Golperjogot

Golperjogot

ভিলেন পর্ব 81 – প্রেমের গল্প | Romantic Premer Golpo

ভিলেন
মনা হোসাইন
ভিলেন পার্টঃ ৮১

মেঘলা চোখ খুলে মিটমিট করে তাকাল…
তাকিয়ে চারপাশটা একবার ভাল করে দেখে নিয়েই চেঁচিয়ে উঠল।

মেঘলাঃ আমার বাচ্চা…?? আমার বাচ্চা ঠিক আছে ত..??বলতে বলতে নিজের পেটে হাত বুলাতে লাগল মেঘলা।

মেঘলার পাশেই নাবিল বসে আর কিছু দূরে আকাশ দাঁড়িয়ে আছে।

নাবিলঃ কিছু হয়নি তোর বাচ্চার শান্ত হ…
মেঘলাঃ আমি ত হাসপাতালে ছিলাম এখানে আসলাম কি করে?

নাবিলঃ আমি নিয়ে এসেছি..

মেঘলাঃ কিন্তু আকাশ…??

নাবিলঃ আকাশ নিজেই সম্মতি দিয়েছে

মেঘলাঃ তুই সত্যি বলছিস…??

নাবিলঃ বিশ্বাস না হলে আকাশ কে জিজ্ঞাস কর।
ও তো এখানেই আছে..

মেঘলা আকাশের দিকে তাকাতেই আকাশ নাক মুখ ছিটকে বলে উঠল,
আকাশঃ ওর সাথে আমার কোন কথা নেই আমি বাইরে যাচ্ছি।বলেই বাইরে চলে গেল।

নাবিলঃ চিন্তা করিস না আমি আকাশ কে বুঝিয়ে বলেছি ও তোর বা বাচ্চার কোন ক্ষতি করবে না।

মেঘলা নাবিলের হাত ধরে বলল,
আজ তুই আমার জন্য যা করলি আমি কোনদিন এই ঋন শোধ করতে পারব না ভাইয়া।

নাবিলঃ ধুর বোকা ভাইয়ের কাছে বোনের ঋন থাকে নাকি তোকে আমি নিজের বোনের মতই দেখি আর তার চেয়েও বেশি আদর করি।

মেঘলাঃআমার সব বিপদে তুই এসে আমার পাশে দাঁড়িয়েছিস মা যেদিন মারা গেল সেদিন যদি তুই আমাকে এই বাসায় নিয়ে না আসতি আমি সৎ মায়ের অত্যাচারে এতদিনে আমি শেষ হয়ে যেতাম।
আর আজ যদি সময়মত না যেতি আমি সারাজীবনের জন্য মা হওয়া থেকে বঞ্চিত হতাম।তোকে যে আমি কি বলে কৃতজ্ঞতা জানাব…

নাবিলঃ হয়েছে আর পাকামি করতে হবে না রেস্ট নে আজ থেকে এই বাসাতেই থাকবি বুঝেছিস..??

মেঘলাঃ সত্যি..? যাক রাক্ষস টার কাছে আর থাকতে হবে না।

নাবিলঃ চুপ কিসব উল্টাপাল্টা বলছিস? দেখ মেঘলা আকাশকে আর রাগাস না। তুই ত জানিস ও কারোর কথা শুনে না কতভাবে বুঝিয়েছি।পারলে ওর কাছে ক্ষমা চেয়ে সবটা মিটেয়ে নে আর বাড়াবাড়ি করিস না।

মেঘলাঃ কেন আমি কি করেছি হে…?? সব দোষ ত ওর ও আমার নিষ্পাপ বাচ্চাটাকে….

নাবিলঃ আর তুই সব ঠিক করেছিস বুঝি…??শুধু আকাশের এই প্রশ্ন টা এই বাসার সবার বাচ্চাটা আদো আকাশের নাকি নিরবের…?? আমি তোকে বিশ্বাস করি কিন্তু বাকিরা কেন করবে বল তো তুই যেটা করেছিলি সেটা সম্পুর্ন অন্যায় ছিল।

মেঘলাঃ একবার বাচ্চাটা হতে দে আমি প্রমান করে দিব এটা আকাশের বাচ্চা।

নাবিলঃ সেটা আমি ভাল করেই জানি তুই এত নীচে নামতে পারিস না আর আমার মনে হয় আকাশ ও জানে।আকাশ এটার জন্য না ও অন্য কোনো কারনে এমন করছে কিন্তু কি সেই কারন সেটাই বুঝতে পারছি না।

মেঘলাঃ কারন না ছাঁই ওই ডেবিল টা আমাকে ভালই বাসে না।

নাবিলঃ তোকে আর আকাশ কে কিছু বুঝানোর চেয়ে পাগলকে বুঝানো ভাল।যাইহোক আমার একটু কাজ আছে এখন যাই তবে একটা কথা তুই কিন্তু আকাশের সাথে আর কোন ঝামেলা করবি না ঠিক আছে…??

মেঘলাঃ হুম আচ্ছা..

নাবিল চলে গেল।
মেঘলা শুয়ে থাকতে থাকতে আকাশ ঘরে আসল।
মেঘলার আজ আকাশকে কেমন যেন ভয় করছে সে আকাশ কে দেখে একদম গুটিয়ে গেল।

আকাশঃ এত ভাব নেয়ার কি আছে বুঝলাম না মনে হচ্ছে যেন আমি মানুষ নই কোনো দৈত্য দানব।

মেঘলাঃ যে সুস্থ অবস্থায় ঠান্ডা মাথায় খুন করতে পারে সে দৈত্য না ত কি?

আকাশঃ খুন..?? আমি কাকে খুন করলাম?

মেঘলাঃ করিস নি তবে করতে ত চেয়েছিলি

আকাশঃ ইডিয়েট এভরশন আর খুন এক কথা হল?

মেঘলাঃ হ্যা অবশ্যই দুটোতেই প্রাণ যায়।

আকাশঃ বুঝলাম…বাচ্চা হতে আরো অনেক বাকি তাই না?

মেঘলাঃ মানে..??

আকাশঃ মানে টা বুঝে নে…

মেঘলাঃ তুই আমাকে ট্রেড দিচ্ছিস..??

আকাশঃ কই আমি ত কিছু বলি নি

মেঘলাঃ বলিস নি মানে..?? বাচ্চা হওয়ার অনেক বাকি মানে ত এটাই বুঝালি আমি বেশি কিছু বললে তুই ওকে মেরে ফেলবি

আকাশঃ বাহ এত বুদ্ধি কবে হল তোর..??

মেঘলাঃ তার মানে তুই সত্যি আমাকে হুমকি দিলি…??

আকাশঃ সে তুই যা ভাবার ভাবতে পারিস।

মেঘলাঃ তোকে চিনতে আমার এত ভুল হয়ে গেল..??

আকাশঃ বক বক বন্ধ করে ওষুধ খা গিয়ে। বাচ্চাকে বাঁচাতে হলে বাঁচানোর মত বাঁচা আধমরা করে পেটের মধ্যে রেখে দিয়ে কি লাভ?

মেঘলাঃ কি বলতে চাইছিস..??

আকাশঃ ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করিস আর ওষুধ গুলো খাস।তানাহলে বাচ্চা এমনি মরে যাবে।

মেঘলাঃ চুপ একদম চুপ আর কখনো ওর মরার কথা বলবি না আর ওকে নিয়ে তোর ভাবতে হবে না আমি ওর খেয়াল রাখব বুঝেছিস…

আকাশঃ সেতো দেখতেই পাচ্ছি ওষুধ খাওয়া বাদ দিয়ে ঝগড়া করে চলেছিস…এবার থেকে ঝগড়াটা একটু কম করিস তানাহলে মেয়েটা তোর মত ঝগড়াটে হবে।

মেঘলাঃ আমার বাচ্চা কেমন হবে সেটা তোর না ভাবলেও হবে। কিন্তু তোকে বলল মেয়ে হবে আমি ত ভাবছি ছেলে হবে।একদম তার বাবার মত দেখতে হবে।

আকাশ দাঁতে দাঁত চেপে বলল কি হবে..??

আকাশের ধমকে মেঘলা ভয় পেয়ে গেল,
-ক কক কি এমন বল্লাম সবাই তো ছেলে চায়.

আকাশঃ আমি চাই না(ধমক দিয়ে)
আমার মেয়ে চাই তোর মেয়েই হতে হবে।

মেঘলাঃ এটা তো তোর বাচ্চা না তাহলে ছেলে হোক বা মেয়ে তাতে তোর কি…??

আকাশ কিছুক্ষন চুপ থেকে জবার বাচ্চা যারেই হোক আমার কাছে তো থাকবে তাই আমার পছন্দমত হতে হবে।

মেঘলাঃ এটা এমন হয়ে গেল না বিচার মেনে নিলাম তবে তালগাছ আমার।

আকাশঃ মানে…??

মেঘলাঃ বাচ্চাটা তোর মেনে নিলে কি হয়…??

আকাশঃ বকবক করা বন্ধ করে ওষুধ খা গিয়ে।তানাহলে কালকেই নার্সিং হোমে নিয়ে যাব।

মেঘলা আর কিছু না বলে উঠে গিয়ে ওষুধ খেয়ে নিল।



রাতে খেয়ে দেয়ে মেঘলা নিজের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ল।
মেঘলা লাইট অফ করতে যাবে তখনী আকাশ বিদ্যুৎবেগে এসে মেঘলাকে কোলে নিয়ে নিল।

মেঘলাঃ কি করছিস…??

আকাশ জবাব না দিয়ে মেঘলাকে নিজের ঘরে নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল।

মেঘলাঃ কি হল এটা..??

আকাশঃ বিয়ে করেছি কি একা একা ঘুমানোর জন্য…?? কথা দিয়েছিলাম নেহার বিয়েতে স্বামী স্ত্রীর আচারন করব না এখন ত কোনো আত্মীয় নেই তাহলে আলাদা ঘুমাব কেন..

মেঘলাঃ আ আ আমি তোর সাথে ঘুমাব না…

আকাশঃ আজব তোর কথা জড়িয়ে যাচ্ছে, কাঁপছিস এসবের মানে কি তুই কি আমাকে ভয় পাচ্ছিস ?

মেঘলাঃ না আসলে ভাইয়া একটু বুঝার চেষ্টা কর…

আকাশঃ কি বুঝব…??

মেঘলাঃ আমি মা হতে যাচ্ছি…

আকাশঃ সেটা ত ইতিমধ্যে পৃথিবীর সবাই সহ মঙ্গলের প্রানীরাও জেনে গিয়েছে তুই মা হতে যাচ্ছিস নতুন করে কি জানব..??

মেঘলাঃ বাচ্চা পেটে থাকাকালীন এসব করা ঠিক না।

আকাশঃ কিসব বলছিস কিছুই ত বুঝতে পারছি না। কি করছি আমি..??

মেঘলাঃ ওই যে বললি স্বামী স্ত্রী…

আকাশঃ ওহ গড আমি তোর সাথে কিছু করব না ফাউল ঘুমা।

মেঘলাঃ সত্যি তো…??

আকাশঃ আজব তো সারাজীবন হাত পর্যন্ত না ধরে কাটিয়ে দিলাম আর এখন অবিশ্বাস করছিস?

মেঘলাঃ তোর ত কোনো বিশ্বাস নেই হটাৎ করে হয়ত হিংস্র জন্তুর মত ঝাঁপিয়ে পড়বি।

আকাশ প্রচন্ড রেগে গিয়ে মেঘলাকে ঘুমাতে বলে বাইরে চলে গেল।

মেঘলা বেশ অনেক্ষন এপাশ ওপাশ করে ঘুমিয়ে গেল।



গভীর রাতে চারদিক নিস্তব্ধ মাঝে মাঝে ২ একটা ঝিঝিপোকা রাত পাহারার গান শুনাচ্ছে মেঘলা গভীর ঘুমে ছিল কিন্তু হটাৎ সে অনুভব করল কেউ তার পেটে হাত বুলাচ্ছে পরক্ষনেই বুঝতে পারল তার গালে ফোঁটায় ফোঁটায় পানি পড়ছে।

পানির ফোঁটা পড়ায় মেঘলার ঘুম ভেঙে গেল।
মেঘলাঃ স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি কেউ কাঁদছে.. কিন্তু এখানে কে কাঁদবে…?? আর আমার পেটে কেই বা হাত বুলাবে? তবে কি আমি স্বপ্ন দেখছি? নাকি ভাইয়া…?? কিন্তু ভাইয়া কেন কাঁদবে? ও তো বাচ্চাটা চায় না।
চোখ খুলতে খুব ইচ্ছে করছে কিন্তু কেন খোলতে পারছি না কেন…??মাথাটা ধরে আছে পেটেও হালাকা ব্যাথা পাচ্ছি এসব কি স্বপ্নে হওয়া সম্ভব..??

মেঘলা অনেক চেষ্টা করে চোখ মেলে তাকাল। আর অবাক হয়ে গেল আকাশ মেঘলার দিকে ঝুঁকে আছে..চোখ থেকে পানি পড়ছে আর হাত মেঘলার পেটে..

মেঘলা তাড়াতাড়ি উঠে বসল..

মেঘলাঃ কি হয়েছে ভাইয়া শরীর খারাপ লাগছে? তুই কাঁদছিস কেন..??

আকাশ কিছু না বলে মেঘলাকে জড়িয়ে হাওমাও করে কেঁদে দিল। মেঘলা কি বলবে বুঝতে পারছে না সেও আকাশকে জড়িয়ে নিয়ে বলতে লাগল।

মেঘলাঃ কি হয়েছে বল না আমায় এত মন খারাপ করে আছিস কেন…??দেখি তাকা আমার দিকে সব ঠিক হয়ে যাবে সোনা এভাবে কাঁদতে হয় না। বলতে বলতে আকাশ চোখ মুছে দিল মেঘলা…

আকাশ কাঁদতে কাঁদতেই বলল তুই আমাকে ছেড়ে যাবি না তো মেঘলা।

মেঘলাঃ কখনই না…কি হয়েছে বল আমাকে…

আকাশ এবার চোখ মুছে শান্ত গলায় বলতে লাগল,
আকাশঃ জানিস মেঘলা এই পৃথিবীতে যারাই ২ জন ২ জনকে অনেক বেশি করে কাছে পেতে চেয়েছে যারা একে অপরকে সারা পৃথিবী সমান ভালবেসেছে তারা কেউই তাদের ভালবাসার পুর্নতা পায় নি। এই দেখনা লাইলি মজনু থেকে রোমিও জুলিয়েট সবার প্রেমেই অপূর্ন রয়ে গিয়েছে। ওরা একে অপরকে কতটা ভালবাসত জানি না কিন্তু আমি ওদের চেয়ে অনেক বেশি ভালবাসি তোকে।তোকে ছাড়া আমি এক মুহুর্তও থাকতে পারব না।আমি জানি তুইও আমায় একই ভাবে ভালবাসিস।কিন্তু আমারা এখনো ২ জন ২ জন কে পেয়েও পায় নি।
আমি সম্রাট শাহজাহান হতে চাই নারে যে তার মমতাজ কে ছাড়াই বাঁচবে। যদি তুই এই না থাকিস আমি তাজমহল বানিয়ে কি করব? আমার জীবনে তোর শুন্যতা যে কেউ পূরন করতে পারবে না এমন কি তোর বাচ্চাও না।
মেঘলাঃ ধুর বোকা সবার ভাগ্য কি এক রকম হয় নাকি? মেঘলা তার আকাশ কে একা রেখে কোথাও যাব না। আর একটা কথা বাচ্চাটা তো আমার কাছে রাখা তোর রাখা আমানত। আমি কি করে তোর আমানতের খেয়ানত করব বল তো..??পারব না সারাজীবন তোকে অপূর্ণ রাখতে পারব না তুই এসব নিয়ে ভাবিস না দেখবি আমার কিছুই হবে না আমাদের ঘর আলো করে একটা ফুটফুটে একটা বাচ্চা আসবে।

আকাশঃ বাচ্চা আমিও চাই তুই জানিস আমার একটা মেয়ের কত শখ…

মেঘলাঃ তুই মেয়ে চাস..??

আকাশ মাথা নেড়ে বলল হুম…নাম রাখব আকশিতা
আমার নামের সাথে মিল করে ভাল হবে না?

মেঘলাঃ বাবা মুখে বলে বাচ্চা চাই না এদিকে আবার নামও রেখে ফেলেছে…শুনোন এসব হবে না মেঘলার মেয়ের নাম মেঘা হবে।

আকাশঃ তবে রে…

মেঘলা হা হা করে হেসে দিল।

আকাশঃ তোকে হাসলে খুব মিষ্টি দেখায়

মেঘলাঃ তাই বুঝি…??

আকাশঃ হুম এই মায়াবী চোখের মায়ায় অনেক আগেই খুন হয়েছি আমি।তোর এই টুল পরা গালের ভুবন মাতানো হাসিটা বড্ড বেশি জ্বালায় তুই এত সুন্দর কেন রে…??

মেঘলাঃ আজ সুর্য্য কোন দিকে উঠেছে তুই এত ভাল ভাল কথা বলছিস?

আকাশঃ সুর্য্য ত নেই অনেক আগে ডুবে গিয়েছে।

মেঘলা হেসে আকাশের চোখ মুছে দিয়ে বলল আয় আজ তোকে ঘুম পাড়িয়ে দেই।সারারাত ত কেঁদেই কাটিয়ে দিয়েছিস।

আকাশঃ না তুই ঘুমা আজকের রাত টা আমি তোকে দেখে দেখেই কাটাতে চাই।

মেঘলাঃ পাগল ঘুমা তো আমি পালিয়ে যাচ্ছি না সকালে আবার কথা বলব আয় ঘুমা।

আকাশঃ ঠিক আছে ২ জনেই ঘুমাই..




ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই মেঘলার ঘুম ভেঙে গেল ঘুম ভাংগতেই মেঘলার রাতের কথা মনে পড়ল
আকাশ বাচ্চা পেয়ে খুশি এটা মনে পড়তেই মেঘলা খুশিতে উঠে বসল।

তখনী চোখে পড়ল আবছা আলোতে দূরের একটা ঝাপসা ছায়া দাঁড়িয়ে আছে।

মেঘলাঃ ভাইয়া ওখানে দাঁড়িয়ে আছে কেন? তবে কি ও এখনো ঘুমায় নি ভীরু পায়ে আকাশের দিকে এগিয়ে গিয়ে শান্ত গলায় আকাশজে ভাইয়া বলে ডাকল মেঘলা।

আকাশ চমকে উঠে পিছনে ঘুরল…
আকাশঃ কিরে শরীর খারাপ লাগছে..??

মেঘলা আকাশের মুখের দিকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে বুঝিয়ে দিল খারাপ লাগছে না।

আকাশঃ তাহলে উঠলি কেন যা ঘুমা গিয়ে…!!!

মেঘলা এগিয়ে এসে আকাশের গালে হাত ছুঁয়িয়ে বলে উঠল,
– তুই এখনো আজেবাজে চিন্তা করছিস?

আকাশঃ মানে…??

মেঘলাঃ সারারাত ঘুমাস নি…?? ২ চোখ লাল হয়ে আছে….দেখেই বুঝা যাচ্ছে সারারাত কেঁদেছিস।
কেন এত ভয় পাচ্ছিস বল তো?
বল্লাম তো আমার কিছু হবে না আর আমি তোকে রেখে কোথাও যাব না।

আকাশঃ কিসব উল্টা পাল্টা বকছিস আমি কাঁদতে যাব কেন.? আমি তো একটু আগেই ঘুম থেকে উঠলাম।

মেঘলাঃ ওহ আচ্ছা আমি ভাবলাম তখন থেকেই হয়ত জেগে আছিস।

আকাশঃ তখন থেকে মানে..??

মেঘলাঃ আরে তোকে কি মন ভুলা রোগে পেয়েছে নাকি মেয়ের নাম রাখলাম মবে নেই?

আকাশঃ কার মেয়ে? কিসের নাম? এই গিয়ে ঘুমাত কি আবল তাবল বলছিস।

মেঘলাঃএত অভিনয় কি করিস রে…?? রাতেই তো বললি আমাদের মেয়ের নাম আকশিতা রাখবি রাতে কত গল্প করলাম আমরা সব ভুলে গিয়েছিস?

আকাশঃ রাতে গল্প তাও তুই…?? মেঘলা ডাক্তার তোকে ৩ বেলার ঘুমের ওষধ দিয়েছে বুঝেছিস তুই রাতে গল্প করবি ক করে নিশ্চিত স্বপ্ন৷ দেখেছিস।আর আমার মনে এত ফুর্তি নেই যে রাত জেগে অন্যের মেয়ের নাম রাখব যতসব আজাইরা

মেঘলাঃ মানে..??

আকাশঃ যা তো ওয়াশরুমে গিয়ে চোখে মুখে পানি দে।

মেঘলা বড় সড় একটা ধাক্কা খেল…তবে কি এটা সত্যিই মনের ভুল ছিল…?? কিন্তু আমার ত সব স্পষ্ট মনে আছে।তুই কাঁদছিলি

আকাশঃ হাও ফানি কি জন্য কাঁদছিলাম

মেঘলাঃ আ আ আমি মানে…

আকাশঃ আমাকে নিয়ে পজিটিভ চিন্তা করা বাদ দে তাহলে এসব আর দেখবি না।আমি তোকে ২ চোখে সহ্য করতে পারি না এটাই সত্যি।
বলে হাসতে হাসতে চলে গেল আকাশ।

মেঘলাঃ কি হল এটা…??




এক এক করে ৭ মাস কেটে গেল।
এই ৭ মাসের প্রতিরাতেই মেঘলা স্বপ্ন দেখে।
স্বপ্নে আকাশ এসে ওকে অনেক ভালবাসে গল্প করে মেঘলার সব কথা শুনে আবার চলেও যায়। কিন্তু দিনের বেলায় আকাশের আচারনের সাথে রাতের আচারনের কোন মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। মেঘলা অনেক বার প্রমান করতে চেয়েছে এটা স্বপ্ন নয় সত্যি কিন্তু পারে নি কারন মেঘলা যেদিন ঘুমের ওষুধ খায় না সেদিন আর স্বপ্ন দেখে না তাই
মেঘলা এখন নিয়মিত ঘুমের ওষুধ খায় আর এখন সে এটাকে স্বপ্ন ভেবেই ধরে নিয়েছে।ক এই স্বপ্ন টা তার খুব ভাল লাগে রাতের একটা নির্দিষ্ট সময়ে সে স্বপ্ন টা দেখে তাই সেই সময়ের জন্য প্রতিদিন অপেক্ষা করে।
তবে যতই দিন যাচ্ছে মেঘলার চলাফেরায় কিছু পরিবর্তন এসেছে একে ত পেট বড় হয়েছে তাই হাঁটলে কষ্ট হয় অন্যদিকে একটু পরিশ্রম করলেই মেঘলা শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।মাঝে মাঝে পেটে তীব্র ব্যাথা হয় কিন্তু সে এগুলো আকাশ কে জানায় নি।

প্রতিদিনের মত আজকেও মেঘলা স্বপ্ন দেখার আশায় ঘুমিয়ে কিন্তু আজ ব্যাপারটা তেমন হল না মাঝ রাতে হটাৎ ই মেঘলার শ্বাসকষ্ট শুরু হলো…
মেঘলাঃ এখন আমি কি করব ভাইয়াকে বলব..?? কিন্তু ওকে বললে যদি এবরশন করিয়ে দেয়..??না বলেই বা কি করে চলবে…
আস্তে আস্তে আমার নিঃশ্বাস যে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে…পেটেও ব্যাথা বাড়ছে তবে কি আজকেই আমার শেষ দিন…?? না খোদা তুমি আমার সাথে এমন অবিচার করতে পারো না। আর কত পরিক্ষা নিবে তুমি আমার প্লিজ আমাকে আকাশের কাছ থেকে কেড়ে নিও না…ও যে আমায় ছাড়া বাঁঁচবে না।

মেঘলা উঠে বসার চেষ্টা করল কিন্তু পারল না সে নিজের অজান্তেই আকাশ কে আঁখরে ধরল।

আকাশের বুঝতে একটুও দেড়ি হল না কিন্তু সে যেন পাথর হয়ে গিয়েছে কিছু বলছে না শান্ত চোখে তাকিয়ে আছে মেঘলার দিকে।



চলবে…!!

Leave a Comment