Golperjogot

Golperjogot

ভিলেন পর্ব 84 – প্রেমের গল্প | Romantic Premer Golpo

ভিলেন পার্টঃ ৮৪
মনা হোসাইন

মেঘলাঃ নাবিল ভাইয়া আমাকে একটু স্টেশন পর্যন্ত পৌঁছে দিবি প্লিজ। বলে মেঘলা নাবিলের দিকে এগিয়ে গেল।

মেঘলা এতক্ষন যা যা বলল সবি সত্যি তাই,নাবিলের মা রেগে আকাশের কাছে গেলেন।

নাবিলের মাঃ- ছিঃ আকাশ এই তোর ভালবাসা…?? কি করে পারলি এত গুলো লোকের সামনে মেঘলাকে এভাবে অপমান করতে…?? ভালবাসলে বিশ্বাস করতে হয় যাকে বিশ্বাস করতে পারিস না তাকে আবার কিসের ভালবাসিস? আসলে তুই মেঘলাকে কখনো ভালই বাসিস নি। বাসলে এভাবে বলতে পারতি না।

নাবিলের মার সাথে আরো কয়েকজন গলা মিলিয়ে বলে উঠল মা যেমন ছেলেও তো তেমন এই হবে তাই না..?? এত আয়োজন করে মেয়েটাকে অপমান করার কোনো মানে হয়? আরে সত্যি টা এভাবে জানার কিছিল ভাল করে জিজ্ঞাস করলেই হত তানাহলে নিজের বাসায়ও তো জিজ্ঞাস করা যেত সবার সামনে এভাবে বলার কি দরকার ছিল…??

নাবিলের মাঃ তোকে কখনো নিজের ছেলে থেকে আলাদা করে দেখি নি। নিজের ছেলের মত বড় করেছি তুই যে কোন মেয়েকে এভাবে অসম্মান করতে পারিস আমি ভাবতেই পারছি না নিজের সন্তান কে জারজ বলার আগে বুক কাঁপল না। তোর মত ছেলের মা হওয়াও অন্যায় আসলে দোষ টা তোর না আমাদের তোকে আমরাই মানুষ বানাতে পারি নি।তুই একটা অমানুষ….

 

নাবিল এতক্ষন পর মুখ খুলল,
নাবিলঃ এনাফ আর একটাও কথা শুনতে চাই না যথেষ্ট বলেছো… মা যা বুঝ না সেটা নিয়ে কথা বলতে আসো কেন?

মেঘলাঃ ছোট মা কি ভুল বলেছে…? ঠিকি ত বলেছে।
তুই এখনো ওর পক্ষ নিবি..?? আমাকে এত অসম্মান করার পরেও তুই…??

নাবিলঃ অসম্মান…?? কোনটাকে তোর অসম্মান মনে হচ্ছে আমি তো আকাশের কোন ভুল দেখতে পাচ্ছি না।

মেঘলাঃ দেখবি কি করে তোর কাছে আকাশের কোন দোষেই চোখে পড়ে না। থাক তোর যেতে হবে না আমি একাই যেতে পারব বলে মেঘলা পা বাড়াল।

নাবিল মেঘলাকে কিছু বলার আগেই আকাশ এসে মেঘলাকে হাত ধরে বলল,

আকাশঃ আমাকে ছেড়ে যাস না মেঘলা তোকে আমি অনেক ভালবাসি আমি শুধু সত্যিটা জানার জন্যেই এমন করেছি।
আকাশের কথা শেষ হতে না হতেই মেঘলা আকাশের গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিয়ে বলে উঠল, তোর মত অমানুষের মুখে ভালবাসার কথা মানায় না
সত্যিটা যদি জানার এতই ইচ্ছা ছিল সেটা কি বাসার ভিতরে জানা যেত না এভাবে সবার সামনে আমার চরিত্র নিয়ে টানা হেচড়া না করলে চলছিল না…??

আকাশ ছল ছল চোখে মেঘলার দিকে তাকিয়ে বলল,
– আমার মেয়েটাকে আমার কাছ থেকে আলাদা করে দিস না মেঘলা…?? এই পৃথিবীতে এখন একমাত্র ওই আমার আপনজন যাকে নিয়ে আমি আবার স্বপ্ন দেখতে পারব আমার শেষ ভরসা টুকু কেড়ে নিস না।

মেঘলাঃ চুপ একদম তোর ওই নোংরা মুখে আমার মেয়ের নাম নিবি না। যে বাবা নিজের সন্তান কে জারজ বলতে তার বাবা হওয়ার কোনো যোগ্যতা নেই। ছাড় আমাকে তুই যদি আমাকে যেতে না দিস আমি আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হব।

আকাশঃ আমি জানি তুই রাগ করে এসব বলছিস তুই আমাকে ছেড়ে যেতেই পারিস না একটা শেষ সুযোগ দিবি প্লিজ…??

মেঘলাঃ তোর জন্য আমার যত ভালবাসা ছিল সব আজ শেষ হয়ে গিয়েছে।ছাড় বলছি। তোর মত বাবা যেন কোনো সন্তানের না হয়। আর তোর মত ছেলে যেন কোন মেয়ের কপালে না জুটে।

আকাশঃ এত রাগ করেছিস…?? না বুঝে ভুল করে ফেলেছি কোনভাবেই কি ক্ষমা করা যায় না।আচ্ছা বেশ এই যে তোর হাত ধরলাম দেখি তুই কি করে আমাকে ছেড়ে যাস…??

মেঘলাঃ এরপর যদি শুনি তুই মারা গিয়েছিস তবুও তোকে শেষ দেখা দেখতে আসব না। শুনেছিস তুই…?? আমি তোকে ঘৃনা করি..

মেঘলার কথায় নাবিল রেগে গিয়ে মেঘলাকে ধমক দিল।

মেঘলাঃ তুই আমাকে ধমকাচ্ছিস কেন? তোর কি মনে হয় আকাশের মত জানুয়ারের কারো ভালবাসা পাওয়ার যোগ্যতা আছে…?? বদমেজাজি, একরুখা,নিকৃষ্ট একটা ছেলে। ওকে মানুষ বললেও ভুল হবে অমানুষ একটা…

 

নাবিলঃ মেঘলা আমি তোকে অনুরোধ করছি আকাশ কে এতটা আঘাত করিস না যেটা ও সহ্য করতে পারবে না।

মেঘলাঃ আমি ভুল কিছু বলছি না। তাই আমাকে বাঁধা দিতে আসিস না।

আকাশ এবার মেঘলার দিকে তাকিয়ে হাত টা ছেড়ে দিয়ে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বলল,
– ঠিক আছে মেঘলা যা তোকে আজ আমি মুক্তি দিয়ে দিলাম। আমি আর কখনো তোর জীবনে আসব না কিন্তু আমার শাস্তি আমার বাচ্চাটাকে দিস না রে। ওকে নিয়ে রাস্তায় নামিস না আমি কথা দিচ্ছি আমি তোদের জীবন থেকে অনেক দূরে চলে যাব তবু তোরা এখানে থাক…

নাবিলঃ কি বলছিস এসব আকাশ…??

আকাশ হতাশ হয়ে জোর করে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল আমি হেরে গেছি রে নাবিল…??
দেখ আজ আমার পাশে কেউ নেই যে মেঘলার জন্য আমি এত কিছু করলাম সে আমার এইটুকু অন্যায় ক্ষমা করতে পারল না… যে মাকে নিজের সবটুকু দিয়ে ভালবাসলাম সেও আমায় বুঝল না। যে ছোট মাকে কখনো মায়ের চেয়ে আলাদা চোখে দেখি নি সেও আজ আমার থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিল এখানে উপস্থিত সবার কাছে এখন আমি একটা অমানুষ এখানে এমন কেউ নেই যে আমাকে বুঝতে পারে এই সমাজে আমার কোনো জায়গা নেই তাই চলে যাব অনেক দূরে চলে যাব।

মেঘলাঃ সবাই যা বলছে সব সত্যি তুই এসবেরি যোগ্য কারোর ভালবাসা পাওয়ার যোগ্যতা তোর নেই…তাই সিম্পেথি আদায় করার চেষ্টা করে কোনো লাভ নেই।

আকাশঃ একদম ঠিক বলেছিস মেঘলা আমার ভালবাসা পাওয়ার যোগ্যতা নেই সব শুধু তোরেই আছে।তোর চাহিদা তালিকায় ভালবাসা, বিশ্বাস, ভরসা সব কিছু থাকতে পারবে আর আমার বেলা যোগ্যতার প্রশ্ন উঠবে।আমি নিজের চোখে দেখে বিশ্বাস করলে সেটা ভুল। আর তুই ফোনে অন্যের কথা শুনে বিশ্বাস করলেও দোষ নেই,নীলিমার কথায় যেদিন আমাকে অবিশ্বাস করে সোসাইড করতে চেয়েছিলি সেদিন কোথায় ছিল তোর এই অন্ধ বিশ্বাস সেদিন কেন আমায় ভরসা করতে পারিস নি …??

কি যেন বললি আমি নাকি তোর সোসাইডের চেষ্টার জন্য দায়ী সত্যিই কি আমি দায়ী? নাকি তোর অবিশ্বাস দায়ী?একবার নিজেকে প্রশ্ন করতো?
আরো বললি আমি নাকি কখনো তোকে বুঝি নি তা মেঘলা তুই আমায় কবে বুঝেছিস একটু বলবি প্লিজ।

কোনো ভুল না করেও বার বার ক্ষমা চাইলাম কিন্তু বিনিময়ে কি দিলি থাপ্পড়…?? আমি কি সত্যিই তোর থাপ্পড়ের যোগ্য? আমার বিশ্বাস ছিল তুই আমায় বুঝবি কিন্তু তুই বুঝলি না।
মেঘলা আমাকে তুই কখনো চিনতে পারিস নি আমি নিজেকে অবিশ্বাস করতে পারি কিন্তু তোকে কখনই না।মায়ের পরে এই পৃথিবীতে যে মেয়েটাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবেসেছিলাম সেটা তুই। আমি তোকে কোনদিনি অবিশ্বাস করিনি।

 

মেঘলাঃ একদম ন্যাকামি করবি না তুই আমাকে কত বিশ্বাস করিস আর আমাকে কি ভাবিস সেটা সবাই দেখেছে আর বলিস না।

আকাশঃ বলতে যখন শুরু করেছি সবটাই বলব,বলার একটু সুযোগ দে…আমি তোকে অপমান করতে কিছু করিনি ভেবেছিলাম সামান্য অসম্মান যদি তোর সারাজীবনের কলংক মুছতে পারে তাহলে ক্ষতি কি? ভেবেছিলাম তুই হয়ত বুঝবি কিন্তু আফসোস তুই আমায় ভরসা করতে পারলি না।আজ তুই যেটাকে অসম্মান ভেবে নিলি সেটাই যে তোর সম্মান ফিরিয়ে এনেছে তুই সেটা বুঝতে পারলি না।

আজকের পর যখন আমি থাকব না তখন তুই বুঝবি আকাশ তোর জীবনে কি ছিল? ভাত কাপড়ের দায়িত্ব চাইলেই নেয়া যায় কিন্তু ভালবাসলেই কেবল সম্মানের দায়িত্ব নেয়া যায় তুই আমার নির্স্বাথ ভালবাসা বুঝতে পারলি না আসলে কি জানিস আমি তোর না বরং তুই আমার ভালবাসা পাওয়ার যোগ্য না আমি এতদিন মরীচিকার পিছনে ছুটেছি ভুল মানুষকে ভালবেসেছি।

নাবিলঃ তারমানে তুই……??

আকাশঃ হ্যা নাবিল, তুই যা ভাবছিস সেটাই ঠিক ভাত কাপড়ের দায়িত্ব তো সব স্বামীই নেয় কিন্তু যে স্বামী তার স্ত্রীর সম্মানের দায়িত্ব নেয় সে স্ত্রী ভাগ্যবতী কিন্তু সেটা বুঝার জন্যেও ভাগ্য লাগে যা মেঘলার নেই। তুই বল

যাকে ভালবাসি তাকে কেউ চরিত্রহীনা ভাবছে এটা আমি কি করে মানবো? যখন কেউ আমার মেয়ের জন্ম নিয়ে প্রশ্ন তুলে বাবা হয়ে আমার কেমন লাগে? যখন কেউ বলে মেয়েটা আমার কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে তখন সেটা সহ্য করতে কতটা কষ্ট হয় তোরা বুঝবি না। আচ্ছা একটা কথা বল,বাবু যখন বড় হয়ে শুনত তার মায়ের জীবনে অমীমাংসিত একটা কালো অধ্যায় আছে আমার মেয়েটা সমাজে মাথা উঁচু করে চলতে পারত? যখন সে প্রশ্ন করত মা হয়ে কি জবাব দিত মেঘলা?

 

নাবিলঃ আমি জানতাম এর পিছনে কোন না কোনো কারন নিশ্চুই আছে। প্লিজ আকাশ সবটা খোলে বল।

আকাশঃ আমি প্রথম দিনেই বুঝেছিলাম মেঘলার জীবনে আমিই প্রথম পরুষ যে মেঘলাকে স্পর্শ করেছে কিন্তু আমার জানা বা নাজানায় কি যায় আসে বল? মেঘলার একজন কেন ১০ জনের সাথে সম্পর্ক থাকলেও আমার কিছু যায় আসে না কারন আমি ওকে ভালবাসি ওর শরীরকে না।কিন্তু মেঘলা না বুঝে যে জঘন্য কাজটা করেছিল তার দায় যে শুধু ওর উপড় না ওর সন্তানের উপড়েও পড়বে সেটা মেঘলা না বুঝলেও আমি বুঝেছিলাম তাই এই অধ্যায়টা মেঘলার জীবন থেকে মুছার জন্যই আজকের এই আয়োজন করেছিলাম।

জানিস তো খারাপ খবর বাতাসের আগে ছড়ায় মেঘলা নীরবের সাথে যা করেছিল তার জন্য আমার পরিবারের অনেকের মনেই প্রশ্ন ছিল বাচ্চাটা কার? শুধু যে আমার পরিবারের মনে প্রশ্ন ছিল তা নয় নিরব কে জেলে পাঠানোতে নিরবের বন্ধু-বান্ধবসহ নিরবের পরিবার এমনকি আমার বন্ধুবান্ধব ও ব্যাপারটা জেনে গিয়েছিল।এক এক করে সবাই জেনে গিয়েছিল যাকে আমি ছোট থেকে আগলে রাখছি সে অন্য কারো সাথে বেড শেয়ার করে। তুই জানিস নাবিল
যেদিন আকশিতা পৃথিবীতে আসল আমার এক বন্ধুকে বলেছিলাম আমার মেয়ে হয়েছে তখন ও প্রশ্ন করেছিল আমার বউ কে? মেঘলার কথা বলায় সে আবার প্রশ্ন করে মেঘলার সাথে নীরবের এফায়া ছিল কিনা?তখন আমার কেমন লেগেছিল শুধু আমিই জানি। তখনী সিধান্ত নেই যেভাবেই হোক আমি সত্যিটা সবার সামনে আনব।

আমি চেয়েছিলাম মেঘলা সবার সামনে নিজের মুখে সত্যি টা বলুক। আমি সত্যি জানার জন্য না সবাইকে জানার জন্য আজ ওকে এই কথাগুলী বলেছিলাম নিজের ঘরে প্রশ্ন করলে সবাই কি সত্যিটা জানতে পারত কিংবা আমি যদি সারাদিন বলতাম এটা আমার মেয়ে তবুও অনেকের মনেই প্রশ্ন টা থেকে যেত সামনে না বললেও পিছনে এ নিয়ে কথা এই সমাজ মেঘলার জীবন থেকে এই কলংকটা কখনই বাদ দিত না।মেঘলা এমন একটা কাজ করে শুধু নিজের না আমার সম্মান নিয়েও ছিনিমিনি খেলেছিল

কারন সবাই জানত ছোট বেলা থেকেই আমি মেঘলাকে ভালবাসি হটাৎ এমন করায় সবাই আমাকে কি ভেবেছিল? তবুও আমি ওকে কিছু বলি নি ওকে ছেড়ে দেই নি শুধু ওর নিজের বাসায় রেখে এসেছিলাম। কেন ছাড়তে পারিনি জানিস কারন আমি ওকে ভালবাসতাম।কিন্তু মেঘলা সেটা বুঝে নি আসলে মেঘলা কখনো বুঝে নি ভালবাসার মানুষ ঠকালে কেমন লাগে? আজ যদি আমি অন্য কারো সাথে এমন করতাম তাহলে হয়ত বুঝতে পারত।

যে আমার কথার জন্যে আমাকে ক্ষনা করে না সেই মেঘলা কি আমার এত বড় অন্যায় ক্ষমা করত? যেখানে আমার কিছু কথার জন্যেই মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে সেখানে আমি কতটা সহ্য করেছি সেটা বুঝার ক্ষমতা ওর নেই আসলে কি জানিস নাবিল মেঘলা আমাকে কোনদিন ভালইবাসে নি। সবসময় নিজের কথা ভেবে গিয়েছে আমার কথা ভাবেনি।

কিন্তু ও ভাল বাসুক না বাসুক যাকে ভালবাসি তার সম্মান রাখা যে আমারেই দায়িত্ব।তাই আজ ওকে সবার কাছে নির্দোষ প্রমাণ করে দিলাম আজকের পর কেউ ওর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলবে না। ওকে আর মাথা নিচু করে থাকতে হবে না। ওর সম্মান বাঁচাতে আমাকে যদি ওর জীবন থেকে সরে যেতে হয় আমি সরে যাব।তবু আমার মেয়েটা ত সমাজে মাথা উঁচু করে চলতে পারবে।

নাবিলঃ কিন্তু এই সত্যিটা জানার জন্য তুই ১০ টা মাস ওকে কষ্ট দিলি…??যখন কিনা ওর সবচেয়ে যত্নের প্রয়োজন ছিল তখন তুই মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিলি?

আকাশঃ কষ্ট তাও আমি দিয়েছি? কিভাবে কখন? এসব প্লেন তো আকশিতা পৃথিবীতে আসার পর যখন ফয়সাল আকশিতার জন্ম নিয়ে প্রশ্ন তুলল তখন মাথায় এসেছে।এর আগে এসব নিয়ে ভাবিনি আর আমি কেন মুখ ঘুরিয়ে নিব না মেঘলা সব সময় আমাকে ছেড়ে যাওয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগবে আর আমি কিছু বলতে পারব না? কখনো সোসাইড কখনো লাইফ রিস্ক থাকা সত্ত্বেও বাচ্চা।আমি যে ওকে ছাড়া থাকতে পারব না সেটা কি ও বুঝে না? আজ যদি ওর কিছু হয়ে যেত তখন? এই ১০ টা মাস আমি কতটা টেনশানে কাটিয়েছি কেবল আমি জানি একটা রাত ঘুমাতে পারি নি মেঘলার পাশে বসে থেকেছি কখন, নাজানি ওর শরীর খারাপ হয়ে যায়।আমার মেঘলার উপড় রাগ ছিল কেন ও এত রিস্ক থাকার পরেও বাচ্চাটা নিল তাই ওর সাথে কথা বলি নি কিন্তু কস্ট দেয় নি যত্নের ও কোন অভাব হয় নি।

নাবিলঃ সবি বুঝলাম তুই যখন মেঘলাকে এতই ভালবাসতি, বিশ্বাস করতি তখন মেঘলা এত করে বলার পরেও ওর সাথে হাসপাতালে গেলি না কেন? আর সত্যি টা সামনে আনার জন্য একটা দুধের বাচ্চাকে মার কাছ থেকে আলাদা করে নিয়ে আসা এমন অমানবিক হওয়াটা কি খুব জরুরী ছিল…??

আকাশঃ নাবিল তোর বুদ্ধিও কি দিন দিন হাঁটুতে নেমে যাচ্ছে?

নাবিলঃ তাহলে কি মেঘলা প্রতিজ্ঞা করেছিল বলে ওকে কস্ট দিতে চেয়েছিলি?

আকাশঃ আবারো ভুল করছিস যাকে এত ভালবাসি তাকে কষ্ট কেম দিব? আমি মেঘলাকে কষ্ট দেয়ার কথা ভাবতেও পারি না।

এখানে উপস্থিত গেস্টদের মধ্যে মিসেস আহমেদ ও ছিল তিনি আকাশ আর নাবিলের কথার মাঝখানে এসে বলতে শুরু করলেন,
কিছু মনে না করলে আমি কিছু বলতে চাই,
– আমি এতক্ষন আকাশের ব্যবহারের কিছুই বুঝতে পারছিলাম তাই কিছু বলি নি।কিন্তু প্রায় একবছর ধরে আমি আকাশ মেঘলাকে চিনি। তাই পরিচিত আকাশের সাথে আজকের আকাশকে মিলাতে পারছিলাম এবার পুরোটা বুঝার পর যদি কিছু না বলি তাহলে অন্যায় করা হবে,
এই ১০ মাসে আকাশ যেভাবে মেঘলার ট্রিটমেন্টের ব্যাপারে সচেতন ছিল তারপরে এগুলো ওর পাপ্য না। বেবিকে হাসপাতাল থেকে যে বার্থ সার্টিফিকেট দেয়া হয়েছিল সেখানে বাবার নামের জায়গায় আকাশের নামেই লিখা আছে তাছাড়া আজকের পার্টির হোস্টিং কার্ডেও লিখা আছে মেঘলা আকাশের মেয়ে আজশিতার আকীকা। তারপরেও তোমরা কেন বুঝতে পারলে না যে আকাশ এসব ইচ্ছে করে করছে আমি সেটাই বুঝলাম না।

আকাশ মেঘলা বা বেবিকে কষ্ট দিতে বেবিকে বাসায় নিয়ে আসে নি। আমার কথাতেই নিয়ে এসেছিল এই করোনার মধ্যে বেবি হাসপাতালে রাখাটা সেইফ মনে হয়। এত সাধনার পর যে বেবি এসেছে তাকে সেইফ রাখার জন্যেই ওকে বাসায় নিয়ে গিয়েছিল।আকাশ মেঘলাকেও নিয়ে যেতে চেয়েছিল আমরা দেই নি। বড়দের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকায় করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা শিশুদের থেকে একটু হলেও কম তাছাড়া বড় রা সচেতন থাকতে যা শিশুর পক্ষে সম্ভব না। নার্সের কাছে আকাশ বাবুকে রাখতে চায় নি তাই বাধ্য হয়েই বাসায় নইয়ে গিয়েছিল।

সত্যি বলতে আকাশের মত দায়িত্বশীল বাবা বা স্বামী আমি কমেই দেখেছি। আকাশের যে বয়স তাতে বাচ্চা বা স্ত্রীর ব্যাপারে এত কনসাল্ট থাকার কথা না। মেঘলার প্র‍্যাগনেন্সি চলাকালীন এমন কোনদিন ছিল না যেদিন আকাশ আমাকে ফোন করে মেঘলার আপটেড জানায় নি।মেঘলাকে যেদিন হাসতালে নেয়া হয় আমি হাসপাতালে ছিলাম না তখন আকাশই আমাকে ফোন করে জানায় মেঘলাকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।

আমি যেন তাড়াতাড়ি যাই আমাকে বিশেষভাবে অনুরোধ করেছিল মেঘলার খেয়াল রাখতে আকাশ আসেনি জন্যে আমি জিজ্ঞাস করেছিলাম তুমি আসো নি কেন?
আকাশ আমাকে জবাব দিয়েছিল,

আমি জেনেশুনে বন্ডে সাইন করতে পারব না ম্যাম তখন দেখা যাবে আমার জন্য মেঘলার সিজারেই হচ্ছে না তাছাড়া আজকাল মেঘলার শরীর খারাপ হলে আমার কেমন যেন লাগে ওর পাশে দাঁড়িয়ে ওর কষ্ট টা দেখার মত এনার্জি আমার নেই। কখন কি হয়ে যায় এই চিন্তা করতে করতে এখন কেমন যেন লাগে।মেঘলার সিজার হবে আর আমি বাইরে দাঁড়িয়ে থাকব এতটা টেনশন আমি নিতে পারব না তাই আসি নি। তবে আপনি চিন্তা করবেন নাবিল আছে ও সবটা সামলে নিবে।তুমি ছোট বাচ্চা না মেঘলা,যে ছেলে তার স্ত্রীয়ের কষ্ট সহ্য করতে পারে না সেই স্ত্রী কতটা সৌভাগ্যবতী তোমার বুঝা উচিত।

সবাই তো একরকম হয় না কেউ চিৎকার করে ভালবাসার কথা জানায় আর কেউ আকাশের মত নীরবে ভালবেসে যায়। আমি জানি একজন বাইরের মানুষ হয়ে তোমাদের পার্সনাল ব্যাপারে কথা বলা উচিত হচ্ছে না কিন্তু তুমি আকাশকে ভুল বুঝছো তাই সবটা জেনে আমি আর চুপ থাকতে পারলাম না। আমার মনে হয় তোমার আকাশ কে গালি না দিয়ে ওকে ধন্যবাদ জানানো উচিত।

মিসেস আহমেদ কথা বলতে বলতেই মিলি এগিয়ে এসে বলল হাসাপাতালে করিডোরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করার জন্য তো অনেক জনকেই পাশে পাওয়া যায় কিন্তু বউয়ের জন্য চোখের পানি ফেলে পার্থনা করার মত স্বামী খুব মেয়ের কপালেই জুটে রে মেঘলা।

সেদিন তুই সুস্থ আছিস জানার আগে পর্যন্ত ভাইয়া নামায পড়েছে সিজদায় তোর জন্য কেঁদেছে। এই যে তুই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে এসেছিস আমার বিশ্বাস ভাইয়ার পার্থনাতেই ফিরে এসেছিস। শুনেছি মন থেকে কিছু চাইলে বিধাতা নাকি সেই চাওয়াকে পাওয়ায় পরিণত করে দেন তাই হয়ত উপড়ওয়ালা ভাইয়াকে খালি হাতে ফিরাতে পারে নি। নাহলে যেখানে তোর বাঁচার সম্ভবনাই ছিল না সেখানে সিজার পর্যন্ত লাগল না।কিভাবে সম্ভব…??

আফসোস তুই ভাইয়াকে চিনতে পারলি না। ভাইয়া যদি তোর ভালবাসা পাওয়ার যোগ্য না হয় তবে আমি বলছি এই পৃথিবীতে কারোর ভালবাসা পাওয়ার যোগ্যতা নেই।

মেঘলা কি বলবে বুঝতে পারছে না সে আকাশের দিকে তাকাল আর দেখল আকাশ নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলছে।মেঘলা কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারল না শুধু আমতা আমতা করে বলে উঠল,
– ভ ভ ভাইয়া…??

মেঘলার কথায় আকাশ তাড়াতাড়ি চোখ মুছে মেঘলার দিকে তাকিয়ে বলল,
কিছু বলবি…??

মেঘলার অনেক কিছুই বলতে ইচ্ছে করছে কিন্তু আজ যেন কেউ তার গলা চেপে ধরেছে কিছুই বলতে পারছে না।নীরব দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল।

আকাশ আলতো করে মেঘলার গালে হাত দিয়ে বলল,

জানিস মেঘলা আমি কখনই তোকে ভালবাসতে চাই নি। তোর মত অবুঝ কেউ আমার লাইফ পার্টনার হবে আমি কখনো ভাবি নি।

একটা সময় তোকে আমার অসহ্য লাগত। তোর পাগলামী ছেলেমানুষী যাস্ট বিরক্তিকর লাগত। ইচ্ছে করত তোর থেকে পালাতে পারলে হয়ত মুক্তি পেতাম।

সারা সপ্তাহ ক্লাস, কোচিং এর হাড়ভাঙা খাটুনির পর যখন শুক্রবার আসত ভাবতাম আজ সারাদিন বিন্দাস কাটাব সকাল ১১ টা পর্যন্ত ঘুম, বন্ধুদের সাথে আড্ডা,ঘুরাঘুরি বিকালে ক্রিকেট ম্যাচ তারপর একবারে রাতে বাসায় ফিরব। সব প্লেন করে ঘুমাতে যেতাম কিন্তু পরদিন ভোর ৬ টা,খুব বেশি হলে ৭ বাজেতে না বাজতেই ফোনের কর্কশ রিংটোন টা জানান দিত আমাকে এখন উঠতে হবে কারন মেঘলার এখন আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে হয়েছে অথবা সে হোস্টেলে কোনো না কোনো গন্ডগোল ঘটিয়েছে। প্রতি শুক্রবারেই সেইম কাহিনী ঘটত বিরক্ত হয়ে ফোন টা ধরে যখন বকা দিতে যেতাম তখন ফোনের অপর পাশ থেকে একটা মিষ্টি কন্ঠ ভেসে আসত। কখনো আলতো করে বলতো ভাইয়া আমার না আইস্ক্রিম খেতে ইচ্ছে করছে। আবার কখনো অভিমানী কন্ঠে বলে উঠত সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি তুই কখন আসবি?

হাজার বিরক্তি লাগা সত্ত্বেও ঘুম ঘুম চোখে ছোটে যেতাম তার আবদার পূরন করতে।
কিন্তু তার এই আবদার যেন আর পূরন হতেই চাইত না। একের পর এক নতুন আবদার চলতে থাকত।কখনো লেক থেকে পদ্ম এনে দাও কখনো সিনেমা দেখতে যাও কখনো আবার নিজের সারা মাসের পকেট খরচ দিয়ে তাকে পুতুল কিনে দিতে হত।
ব্যাপারটা অসহ্যকর লাগলেও কেন কিসের টানে আমি তার সব আবদার পূরন করতাম নিজেই জানি না।

কখনো কোনো কারনে যদি বলতাম এটা করতে পারব না সেদিন আমার খাওয়া দাওয়া বন্ধ হয়ে যেত সারাদিন শার্টের কোণ ধরে গাল ফুলিয়ে বসে থাকত আমার অভিমানীনি।
মুখে কোনো কথা নেই কিন্তু আমাকে যেতেও দিবে না সারাদিন নিজের সাথে বসিয়ে রাখত এ যেন এক অদ্ভুত অধিকারবোধ।

জানিস আমাকে বন্ধুদের সাথেও মিশতে দিত না। যখন আড্ডা দিতে বসতাম সবার সামনে থেকে আমাকে টেনে নিয়ে আসত। কততা অসহ্যকর লাগত বলে বুঝাত পারব না কিন্তু তার কান্নার ভয়ে কিছু বলতে পারতাম ও কাঁদলে যে আমারো খারাপ লাগত। হটাৎ একদিন বুঝতে শুরু করলাম এই বিরক্ত লাগা গুলো কেমন যেন ভাল লাগায় পরিণত হচ্ছে,ওর সাথে থাকতে থাকতে একটা সময় এগুলো অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেল। তখন কেন জানি না আমি প্রতি শুক্রবারে সেই বিরক্তকর ফোনটার জন্য অপেক্ষা করতে শুরু করলাম। আমাকে ঘিরে তার করা পাগলামী গুলো ভাল লাগতে শুরু হল।

সবসময় ইচ্ছে করত তার সাথে থাকি। একটু সময় না দেখলে অস্থির লাগত। তার মায়া মাখা হাসিটা যেন সবসময় মিস করতাম তাই কোনো কারন ছাড়াই ওর হোস্টেলের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম। ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দিলেও সেটা ওর কোচিং ক্লাসের সামনেই দিতাম যাতে একটু হলেও ওকে দেখতে পাই ওকে নিজের করে পেতে বাবা-মা,বন্ধু-বান্ধব সব ছেড়ে বিদেশে পাড়ি দিলাম। ওর হৃদ স্পন্দন টুকু জিয়িয়ে রাখার জন্য দেদিন রাত শ্রমিকের মত খাটতে শুরু করলাম। ওকে সুস্থ করতে ন কত দিন যে না খেয়ে কাটিয়েছি নিজেই জানি না।
শীতপ্রধান দেশে কত রাত রাস্তায় ঘুমিয়েছি কেবল আমিই জানি। তবে হাল ছাড়ি ওকে সুস্থ দেখতে দিন রাত নিজের জীবনের সাথে যুদ্ধ করে গিয়েছি।

সবশেষে আজ যখন তারেই সম্মান বাঁচাতে কয়েকটা বাজে কথা বললাম তখন জানতে পারলাম আমি তার ভালবাসার যোগ্য নই।শুধুমাত্র কয়েকটা অপ্রীতিকর কথার জন্য সে আমার মরা মুখও দেখতে চায় না। আজ আমার চেয়ে সুখী মানুষ আর কে আছে বল? আজ আমি সার্থক সারাজীবন বলতে পারব আমার ভালবাসায় খাদ ছিল না,আমি আমার ভালবাসার জন্য শেষ পর্যন্ত লড়ে গিয়েছি।

আকাশ মেঘলার গাল ছেড়ে বাবুর মাথায় আলত করে ছুঁয়ে বলল,চিন্তা করিস না তোকে আমি কখনো হার্ট করতে চাই নি আজও করব না।তুই যে আমাকে চাস না আমাকে বারবার ফিরিয়ে দেয়া সেটা প্রমান করেছে তাই আমি তোদের জীবন থেকে চলে যাব। আকাশের কথার নড়চর হয় না আজ আমি তোকে মুক্তি দিলাম আকাশ আর কখনও তোর উপর জোর খাটাতে আসব না।

 

আকাশের কথাগুলি শুনে মেঘলার নিজের জীবন ডায়েরির পিছনের পাতা গুলি তাকে নাড়িয়ে দিল, ডায়েরির প্রতিটা পাতা জুড়েই লিখা আছে মেঘলার পাগলামি আর আকাশের সহ্য করা। আজ মেঘলা যে সুস্থ অবস্থায় নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আছে সেটাও আকাশেরি দান এটা মনে করতেও তার বিন্দুমাত্র বেগ পেতে হল না । কিন্তু এখন সে কি করবে আকাশকে কিছু বলার মত কোন ভাষা যে সে খুঁজে পাচ্ছেনা।

আকাশ এবার মেঘলার কাছ থেকে তার মায়ের সামনে গিয়ে দাঁড়াল।আকাশের মা আকাশের চোখে চোখ রাখার সাহস পাচ্ছেন না। আকাশ এতক্ষন স্ট্রং থাকার চেষ্টা করলে তার মায়ের সামনে গিয়ে হাওমাও করে কেঁদে ফেলল,

আকাশের মা আকাশকে ধরতে যেতে চাওয়ায় আকাশ নিজেকে সামলে নিয়ে বলতে শুরু করল,
– মা যানো যখন আশেপাশের সবাই কারো কাছ থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেয় তাকে আঘাত করে,কষ্ট দেয় যখন তার আর কোনো আশ্রয় থাকে না তখন সে কি করে?তুমি হয়ত জানো না তাই আমি বলছি…
তার মায়ের আঁচলে মুখ লুকায় কারন এই একমাত্র ব্যাক্তিটাই সন্তানের কষ্টে তার পাশে দাঁড়ায়। কিন্তু আমি এতটাই হতভাগা যার শেষ আশ্রয়টুকুও নেই।
মা আজ যে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। তোমার ছেলে সারাটা জীবন যার জন্য সেক্রিফাইস করে গিয়েছে সেই আজ তাকে দূরে ঠেলে দিয়েছে।

যানো আমি সারাজীবন সবার কথা ভেবেছি কখনো কাউকে এতটুকু কষ্ট দেই নি তবুও আমার সাথে এমন কেন হল মা বলতে পারো…?? সবাই আমাকে কেন এভাবে ঠকাল আমার কি ভালবাসা পাওয়া বারণ সবাই শুধু অভিনয় করে গেল কেউ সত্যিকারে ভালবাসল না এমন নিজের মাও না।
আমি যে আর নিতে পারছি না সব হারিয়ে আজ আমি নিঃস্ব খুব ক্লান্ত লাগছে।আমি এখন কি করব মা কার কাছে যাব?আমার যে কেউ নেই আমার সাথে এমন কেন করলে মা…??? যে ছেলে তোমাকে তার জীবনের সর্বোচ্চো সিংহাসনে বসিয়েছিল,যে ছেলে কোনো দিন তোমার মুখের উপড় কথা বলে নি তাকে কষ্ট দিতে তোমার এত আয়োজন…??

তবে কি আমি এতদিন ভালবাসা নামক যে গাছকে বাঁচাতে সারা মরুভূমি খোঁজে পানি নিয়ে এসেছি সেটা ভালবাসা নয় কাঁটায় ভরা ক্যাকটাস ছিল?

 

এখন আমি কি করব আমাকে বলে দাও…
মাগো আজ যে আমারো বড্ড ইচ্ছে করছে তোমার আঁচলে মুখ লুকাতে কিন্তু তোমাকে আমি আর কখনো বিশ্বাস করতে পারব না। তুমি আমার বিশ্বাস ভেঙে দিয়েছো।মা সন্তানের ভাল চায় এই বিশ্বাকে তুমি মিথ্যা প্রমান করে দিয়েছো। আমার ভালবাসা নিয়ে এভাবে কেন খেললে মা জবাব দাও আমি জবাব চাই কি অন্যায় ছিল আমার…?? কেন সবাই আমাকে আঘাত করল?

আকাশের কথায় ইতিমধ্যে অনেকের চোখেই জল জমেছে তবে তার মা বেশ জোরেই কেঁদে ফেলেছেন

আকাশের মা কাঁদতে কাঁদতে বললেন, বাবা আমি তোকে কষ্ট দিতে চাই নি আমি ভেবেছিলাম মেঘলা তোর জীবনে আসলে তোর জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে তাই ওকে তোর জীবন থেকে সরাতে চেয়েছিলাম তবে বিশ্বাস কর এসব ভিডিও বানাই নি এসব নীলিমার বুদ্ধি আমি শুধু মেঘলাকে সরাতে চেয়েছিলাম আমাকে ক্ষমা করে দে..

 

আকাশ মুখে হতাশারা হাসি টেনে বলল,
আমি ক্ষমা করার কে..?? মা যত কিছুই করোক সন্তানের কাছে মা মাই হয় সে মাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পারে না।আমিও পারব না তোমার কোন দোষ নেই সব দোষ আমার ভাগ্যের ভাগ্যে যা ছিল তাই হয়েছে। যে ছেলেকে তার মা চিনে না তাকে তার বউ কি করে চিনবে.. আমি সারাজীবন মরীচিকার পিছনে ছুটলাম কেউ আমায় বুঝল না তুমি না মা।আজকের পর পৃথিবীর সবাই এসে বল্লেও আমি আর বিশ্বাস করতে পারব না আমার মা আমার ভাল চায়। আমি আজ সবাইকে ছেড়ে চলে যাব।
অনেকবার বলেছিলাম সন্তান থাকতে সন্তানহারা হওয়ার চেষ্টা করো না। তুমি শুনলে না আমার কথা পারলে ক্ষমা করো…

আকাশের মাঃ বাবু আমাকে এত বড় শাস্তি দিস না বাবা তুই আমার চোখের মনি তোকে ছাড়া আমি থাকব কি করে ক্ষমা করে দে বাবা।

আকাশঃ আমি কাউকে শাস্তি দিচ্ছি না এবার আমি একটু শান্তি চাই তাই চলে যাচ্ছি বলে আকাশ তার বাবার সামনে দাঁড়াতেই আকাশের বাবা বলে উঠলেন,
– তুই আমায় ক্ষমা কর আমি তোর জন্য কিছুই করতে পারি নি। তোর দিকে তাকানোর মত মুখ আমার নেই।

আকাশঃ আমি জানি এই কাঁটাছেড়ায় যদি কারো কোনো ক্ষতি হয়ে থাকে সেটা তোমার, আমাকে ছাড়া থাকতে তোমার কষ্ট হবে জানি কিন্তু সন্তানের সুখের জন্য তুমি আমাকে অনুমতি দাও বাবা।

আকাশের বাবাঃ কোন মুখে তোকে আমি আটকাব? আমি এমন একজন অপদার্থ পিতা যে তার সন্তানের চাওয়ার কোনো মূল্য দিতে পারেনি তাকে আগলে রাখতে পারে নি।তাই তোকে আটকানোর চেষ্টা করব না তোর যা ভাল মনে হয় তাই কর।

আকাশ চোখ মুছে বলল শেষ পর্যন্ত যে বুঝতে পেরেছো এই অনেক আমি এই মিথ্যের শহরে আর থাকতে চাই না তুমি বললেও যে থাকতে পারতাম না,সেটা বুঝার জন্য ধন্যবাদ পারলে ক্ষমা করে দিও বলে নাবিলের সামনে দাঁড়াল আকাশ।

আকাশঃ এখানে সবার বিরুদ্ধে আমার অভিযোগ থাকলেও একমাত্র তোর উপড় আমার কোন অভিযোগ নেই। এই মিথ্যের দুনিয়ায় কেউ যদি আমায় ভালবেসে থাকে সেটা তুই। তুই সবসময়েই আমার পাশে থেকেছিস আজকেও তার ব্যাতিক্রম নয় তাই বললে আমি তোকে ফিরাতে পারব না তাই তোকে অনুরোধ করছি তুই আমাকে বাঁধা দিস না। আমি আজ কিছুতেই থাকব না তাই বৃথা চেষ্টা করিস না নাবিল।
যাওয়ার আগে তোর কাছে একটাই চাওয়া আমার মেয়েটাকে দেখিস নাবিল। তুই ই একমাত্র ব্যাক্তি যে আমার অসমাপ্ত দায়িত্ব পালন করতে পারিস। তাই এই দায়িত্ব টা তোকেই দিয়ে গেলাম আমি জানি তুই আমার শেষ ইচ্ছাটা রাখবি।

 

নাবিলঃ পাগল হয়ে গেছিস আকাশ?কিসব আবল তাবল বলছিস কিসের শেষ ইচ্ছা তুই কোথাও যাবি না।আমি তোকে যেতে দিব না।

আকাশঃ আগেই বলেছি আমাকে বাঁধা দিস না নাবিল। তুই আমায় ভাল করেই চিনিস আমি যে আজ থাকব না এটা তুই ভালভাবেই জানিস।আর কোথায় থাকতে বলছিস?কেন থাকব কার কাছে থাকব?যার মা তার সন্তান কে কষ্ট দেয়ার জন্য এত প্লেন করে যার বউ বলে তার মরা মুখও দেখতে চায় না। যে ছোট মা কে সারাজীবন নিজের মায়ের চোখে দেখে এসেছি সে ছোট মার কাছেও আজ আমি অমানুষ তার পরেও তুই আমাকে থাকতে বলবি..??
এখানে কেউ আমাকে সত্যিকারের ভালবাসে নারে তাই এই মিথ্যের দুনিয়ায় আমাকে আর থাকতে বলিস না।

নাবিলঃ এখন তো সবাই জেনে গিয়েছে তুই নির্দোষ।

আকাশঃ আদালতে নিজেকে নির্দোষ প্রমান করতে সাক্ষি প্রমানের প্রয়োজন হয় কিন্তু ভালবাসায় বিশ্বাসের প্র‍য়োজন হয় সেখানে বিশ্বাস নেই সেখানে যুক্তি তর্ক দিয়ে নির্দোষ প্রমান করাটা অসম্মান জনক। আমার কি এমন অন্যায় ছিল বলতে পারিস যাদের যাদের ভালবাসলাম সবাই আমাকে আঘাত করল, কিন্তু কেন? আমি সো অফ করতে পারি না এটাই আমার দোষ?অভিনয় করে দেখাতে পারি না আমি কাকে কতটা ভালবাসি এটাই আমার ভুল?চিৎকার করে বলতে পারি নি মেঘলা আমি তোকে ছাড়া বাঁচব না এটাই আমার অন্যায়? যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে আজ আমি সব অভিযোগ সব মেনে নিলাম। সবাইকে মুক্তি দিয়ে দিলাম । আর কত সহ্য করব আমি..?? আমিও তো মানুষ. আমারো যে মন আছে, কষ্ট আমারো হয় কেউ সেটা বুঝে নি তাই আমায় বাঁধা আর দিস না।

 

নাবিলঃ তোকে এখানে কে না বুঝলেঅ তোর মেয়ে তো বুঝতেও পারে ওকে কেন তোর ভালবাসা থেকে বঞ্চিত করবি আকাশ?

আকাশঃ তুই কি শুনিস নি আমি তখন বল্লাম একমাত্র ওই আমাকে স্বপ্ন দেখাতে পারে কিন্তু ওর মা আমাকে সেই অধিকার দেয় নি।আমি মেঘলার কাছ থেকে সব কেড়ে নিয়েছি বাবুকে নিতে চায় না ওকে ভালবাসার জন্য ওর মাই যথেষ্ট।

আকাশ নাবিলের কাছে থেকেই মেঘলার চোখে চোখ রেখে বলল সুখী হ… আমি যেখানেই থাকি না কেন সবসময় চাইব তুই সুখে থাক।তুই চাইলে অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারিস। তোর উপড় আমার কোন রাগ নেই তাই নিজেকে অপরাধী ভাবিস না। তোর কোনো দোষ নেই আসলে “উই আর নট সেইম টাইপ”
তুই একরকম আমি অন্যরকম তাই আমাদের একসাথে থাকা হল না। তাই নিজেকে শাস্তি দিয়ে বাচ্চাটাকে কষ্ট দিস না এটা তোর কাছে আমার শেষ অনুরোধ।

বলেই আকাশ বাইরের দিকে পা বাড়াল।

আকাশের মা,নাবিলের মা,নাবিল সবাই অনেক অনুরোধ করলেও আকাশ কারো কোনো কথা শুনছে না। সবাই আকাশ কে বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করলেও মেঘলা কিছু বলছে না সে আকাশের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার মুখে অনুচোনার ছাপ।কিন্তু কিছু বলছে না

আকাশ সবাইকে ফিরিয়ে দিয়ে হাঁটতে শুরু করল।নাবিল গিয়ে মেঘলার ধ্যান ভেঙে দিয়ে বলল তুই কি পাথর হয়ে গিয়েছিস আকাশ চলে যাচ্ছে, তুই কিছু বলছিস না কেন যা মেঘলা আটকা ওকে। আমি আকাশকে চিনি ও এখান থেকে বেরিয়ে নিশ্চিত নিজের ক্ষতি করবে কিছু বল মেঘলা।আকাশের কাছে ক্ষমা চা ওকে যেতে দিস না।

মেঘলআর চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে ভাইয়া যাস যাস না কিন্তু তার মুখ দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না কারন মেঘলা জানে আকাশ এখন তার মায়া মাখানো কথা শুনবে না।

 

চলবে…!!!

Leave a Comment