ভিলেন পার্টঃ ৭৯
মনা হোসাইন
আজ নেহার বিয়ে,
সবার খুশি যেন আর ধরে না চারদিকে সবাই যে যার কাজে ব্যাস্ত। আকাশো খুব ব্যাস্ত কিন্তু আজ কোথাও মেঘলাকে দেখা যাচ্ছে না সকাল থেকে নিজের ঘর থেকে বের হয় নি মেঘলা।
আকাশ ব্যাস্ত থাকায় খুঁজ নিতে পারে নি। আকাশকে দেখে বুঝার উপায় নেই তার আপন বোনের বিয়ে নাকি চাচাত বোনের? নাবিলের চেয়ে সে বেশি দায়িত্ব পালন করছে। আকাশ বরাবরেই ফেমিলির দায়িত্ব পালন করে সবার সাথে মিলে মিশে থাকতে পছন্দ করে।তাই যত আত্মীয় স্বজন আসছে সবাইকে সময় দিচ্ছে।
দুপুর হতে বা হতেই বরপক্ষ এসে হাজির হল। বরপক্ষের কাছ থেকে বকশিশ আদায় করা চিরাচরিত রেওয়াজ তাই বাড়ির সব মেয়েরা এসে হাজির হয়েছে বকশিশ আদায় করার জন্য আকাশো সেখানে উপস্থিত আছে হটাৎ তার চোখে পড়ল মেঘলা একদম পিছনের সারিতে দাঁড়িয়ে আছে তেমন কোন সাজগোজ করে নি তারউপড় চোখ মুখেও বিষন্নতার ছাপ দেখে আকাশের মনে সন্দেহ হল।
আকাশঃ যার সবার আগে আগে থাকার কথা ছিল সেই সবকিছুতে অনুউপস্থিত ব্যাপার টা কি? মেঘলার কি তবে শরীর খারাপ করেছে?
ভাবতে ভাবতে আকাশ পিছনে ঘুরে মেঘলার কাছে যাবে তখনী কেউ তার হাত ধরল।
আকাশ কিছুটা অবাক হয়ে পিছনে তাকাল।আর দেখল শুভর কাজিন তার হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে..
– কি ব্যাপার ভাইয়া কোথায় যাচ্ছেন আমরা এসেছি দেখতে পাচ্ছেন না?
আকাশঃ না মানে একটু কাজ ছিল তাই আর কি..
মেয়েটি আকাশ হাত আরো জড়িয়ে নিয়ে অহ্লাদী গলায় বলল,
– অনেক হয়েছে এখন আর কোন কাজ না। এখন আপনার প্রথম কাজ আমাদের সঙ্গ দেওয়া। এই তোরা সবাই কি বলিস?
মেয়েটার সাথে তাল মিলিয়ে সবাই বলে উঠল হুম ঠিক তাই।
আকাশঃ সবাই আছে ত আমি নাবিল কে বলে দিচ্ছি আপনাদের কোন অসুবিধে হবে না।
– সবাই থাকলে কি হবে আমার ত তোমাকে চাই..
আকাশঃ মানে..??
– না কিছুনা কাল তো খুব নাচিয়েছিলেন আজ পালাচ্ছেন কোথায়?
মেয়েটার সাথে কথা বলতে বলতেই আকাশ মেঘলার দিকে তাকাল।
মেঘলা আড় চোখে আকাশ কে দেখছে। আকাশ মেঘলার ব্যাপার টা বুঝতে পারলেও মেয়েটি অভির কাজিন হওয়ায় কিছু বলতে পারছে না।
নাবিল একপাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব দেখছে সে আকাশকে হেল্প করতে চায় কিন্তু সামিরা তার পায়ে পা রেখে দাঁড়িয়ে আছে তার কড়া জবাব নাবিল যদি আজ মেয়েদের সাথে কিছু করে সে সোসাইড করবে তাই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আকাশের কাছে যেতে পারল না নাবিল
অভির কাজিনঃ এত ছটফট করছেন কেন কি হয়েছে বলুন তো?
আকাশঃ না মানে আমি আপনাকে কিভাবে যে বুঝাই..
মেঘলা প্রায় কেঁদে ফেলছে দেখে মেঘলাকে হালকা করতে নাবিল বলে উঠল,
নাবিলঃ মেঘলা সামনে আয় বরকে মালা পড়াবি না?
মেঘলা উত্তর না দিয়ে উল্টো দিকে ঘুরে হাঁটতে শরু করল।আর বাসার ভিতরে চলে গেল।
আকাশের এবার আর সহ্য হল না।
আকাশঃ শুনোন আপু ঘুড়ির লক্ষ্য আকাশে বিচরন করা আর সুতা কাটা ঘুড়ি যেভাবে ইচ্ছা উড়তে পারে কিন্তু তার ততক্ষন কোন মুল্য থাকে না যতক্ষন না নাটাই এর মালিক শক্ত হাতে ঘুড়িকে কন্ট্রোল করে। নাটাই এর মালিক যখন ঘুড়িকে কন্ট্রোল করতে শুরু করে কেবল তখনই ঘুড়িকে দেখতে ভাল লাগে আমার ক্ষেত্রও তাই।
– মানে…??
আকাশঃ মানে হল আমি যেহেতু ছেলে একটা মেয়ের হাত ধরে ঘুরতে আমার ভাল লাগবে এটাই স্বাভাবিক আর কাল থেকে আমি অনেক উড়েছিও কিন্তু এবার আমার সুতায় টান পড়েছে এবার আমাকে নিজের গন্তব্যে ফিরতে হবে। কাল আমি আপনাদের বাসায় ছিলাম আর আপনি আমার হবু আত্মীয় তাই আপনি যেমন টা চেয়েছেন তেমনটাই করেছি সিনক্রিয়েট করি নি। কিন্তু আজ আপনি আমার বাসায় তাই আমি চাই না আপনি অপমানিত হন। আপনি আজ আপনার সাথে বাড়াবাড়ি করলে আমার বউ সেটা মানবে না।
সিনক্রেয়েট করবে ও আপনার গায়ে হাত তুলোক সেটা নিশ্চুই আপনি চান না তাই না?
– আপনার বউ মানে..??
আকাশঃ বউ মানে সেটা ত আমার বুঝানোর কথা না তবে আমার বউ কে সেটা জানাতে পারি। মেঘলা আমার বউ শুধু বউ না আমার জীবন। সোস্যাল মেইনটেইন এর জন্য যা যা করার প্রয়োজন ছিল আমি শুধু সেটুকুই করেছিলাম আমার কাছ থেকে বাড়তি কিছু আসা করবেন না। প্লিজ এক্সকিউজ মি…
বলে আকাশ বাসার ভিতরে গেল কিন্তু মেঘলা কোথাও নেই।আকাশ সারা বাড়ি খুঁজে অবশেষে মেঘলাকে পেল সে বাসার পিছন দিকে স্টোর রুমের কার্নিশে দাঁড়িয়ে আছে।
মেঘলা উল্টো ঘুরে নীচে বিয়ের অনুষ্টান দেখছে..বেশ শান্ত দেখাচ্ছে তাকে
আকাশঃ উহুম উহুম…
মেঘলা চমকে পিছনে তাকাল
মেঘলাঃ তুই এখানে?
আকাশঃ মন খারাপ?
মেঘলাঃ কই না তো
আকাশ মেঘলার কাছে গিয়ে দাঁড়াল
আকাশঃ মিথ্যে বলছিস কেন..?? মন খারাপ নাত এখানে একা একা এসেছিস কেন?
মেঘলা আকাশের দিকে তাকিয়ে আকাশের চোখে চোখ রেখে বলে উঠল
মেঘলাঃ আমাদের এভাবে বিয়ে হবে না ভাইয়া…
মেঘলার কথায় আকাশ অবাক হয়ে গেল।
আকাশঃ তারমানে ওই মেয়েটা আমার হাত ধরেছে বলে তুই মন খারাপ করিস নি..??
মেঘলাঃ ধুর হাত ধরেছে ত কি হয়েছে তোকে ত আমি চিনি তাই না?
আকাশ মেঘলাকে জড়িয়ে ধরে বলল হবে এর চেয়েই ধুমধাম করে বিয়ে হবে তোর…
মেঘলাঃ হয়েছে এখন তুই নিচে যা ত কত কাজ আছে বলতো… আমি কোনো গন্ডগোল করব না।
আকাশঃ প্রমিস..??
মেঘলাঃ পাক্কা… নিশ্চিন্তে যা তুই।
আকাশঃ মনে থাকে যেন।
মেঘলাঃ থাকবে রে বাবা থাকবে।
।
।
।
বিয়ের অনুষ্ঠান মিটে গেল কনে বিদায় দিয়ে সবাই বৌভাত এর আয়োজন করছে এর মধ্যে আকাশ সব কাজ শেষ করে ঘরে ঢুকল।
আকাশঃ মেঘলা বসে আছিস যে যা গোছগাছ করে নে আমরা এখন বের হব।
আকাশের বাবাঃ বের হবে মানে কি কোথায় যাবে তুমরা..??
আকাশঃ বাবা আমরা বাসায় যাব। বিয়ে মিটে গেলে আমরা চলে যাব এমনটাই ত কথা হয়েছিল নাবিলের সাথে তাই না নাবিল?
নাবিলঃ তাইবলে আজকেই যাবি নাকি বৌভাতে যাবি না.?
আকাশঃ নারে যাব না কাল আমার একটা ইম্পর্টেন্ট কাজ আছে তাই অনুষ্ঠানে এটেন্ড করতে পারব না।
আকাশের মাঃ তুমি কি এখন থেকে ওই বাসাতেই থাকার সিধান্ত নিয়েছো নাকি
আকাশঃ না একটু দরকার আছে দরকার মিটে গেলে ফিরে আসব কিরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন যা রেডি হয়ে আয়।
নাবিলঃ কি এমন কাজ যে একদিন থাকতে পারছিস না?
আকাশঃ আরে ভাই এত পেঁচাস কেন আসতে বলেছিলি এসেছি এবার যেতে হবে।
মেঘলা উপড়ে যেতে যেতে ভাবছে কি এমন কাজ যে আকাশ নেহার বৌভাতে যেতে পারবে না। অনেক চিন্তা করেও উত্তর খুঁজে পেল না মেঘলা খুব মন খারাপ করে আকাশের সাথে ফিরে আসতে বাধ্য হল।
আকাশঃ এই কয়দিন অনেক পরিশ্রম করেছিস যা বিশ্রাম নে গিয়ে।
মেঘলাঃ কি এমন কাজ ছিল শুনি যে বৌভাতে যাওয়া গেল না তোর কাজ ছিল তুই চলে আসতি আমাকে নিয়ে আসলি কেন?
আকাশঃ আমি কাউকে কয়ফত দেই না যাও ঘুমাও গিয়ে ৫ মিনটের মধ্যে যেন ঘুমিয়ে গিয়েছো।
মেঘলাঃ এই বাসাটা আমার জন্য অভিশাপ এখানে আসতে না আসতেই তুই আবার বদলে গিয়েছিস।
আকাশঃ বড্ড বকবক করছিস তুই ঠিক আছে তোর যেতে হবে না আমিই নিয়ে যাচ্ছি চল।
মেঘলার আপত্তি থাকা সত্ত্বেও আকাশ মেঘলাকে নিয়ে গিয়ে ঘুমাতে বাধ্য করল।
সকালে,
আকাশঃ মেঘলা উঠ৷.
মেঘলাঃ এত সকালে..??? তুই ত বলেছিলি আমি যেন ১০ টার আগে ঘুম থেকে না উঠি।
আকাশঃ আজ একজায়গায় যেতে হবে তাই ডাকলাম।
মেঘলাঃ কোথায় যাব?
আকাশঃ এবার কি এটার জন্যেও কয়ফত দিতে হবে?
এত কথা না বলে উঠে ফ্রেস হয়ে নিচে আয় বলে আকাশ চলে গেল…
মেঘলাঃ এবার ত ব্যাপার টা নিয়ে ভাবতেই হচ্ছে কি এত ইম্পর্টেন্ট কাজ তাও এত সকালে বাই এনি চান্স আজ ১৪ তারিখ নয় তো।
তাড়াতাড়ি ফোন হাতে নিয়ে দেখল আজ সত্যিই ১৪ তারিখ।
মেঘলাঃ না এটা হতেই পারে না আমি কিছুতেই আমার বাচ্চা নষ্ট হতে দিবোনা আকাশ যাই বলুক না কেন আমি আজ কিছুতেই বাসার বাইরে যাব না। কাল আমার এটা কেন যে মনে হলো না আমি কেন ওর সাথে ফিরে আসলাম এখন আমি কি করব? আকাশ ত আমার কোন কথাই শুনবে না।
বেশ কিছুক্ষন হয়েছে মেঘলা নিচে নামছে না দেকগে আকাশ নিজেই উপড়ে গেল কিন্তু ঘরে মেঘলা নেই।
আকাশঃ এর আবার কি হল কোথায় চলে গেল?
আকাশ এদিক ওদিক দেখে সোজা আলমারির সামনে গেল।
আকাশঃ যানি তুই আলমারির ভিতরে ডোর টা খুলে তোর নিরাপদ আশ্রয় টুকু নষ্ট করতে চাই না তারচেয়ে নিজে থেকে বাইরে আয় কোন বুদ্ধিতে যে তুই এখনো আলমারিতে লুকাস কে যানে।
মেঘলা আলমারির ভিতর থেকে বলে উঠল,
মেঘলাঃ তুই কি করে জানলি আমি আলমারির ভিতরে..??
আকাশঃ এটা তোর পুরোনো অভ্যাস তাছাড়া ঘরে যেহেতু নেই আর নিচে ত আমি ছিলাম তাই কোথাও যেতে পারবি না অতএব এখানেই লুকিয়েছিস।
কিন্তু লুকানোর কারন টা এখনো জানতে পারলাম না।
মেঘলাঃ আ আ আমি তোর সাথে যাব না…
আকাশ দরজাটা খুলে মেঘলার সামনে বসল মেঘলা হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বসে আছে।
আকাশঃ কোথায় যাবি না?
মেঘলাঃ কোথাও না আমি আজ কোথাও যাব না…
আকাশ দাঁতে দাঁত চেপে বলল
তাকা আমার দিকে.. মেঘলা ভয় পেয়ে আরও গুটিয়ে গেল
আকাশঃ তাকা বলছি(ধমক দিয়ে)
মেঘলা ভয়ে ভয়ে তাকাল
আকাশের চোখ মুখে রাগ ফেটে পড়ছে
আকাশঃ চেহারা দেখে নিশ্চুই বুঝে গিয়েছিস আমি তোর কথা শুনব কি শুনব না তাই একদন নকরা না করে রেডি হয়ে নে…
মেঘলাঃ তুই আজ আমাকে মারতে মারতে মেরে ফেল্লেও আমি যাব না।
আকাশঃ তাই নাকি?
মেঘলাঃ হ্যা আমি সব জানি তুই আমাদের বাচ্চা নষ্ট করতে নিয়ে যেতে চাচ্ছিস তাই না..??
আকাশঃ ওয়াও গ্রেট তুই তাহলে সব জানিস।
মেঘলাঃ হ্যা সব জানি আমি মা হতে চলেছি..??
আকাশঃ শুধু এইটুকু কেন তুই ত আরও অনেক কিছু জানিস তাই না?
মেঘলাঃ তো তুই কি ভেবেছিলি তুই সারাজীবনের জন্য আমাকে নিঃসন্তান করে দিবি আর আমি কিছুই জানব না?
আকাশঃ না আমি এসব ভাবিনি তবে ভেবেছিলাম তুই হয়ত শেষ পর্যন্ত আমাকে ভালবাসতে শুরু করেছিস কিন্তু তুই এই কয়েকদিন অভিনয় করেছিস যাতে আমাকে ইমোশনালি ব্লেকমেইল করতে পারিস তাই না?
বলে আকাশ মেঘলার দিকে এগিয়ে যেতে লাগল।
মেঘলাঃ এভাবে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই আমি কিছুতেই এবরশন করব না। বাচ্চাকে বাঁচাতে আমি মারা গেলে যাব তাও বাচ্চা নষ্ট করব না। আমি জানি তুই আমাকে বাঁচাতেই এমন একটা সিধান্ত নিয়েছিস।
আকাশঃ হা হা হা… হাসালি তোকে বাঁচিয়ে আমার কি লাভ বলতো?
মেঘলাঃ মানে?
আকাশঃ তুই সবি জানিস তবে যেটা জানিস না সেটা হল তুই যে সেদিন ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলি সেটা আমি জানতাম আর ডাক্তার তোকে যা যা বলেছিল সবটাই মিথ্যে বানানো। আমি উনাকে যা যা বলতে বলেছিলাম উনি তোকে তাই বলেছে। তুই সেদিন হাসপাতালে যাওয়ার পরপরেই ডাক্তার আমাকে ফোন দেয় আর আমিই তাকে বলি তোকে এসব বলতে যাতে তুই নিজেকে বাঁচাতে এবরশান করতে রাজি হোস। আসলে তো তোর কোন অসুখেই নেই বাচ্চা পেটে আসলে সবারেই একটু দুর্বলতা থাকে।হ্যা এটা সত্যি আমি বাচ্চাটা নষ্ট করতে চাই তবে তোর অসুস্থতার জন্য নয়।
মেঘলা অবাক হয়ে প্রশ্ন করল,
মেঘলাঃ তাহলে কেন?
আকাশ চোখ গরম করে বলল,
আমি মানি না বাচ্চাটা আমার… আমার পুরো বিশ্বাস এই বাচ্চার বাবা আমি নই নিরব…
মেঘলাঃ কিসব বলছিস এসব ছিঃ ভাইয়া এসব বলতে তোর মুখে আটকাচ্ছে না?
আকাশঃ আজব তুই ছেলের সাথে রাত কাটাতে পারবি আর আমি বলতে পারব না..?? তোর কাছে কোন প্রমান আছে যে বাচ্চাটা নিরবের নয় আমার?
নেই কারন তুই নিজেই জানিস না বাচ্চাটার বাবা কে।
মেঘলাঃ তো বাচ্চাটা হওয়া পর্যন্ত ওয়েট কর বাচ্চা হলে ডিএন এ টেস্ট করলেই ত প্রমান হয়ে যাবে বাচ্চা কার।
আকাশঃ নো ওয়ে ডেয়ার আমার এত টাইম নেই।আমি তোমাকে না জানিয়ে বাচ্চাটা নষ্ট করে দিতে চেয়েছিলাম কারন আমি চাইনি তুমি আমার আসল রুপ টা দেখো কিন্তু আফসোস তুমি ত গোয়েন্দাগিরি শুরু করে দিয়েছিলে তাই মিথ্যা বলতে বাধ্য হলাম।
তোমার কি মনে হয় আমি তোমার করা সব কিছু ভুলে গিয়েছি..??
না আকাশ কিছু ভুলে নি একসময় তোকে আমি খুব ভালবাসতাম এটা সত্যি কিন্তু এখন আমি তোকে ঘৃনা করি তোকে আমি বিয়ে করেছি শুধুমাত্র শোধ নেয়ার জন্য সেখানে বাচ্চাকাচ্চার ঝামেলা নিতে ত আমি একেবারেই রাজি নই।সো এই বাচ্চা পৃথিবীতে আসবে না তুই এখন যাবি এবং এভরশন করাবি।
বলেই আকাশ মেঘলাকে টেনে হিচড়ে নিয়ে যেতে শুরু করল।
মেঘলাঃ ছাড় আমাকে আমি যাব না। তুই একটা ভিলেন আমি তোর কথায় বাচ্চা নষ্ট করব না।
আকাশ ডেবিল মার্কা হাসি দিয়ে বলে উঠল
আকাশঃ হা হা হা তোর মতামত কে জানতে চেয়েছে রে?মেঘলা তুই এক এক করে আমার সব স্বপ্ন, আশা, ভালবাসা সব হত্যা করেছিস এবার আমার পালা আমি সেদিন প্রতিজ্ঞা করেছিলাম তোর জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিব তাই তোকে তোর বাবা মার কাছে রেখে এসেছিলাম কারন আমি জানতাম ওরা তোকে সুখে থাকতে দিবে না। কিন্তু তুই সেখানেও নিজের সুখ খুঁজে নিয়েছিলি বিয়ে করে চলে যেতে চেয়েছিলি তাই তোকে বিয়ে থেকে তুলে এনেছিলাম।
মেঘলাঃ যদি আমাকে ভালই না বাসবি তাহলে ম্যারিজ রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন কেন এনেছিলি?
আকাশঃ আমি এই পেপারে সাইন আনতে চাই নি। সেদিন যে পুলিশ কে তোর আর আমার বিয়ের কাগজ টা দেখিয়েছিলাম সেটা আমার তৈরি করা ছিল না আমি তোর কাছ থেকে সম্পত্তি ফিরত আনতেই যাচ্ছিলাম কিন্তু নাবিল মাঝখানে কাগজ বদলে দিয়েছিল যদিও নাবিল এই ব্যাপারটা স্বীকার করে নি। সে এমন ভান করেছিল যেন সে কিছুই জানে না কিন্তু আমি জানি কাজ টা ওই করেছিল। পুলিশ যখন আসে আমি কোন উপায় পাচ্ছিলাম না তখন সেই কাগজ টা কাজে লাগাই কাগজ টার জন্য আমি সুযোগ পেয়েছিলাম তোকে নিজের কাছে রাখার তাই নাবিল কে কিছু বলি নি। ও যেমন না জানার অভিনয় করেছিল আমিও তেমন ভাল মানুষির অভিনয় করেছিলাম।
মেঘলা কেঁদে দিয়ে বলল ভাইয়া….??
আকাশঃ বিশ্বাস কর, এখন মেঘলা মানে আমার কাছে একটা খেলনা ছাড়া কিছুই না। তোর জন্য আমার আর কোনো ইমোশান কাজ করে না।
আমি যেদিন প্রথম শুনেছিলাম তুই মা হতে চলেছিস সেদিনি বাচ্চাটা নষ্ট করতে চেয়েছিলাম কিন্তু ডাক্তার বলল তুই খুব দুর্বল তাই পারিনি যদি বাচ্চা নষ্ট করতে গিয়ে মরে যাস তখন ত আমার প্রতিশোধ নেয়াটা হবে না তাই এই দুমাস তোর এত যত্ন নিলাম আজ বাচ্চা নষ্ট হওয়ার পর বুঝতে পারবি জীবন কতটা ভয়াবহ।
মেঘলাঃ তুই মিথ্যে বলছিস…
আকাশঃ কেন মিথ্যে হবে কেন তোর কি মনে হয় আমি ফেরেস্তা যে তোর এত এত ভুল হাসিমুখে ভুলে যাব আমি তোকে ঘৃনা করি যাস্ট ঘৃনা…এখন আমার জীবনের একটাই লক্ষ্য তোকে তিলে তিলে কষ্ট দেয়া।আর কিছু না।
মেঘলাঃ তুই এসব কি বলছিস.??
আকাশঃ বিশ্বাস হচ্ছে না বুঝি তাহলে প্রমান দিচ্ছি তুই যদি এতই অসুস্থ হতি আর আমি তোকে ভালই বাসতাম তাহলে কি সেদিন আমি এভাবে তোর হাত কাটতে পারতাম…??
কথা বলতে বলতেই গাড়ী এসে নার্সিং হোমের সামনে থামল।
আকাশঃ চলো ডেয়ার তোমাকে সারাজীবনের জন্য মা ডাক শুনা থেকে বঞ্চিত করার জন্য আমার টিম অপেক্ষা করছে।
মেঘলাঃ আমি তোর পায়ে পড়ছি ভাইয়া বাচ্চা টা নষ্ট করিস না প্লিজ…বাচ্চার বাবা তুই হ বা না হ মা তো আমি আমার জন্য ওকে বাঁচতে দে প্লিজ একটা নিষ্পাপ জীবন নষ্ট করিস না ভাইয়া। তোর কাছে আঁচল পেতে ভিক্ষে চাইছি আমার বাচ্চাটাকে কেড়ে নিস না।
আকাশ দাঁতে দাঁত চেপে বলল খুব ভালবাসিস বুঝি..??আমিও বাসতাম এর চেয়েও বেশি ভালবাসতাম তোকে। কই তুই ত আমাকে আমার ভালবাসা ভিক্ষে দিস নি একের পর এক কষ্ট দিয়ে গেছিস এবার নিজেও দেখ কষ্ট পেলে কেমন লাগে চল…!!
আকাশ মেঘলাকে টেনে গাড়ি থেকে নামাল।
মেঘলা কাঁদছে চেঁচাচ্ছে কিন্তু আকাশের কানে সেসব পোঁচাচ্ছে না।
আকাশঃ ন্যাকামি বন্ধ কর মেঘলা. এসব করে কোন লাভ নেই।এখানে তোর কান্না শুনার জন্য কেউ নেই সবাই আমার টাকার কাছে বিক্রি হয়ে গিয়েছে তাই তোর কান্না কেউ শুনবে না।
মেঘলাঃ তুই আমার সাথে এমন করতে পারছিস?
আকাশঃ আমার সাথে অন্যায় করে আজ পর্যন্ত কেউ ছাড় পায় নি তুই ও পাবি না মেঘলা তুই আমার জীবন থেকে হাসি কেড়ে নিয়েছিস রাতের পর রাত কেঁদেছি তোর জন্য।আমি হিরো হতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুই আমাকে ভিলেনের পথে এগিয়ে দিয়েছিস তোর জন্য আমি নেশা করা শিখেছি ঘুম ভুলতে শিখেছি,স্বপ্ন বিসর্জন দিতে শিখেছি অনেক হয়েছে আর না এবার তোর হারানোর পালা…
ভিলের সামনে মাথা ঠুকে কোন লাভ নেই এতে নিজের কপাল থেকেই রক্ত ঝরবে আমার কিছু হবেনা।তাই ন্যাকামি বন্ধ কর।
আকাশঃ তুই যদি ভিলেন হোস তবে আমিও একজন মা আমি বেঁচে থাকতে আমার বাচ্চার গায়ে কাউকে হাত দিতে দিব না। আমিও দেখতে চাই ভিলেনের জয় হয় নাকি মায়ের?
মেঘলা কাঁদতে কাঁদতে হিচকে তুলে ফেলেছে কিন্তু আকাশের মন এতটুকুও গলে নি সে মেঘলাকে নিয়ে ডাক্তারের রুমে গেল।
চলবে..!!