Golperjogot

Golperjogot

ভিলেন পর্ব 83 – প্রেমের গল্প | Romantic Premer Golpo

ভিলেন পার্টঃ ৮৩
মনা হোসাইন

আজ মেঘলার ছুটির দিন। মেঘলার আর তর সইজে না কখন বাসায় যাবে আর নিজের মেয়েকে দেখবে।
জন্মের পরেই আকাশ তার মেয়েকে নিয়ে গিয়েছে একবার কোলে নেয়ার সুযোগও পায় নি। তাই মেঘলা অস্থির হয়ে গিয়েছে।

এই তিনদিন নাবিল মেঘলার সাথে ছিল।অন্য কেউ না থাকায় নাবিল তিন দিনে বাসায় যাওয়ার সুযোগ পায় নি।নাবিল হাসপাতালের সব ফর্মালিটি শেষ করে রুমে আসতেই মেঘলা অস্থির হয়ে বলে উঠল
– এবার আমরা বাসায় যাব না…??

নাবিল শান্ত হয়ে উত্তর দিল
– হুম চল..

মেঘলাঃ ভাইয়া তুই কিন্তু বাসায় গিয়ে আকাশ কে বলবি ও যা করছে ঠিক করছে না। আমার মেয়েকে যেন আমাকে দিয়ে দেয় আমি ওকে নিয়ে অনেক দূরে কোথাও চলে যাব।

নাবিলঃ তা নাহয় বলব তবে তুই দূরে কোথাও চলে যাবি এটা আকাশ মানবে বলে মনে হয় না।

মেঘলাঃ কেন মানবে না কেন ও আমার সাথে কেমন করেছে ভুলে গিয়েছিস..??এত করে বলেছিলাম আমার সাথে আসতে তাও আসল না এখন এসেছে দরদ দেখাতে আমি প্রতিজ্ঞা করেছি ওর সাথে আর থাকব না। থাকব না মানে থাকবই না।

নাবিলঃ সে জন্যেই মনে হয় মেয়েটাকে কাছে পেলি না।

মেঘলাঃ মানে..??

নাবিলঃ আমি আকাশের পক্ষে বলছি না কিন্তু আমার মনে হয় আকাশ তোর প্রতিজ্ঞার জন্য বাবুকে নিয়ে গিয়েছে যাতে তুই ওর কাছে ফিরে যাস।

মেঘলাঃ তাই বলে এইটুকু বাচ্চাটাকে কষ্ট দিবে…??

নাবিলঃ কি জানি আকাশের উদ্দেশ্য বুঝা এত সহজ না আমার যা মনে হল তাই বললাম যাইহোক এসব ছেড়ে চল যাওয়া যাক।

মেঘলা নাবিলের সাথে ফিরে আসল। বাসায় ঢুকতে নাবিল মেঘলা ২ জনেই অবাক হল। সারাবাড়িতে সাজ সজ্জা আর বাসা ভর্তি লোকজন।

 

মেঘলাঃ এসব কি রে ভাইয়া..??

নাবিলঃ বুঝতে পারছি না. দেখ গিয়ে আকাশের হয়ত বিয়ে।

মেঘলাঃ হতেই পারে অস্বাভাবিক কিছু নয়।

মেঘলা নাবিল কথা বলছিল সেই সময় সামিরা দৌড়ে সেখানে আসল।

সামিরাঃ আরে তোমাদের আসতে এত লেইট হল কেন চল চল রেডি হবে চল।অনুষ্টান ত এখনী শুরু হয়ে যাবে।বলে মেঘলার হাত ধরে টানত লাগল।

মেঘলাঃ কিসের অনুষ্টান।এসব কি হচ্ছে এখানে আর বাসার সবাই বা কোথায়?

সামিরাঃ সবাই আছে তুমি চলো ত রেডি হবে। আর এসব আকশিতার জন্য।

নাবিল বেশ বিরক্তি নিয়ে জিজ্ঞাস করল
এই নতুন চরিত্র টা আবার কে..??

সামিরাঃ সে কি আপনি সব ভুলে গিয়েছেন নাকি মেঘলার মেয়ের নামই তো আকশিতা…আজ ওর আকীকা। তাই এত আয়োজন।

নাবিলঃ নিশ্চুই আকাশ এসবের ব্যবস্থা করেছে তাই না…?? টাকা খরচ করলেই সব কিছু ঠিক হয়ে যায় কি সুন্দর লজিক…

মেঘলাঃ একদম ঠিক বলেছিস নিজেকে কি মনে করে নিজেই জানে
সামিরাঃ রাগারাগি বাদ দাও তো এসব নিয়ে পরে কথা বলা যাবে এখন চল।

মেঘলাঃ আমার মেয়ের আকীকা আর আমিই জানি না ব্যাপার টা একটু কেমন হয়ে গেল না….??

সামিরাঃসেটা তো আমি জানি না আকাশ ভাই বলল তোমাকে নিয়ে রেডি করে দিতে তাই নিতে এসেছি।

মেঘলাঃ আপু আমার অনুষ্টানে আনন্দ করার মত মন মানসিকতা নেই,কিসের রেডি বলো তো..?? মেয়েটাকে একটা বারের জন্যে ছোঁয়ে দেখতে পারি নি আমি আগে আমার মেয়েকে কোলে নিব তারপর এখান থেকে চলে যাব।আমার মেয়ে কোথায় সেটা বলো আকাশ ভেবেছে টা কি টাকা খরচ করলেই সাত খুন মাফ?এই ১০ টা মাস ও আমার আর আমার বাচ্চার সাথে কি করেছে আমি কি সব ভুলে গিয়েছি নাকি..??

 

নাবিলঃ এই আকাশটাও না কখন যে কি করে বুঝি না এতদিন বলত বাচ্চা চাই না আর এখন মেঘলাকে না জানিয়ে নাম পর্যন্ত রেখে ফেলেছে আজব।
যাই হোক মেঘলা এ নিয়ে এখন বাড়াবাড়ি করিস না বাড়িতে এত লোকজন এসেছে সবাই কি ভাববে সবাই যাক তারপর দেখছি ও আসলে কি চায়…

মেঘলাঃ তাই বলে আমি আমার মেয়ের কাছে যাব না?

নাবিলঃ যাবি না বলেছি নাকি? বল্লাম সিনক্রিয়েট করিস না। তোর মেরেই যখন আকীকা তখন সে তো আর পালিয়ে যাবেনা অনুষ্ঠানে টা শেষ হোক লোকজন যাক তারপরে আকাশের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলিস এখন সিনক্রিয়েট করে কি লাভ?তিন দিন সহ্য করতে পেরেছিস পরিবারের মান-সম্মানের দিকে আজকের দিন টা সহ্য কর।তুই ওর সাথে গিয়ে রেডি হয়ে নে বাড়াবাড়ি করিসনা মেঘলা আকাশ তোর বাড়াবাড়ি মেনে নেবে না শুধু শুধু তোকে অপমান করবে কথা শোনাবে। তারচেয়ে চুপ থাকাই ভালো।

মেঘলাঃ আমি তো মানুষ নই পুতুল আকাশের যখন যেভাবে খেলতে ইচ্ছে করবে সেভাবেই খেলবে তারপর ছুড়ে ফেলে দিবে.

নাবিলঃ মেঘলা কি হচ্ছে সবাই দেখছে ভিতরে যা।

মেঘলা আর কিছু না বলে ভিতরে চলে গেল।

সামিরাঃ চলো মেঘলা আমি তোমাকে সাজিয়ে দেই।

মেঘলাঃ কিছু মনে করো না আপু তুমি আমার অবস্থা টা বুঝতে পারছ না আমি এখন আমার বাচ্চা কে না দেখে কিছু করতে পারব না।

বলেই মেঘলা আকাশের ঘরে চলে গেল।গিয়ে দেখল বাবু বিছানায় ঘুমাচ্ছে আর আকাশ আয়নার সামনে রেডি হচ্ছে।

আয়নায় মেঘলাকে দেখে আকাশ মেঘলার দিকে ঘুরে তাকাল।

আকাশঃ এমা তুই এখানে কি করছিস…?? তুই না প্রতিজ্ঞা করেছিলি আমার কাছে আর ফিরবি না।

মেঘলাঃ একজন মায়ের কাছে তার মেয়ের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু নেই নাড়ির টান তুই কি বুঝবি বলেই মেঘলা গিয়ে বাবুকে কোলে নিয়ে নিল।
সাথে সাথেই মেয়ে কেঁদে দিল।

আকাশঃ উফফ দিলি তো ঘুমটা ভেঙে কত কষ্ট করে ঘুম পারিয়েছিলাম জানিস… দেখি ছাড় বলে
আকাশ মেঘলার কোল থেকে বাবুকে নিয়ে নিল।
বাচ্চার কান্না থামানোর সেকি চেষ্টা আকাশের আর অল্পক্ষনের মধ্যেই বাবুর কান্না থেমে গেল।
আকাশের কুল জুড়ে আছে মেঘলার মেয়ে। মেয়ের মুখে হাসি দেখে বোঝার উপায় নেই সে মার কোলে আছে নাকি বাবার কোলে।

মেঘলাঃ বহুত নাটক করেছিস আর না দে আমার মেয়েকে আমার কোলে দে…

আকাশঃ ও তোর কোলে যাবে…??

মেঘলা চেঁচিয়ে বলে উঠল আমাকে রাগাস না…?? এখন তুই বাড়াবাড়ি করলে আমি যে কি করব নিজেই জানি না।

আকাশঃ ওরে বাপরে কি কন্ঠস্বর.. আচ্ছা বাবা দিচ্ছি দিচ্ছি তবুও এই কোকিল কন্ঠ শুনিয়ে মেয়েটাকে ভয় পায়িয়ে দিস না।

আকাশ বাবুকে মেঘলার কোলে দিল কিন্তু বাবু আবার কেঁদে দিল।মেঘলা অবাক হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল আমি তো কিছু করি নি তাহলে ও কাঁদছে কেন..??

আকাশঃ হা হা হা…. তুই যে একটা অপর্দাথ সেটাই বুঝাচ্ছে।দে আমার কোলে দে… আকাশের কোলে উঠে কান্না থেমে গেল।

মেঘলাঃ এসবের মানে কি…?? ও আমার কোলে আসতে চায় না? আমি কি বাচ্চা কোলে নিতে পারি না? বলেই মেঘলা কেঁদে দিল।

আকাশঃ উফফ গাঁধা কাঁদার কি হল? বাচ্চারা অনুকরণ প্রিয় হয় তাই প্রথম থেকে যার কোলে অভ্যস্ত হয় তার সাথেই থাকতে বেশি পছন্দ করে। সেটা হোক মা বা অন্যকেউ যার কোলে বেশিক্ষন থাকে তার কাছে থাকতে চায় সেক্ষেত্রে ও তো চিনেই না তাহলে তোর কোলে যাবে কেন…??তাই কেঁদে দিয়েছে কারণ ও তোকে কে চিনে না।
এখন জোর করে কোলে কান্নাকাটি করবো। ওকে কাঁদানোর কোন মানেই হয়না।

 

মেঘলা কাঁদতে কাঁদতে বলল তারমানে ও আমার কোলে আসবে না? আমাকে আর বাচ্চাকে আলাদা করেই ছাড়লি..?? এবার শান্তি হয়েছে..??

আকাশঃ ধুর বাবা কান্না বন্ধ কর আমি কি বলেছি বাবু তোর কোলে যাবে না?বললাম বাবুকে তোকে চিনার সময়টুকুতে দে তাহলেই তোর কোলে যাবে আফটারঅল রক্তের টান বলে কথা। সেটা কি আর চাইলেই ছিন্ন করা যায়..??

মেঘলাঃ তুই ঠিক বলছিস?

আকাশঃ হ্যারে বাবা এখন যা তো রেডি হয়ে আয় গেস্ট রা চলে আসছে…

মেঘলাঃ তুই ত ওকে পৃথিবীতে আনতেই চাস নি তাহলে এত আয়জোন করলি কেন..??

আকাশঃ আনতে চাই নি কিন্তু এসেছে যখন,তখন ওর পরিচয় টা তো সবাই কে জানাতে হবে তাই না?

মেঘলাঃ তুই আমাদের বিয়ের কথা সবাইকে জানানোর জন্য এত কিছু করেছিস…??

আকাশঃ সেটা তো একটু পরেই জানতে পারবি এখন যা তো…
আকাশ সামিরাকে ডেকে মেঘলাকে নিয়ে যেতে বলল।

মেঘলাঃ তারমানে ওর মাথা ঠিক হয়ে গিয়েছে আর পাগলামি করবে না..? যাক আমার সাথে যতই বলুক ও বাবুকে নিজের মেয়ে হিসেবে মানে না কিন্তু সবার সামনে পরিচয় তো দিচ্ছে এই অনেক।তানাহলে বাবু সমাজে মুখ দেখাত কি করে সবাই ওকে কথা শুনাত। তাই এখন আর কিছু বলা যাবে না ভালই ভালই অনুষ্টান টা হয়ে যাক।

সামিরা মেঘলার ধ্যান ভেঙে দিয়ে বলল কি হল চলো..??

মেঘলাঃ হুম চলো…

মেঘলা চলে যাচ্ছে পিছন থেকে আকাশ বলে উঠল শাড়ি পরিস তবে পেট বের করে নয় মার্জিত কাপড় পরবি যেন বাচ্চার মার মত লাগে। ইডিয়েট মেঘলার মত যেন না লাগে।

মেঘলা পিছন ফিরে মুখ ভেংচি দিয়ে বলল তুই ইডিয়েট তোর ১৪ গোষ্ঠী ইডিয়েট আমি ভাল বুঝেছিস..??

আকাশ হেসে বলল জ্বি ম্যাডাম বুঝেছি।বাচ্চার মা কি কখনো ভুল বলতে পারে..??এখন থেকে আপনার সাত খুন মাফ যান এখন রেডি হয়ে আসুন।

মেঘলা বরাবরেই আকাশের প্রতি দুর্বল আকাশের অল্প কথাতেই তার মন গলে গিয়েছে সে খুশিমনে সামিরার সাথে চলে গেল।

সামিরা মেঘলার ড্রেস চেঞ্জ করে শাড়ি পরিয়ে সাজাতে শুরু করলো কিন্তু মেঘলার মন পড়ে আছে তার অন্য দিকে। সে আকাশের ঘরের দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু আকাশ নিজের ঘর থেকে বের হওয়ার নামই নিচ্ছে না।

কিছুক্ষণের মধ্যেই বাড়ী ভর্তি লোকজন এসে হাজির হলো আকাশের সকল আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব, পাড়াপ্রতিবেশি,অফিস স্টাফ সবাইকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে অনুষ্ঠানে।

সামিরা মেঘলাকে রেডি করে নিয়ে নিচে নেমে এলো মেঘলা নিচে নেমে বুঝতে পারল সবাই যেন তার জন্য অপেক্ষা করছে।মেঘলা নেমেই তার পরিবারের সবার কাছে গেল।

নাবিলঃ আকাশটা পারেও বটে এই ত রেগে আগুন হয়েছিলি এখনী মুখে হাসি ফুটে গেল?

মেঘলাঃ ভাইয়া কি যে বলিস…

নাবিলঃ তোরা সবসময় হাসিখুশি থাক সেটাই তো আমি চাই রে..বাচ্চার মা হয়েছিস এবার তো নিজের ভাল টা বুঝতে শিখ। আর পাগলামি করিস না কেমন।

আকাশ অন্যায় করেছে জানি তবুও তো শেষ পর্যন্ত তোর মেয়েকে নিজের মেয়ের পরিচয় দিচ্ছে অন্তত মেয়ের জন্যে আকাশ কে ক্ষমা করে দে মেঘলা। বাবু কে নিয়ে যদি কোথাও চলে যাস? তুই কি স্বাচ্ছন্দে বড় করতে পারবি? টাকা ছাড়া এই পৃথিবীতে কোন মুল্য নেই।

আর যদি টাকার ব্যবস্থা করতেও পারিস এই সমাজের একদল লোক তোকে ফতুয়া দিবে আর একদল তোর সম্মান নিয়ে টানাটানি করবে তখন তোর মেয়ে বড় হয়ে নিজের কি পরিচয় দিবে? সমাজে ওর পরিচয় কি হবে বুঝতে পারছিস?বাবার পরিচয়েই সন্তানের সবচেয়ে বড় পরিচয়।
তাই আগে যা হয়েছে ভুলে গিয়ে সংসারে মন দে। নিজের সংসারটা গুছিয়ে নে মেঘলা…

 

মেঘলাঃ এভাবে তো ভাবিনি.. তুই ঠিক বলেছিস ভাইয়া আমি আর কোন অশান্তি করব না তুই দোয়া করিস আমি যেন আকাশের মন জুগিয়ে চলতে পারি।

নাবিলঃ স্বামী সন্তান নিয়ে সুখী হ… আকাশ কে কেও চিনুক আর নাই চিনুক আমি চিনি ও তোকে ভালবাসে এতে কোন ভুল নেই মেঘলা।

নাবিল মেঘলা কথা বলছিল তখন আকাশ বাবুকে কোলে নিয়ে নিচে নেমে আসল।সবার মাঝখানে এসে দাঁড়াল আকাশ তারপর বাবুকে দোলনায় শুয়িয়ে দিল।

আকাশঃ সবার মনে নিশ্চুই একই প্রশ্ন ঘুরছে আপনাদের এখানে কেন দাওয়াত দেয়া হয়েছে তাই না? আসলে আজকে আকশিতার আকীকা। এবার পরিচয় করিয়ে দেই আকশিতা কে…?? বলে আকাশ মেঘলার দিকে তাকিয়ে বলল কিরে ওখানে দাঁড়িয়ে কেন সামনে আয়।

আকাশের কথা শুনে নাবিল মেঘলাকে এগিয়ে দিল।
মেঘলা গিয়ে আকাশের পাশের দাঁড়াতেই আকাশ বলল মেঘলাকে তো সবাই চিনেন আকশিতা মেঘলার মেয়ে।

আকাশ এটা বলাতে অনেকেই অবাক হল কারন মেঘলার যে বিয়ে হয়েছে সেটা গোটা কজন চগাড়া সবারেই অজানা। তাই মেঘলার এক দুঃসম্পর্কের সটাং আকাশের মেঘলার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,

– মেঘলার বিয়ে হল কবে..?? আর বাচ্চাই হল কবে..?? বাচ্চার বাবা কোথায়? আকাশ তুই বাচ্চার বাবা…?

আকাশঃ কিযে বলনা ফুফি। আমার বাচ্চা হলে আগে রিশিপনের আয়োজন করতাম তারপর বাচ্চার আকীকা।

আকাশের কথা শুনে মেঘলার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল। সে আকাশের হাত ধরে ফিসফিস করে বলল কি করছিস ভাইয়া কিসব বলছিস?

আকাশ মেঘলার কথায় কান দিয়ে বলে উঠল,
হুম ফুফি তুমি যা ভাবছো তাই ঠিকি ভাবছো এই বাচ্চার বাবা কে আমরা কেউই জানি না ইনফেক্ট মেঘলা নিজেও জানে না আসলে একসাথে অনেকের সাথে সম্পর্ক থাকলে যা হয় আর কি।

কথাটা শুনে সবাই অবাক হয়ে আকাশের দিকে তাকালে
মেঘলারো বুঝার বাকি রইল না মেঘলাকে অপমান করার জন্যেই আকাশ এত আয়োজন করেছে।ইতিমধ্যে মেঘলার চোখ ভিজে গিয়েছে কিন্তু আকাশের মুখ এখনো থামে নি।

আকাশঃ বাচ্চাটা জারজ হলেও ও যেহেতু পৃথিবীতে এসেছে আমাদের তো একটা দায়িত্ব আছে তাই না? বোনের মেয়েকে তো তার রাস্তায় ফেলে দিতে পারিনা। বাবা-মা তাদের ফুর্তির জন্য বাচ্চার জন্ম দিয়েছে কিন্তু বাচ্চাটার তো কোনো দোষ নেই তাই আমি সিধান্ত নিয়েছি ওকে আমার কাছেই রাখব আজ থেকে আমার পরিচয়ে বড় হবে। যদিও জারজ তবুও বাবার পরিচয় দিব।

জারজ শব্দ টা শুনে মেঘলা প্রচন্ড রেগে গিয়ে আকাশের গালে ঠাস করে একটা থাপ্পর বসিয়ে দিল।

মেঘলা চোখ মুছে চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলে উঠল,আপনার এতটা মহৎ না হলেও চলবে আমার মেয়ের বাবার পরিচয়ের কোনো দরকার নেই ওকে বড় করতে ওর মাই যথেষ্ট।ধন্যবাদ বলে বাবুকে কোলে নিতে গেল মেঘলা…যথারীতি বাবু কেঁদে দিল।

আকাশঃ আরে যা বলার আমাকে বল ওকে কাঁদাচ্ছিস কেন বলে যেত হাত বাড়াল মেঘলা চেঁচিয়ে উঠল
মেঘলাঃ খবরদার আমাদের কাছে আসবি না। কাঁদছে কাঁদুক কাঁদতে কাঁদতে মরে যাক আমার বাচ্চা আমি বুঝব ওকে কিভাবে রাখব এতে কারোর কিছু বলার নেই।

 

নাবিল সহ বাসার সবাই আকাশের ব্যবহারে হতবাক।
নাবিল কি বলবে বুঝতে পারছে না।

মেঘলা বাবুকে নিয়ে যেতেই চাইল আকাশ মেঘলাকে ধরে ফেলল।

আকাশঃ আজব আমি খারাপ কি করেছি?

মেঘলাঃ চমৎকার… তুই কিছু করিস নি আমার বাচ্চাকে জারজ বলছিস তাও তুই কিছু করিস নি।

আকাশঃ একটা দুশ্চরিত্র, নষ্টা মেয়ে হয়ে এত ভাব দেখাস কি করে?কতজনের সাথে সম্পর্কে ছড়িয়েছে তার হিসাব তুই নিজেই জানিস না এই বাচ্চাটা তোর নষ্টামির ফল। তারপরেও আমি ওর দায়িত্ব নিতে চেয়েছি এটাই বেশি না কি?

মেঘলাঃ আমি শেষবারের মত বলছি আমার মেয়েকে জারজ বলবি না।

আকাশঃ জারজ কে জারজ বলব না তো কি বলবো?

মেঘলাঃ চুপ কর তুই আর একটাও কথা বলবিনা আমার মেয়ে জারজ না…ওর বাবার পরিচয় আছে।

আকাশঃ তো সবার সামনে বল কে তোর বাচ্চার বাবা…??

মেঘলাঃ হ্যা বলব,আজ আমি সব বলব। নিজের জন্যে না আমার মেয়ের জন্য বলব। সবাই বলে আমি পাগলামি করি ভুল করি কিন্তু কেউ জানে না আমি কেন এসব করি।আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল কি জানিস তোকে ভালবাসা… তোকে যদি ভাল না বাসতাম আমাকে সুসাইড করার চেষ্টা করতে হত না আমি সোসাইড করতে না চাইলে আমার বাবা মা আলাদা হত না। বাবা মা আলাদা না হলে মাম্মাম আমাকে ছেড়ে যেত না।

আজ মাম্মাম বেঁচে থাকলে আমার এই অবস্থা হত না। আমার এই অবস্থার জন্য একমাত্র তুই। তবুও আমি কিছু বলি নি তুই যা যা করেছিস হ্যা তে হ্যা মিলিয়েছি প্রতিবাদ করি নি। কিন্তু তুই আর তোর মা মিলে আমার জীবন না নষ্ট করে দিয়েছিস ভাইয়া এখন আমার মেয়ের পিছনে লেগেছিস কিন্তু কান খোলে শুনে রাখ আমি বেঁচে থাকতে আমার মেয়ের কোনো ক্ষতি হতে আমি দিব না।

মা মারা যাওয়ার পর তোদের বাসায় এসে ভেবেছিলাম এটা হয়তো আমার জন্য সবচেয়ে নিরাপদ স্থান। এখানে নিশ্চিন্তে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিতে পারব কিন্তু ধারণা ভুল ছিল। এখানে এসে অপমান লাঞ্চনা আর অবহেলা ছাড়া কিছুই পাই নি। নাবিল ভাই আর ছোট মা না থাকলে হয়ত অনেক আগেই শেষ হয়ে যেতাম।

সবার জীবনে ভালবাসা আসে আশির্বাদ হয়ে কিন্তু আমার বেলায় তা অভিশাপ হয়ে এসেছিল তুই যখন আমাকে ভালবাসতে শুরু করলি বড় মা আমাকে তোর কাছ থেকে সরাতে জঘন্য খেলায় মেতে উঠল।
আমি একদিন তোর ওয়াশরুমে শাওয়ার নিচ্ছিলাম আমার গায়ে কোন কাপড় ছিলনা আমি জানি না বড় মা কিভাবে সেই ভিডিও টা করেছিল। আর সেদিন থেকে বড় মা আমাকে সেই ভিডিওটা দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করতে শুরু করে আমাকে বলে আমি যদি তোর জীবন থেকে সরে না যায় এই ভিডিওটা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিবে।

হ্যাঁ আমি হয়তো তোকে সেটা বলতে পারতাম কিন্তু বলার পর যদি বড় মা ভিডিও টা ছেড়ে দিত তুই বড় মাকে যত যাই শাস্তি দিতি আমার সম্মান তো ফিরে আসত না। আর তুই কি এটা মানতে পারতি যে তোর মেঘলাকে অন্য ছেলেরা দেখছে? জানি পারতি না। তাছাড়া আমি জানি মা ছাড়া একটা সন্তান কতটা অসহায় নিজের মাকে হারিয়ে সেটা হাড়ে হাড়ে বুঝেছি। তাই আমি চাই নি তুই আর তোর মা আলাদা হয়ে যা।

তারপর তুই যখন জেরিনকে বাসায় নিয়ে আসলি আর আমার কথাতে তুমি মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী যাস নি তখন আমার রাগ হয়েছিল আমি ভেবেছিলাম তুই আমাকে ভালোবাসিস না তাই রাগে সেদিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তোকে ছেড়ে চলে যাবে। যাওয়ার আগে তোকে একটু কষ্ট দেয়ার জন্য নীরবের সাথে এসব করেছিলাম।

কিন্তু পরে যখন নিজের ভুল বুঝতে পেরেছিলাম তখন আমি তোর কাছে থাকতে চেয়েছিলাম। বারবার বলেছিলাম ক্ষমা করে দে কিন্তু তুই আমাকে ক্ষমা করিস নি আমি নিজেই নিজের কাছে হেরে গিয়েছিলাম কারণ তুই আমাকে অবিশ্বাস করেছিলি। আমার ভালোবাসায় হেরে গিয়েছিল তুইও বিশ্বাস করে ছিলি আমি খারাপ।

এত অনুরোধের পরেও তুই আমাকে আমার বাবা-মার কাছে রেখে এসেছি আমি তোকে কতবার ফোন করেছি কিন্তু কে ফোন তুলেছিল তখন আমি ভেবে নিয়েছিলাম তুই আমাকে ভালোবাসিস না। তাই বিয়ে করে এদেশ থেকে পালাতে চেয়েছিলাম।

তুই কোনদিন আমাকে বুঝিস নি। নিজের যেভাবে ইচ্ছা হয়েছে সেভাবে ভালবেসেছিস আমার মত করে বাসতে পারিস নি কখনো আমাকে সুযোগ দিস নি নিজের কথা বলার। আমি নষ্টা নই তুই ছাড়া কোনো ছেলে আমাকে স্পর্শ করে নি।আকশিতা তোর মেয়ে।বলেই মেঘলা হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করল।
আমি চলে যাচ্ছি ভাইয়া আর কখনো তোর জীবনে ফিরব না দোয়া করি তুই সুখি হ।

 

আকাশ মেঘলার কাছে গিয়ে বলল,
আকাশঃ আমাকে ক্ষমা করে দে প্লিজ…আমি তোর কাছ থেকে সত্যিটা জানার জন্য…

মেঘলাঃ চুপ কর আমি আর কিছু শুনতে চাই না জানি তুই আমাকে ভালবাসিস আর ভালবাসিস বলেই অন্যকারো র বাচ্চাকে নিজের বলে পরিচিতি দিতে চেয়েছিস। কিন্তু আমার যে এই ভালবাসা চাই না রে একসাথে থেকে সুখ স্বাছন্দের জীবন যাপন করা ভালবাসা আমি চাই না আমি এমন ভালবাসা চেয়েছিলাম যেখানে তুই আমাকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করবি আমাকে কখনো অসম্মান করবি না কিন্তু তুই পারিস নি হাত ছাড় ভাইয়া তোর কাছে হাত জোর করে অনুরোধ করছি এবার আমায় মুক্তি দে।

আকাশঃ মেঘলা আমার কথাটা একটু শোন…

মেঘলাঃ জানি তুই না চাইলে আমি এখান থেকে যেতে পারব না কিন্তু জোর করে ভালবাসা হয় নারে…তাই বলে ভাবিস না আমি তোকে ভালবাসি না আমি তোকে ভালবাসি আর আমি এটাও জানি তুইও আমায় ভালবাসিস কিন্তু তোর করা ভুলের জন্যে আমরা আর কখনো এক হতে পারব না।

মেয়ের বাবা হয়েও তুই কখনো তোর মেয়ের কাছে যেতে পারবি না যে মেঘলাকে না দেখে তুই থাকতে পারিস না তাকে আর কখনো চোখের দেখাও দেখতে পাবি না এটাই তোর শাস্তি। আমার ভালবাসা পাওয়ার কোন যোগ্যতা তোর নেই এটা মেনে নে। আমাকে আর বাঁধা দিস না।
আমি কোনো ভুল করে থাকলে ক্ষমা করিস।ভাল থাকিস
নিজের পছন্দমত কাউকে বিয়ে করে নিস।
আসছি খোদা হাফেজ
নাবিল ভাইয়া আমাকে একটু স্টেশন পর্যন্ত পৌঁছে দিবি প্লিজ।

চলবে..!!

 

Leave a Comment