Golperjogot

Golperjogot

ভিলেন – থ্রিলার প্রেমের গল্প পর্ব 44 | Romantic Love Story

ভিলেন পার্টঃ ৪৪
Mona Hossain

রুবিনা বেগমঃ শুধু দেখতে ভাল হলেই ঘরের বউ হওয়া যায় না বুঝেছিস ওর না ত আদব কায়দা ভাল আর নাত পারে কোন কাজ কর্ম।
রাস্তার ভিখারি একটা। মাকে ত আগেই খেয়েছে বাবা থেকেও নেই আবার মুর্খ এত বয়স হয়েছে তাও স্কুলের গন্ডিও পার হতে পারে নি। ওকে ছেলের বউ করলে সোসাইটিতে মুখ দেখাব কি করে..??

রুবিনা বেগমের কথাগুলি শুনে মেঘলার খুব খারাপ লাগছে কিন্তু কিছু বলছে না তার বিশ্বাস আকাশ নিজেই এসবে উত্তর দিবে তাই সে ছল ছল চোখে আকাশের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে মেঘলা।

কিন্তু আকাশ একটাও প্রতিবাদ করল না।
নাবিল আকাশের আচারনে অবাক হয়ে বলল তুই কিছু বলছিস না কেন আকাশ?

আকাশঃ কি বলব মা মার জায়গা থেকে ঠিক বলছে এখানে আমার কিছু বলার নেই আর নাবিল বড়দের সাথে এভাবে কথা বলতে হয় না।মা তুমি চিন্তা করো না তোমার পছন্দ নয় এমন কাউকে আমি বিয়ে করব না।


রাত ১১ টার কাছাকাছি,
বর্ষাকাল তাই আকাশে মেঘ জমে আছে চারদিকটা অদ্ভুতভাবে গুমোট অন্ধকার হয়ে আছে।২,১ টা তারা মিটমিট করে জ্বলছে নিভছে দেখে বুঝা যাচ্ছে তারারা মেঘের সাথে প্রানপন যুদ্ধ করে এখন পর্যন্ত ঠিকে আছে হয়ত এখনী মেঘের আড়ালে ঢাকা পরবে।
মেঘলা আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে,

মেঘলাঃআমি এই তারাগুলির মতই অনেক যুদ্ধ করে এখন পর্যন্ত ঠিকে আছি একসময় হয়ত বিলীন হয়ে যাব।আচ্ছা মাম্মম তুমি ওই বিশাল আকাশে থাকো তাই না..?? আচ্ছা তুমি কি এত বড় আকাশে আমার জন্য কি একটু জায়গা করে দিতে পারো না? আমার যে তোমার কাছে যেতে ইচ্ছা করছে।এই পৃথিবীর মানুষগুলি যে বড্ড বেশি সার্থপর গো একটুতেই রং বদলায়।তাই চলে যেতে ইচ্ছে করে।

কি ভাবছো আবারো সোসাইড করার কথা বলছি তাই না? না মাম্মাম এই ভুল আর কখনো করব না এই একটা ভুল সিধান্ত একটা সুখের সংসার ভেংগে দিয়েছে,একটা নিষ্পাপ জীবন কেড়ে নিয়েছে,কোন প্রেমিকের কাছ থেকে তার ভালবাসার মানুষকে কেড়ে নিয়েছে।
আমি যদি সোসাইডের চেষ্টা না করতাম বাবা আর তোমার মধ্যে দুরত্ব তৈরি হতনা। দুরত্ব না হলে বাবাও বিয়ে করত না।
তোমার সুখের সংসার ভাংগত না।সংসার না ভাংলে মেঘলাকে তার মাম্মামকে হারাতে হত না।
তোমাকে না হারালে মেঘলা ভিখারী হত না ভিখারি না হলে আকাশ কে তার মেঘলাকে ছাড়তে হত না।

হ্যা এই সব কিছুর জন্য আমিই দায়ী আমার এই অবস্থার দায়ী আমি নিজেই। কাওকে দোষারোপ করা আমার মানায় না। আজ বড় মা যা যা বলল সবগুলি সত্যি আমার রাগ করার কোন অধিকার নেই। ওরা ভুল তো কিছু বলে নি আমি তো সত্যিই এতিম অন্যের করুনায় বেঁচে আছি,পড়াশুনায় ও অনেক পিছিয়ে। আমি কোন দিক থেকেই ভাইয়ার যোগ্য নই আমার উচিত ভাইয়ার জীবন থেকে সরে যাওয়া।

আমার শাস্তি হওয়া উচিত,আমি একজন খুনী আমার মার মৃত্যুর জন্য আমি দায়ী।আমি তোমাকে মেরে ফেলেছি মাম্মাম। আমি কেন এমন করলাম..??
কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলি বলছিল মেঘলা তবে তার এই আহাজারি শুনার মত আজ কেউ নেই।
বেশ অনেক্ষন কেঁদে মেঘলা নিজের ঘরে ফিরে এল ।মেঘলার মন কিছুতেই শান্ত হচ্ছে না ঘরে এসেও কেঁদেছে সারারাত ধরে কেঁদেছে মেঘলা একটুও ঘুমায় নি তার ভিতরে একটা অপরাধবোধ কাজ করেছিল সে তার মার মৃত্যুর জন্য নিজেকে দায়ী করেছে।

পরদিন সকাল বেলা
উঠেই নিচে গেল কেউ এখোনো উঠে নি ছোট মা নাস্তা বানাচ্ছে।মেঘলা রাতে খায় নি তাই ক্ষিদে পেয়েছে সে কিছু খেতে চেয়েছিল কিন্তু নাস্তা হয় নি দেখে কিছু বলল না।

মেঘলা রান্না ঘরে যেতেই নাবিলের মা বলল
-এত সকালে উঠলি যে,কিছু লাগবে..??

মেঘলাঃনা এমনি এসেছিলাম।

শায়রা বেগমঃ ও আচ্ছা।

মেঘলা গিয়ে টেবিলে বসল।এরমধ্যেই আকাশ আসল।
মেঘলা টেবিলে বসে আকাশের দিকে তাকিয়া আছে দেখেও আকাশ কোন কথা বলল না সোজা রান্না ঘরে চলে গেল।

শায়রা বেগমঃ কি রে কিছু লাগবে..??

আকাশঃ হুম ক্ষিদে পায়েছে খাব।

শায়রা বেগমঃ রান্না ত হয় নি বাবা…একটু বস আমি করে দিচ্ছি।

আকাশঃ লাগবএ না আমি নিজেই নিয়ে নিচ্ছি তুমি কাজ করো বলে গিয়ে ২ টা পাউরুটি ১ টা কলা আর একটা সিদ্ধ ডিম নিল।

শায়রা বেগমঃ ডিম ত খিচুড়ির জন্য সিদ্ধ করেছিলাম

আকাশঃ খিচুড়ি হতে অনেক সময় লাগবে আমার হাতে এত সময় নেই। আমি টেবিলে যাচ্ছি তুমি আমাকে এক গ্লাস দুধ গরম করে দাও বলে আকাশ টেবিলের দিকে গেল।

আকাশকে দেখে মেঘলা উঠে গেল,
মেঘলা চলে যাচ্ছে দেখে শায়রা বেগম বলল কোথায় যাচ্ছিস মেঘলা? নাস্তা করে যা।

মেঘলাঃ ছোট মা আমি রেডি হয়ে আসি পরে খাব তানাহলে স্কুলের দেড়ি হয়ে যাবে।

মেঘলা চলে যাচ্ছিল কিন্তু আকাশ মেঘলার ধরে টেনে এনে আবার বসিয়ে দিল।

মেঘলা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে…

আকাশঃ খাবার টা শেষ করো।
আকাশ কথাটা এমন ভাবে বলল যেন সে রাজা আর মেঘলা তার কিনা গোলাম।

মেঘলাঃ আমি খাব মানে? এগুলি তো তোর জন্য..??

আকাশঃ যাকে দিয়েছি তার জন্যেই নিয়েছি কথা না বাড়িয়ে খাও।

মেঘলাঃ আমার ক্ষিদে পায় নি…

আকাশঃ অভিমান ভাল জেদ নয়..তাড়াতাড়ি খাবার টা শেষ করো।তানাহলে কি হতে পারে যানো নিশ্চুই।

শায়রা বেগমঃ আকাশ তুইও না…ভাল করে বললেই ত খায় এমন রাগী ভাব নিয়ে বললে খাবে নাকি ভয় পাবে কোনটা করবে বল তো?

আকাশঃ যার সাথে যেমন করা উচিত সেটাই করছি।কিরে খাচ্ছিস না কেন কথা কানে যায় না?

মেঘলা চুপচাপ খেতে লাগল।আকাশ মেঘলার মুখোমুখি বসে তাকিয়ে আছে তাই ভয়ে সবটা খাবার শেষ করল মেঘলা।

খাওয়া শেষ করে মেঘলা বলল,
-এবার আমি যাই..??

আকাশঃ না…

মেঘলাঃ ক ক কে কেন..??

আকাশ রান্না ঘরে গিয়ে দুধ নিয়ে এসে মেঘলার সামনে ধরে বলল

আকাশঃ খা…

মেঘলাঃ এটা…??

আকাশঃ তো কোনটা..??

মেঘলাঃ কি অদ্ভুত ( মনে মনে)
এত মেজাজ দেখাচ্ছিস কেন ভাইয়া..??আমি দুধ খাই না তুই ত যানিস তবুও দিচ্ছিস কেন?

আকাশঃ খাস না খাবি এখন থেকে রোজ খাবি তাড়াতাড়ি শেষ কর।

মেঘলাঃ মানে কি…???

আকাশঃ বডড বেশি কথা বলিস তুই। নে হা কর বলে মেঘলার মুখ চেপে ধরে দুধ দিয়ে দিল,
-খা বলছি…(জোর করে)

মেঘলাঃ উম মমম…. ছ ছ ছাড়…..

কে শুনে কার কথা মেঘলাকে আকাশ জোর করে সবটা দুধ খায়িয়ে ছাড়ল।

মেঘলাঃইয়াক….ইয়াক

আকাশঃ বমি পাচ্ছে নাকি…??

মেঘলা রাগি লুক নিয়ে আকাশের দিকে তাকাল।

আকাশঃ ঘরে যাও আজ স্কুল যেতে হবে না

মেঘলাঃ আমি কি খেলার পুতুল যে আমার সাথে যা ইচ্ছা করা যায়?

আকাশঃ মার কথাগুলি কি এবার আমার রিপিট করতে হবে..???তুমি এ বাড়ির কি আবার বলি?

মেঘলা আর কিছু না বলে নিজের ঘরে চলে গেল।

কিছুক্ষন পর সবাই রেডি হচ্ছে দেখে মেঘলা গিয়ে নাবলের মাকে জিজ্ঞাস করল সবাই কোথায় যাচ্ছে..??

ছোট মাঃ আজ আকাশের অফিসের উদ্বোধন সবাই সেখানেই যাচ্ছে…

মেঘলাঃ আমিও কি যাব..??

ছোট মা কিছু বলার আগেই আকাশের মা বলে উঠলেন অবশ্যই না তুই কোথায় যাবি তোর ওখানে যাওয়ার কোন দরকার নেই তুই বাসায় থাকবি…

যদিও মেঘলার আকাশের অফিস দেখার ইচ্ছা ছিল কিন্তু রুবিনা বেগম নিষেধ করায় নিজের ঘরে চলে আসল।

সবাই চলে যাচ্ছে আকাশ আগেই চলে গিয়েছে। নাবিল যখন বের হতে চাইল দেখল মেঘলা দরজায় দাঁড়িয়ে সবার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে…

নাবিলঃ কিরে মেঘলা তুই দাঁড়িয়ে আছিস কেন? সবাই ত চলে গেল।তুই যাবি কি করে ২ টা গাড়িই ত বেরিয়ে গেল।

মেঘলাঃ আমি যাব না ভাইয়া বড় মা যেতে নিষেধ করেছে।

নাবিলঃ বড় মা বললেই হল নাকি সবাই যাচ্ছে তুই যাবি না মানে…?? চল তুই আমার সাথে যাবি

মেঘলাঃ না থাক আমি গেলে যদি বড় মা রেগে যায়?তাছাড়া ভাইয়াও ত আমাকে যেতে বলে নি আমাকে দেখলে ও রাগ করতে পারে।

নাবিলঃ কে রাগ করে সেটা আমি বুঝব তুই চল।নাবিল মেঘলাকে নিয়ে গেল।

মেঘলা যে ড্রেস পড়ে ছিল সে ড্রেসেই নাবিল ওকে নিয়ে চলে গেল ড্রেস বদলানোর সময় দেয় নি।

গিয়ে দেখল অফিসের কর্মচারীসহ গেস্টরা সবাই দাঁড়িয়ে আছে।
নাবিল আর মেঘলা গিয়ে সবার সাথে দাঁড়াল।আকাশের পরিবারের সবাই বেশ খুশি কারন আকাশের বিশান অফিস তারা ভাবতেও পারি নি আকাশ এত ইনকাম করেছে।

সবাই অপেক্ষা করছে, আকাশের ম্যানেজার এসে বলল স্যার এখন তাহলে ফিতা কেটে অনুষ্ঠান শুরু করি.. সবাই ত অপেক্ষা করছে..

আকাশঃ না আমার ফ্রেন্ড নাবিল এখনো আসে নি ও আসুক তারপর।

নাবিল একটু পিছনে ছিল তাই আকাশ দেখে নি।

আকাশ তাকে খুঁজছে দেখে নাবিল আকাশের কাছে চলে গেল তার সাথে মেঘলা ছিল এটা ভুলে গেল।

মেঘলাঃ এক সময় তুই আমাকে ছাড়া জন্মদিনের কেক টা পর্যন্ত কাটতি না আর এখন আমার কথা তোর মনেও নেই থাকবেই বা কি করে এখন তুই কত বড় বিজনেসম্যান। বড় মা ঠিকি বলেছিল আমি তর নখের ও যোগ্য না(মনে মনে)


আকাশঃ মা ফিতা কেটে অফিসের উদ্বোধন করো..

রুবিনা বেগমঃ আমি করব..??

আকাশঃ হ্যা অবশ্যই। তুমি আমার মা।প্রতিটা সন্তানের ভিত্তি থাকে তার মা তাই আমার অফিসের উদ্বোধন করার অধিকারো তোমার।

একে তো নাবিল চলে গিয়েছে অন্যদিকে আকাশ তার মাকে এত গুরুত্ব দিচ্ছে দেখে মেঘলা ভয় পেয়ে গেল।

মেঘলাঃ বড় মা আমাকে আসতে নিষেধ করেছিল তবুও আমি এসেছি দেখলে রাগ করবে বকাও দিবে ।
সবার সামনে অপমানিত হওয়ার কোন মানে হয় না ভেবে মেঘলা একদম সবার পিছনের সাঁড়িতে গিয়ে দাঁড়াল।যাতে ওকে দেখতে না পাওয়া যায়।

রুবিনা বেগম- আকাশ,নাবিল,নেহা,মিলি,নিলিমা সবাইকে নিয়ে ফিতা কাটল তারপর সবাই হল রুমে গেল।মেঘলাও পিছন পিছন গেল যদিও তার মন খারাপ লাগছে।

মেঘলা গিয়ে সবার পিছনের সাঁড়িতে বসল নিলিমারা সবাই স্টেইজের একদম পাশে ভিয়াইপি সাঁড়িতে বসেছে।

এবার সবার উদ্দেশ্যে আকাশের কিছু বলার পালা।

আকাশ স্টেইজে উঠল।আকাশকে খুব সুন্দর লাগছে আজ নিসন্দেহে বলা যায় আকাশের এই লুক দেখে উপস্থিত অনেক মেয়েই ক্রাশ খেয়েছে।

মেঘলার পাশে ২ টি মেয়ে বসেছে তারা সম্ভবত এই অফিসের নতুন ইমপ্লোই…

একটি মেয়ে অন্যটিকে বলছে,আমাদের স্যার এত ইয়ং আমি ত ভাবতেই পারিনি।
অন্য মেয়েটিঃ কি হেন্ডসাম দেখেছিস..??
মেঘলা হা করে ওদের কথা শুনছিল দেখে একটা মেয়ে বলল এই তুমি কে..?? কর্মচারী?

মেঘলাঃ গেস্ট

মেয়েটিঃগেস্ট..?? হা হা হা কার রেফারেন্স এ এসেছো দেখে ত গেস্ট মনে হচ্ছে না।কি জামা কাপড় কারা যে এমন পাবলিক কে দাওয়াত করে কে জানে যাই হোক যাও ওদিকে গিয়ে বসো।

মেঘলার জামা আসলেই অনুষ্টানের জন্য অনুপযোগী মেঘলা কথা না বাড়িয়ে উঠে গিয়ে দূরে বসল।
মন এমনেতেই খারাপ ছিল এখন আরও খারাপ হয়ে গেল।

মেঘলাঃ কত বদলে গেছি আমি? আগে সবাই আমার লুক দেখে হিংসে করত আর এখন উপহাস করে…

মেঘলা নিজেকে নিয়ে ভাবতে ভাবতেই আকাশ বলতে শুরু করেছে মেঘলা এবার সেদিকে মন দিল।

আকাশঃ আমি জানি এখানে উপস্থিত সবার মনে প্রথম প্রশ্ন আমি কি করে এতকিছু অর্জন করলাম তাই না? আমি তো পড়াশুনার জন্য বিদেশে গিয়েছিলাম তাহলে বিজনেস ম্যান হলাম কি করে।
আমি প্রথমেই সেই প্রশ্নের উত্তর টা দিতে চাই। বিদেশে আমি টাকা ইনকামের জন্য সব ধরনের কাজ করেছি কখনো লোকের গ্যারেজে কখনো ড্রাইভার কখনো আবার ঝাড়ুদার।নিশ্চুই অবাক হচ্ছেন তাই না? অবাক হওয়ার কিছু নেই আমার লড়াই টা টাকা ইনকামের ছিল না আমার লড়াই টা ছিল জীবন মরনের আমি জানতাম যদি আমি থেমে যাই আমার জীবন ও থেমে যাবে তাই হাজার অপমানিত হয়েও আমি কখনো থামি নি।আর কথায় আছে পরিশ্রম সৌভাগ্যের চাবি।

প্রথম দিকে এত বড় বিজনেস ছিল না আমি শুরু করেছিলাম ২ টি গাড়ি দিয়ে একটা নিজে চালাতাম অন্যটা ভাড়া দিতাম সেই থেকে শুরু তারপর একটা একটা করে গাড়ি বাড়ালাম আর একটা কোম্পানি খুললাম যেখানে ভাড়ায় গাড়ি পাওয়া যেত তারপর যখন একটা ভাল এমাউন্ট জমা হল সেই বিজনেস ছেড়ে গাড়ি কিনাবেচার ব্যবসা শুরু করলাম এখনো সেটাই করি বিদেশ থেকে গাড়ির পার্টস এনে ফ্যাক্টরিতে গাড়ি বানাই তারপর সেগুলি বিভিন্ন দেশে সেল করি এটাই আমার বিজনেস।

আকাশের কথা শুনে সবাই হাত তালি দিল।

আকাশঃ এবার যেটা না বললেই নয় আমার এই অফিস বা ফ্যাক্টরির দায়িত্বে আমি থাকলেই এসব কিছুই মালিক আমি নই।
এখন আপনাদের সাথে তাকে পরিচয় করিয়ে দিব যাকে বাঁচাতে আমি কাজ শুরু করেছিলাম যে না থাকলে আমি এখন পর্যন্ত বেকার ডিগ্রিধারী হয়েই থাকতাম যে আমার সব কিছুর মালিক প্লিজ ওয়েলকাম মাই ড্রিম কুইন মেঘলা…..!!!

আকাশের বাড়ির সবাই অবাকএর শেষ সীমায় পৌছে গেছে।

মেঘলা হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
মেঘলা স্টেইজে আসছে না দেখে আকাশ নাবিল কে ইশারা করল
নাবিল গিয়ে যখন মেঘলার হাত ধরল সবাই মেঘলার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেল মেয়ে ২ টি ত হতবাক।নাবিল মেঘলাকে স্টেইজে নিয়ে গেল
মেঘলা স্টেইজে আসতেই আকাশ মেঘলার সামনে হাঁটু ঘেরে বসে পড়ল।

আকাশঃ আই লাভ ইউ মাই ড্রিমকুইন… উইল ইউ মেরি মি..???

মেঘলা নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছে না।

মেঘলা কেঁদে ফেলল নাবিল এসে মেঘলাকে জড়িয়ে ধরল মেঘলা নাবিলের বুকে মাথা গুঁজে কাঁদতে লাগল।

আকাশ উঠে দাঁড়াল আমার ড্রিমকুইন আপাতত ড্রামাকুইনে পরিনত হয়ে গিয়েছে নাবিল তুই এদিক টা একটু সামলা আমি ওকে ঠিক করে নিয়ে আসছি বলে মেঘলাকে কোলে তুলে নিল।

মেঘলাঃ কি করছিস ভাইয়া সবাই দেখছে

আকাশঃ তুমি যদি বাচ্চাদের মত কাঁদতে পারে তাহলে সেই বাচ্চা কে আমিও কোলে নিতে পারি…

আকাশ যখন মেঘলাকে নিয়ে যেতে চাইল তখন রুবিনা বেগল বলে উঠল,
– এসবের মানে কি আকাশ…??তুমি কালকেই আমাকে কথা দিয়েছো তুমি আমার পছন্দের কাউকে বিয়ে করবে না।

আকাশঃ অবশ্যই মা আমি তোমাকে কথা দিয়েছি আর আমি আমার কথার খেলাপ করি নি।আমি বলেছিলাম আমি তোমার অপছন্দের কাউকে বিয়ে করব না এটা বলি নি মেঘলাকে বিয়ে করব না।
আমি কাল খুব মনোযোগ দিয়ে ওকে অপছন্দ করার কারন গুলি শুনছিলাম আর ভাবছিলাম এই সমস্যাগুলির সমাধান দিতে পারলেই ত ওকে তোমার পছন্দ হবে।
আকাশ মেঘলাকে কোল থেকে নামিয়ে বলল আমি সমস্যার সমাধান দিচ্ছি মা।

তুমি নিজেই বলেছো মেঘলা দেখতে সুন্দরী তাই এই নিয়ে তোমার সমস্যা নেই।
তোমার প্রথম সমস্যা মেঘলার টাকা পয়সা নেই কিন্তু মা তুমি জানই না আমার ফেক্টরিটা মেঘলার নামে। কেন মেঘলার নামে তার কারন টা আগেই বলেছি।শুধু যে ফ্যাক্টরি তাই না আমার বাংলোটার একমাত্র মালিক মেঘলা, বিদেশে আমি যে ফ্লেট টায় থাকতাম সেটাও মেঘলার নামে তাছাড়া প্রতিমাসে একটা মোটা অংকের এমাউন্ট ওর নামে ব্যাংকে জমা হয়। আর সব কিছুর পরেও ও কোন ভিখারির সন্তান নয় আমি থাকতে মেঘলা কেউ ঠকাবে সেটা হতে পারে না ও ওর বাবার সব সম্পত্তির ভাগ কড়ায় গন্ডায় পাবে।তাই মেঘলা কোন দিক থেকেই গরীব নয়।

তোমার ২য় সমস্যা মেঘলা পাগলামি করে হ্যা আমি মানছি করে কিন্তু একটা ব্যাপার তুমি হয়ত খেয়াল কর নি ও আকাশ ছাড়া অন্য কারো সাথে পাগলামি করে না তাই তুমি ওকে পাগল বলতে পারো না আহ্লাদী বলতে পারো ও আকাশের সাথে একটু আহ্লাদ করে এটা পাগলামি না আর যাই করে সব তো তোমার ছেলেকে ভালবেসেই ত করে মা।আর এই পাগলামি গুলি যদি না করত তাহলে আমি আজ নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারতাম না। আকাশ আজ যা, সব এই মেঘলার জন্যেই।ওর পাগলামি তোমার ছেলেকে একজন সাকসেস্ফুল মানুষ বানিয়ে দিয়েছে এর তুমিই বল না কোন সুস্থ আচারনের চেয়ে এই পাগলামি গুলি ভাল নয় কি?

৩য় সমস্যা মেঘলার আদব কায়দার ঠিক নেই।এটা ভুল কথা মা ওর যদি আদব কায়দা না থাকত তাহলে আমাদের এত অপমান চুপচাপ সহ্য করত না মা।
ওকে আমি ধমক দিয়েছি, মেঘলা সেটার জবাব দিয়েছি এমন কখনো হয়েছে মা? তবুও বলবে আদব কায়দা জানে না? আমি ওকে টেবিল থেকে তুলে দিয়ে ফ্লোরে খেতে বলেছি মেঘলা কোন প্রশ্ন ছাড়াই ফ্লোরে খেতে বসেছে চোখের জল ফেলেছে ঠিকি কিন্তু মুখ দিয়ে একটা শব্দও উচ্চারন করে নি এত কিছুর পরেও বলবে ও আদব কায়দা জানে না?

৪র্থ সমস্যা ওর বাবা মা নেই।
তাতে কি মা?বাবা মা নেই কিন্তু ওর আকাশ তো আছে আমি ওর বাবা মার হয়ে সব দায়িত্ব পালন করব.তোমার ছেলের শ্বশুড় বাড়ি থেকে তোমার যে সকল সুযোগ সুবিধা পাওয়ার কথা,আমি কথা দিচ্ছি আমি মেঘলার হয়ে সব পূরন করব।ও যদি ভুল করে আমি ওর গার্জিয়ান হয়ে ওকে শাসনও করব।

৫ম সমস্যা ওর পড়াশুনা… ঠিক আছে ও যতদিন না শিক্ষিত হতে পারছে আমি ওকে বিয়ে করব না।আমার বিশ্বাস আকাশকে জেতাতে মেঘলা সব কিছু করতে রাজি আছে ভাল রেজাল্ট তো সামন্য কাজ।

কিরে মেঘলা পারবি না আকাশকে জিতিয়ে দিতে
মেঘলা আবার কেঁদে দিল

আকাশঃ তোমার সব সমস্যার সমাধান দিলাম তারপরে মেঘলাকে অপছন্দের কোন কারন থাকতে পারে না। তুমার ত একটাই ছেলে তার কথা তুমি ভাববে না মা…তোমার ছেলে এই মেয়েটাকে ছাড়া বাঁচবে না গো…

আমি যেমন আমার মা কে অসম্মান করতে পারিনা তেমনি নিজের সাথেই বা বেইমানি করি কিভাবে? আমি যেমন তোমাকে ভালবাসি তেমনি মেঘলার কাছেও আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ আমি তোমাদের কাউকেই ছাড়তে পারব না তাই তোমার কাছে অনুরোধ করছি এই অবুঝ মেয়েটার দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে থেকো না মা।

ও অনেক কষ্ট পেয়েছে এবার একটু হাসতে দাও। আকাশ এবার সবার সামনেই ওর মায়ের পায়ের কাছে বসে পড়ল আর বলতে লাগল মা গো ও তো সব হারিয়েছে তুমি ওর বেঁচে থাকার শেষ সম্বলটুকু কেড়ে নিও না আকাশ কে ছাড়া মেঘলা বাঁচবে না মা তুমি ওর কাছ থেকে আকাশ কে কেড়ে নিও না।

নাবিল আকাশের কথা গুলি ইতিমধ্যে কেঁদে ফেলেছে। সে এসে আকাশ কে টেনে তুলল

নাবিলঃ তোকে যতই দেখি অবাক হই।
না তো তোর মত ছেলে পাওয়া যাবে নাত তোর মত প্রেমিক পাওয়া সম্ভব।মেঘলা তো ভাগ্যবতীই সাথে তোর মাও ভাগ্যবান এভাবে মাকে সম্মান কয়টা ছেলে করতে পারে তোর মত ভাই পেয়ে আজ আমি সত্যিই গর্বিত।

চলবে….!!!

Leave a Comment