

নীরবঃ বেশি কথা বলো তুমি…চলো তো বলেই মেঘলাকে টেনে গাড়িতে তুলে নিয়ে নিজে ড্রাইভ করতে শুরু করল….

যেতে যেতে নীরব একটা পার্লারের সামনে গিয়ে থামলো

নীরবঃ নামো…

মেঘলাঃ আমরা বাসায় যাব না? এখানে কেন?

নীরবঃ যা বলছি তাই করো নামো
মেঘলা তর্ক না করে নামলো।

নীরব মেঘলাকে নিয়ে গিয়ে ২ টা মেয়ের কাছে দিয়ে বলল সময় ১০ মিনিট এর মধ্যেই রেডি করে দিন।

মেয়েগুলি জ্বি স্যার…

মেঘলাঃ এসবের মানে কি আমি সাজব কেন?

নীরবঃ নিয়ে যান… বেশি তিরিং বিরিং করলে আমাকে ডেকে দিয়েন।

মেয়েগুলি টানতে টানতে মেঘলাকে ভিতরে নিয়ে চলে গেল।

Leave a Comment