Golperjogot

Golperjogot

ভিলেন – থ্রিলার প্রেমের গল্প পর্ব 48 | Romance Love Story

ভিলেন পার্টঃ ৪৮
Mona Hossain

সকালে মেঘলা ঘুম থেকে উঠে দেখল আকাশ তার পাশে শুয়ে আছে।
দেখেই মেঘলার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল সে উঠে এক ধাক্কায় আকাশকে বিছানা থেকে ফেলে দিল।

নিচে পড়ে আকাশের ঘুম ভেংগে গেল।
আকাশ নিজেকে মেঝেতে আবিষ্কার করে অবাক হল।
মেঘলা চোখ বড় বড় করে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।

আকাশঃ কি হল এটা তুই আমাকে ফেলে দিলি কেন?

মেঘলাঃ তুই আমার চুল ধরে টানলি কেন?

আকাশঃ আমি চুল ধরে টেনেছি মানে..?? আমি কখন এসব করলাম?

মেঘলাঃ কেন স্কুলে যাওয়ার সময় যে চুল টানলি মারলি..

আকাশঃ ফাউল মেয়ে তুই স্বপ্ন দেখেছিস আমি মারি নি।

মেঘলাঃ মিথ্যা বলবি না আমার সব মনে আছে। বলে মেঘলা যেই উঠতে গেল পায়ে ব্যাথা পেল।
-আরে আমার পায়ে কি হয়েছে..?? তুই ব্যাথা দিয়েছিস তাই না?

আকাশঃ হ্যা আমি তো তোকে মারার চাকরী নিয়েছি ফাযিল মেয়ে কিছু না বুঝেই আমাকে ফেলে দিলি।

মেঘলাঃ ও মা গো পায়ে কি ব্যাথা গো…

আকাশ উঠে গিয়ে মেঘলাকে কোলে নিয়ে নিল…

মেঘলাঃ এই স্বার্থপর ছেলে টাচ করবি না আমায়।

আকাশ মেঘলাকে ওয়াশরুমে নিয়ে গেল তারপর চোখে মুখে পানি দিয়ে দিল।

আকাশঃ এবার কিছু মনে পড়েছে।

মেঘলা আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে….

আকাশঃ কিরে মনে পড়েছে…??

মেঘলাঃ মাথা নিচু করে বলল হুম।

আকাশঃ এবার তাহলে তোকে কোল থেকে ফেলে দেই।

মেঘলা আকাশের গলা জড়িয়ে ধরে বলল ফেলে দিবি কেন?

আকাশঃ আমাকে ফেলে দিলি যে।

মেঘলাঃ ফেলে দিয়েছি বেশ করেছি আবার দিব।

আকাশঃ কি🤨🤨

মেঘলাঃ এভাবে তাকানোর কিছু নেই তুই যে আমাকে ইনজেকশন দিয়েছিস,ফাঁদে পা আটকে দিয়েছিস তার বেলা..

আকাশঃ মানে কি আমি কেন তোর পায়ে ফাঁদ আটকে দিব কিসব বাজে বকছিস।

মেঘলাঃ আমার সব মনে আছে ফাঁদটা খুলতে পর্যন্ত দিস নি কি পরিমান হারামি তুই চিন্তা কর।

আকাশঃ তুই কিন্তু আমার কোলে আর একটাও বাজে কথা বললে এখনি ফেলে দিব।

মেঘলাঃ এত সোজা না তোর গলা জড়িয়ে ধরে রেখেছি না…ফেলবি কি করে?

আকাশঃ এত দেখি চুরের মায়ের বড় গলা হয়ে গেল।

মেঘলাঃ আমাকে ভালয় ভালয় বিছানায় গিয়ে রেখে আয়।

আকাশঃ তাত নিবই যে মুটকি হয়েছিস বাবা

মেঘলাঃ একদম ফালতু কথা বলবি না গন্ডার কোথাকার।

আকাশ গিয়ে মেঘলাকে বিছানায় নামাতেই

মেঘলাঃ বের হ আমার রুম থেকে কাল যা করলি তারপর আমি তোর মুখও দেখতে চাই না।

আকাশঃ সাহস বেড়ে গেছে মনে হচ্ছে..??

মেঘলাঃ অবশ্যই বেড়েছে আমি এখন তোকে আর একফুঁটাও ভয় পাই না।এখন থেকে তুই আমাকে মারলে আমিও তোকে মারব।

আকাশঃ চুপ বেয়াদব

মেঘলাঃ তুই এত নির্লজ্জ কেন বলেছি না রুম থেকে বের হতে?

আকাশঃ ভেবে বলছিস?

মেঘলাঃ হ্যা হ্যা তুই একটা ভিলেন।তুই যদি আমাকে এভাবে বিরক্ত করিস আমি আর এখানে থাকব না বাবার ওখানে চলে যাব।

আকাশঃ বাহ অসাধারন ঠিক আছে এখন থেকে আমি তোর সাথে কোন কথা বলব না বিরক্তও করব না বলে আকাশ চলে গেল।

কিছুক্ষন পর নাবিল মেঘলাকে দেখতে আসল।
নাবিলঃ ঘুম ভাংল..??

মেঘলাঃ তোর কি মনে হয় মরে গেছি..??

নাবিলঃ ছি আমি কি তাই বলেছি?পায়ের কি অবস্থা সেটাই দেখতে আসলাম।

মেঘলাঃ দেখতে হবে না কাল তো একবারো এগিয়ে এলিনা বিড়ালের মত আকাশের পিছনে মুখ লুকিয়েছিলি এখনও আকাশের কাছেই যা তোরা সব কটা হার বজ্জাত একটাও ভাল না।

নাবিলঃ এত যে বড় বড় কথা বলছিস তোর পায়ের ফাঁদ খুলল কে শুনি।

মেঘলাঃ সত্যি ত কে খুলেছে..??

নাবিলঃ কে আবার আকাশ।তুই যাতে ব্যাথা না পাস সে জন্যে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে নিয়েছিল আর তাই তখন তোকে শাস্তির দেয়ার জন্য না বরং ডাক্তারের জন্য অপেক্ষা করছিল।

মেঘলাঃ তুই এসব কি বলছিস আমি ত আরও ওকে যাতা বলে অপমান করে রুম থেকে বের করে দিলাম এখন কি হবে?

নাবিলঃ অপমান মানে..??

মেঘলাঃ শুধু অপমান না ওকে বিছানা থেকেও ফেলে দিয়েছি

নাবিলঃ ও গড…

মেঘলাঃ এখন কি হবে..??

নাবিলঃ আমি কি জানি? আজব কান্ড করিস তুই সব সময়। থাক তুই আমি ওর কাছে যাচ্ছি বলে নাবিল উঠে গেল।

নাবিলঃ আসতে পারি..??

আকাশ বসে কি যেন চিন্তা করছিল।
নাবিল গিয়ে বলতেই আকাশ বলল
-হুম আয়

নাবিলঃমন খারাপ নাকি?কি চিন্তা করছিস?

আকাশঃ না তেমন কিছু না আকাশ নাবিলকে কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনী।

মেঘলার কন্ঠ শুনতে পেল।

মেঘলাঃ বয়ফ্রেন্ড এই বয়ফ্রেন্ড….!!!

আকাশ নাবিল ২ জনেই অবাক হল।

আকাশঃ মেঘলার কন্ঠ না..??

নাবিলঃ তাই ত মনে হচ্ছে কিন্তু কি বলে চেঁচাচ্ছে..??

আকাশঃ আমি যা শুনছি তুই ও নিশ্চুই তাই শুনছিস..

মেঘলাঃ আরে এই আকাইসসা কখন থেকে ডাকছি শুনতে পাচ্ছিস না।

আলাশঃ এর মনে হয় মাথায় সমস্যা হয়েছে কিসব আবল তাবল বলতেছে..

নাবিলঃ চল গিয়ে দেখি

মেঘলাঃ আকাইসসা বয়ফ্রেন্ড..আকাইসসা বয়ফ্রেন্ড…

আকাশঃ এসব কি ধরনের বেয়াদবি কিসব বলতেছিস হ্যা.?

মেঘলাঃ তোর সমস্যা কি বল তো..?? ভাইয়া বললে রাগ করিস বয়ফ্রেন্ড বললে সারা দিস না তো ডাকব টা কি..??

নাবিলঃ আজব তো ওর কি নাম নেই..??

মেঘলাঃ এই শোন আমার কাছে নামের চেয়ে সম্পর্কের দাম বেশি তাই নাম ধরে ডাকি না।

আকাশঃ থাক এই বয়ফ্রেন্ড বা আকাইসসা চেয়ে আমার ভাইয়াই ভাল।

মেঘলাঃ আজেবাজে কথা বলে তোরা আমাকে ভুলিয়ে দিচ্ছিস।

নাবিলঃ কি ভুলিয়ে দিচ্ছি..??

মেঘলাঃ এই যে আমার এখন ক্ষুদা পেয়েছে সেটা আচ্ছা শোন বয়ফ্রেন্ড আমার এখন খেতে হবে তুমি জন্য একটা ডিমের অমলেট করে নিয়ে এসো ত😌

আকাশ চোখ বড় করে মেঘলার দিকে তাকাল

আকাশঃ আমি তোকে বলেছিলাম না তোর সাথে আমি কথা বলব না?

মেঘলাঃ হ্যা মনে আছে কিন্তু তোকে কথা বলতে কে বলেছে আমি ত অমলেট করতে বলেছি

আকাশঃ😳😳

মেঘলাঃ কই যা..দাঁড়িয়ে আছিস কেন?

এদের কান্ড দেখে নাবিল মুচকি মুচকি হাসছে..

আকাশঃ আমি পারব না

মেঘলাঃ আমার কি সর্বনাশ হল গো….

আকাশঃ আরে আজব এভাবে চেঁচাচ্ছিস কেন?

মেঘলাঃ আমার বয়ফ্রেন্ড আমাকে ছেড়ে চলে গেল আর আমি কাঁদব না..??

নাবিলঃ আহা হা হা একটা অমলেটেই ত করে দিয়ে দে না….😜

আকাশঃ তুই ও…

নাবিলঃ ওমা বয়ফ্রেন্ডের গার্লফ্রেন্ড বলে কথা।

মেঘলাঃ তুই কি করে আনবি নাকি আমি যাব
মেঘলা যেই উঠতে চাইল

আকাশঃ থাক থাক ভাংগা পা নিয়ে আমি যাচ্ছি।

আকাশ নিচে চলে গেল…

নাবিলঃ কি হল এটা..??

মেঘলাঃ অন্য কোন উপায়ে ওর রাগ কমত না তাই এটা…

নাবিলঃ যেমন আকাশ তেমনি তুই

আকাশঃ এই নিন ম্যাডাম খেয়ে আমায় কৃতজ্ঞ করুন

মেঘলাঃ এভাবে বললে খাব না।

আকাশঃ ত কিভাবে বলতে হবে?

মেঘলাঃ খাইয়ে দে…না হলে খাব না।

আকাশঃ এত জ্বালাস কেন?

মেঘলাঃ তোকে আমি জ্বালাব নাতো কে জ্বালাবে..?? তুই আমার বয়ফ্রেন্ড না?

আকাশঃ উফফ এর চেয়ে ভাইয়া হওয়া অনেক ভাল ছিল।

নাবিলঃ আচ্ছা যাই হোক আপনার খাওয়া তো শেষ।তাহলে গার্লফ্রেন্ড আমরা কি এবার যেতে পারি..??

মেঘলাঃ ওহ হ আমি তোর গার্লফ্রেন্ড না শুধুর আকাশের গার্ল্ফ্রেন্ড।

নাবিলঃঠিক বলেছেন তা ম্যাডাম আমরা কি এখন যেতে পারি..??

মেঘলাঃ হুম..আবার যখন দরকার হবে ডাকব।

আকাশ আর নাবিল চলে গেল।

সকালে নাস্তা শেষে সবাই একসাথে বসে আছে তখন,মেঘলাও আছে তখন নাবিল আকাশকে বলল,

নাবিলঃ কি যেন বলবি বলছিলি আকাশ এখন বল।

আকাশঃ ও হ্যা তখন মেঘলার যন্ত্রনায় সব ভুলে গিয়েছিলাম।

নাবিলঃ এখন বল।

আকাশঃ তা মেঘলা তোকে ত আমি রুমে যেতে বলেছিলাম তুই সেখানে না গিয়ে স্টোর রুমে কি করছিলি..??

মেঘলাঃ আমি ত এমনি..

আকাশঃ আমি মজা করছি না।

মেঘলাঃ আমি রুমেই যাচ্ছিলাম দেখলাম স্টোর রুমের দরজা টা খোলা সেটাই লাগাতে গিয়েছিলাম গিয়ে দেখি আমার টেডি টা মেঝেতে পরে আছে সেটাই আনতে গিয়েছিলাম

নাবিলঃ তোর কি মনে হয় এটা দুর্ঘটনা নাকি কেউ ইচ্ছে করে করেছে?

রুবিনা বেগমঃ তোদের মাথা ঠিজ নেই বুঝেছিস তা না হলে এসব ভাবতি না স্টোর রুমে ফাঁদ থাকতেই পারে আর দুর্ঘটনাও ঘটতেই পারে।কেউ ইচ্ছে করে কেন করবে?

আকাশঃ কিন্ত মেঘলা ত টেডি টা সবসময় নিজের সাথে রাখে ওটা স্টোর রুমে গেল কি করে।

রুবিনা বেগমঃ তোর অফিসের উদ্বোধনী অনুষ্টানের জন্য অনেকেই আমাদের বাসায় এসেছিল সাথে বাচ্চারাও ছিল হয়ত ওরাই ফেলেছিল।একটা স্বাভাবিক বিষয় শুধু শুধু পেচাচ্ছিস।

মেঘলাঃ আমার মনে হয় বড় মা ঠিক বলছে।এসব নিয়ে আর জটিলতা তৈরি করিস না ভাইয়া।এটা একটা সাধারন বিষয়।

আকাশঃ হুম ঠিক বলেছিস আচ্ছা বাদ দে চল তোকে রুমে রেখে আসি।

নাবিলঃ আকাশ চলে যাচ্ছিস?

আকাশঃ হুম তবে নাবিল জানিস কালকের ফাঁদ টায় king কোম্পানির একটা সিল ছিল।

নাবিলঃ তাই..??তারমানে ওটা বেশ ভাল ব্র‍্যান্ডের ফাঁদ ছিল তাই না…?

আকাশঃহুম ঠিক তাই…

ঈষানঃ তো..?? যা হওয়ার তাত ত হয়েই গিয়েছে ভাল ব্র‍্যান্ডের হলে কি আর না হলেই কি..??

আকাশঃ তুই বুঝবি না যাকে বলেছি সে বুঝেছে..
বলেই আকাশ উপড়ে চলে গেল।

আকাশ চলে যাওয়ার পর নাবিল গিয়ে বিনের ময়লা ঘাঁটতে শুরু করল।

নেহাঃ আহ কি করছিস ভাইয়া..??

শায়রা বেগমঃ আকাশ আর নাবিল কখন কি বলে আর কি করে শুধু ওরা ২ জনেই জানে অন্যরা কেউ তা বুঝে না। এদের এক প্রকার পাগল বলা চলে।অসহ্যকর বাসা টা ময়লা করছিস কেন?

নাবিলঃ আমরা মোটেও পাগল নই মা আকাশ সংক্ষেপে বলেছে তাই তুমরা বুঝ নি কিন্তু আমি যেহেতু ওর সব ব্যাপারেই বুঝি তাই আমার জন্য এইটুকুই যথেষ্ট।

শায়রা বেগমঃ তো বল দেখি ও কি বলল?

নাবিলঃ ফাঁদ টা যে নতুন ছিল সেটা আমি নিজেই দেখেছি আর ওটা ভাল ব্যান্ডের মানে ওটা কোন সুপার শপ থেকে কিনা হয়েছে আর সুপার শপে বিল এর রসিদ দেয়া হয়।
যে কিনেছে সে বিল টা নিশ্চুই বিনেই ফেলছে রসিদ নিয়ে ত বসে থাকবে না তাই না?আমি সেই রশিদ টাই খুঁজছি আমাদের বাসায় কে এটা কিনেছে সেটা জানার জন্য।

নেহাঃ বাপরে… কত কাহিনী..??তবুও মানবি না যে এটা দুর্ঘটনা নয়।

নাবিলঃ অবশ্যই মানবনা কারন এটা সাধারন কোন ব্যাপার না এটা আকাশের হবু বউ এর ব্যাপার আর আকাশ ওকে খুব ভালবাসে। আকাশের সন্দেহ এটা কেউ ইচ্ছা করে করেছে। তাই এত কাহিনি হচ্ছে।

নাবিল কথাগুলো বলতে বলতে বিনের কাগজ গুলি উল্টেপাল্টে দেখছিল।
কিন্তু কিছু পেল না।

রুবিনা বেগমঃ বলেছিলাম না শুধু শুধু কষ্ট করলি।তোরা পারিস বটে।
এর মধ্যেই উপড়ে আকাশের গলা শুনা গেল।

নাবিল সহ বাকি সবাই উপড়ে গেল।

নাবিলঃ কাজ হয়েছে..??

আকাশঃ হ্যা অবশ্যই আমি ত জানতাম এটা নিলিমায় করেছে শুধু দরকার ছিল প্রমানের…
আর দেখ আমাদের প্লেনও কাজ করেছে।
তুমি খুব বোকা নিলিমা তুমি যে বিল টা বিনে ফেল নি সেটা জেনেও নাবিল এটা করেছিল আর তুমি বোকার মত বিল টা লোকানোর জন্য সবাইকে ফাঁকি দিয়ে নিজের ঘরে আসলে আর আমি তোমাকে ফলো করলাম।আর বিল টাও পেয়ে গেলাম

নাবিলঃ শুধু শুধু মেঘলাকে এতটা কষ্ট কেন দিলে নিলমা?
তুমি কি ভেবেছিলে মেঘলা বোকা তাই ও টের পাবে না? কিন্তু তুমি কি জান না আকাশকে ফাঁকি দেয়া এতটাও সহজ না।

আকাশঃ নিলিমা দেখো বিলে তোমার নাম স্পষ্ট অক্ষরে লিখা আছে এবার তুমিই বলো তোমাকে কি শাস্তি দেয়া উচিত।

চলবে..!!!

Leave a Comment