Golperjogot

Golperjogot

ভিলেন পর্ব 74 – প্রেমের গল্প | Romantic Premer Golpo

ভিলেন
পার্টঃ৭৪
লেখনীঃ মনা_হোসাইন

আকাশঃ একদম রুমের বাইরে যাবি না চুপচাপ শুয়ে থাকবি তানাহলে এখনী ওই বাসায় নিয়ে চলে যাব।

মেঘলা কিছু বলল না বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে আকাশের দিকে তাকাল।

আকাশঃ ব্যাথা কি একটু কমেছে…??

মেঘলা হেসে বলল হুম অনেকটাই এখন আর ব্যাথা করছে না।

আকাশঃ তুই শুয়ে থাক আমি তোর জন্য একটু স্যুপ নিয়ে আসি বলে আকাশে উঠতে চাইলো তখন মেঘলা আকাশের হাত ধরে বললো আমার পাশে একটু বস না …

আকাশ মেঘলার হাত ধরে রেখেই পাশে বসে বলল
কিছু বলবি…??

মেঘলাঃ হুম… একটা সত্যি কথা বলবি..??

আকাশঃ আমি মিথ্যা বলিনা মেঘলা

মেঘলাঃ আমি জানি তুই মিথ্যা বলিসনা কিন্তু তুই আমার কাছ থেকে কিছু লুকাচ্ছিস ভাইয়া। আমার কি হয়েছে সত্যিটা বল না প্লিজ

আকাশঃ কই তেমন কিছু হয় নিতো

মেঘলাঃ তুই মিথ্যে বলছিস সারাক্ষন মাথা ঝিমঝিম করা বমি বমি ভাব পেটে ব্যাথা এগুলো স্বাভাবিক হতেই পারে না।

আকাশঃ উফফ মেঘলা জ্বালাস না তো বলছি তো কিছু হয় নি ছাড় আমি স্যুপ টা নিয়ে আসি বলে আকাশ চলে গেল।

মেঘলাঃ আমার কি হয়েছে সেটা আমাকে জানতেই হবে অনেকতো ট্রাই করলাম তবুও তুই যেহেতু বললিনা এবার আমি নিজেই জেনে নিব


পরদিন,
সকাল থেকেই বাড়িতে সাজ সাজ রব।
নেহাকে দেখতে আসবে শুধু যে দেখতে আসবে তাই নয় বিয়ের দিন তারিখ ও ঠিক হবে তাই বাসায় টুকটাক মেহমান আসতে শুরু করেছে।
সবার সব কিছু ঠিক থাকলেও মেঘলার কিছু ঠিক নেই সকাল থেকেই আকাশ তাকে দরজা বন্ধ করে রেখেছে।আকাশ কাজের ফাঁকে ফাঁকে মেঘলাকে দেখতে আসে। কিন্তু মেঘলার রুম থেকে বের হওয়া বারণ আকাশ কড়াকড়ি ভাবে বলে দিয়েছে মেঘলা যদি কথা না শুনে তাহলে মেঘলা কে নিয়ে বাসায় চলে যাবে।

মেঘলা রুমে বসে বসে জানলা দিয়ে দেখছে সবাই মজা করছে তারও ইচ্ছে করছে বাইরে যেতে। তারচেয়েও বড় কথা মেঘলা প্লেন করেছে আকাশ যখন কাজে ব্যাস্ত থাকবে সেই ফাঁকে সে ডাক্তারের কাছে গিয়ে জেনে আসবে তার কি হয়েছে কিন্তু আকাশ ওকে আটকে রেখেছে।তাই মেঘলা বসে বসে প্লেন করছে কিভাবে বাইরে যাওয়া যায়। তখনী হন্তদন্ত হয়ে আকাশ ঘরে ডুকলো।এসেই বিছানায় শুয়ে পড়ল।দেখেই বুঝা যাচ্ছে অনেক কাজ করে এসেছে তাতে মেঘলার কি সে মুখ ভার করে আকাশের দিকে তাকাল।

আকাশঃ কিরে মুখ টা এমন পেঁচার মত করে রেখেছিস কেন?

মেঘলাঃ তো কি করব? হাসব?শোন এর চেয়ে আমাকে জেল খানায় পাঠিয়ে দে সেটাই ভাল হবে সেখানে অন্তত দেখতে হবে না সবাই আনন্দ করছে আর আমি বসে বসে দিনের আলোয় তারা গুনছি।

আকাশঃ তোকে বের হতে দিলেই ত অঘটন ঘটাবি।

মেঘলাঃ অঘটন মানে কি?কি বলতে চাইছিস?

আকাশঃ চাইছি না বলছি অঘটন ঘটানো টা তোর জন্মগত অভ্যাস।

মেঘলাঃ একদম না একটু যাই না প্লিজ..

আকাশঃ একটুর কথা বলে গিয়ে তো নাচানাচি শুরু করে দিবি

মেঘলাঃ কিছু করব না শুধু নেহা আপুর রুমে বসে থাকব প্রমিস…

আকাশঃ ঠিক তো…??

মেঘলাঃ হুম…

আকাশঃ ঠিক আছে ড্রেস টা বদলে নে আমি তোকে নেহার ঘরে রেখে আসছি।

মেঘলাঃ থ্যাংক ইউ থ্যাংকউ কিউটের ডিব্বা একটা। উম্মা…

আকাশঃ আদর করতেও সময় লাগে না বকা দিতেও লাগে কার্টুন একটা।

মেঘলাঃ ঠিক বলেছিস ফিউচারে আমাদের নিয়ে
#টম_এন্ড_জেরির আপটেড ভার্সন বের হবে যার নাম হবে #মেঘলা_এন্ড_আকাশ ?আমি ফেমাস হয়ে যাব কি ভাল হবে তাই না?আগেই বলে দিচ্ছি আমি কিন্তু জেরি হব আর তুই মাথা মোটা টম।

আকাশঃ পারিসও বকবক করতে বল্লাম ড্রেস চেঞ্জ করতে আর তুই কার্টুন বানাতে বসে পড়লি..

মেঘলাঃ যা বাবা ভুলেই তো গিয়েছিলাম তুই থাক আমি ওয়াশরুমে যাব আর আসব।
মেঘলা আলমারি থেকে একটা হালকা সবুজ রং এর সালোয়ার কামিজ বের করে নিল।

আকাশঃএটা কি নিয়েছিস এটা রাখ টিশার্ট নে.

মেঘলাঃ কি যে বলিস না তুই আমি বাড়ির বউ না? টিশার্ট পরলে লোকে কি বলবে আর তোর বউ কে দেখে সবাই যদি প্রশংসায় না করে তাহলে তোর সম্মান থাকবে নাকি…??

আকাশঃ আজ হটাৎ এত মিষ্টি কথা বলছিস ব্যাপার কি বলত?আবার কোন প্লেন করেছিস তাই না?

মেঘলাঃ দেখেছিস তুই আসলে ভাল কথার মানুষই না..

আকাশঃ আসলে ভুতের মুখে রাম নাম মানায় না। সে যাই হোক এই জামাটা রাখ আর আমি যা বল্লাম তাই পর। এই প্লাজু আর এত বড় ওড়না পরে উল্টে পড়ে গিয়ে আর আমার সম্মান আর বাড়াতে হবে না বুঝেছিস?

মেঘলাঃ এটা পরলে সবাই কত প্রশংসা করত।

আকাশঃকেউ প্রশংসা করলেও বউটা আমার, না করেলেও বউ আমারেই.. আর আমার বউ তোর মত না সে যাই পরে তাতেই ভাল লাগে। বলে মেঘলার হাতে টিশার্ট ধরিয়ে দিল আকাশ।

মেঘলাঃ ফালতু রুচি…

আকাশঃ কি বললি?
মেঘলা মুখ ভেংচি কেটে চলে গেল।

কিছুক্ষন পর
আকাশঃ কিরে ওয়াশরুমেও অঘটন ঘটিয়েছিস?

ভিতর থেকে মেঘলা উত্তর দিল
মেঘলাঃ তুই কি একটুও ভদ্রতা শিখিস নি? এত জ্বালাস কেন?

আকাশঃ কি কি কি? কে কাকে জ্বালায় বললি..?? তুই আমাকে জ্বালাতে জ্বালাতে জীবন টা ভাজা ভাজা করে ফেলেছিস বুঝেছিস?
স্কুল লাইফ/ কলেজ লাইফ সারাদিন পিছনে পড়ে থাকতি ভুলে গিয়েছিস? কি পরিমান জেদি ছিলিস মনে আছে? রাগ করে কথা বলতি না মুখ ঘুরিয়ে রাখতি তবুই শার্ট ধরে থাকতি। না,কেন আমাকে ধরে না রাখলে আমি নাকি গিয়ে বন্ধুদের সাথে মজা করব তাই ঝগড়া করার পরেও তোর সাথে বসে থাকতে হবে। অথচ নিজেই ঝগড়ার সময় বলতি আমার সাথে মিশবি না।
যা যা ভুল করার নিজে করে সব আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিতি কি ডেঞ্জেরাস মেয়ে ভাবা যায়?

মেঘলাঃ তুই বকবক টা বন্ধ করবি নাকি ড্রেস না পরেই বাইরে আসব…??

আকাশঃ সত্যি আসবি আয় না প্লিজ দেখি তোকে কেমন দেখায়..??

মেঘলা দরজা খুলে বলল,
অসভ্য ছেলে জুতা খুলে মারা উচিত তোকে।

আকাশঃ চুপ থাকত এই টুকুনি একটা মেয়ে তার আবার ভাব দেখো… শোন তোকে আবার দেখার কি আছে রে? দেখতে দেখতে বোর হয়ে গিয়েছি বুঝেছিস?

মেঘলাঃ মানে কি…??

আকাশঃ তোর শরীরে কয়টা তিল আছে,কোথায় কি দাগ আছে আমি চোখ বন্ধ করে বলে দিতে পারি বুঝেছিস?

মেঘলাঃ কি বলছিস?

আকাশঃ তোর নাভীর নিচে একটা তিল আছে,হাঁটুর বেশ উপড়ে একটা কাটা দাগ আছে তাই না?

মেঘলা চোখ বড় বড় করে বলল এসবের মানে কি? তুই আমার ঘুমের সুযোগ নিয়েছিস?

আকাশঃ আমার ত খেয়ে কাজ নেই তাই না? তোকে দেখতে সুযোগ নিব।তোকে আমি সম্পুর্ন উলঙ্গ অবস্থায় অনেকবার দেখেছি বুঝেছিস

মেঘলাঃ ছি ছি ছি তুই এত খারাপ লুকিয়ে লুকিয়ে মেয়েদের শরীর দেখিস?

আকাশঃ আবার বাজে কথা…??
তোর যেদিন জম্ম হয়েছিল দাদী তোকে আমার কোলে দিয়ে বলেছিল তুই আমার বউ হবি সেদিন ও তুই উলঙ্গ ছিলি। তারপর থেকে মনি কতবার আমার সামনে তোকে গোসল করিয়েছে ড্রেস চেঞ্জ করিয়েছে তার ত হিসেব নেই।

মেঘলাঃ ওহ আচ্ছা তাই বল ছোট বেলায় দেখেছিস।কিন্তু হাঁটুর উপড়ের দাগ সেটা কি করে দেখলি?

আকাশঃ ব্যথা টা আমি নিজেই দিয়েছিলাম তাই জানি।সেটাও তুই যখন ৫ বছরের ছিলি তখন।

মেঘলাঃ ছোট থেকেই ভিলেন ছিলি।

আকাশঃ তুই কি যাবি নাকি দরজা বন্ধ করে চলে যাব…??

মেঘলাঃ এই না না তুমি কত কিউট ভাইয়া না? চলো চলো যাই।

আকাশ নেহার ঘরে গিয়ে নেহাকে ডেকে বলল,

আকাশঃ নেহা মিলি মেঘলাকে রেখে যাচ্ছি একটু দেখে রাখিস কোন উল্টা পাল্টা কাজ করলে আমাকে সাথে সাথে ডাকবি বুঝেছিস?

মেঘলাঃ আমি কিছু করব না বলেছি না…??যা তো এখান থেকে।

আকাশঃ হুম মনে থাকে যেন। বলে চলে গেল।

মেঘলাঃ আপু তোমাকে সাজিয়ে দেই এসো…

নেহাঃ না মেঘলা তোর কিছু করতে হবে না তুই এখানে বসে বসে দেখ ঠিক আছে..?? এই তোমরা সবাই একটু সরে বসো তো।

মিলিঃ হ্যা হ্যা ঠিক বলেছিস আপু মেঘলা তুই আয় তো আমার কাছে একটু পায়েশ খাবি মা রান্না করেছে মুখে তুলে দেই…

মেঘলাঃ ব্যাপার টা কি? আপুরা আজ হটাৎ এত কেয়ারিং হয়ে গেল ব্যাপার কি ডাল মে কুচ কালা হে দেখতে হচ্ছে ব্যাপার টা…

মেঘলা বসে ছিল তখন সামিরা এসে মেঘলার পাশে বসল।
সামিরাঃ মেঘলা তোমার সাথে কয়েকটা কথা ছিল।

মেঘলা বিরক্ত নিয়ে বলল,
হুম বলে ফেলো…

সামিরাঃ চলো বেলকনিতে যাই এখানে অনেক ভীড়।

মেঘলাঃ যা বলার এখানেই বলো আমি আপুর সাজ দেকবছি…

সামিরাঃ একটু চলো না?

মেঘলা এক রাশ বিরক্তি নিয়ে গেল।
সামিরাঃ আমি জানি তুমি আমার উপড় রেগে আছো.. কিন্তু বিশ্বাস করো তুমাকে কষ্ট দেয়ার কোন ইচ্ছে আমার ছিল না আকাশেই আমাকে এসব বলতে বলেছিল বাস্তবে আকাশ ভাইয়ার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।

মেঘলাঃ তাহলে মিথ্যে বলার কি দরকার ছিল? ও তোমাকে বলল আর তুমিও রাজি হয়ে গেলে?

সামিরাঃ কারন ছিল তাই হয়েছিলাম

মেঘলাঃ কি কারন

সামিরাঃ বলব সব বলব জন্যেই তোমাকে এখানে নিয়ে আসলাম

মেঘলাঃ তুমি বলার আগেই আমি কারন টা জানি। তুমি স্কুল লাইফ থেকেই ভাইয়াকে পছন্দ করতে তাই ও যখন তুমাকে বলল তুমি ওকে ফিরাতে পারো নি তাই না?

সামিরাঃ না মেঘলা তুমি ভুল যানো আমি তোমার ভাইয়াকে পছন্দ করি এটা ঠিক কিন্তু আকাশকে নয় নাবিল কে…

মেঘলাঃ কি বলছো তুমি..??

সামিরাঃ হ্যা এটাই সত্যি আমি স্কুলে যা যা করতাম সবি নাবিলের জন্য আকাশের জন্য নয় কিন্তু আকাশ আর নাবিল সবসময় একসাথে থাকত তাই তুমি হয়ত ভেবেছিলে আমি আকাশ কে পছন্দ করি।

মেঘলাঃ তাহলে তোমাদের প্রেম হল না কেন? ছোট মার ত তুমাকে পছন্দ।

সামিরাঃ এক তরফা ভালবাসা যায় কিন্তু সম্পর্ক গড়ে তুলা যায় না।আমি অনেকভাবে নাবিল কে বুঝানোর চেষ্টা করেছি কিন্তু নাবিল বুঝে নি সেদিন ও বুঝে নি আজও না
আজ থেকে ৫ বছর আগে যখন আমি ওকে প্রপোজ করেছিলাম সেদিন সবার সামনে আমাকে অপমান করেছিল নাবিল।
তারপরেও আকাশ আমাকে আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখিয়েছিল তাই আমি এখানে এসেছিলাম ভেবেছিলাম নাবিল হয়ত….. কিন্তু সেসব কিছুই হল না মাঝখান থেকে আমি তোমার কষ্টের কারন হয়ে দাঁড়িয়েছি তাই আমি চলে যাব নেহার বিয়েটা হয়ে গেলেই আমি চলে যাব।আকাশ তোমাকে অনেক ভালবাসে মেঘলা ওকে নিয়ে শুধু শুধু চিন্তা করো না। এই সময়ে হাসিখুশি থাকতে হয় কখনো মন খারাপ করবে না ঠিক আছে…

সামিরার কথা শেষ হতে না হতেই মিলির গলা ভেসে আসল।

মিলিঃ সামিরা আপু এদিকে এসো না আপুকে সাজিয়ে দাও।

সামিরাঃ হ্যা যাই… মেঘলা চলো ভিতরে যাই…বলে সামিরা চলে গেল।

মেঘলাঃ ছি ছি ছি শুধু শুধু মেয়েটাকে কত খারাপ ভেবেছিলাম আচ্ছা নাবিল ভাইয়া ওকে সেদিন অপমান কেন করেছিল? আমাকে জানতে হবে কিন্তু তার আগে
জানতে হবে এই সময় বলতে সামিরা আপু কি বুঝাল আর নেহা আপু মিলি আপুই বা আমার এত কেয়ার করছে কেন তার মানে কি আমি যা সন্দেহ করছি সেটাই ঠিক..?? আমি মা হতে যাচ্ছি? যদি তাই হয় তাহলে আকাশ আমার কাছ থেকে বিষয় টা লুকাচ্ছে কেন?
যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাকে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।



দুপুর ২ টা নেহার শ্বশুর বাড়ির লোক জন চলে এসেছে।সবাই যে যার কাজে ব্যাস্ত নাবিল আকাশ আপ্যায়নে ব্যাস্ত মিলি সামিরা নেহাকে সাজাতে ব্যাস্ত আকাশ আর নাবিলে মা রান্নার কাজে ব্যাস্ত এই ফাঁকে মেঘলা কাউকে কিছু না বলে বেরিয়ে গেল।
আর কিছুক্ষনের মধ্যেই নার্সিং হোমে পৌঁছে গেল। মেঘলা সেই নাসিংহোমে গেল যেখানে সামিরা দুই মাস আগে তাঁকে ভর্তি করেছিল।

মেঘলা জানেনা সেদিন তাকে কোন ডাক্তার দেখেছিল তার শুধু মনে আছে রুম নাম্বার তাই সেই রুম নাম্বারে গেল এবং রুমে সেদিনের সেই নার্সের সাথে মেঘলার দেখা হল।মেঘলা সাথে সাথে নার্স কে জিজ্ঞেস করলো তাকে সেদিন কোন ডাক্তার দেখেছিলে নার্স তাকে মিসেস আহমেদ এর কথা বলল মেঘলা একটু দেরি না করে মিসেস আহমেদের চেম্বারে গেল।

মেঘলাঃ আসতে পারি?

মিসেস আহমেদঃ আরে মেঘলা তুমি? এসো ভেতরে এসো.

মেঘলাঃ আপনি আমাকে চিনেন?

মিসেস আহমেদঃ ২ মাস ধরে যার চিকিৎসা করছি তাকে চিনব না?তোমার হাজব্যান্ড আকাশের সাথে তো আমার নিয়মিত কথা হয় আমি তোমার খোঁজ নেই.
কিন্তু তুমি এখানে আসছে কেন? তোমার ত কাল শরীর খারাপ ছিল তাই না?

মেঘলাঃ আমার কি হয়েছে? সেটা জানতেঅ আমি আপনার কাছে এসেছি।

প্রশ্নটা শুনে মিসেস আহাম্মেদ কিছুটা বিব্রত হলেন কথা ঘুরানোর জন্য বললেন তেমন কিছু না একটু দুর্বলতা এই আর কি…

মেঘলাঃ মিথ্যা বলবেন না আমি জানি আমার বড় কোনো অসুখ হয়েছে তা না হলে দু’মাস ধরে আমার চিকিৎসা করতেন না. প্লিজ বলুন আন্টি আমার কি হয়েছে?

মিসেস আহমেদঃ কিন্তু মেঘলা,আকাশ বারবার করে আমাকে অনুরোধ করেছে যেন তোমাকে এ ব্যাপারে কিছু না বলি।

মেঘলাঃ আমাকে না বললেও আমি তো জানতে পারবো তাই না?আপনি না বললে আমি অন্য কোন ডাক্তারের কাছে যাব তখন নিশ্চয় জানতে পারবো তারচেয়ে আপনি বলুন আমার কি হয়েছে
আমার শরীর ভালো নেই আন্টি আবার নতুন করে ডাক্তারের কাছে যাওয়া চেকআপ করানো অনেক কষ্টের কাজ। আমার কি হয়েছে সেটা জানার অধিকার আমার আছে। প্লিজ আমি অনুরোধ করছি আমাকে বলে দিন আমি প্রতিজ্ঞা করছি আমি যে আপনার কাছে এসেছিলাম সেটা আমি আকাশকে বলবো না

অনেক জোরাজুরি করার পর মিসেস আহমেদ বলতে রাজি হলেন।

মিসেস আহমেদঃ আসলে তুমি প্রেগন্যান্ট মেঘলা এটা যতটা খুশির খবর তোমার জন্য ঠিক ততটাই দুঃখের খবর কারণ বাচ্চার পজিশন ঠিক নেই বাচ্চাটা যে পজিশনে আছে তাতে যতদিন যাবে মানে বাচ্চাটা যত বড় হবে তোমার শরীরে ততই তুই জটিলতা দেখা দিবে তোমার শ্বাস নিতে কষ্ট হবে ইনফেক্ট যেকোনো সময় নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যেতে পারে কারণ বাচ্চাটা তোমার নার্ভের সাথে জড়িয়ে আছে। বাচ্চাটা থাকলে তোমার লাইফ রিস্ক আছে।তাই অনেক ভেবেচিন্তে আকাশ সিধান্ত নিয়েছে বাচ্চাটা নষ্ট করে ফেলবে।তোমার শরীর দুর্বল ছিল তাই সার্জারী করা সম্ভব হয় নি ২ মাস পরে আসার কথা ছিল আগামী 14 তারিখ তোমার এবরশন ডেট। আকাশ তোমাকে না জানিয়ে সার্জারি করাতে চায় কারণ তার ধারনা তুমি যদি জানতে পারো তুমি মা হতে চলেছ তুমি কিছুতেই বাচ্চাটা নষ্ট করতে দিবেনা তাই আকাশ তোমাকে জানাতে চাই নি।
যদিও ব্যাপারটা তোমার জানা উচিত কেননা বাচ্চাটা নষ্ট করতে তোমার একটা কিউট কেটে বাদ দিতে হবে তাতে তোমার মা হওয়ার সম্ভাবনা ৯০ শতাংশ কমে যাবে বলা যেতে পারে তুমি আর কোনদিন মা হতে পারবেনা।
আর সে কারণেই আকাশ তোমাকে ব্যাপারটা জানায়নি কারণ তুমি কোনভাবেই রাজি হবে না কিন্তু আকাশের কাছে তোমার বেঁচে থাকাটা বেশি জরুরী মনে হয়েছে তাই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মেঘলাঃ এত বড় একটা সিদ্ধান্ত আমাকে না জানিয়ে আপনারা নিতে পারলেন? আমি কোনদিন মা হতে পারব না এটা জেনেও আপনি একটা মেয়ে হয়ে আমাকে জানালেন না?

মিসেস আহমেদঃ আমাকে ভুল বুঝনা আমি তোমাকে জানাতে চেয়েছিলাম কিন্তু আকাশের অনুরোধে বলতে পারি নি বেচারা তোমাকে অনেক ভালবাসে।
আমি তোমার ব্যাপারটা বুঝতে পারছি কিন্তু জীবন বাঁচানো ফরজ কাজ। জানি এই কাজ টা করলে একটা নিষ্পাপ জীবন যাবে কিন্তু যদি সেটা না করি তুমি তোমার বাচ্চা সাথে তোমার হাজবেন্ড ৩ জনের জীবন যাবে মেঘলা।

আমি আমার ডাক্তারী লাইফে এমন কেইস কখনো পাইনি।আমার সেদিনটার কথা এখনো স্পষ্ট মনে আছে।
দুপুরবেলা আমি তোমার রিপোর্ট গুলো দেখছি তখন হন্তদন্ত হয়ে আকাশ আমার চেম্বারে আসল,




ফ্ল্যাশব্যাক
আকাশঃ ম্যাম আসতে পারি…??

মিসেস আহমেদঃ হুম আসুন…বসুন বলুল আমি আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি..??

আকাশঃ আমি আকাশ মেঘলার হাজব্যান্ড সামিরা বলল আপনি নাকি আমার সাথে দেখা করতে চেয়েছেন তাই এসেছি…

মিসেস আহমেদঃ ও আচ্ছা আপনিই আকাশ…??

আকাশঃ জ্বি…

মিসেস আহমেদঃ বয়স কত আপনার..??দেখে ত কমেই মনে হচ্ছে।

আকাশঃ ২৬ কিন্তু কেন ম্যাম।

মিসেস আহমেদঃ আসলে তুমি বাবা হতে চলেছো…

কথাটা শুনে আকাশের সে কি আনন্দ তার চোখ মুখে খুশির ঝিলিক বয়ে গেল খুশি যেন আর ধরে না।

আকাশঃ কি বললেন আপনি…??? আমি ব ব ব বাবা হতে চলেছি আপনি সত্যি বলছেন…?? আমি নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছি না ও গড আমি ভাবতেও পারি নি এমন একটা সুখবর পাব… জানেন ম্যাম আমার খুব শখ আমার একটা মেয়ে বাবু হবে একদম মেঘলার মত সারাদিন আমাকে জ্বালাবে এত তাড়াতাড়ি স্বপ্ন পূরন হবে ভাবতেও পারি নি।

মিসেস আহমেদঃ শান্ত হও আকাশ।

আকাশঃ আমি কতটা খুশি হয়েছি আপনাকে বলে বুঝাতে পারব না ম্যাম।

মিসেস আহমেদঃ কিন্তু আকাশ খবর টা যতটা খুশির তারচেয়েও বেশি দুঃখজক।

আকাশঃ মানে…??

মিসেস আহমেদঃ বলতে খারাপ লাগছে কিন্তু আকাশ মেঘলা একটা কমপ্লিকেটেড প্রেগন্যান্সি কন্সিভ করেছে বাচ্চাটা ওর নার্ভের সাথে জড়িয়ে আছে তাই যতই দিন যাবে বাচ্চাটা বড় হবে আর ততই নার্ভের সাথে জড়িয়ে যাবে তখন মেঘলার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হবে ইনফেক্ট বাচ্চা বেশি নাড়াচাড়া করলে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যেতেও পারে…কপাল ভাল হলে বাঁচবে তাছাড়া ৮০% মৃত্যু ঝুঁকি আছে।

আকাশঃ কি বলছেন এসব…মেঘলার ত এমনিতেই শ্বাসকষ্ট আছে ঠান্ডা লাগলেই নিশ্বাস নিতে পারে না।

মিসেস আহমেদঃ কি বলছো?
তাহলে তো রিস্ক আরও বেড়ে গেল।

আকাশঃ মম মম মানে..?? তাহলে এখন কি করতে হবে কোন সার্জারীর মাধ্যমে বাচ্চার পজিশন ঠিক করা যায় না..??

মিসেস আহমেদঃ এটা উপড় ওয়ালার দান এতে আমাদের হাত নেই রিস্ক নিতেই হবে।

আকাশঃ আমি মেঘলাকে নিয়ে রিস্ক নিতে চাই না।

মিসেস আহমেদঃ উপড়ওয়ালার হাতে ছেড়ে দিয়ে অপেক্ষা করা ছাড়া কোন উপায় নেই তাছাড়া একটা উপায় আছে বাচ্চা টা নষ্ট করা কিন্তু বাচ্চাটা নষ্ট করতে মেঘলার বাচ্চা ধারন করার ২ টা টিউব থেকে একটা টিউব কেটে বাদ দিতে হবে ফলে ও আর কোন দিন মা হতে পারবে কিনা নিশ্চিত নয়।

আকাশঃ আপনি এসব কি বলছেন..??

মিসেস আহমেদঃ হয় ধর্য ধরতে হবে অথবা বাচ্চা নষ্ট করতে হবে। এটা একটা বড় সিধান্ত আকাশ এভাবে হুট কতে সিধান্ত নেয়া যাবে না তুমি বাসায় যাও ভাল করে ঠান্ডা মাথায় ভেবে মেঘলার সাথে কথা বলে সিধান্ত নাও।



সেদিন আকাশ কোন জবাব না দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ফিরে গিয়েছিল। তারপর পরদিন এসে আমাকে বলল সন্তান দিয়ে কি হবে ম্যাম যদি প্রতিদিন মৃত্যু যন্ত্রনা ভোগ করতে হয়।আমি বাচ্চা চাই কিন্তু মেঘলার বিনিময়ে না। আপনি abortion এর ব্যবস্থা করুন।

আমি বল্লাম তুমি কি সিওর?

জবাবে আকাশ বলল
বাচ্চাটা থাকলে মেঘলা আর বাচ্চা হয়ত সুস্থ থাকবে কারন ২০% হলেও ওদের বাঁচার সম্ভব আছে কিন্তু আমার বাঁচার ১% সম্ভবনাও নেই কারন বাচ্চা জন্মানোর আগে আমি নিজেই হার্ট এট্যাক করে মারা যাব। সবসময় মনে হবে এই হয়ত মেঘলার সাথে খারাপ কিছু ঘটছে।কাল সারারাত আমি ঘুমাতে পারি নি শুধু মনে হচ্ছিল মেঘলা হয়ত সেন্সলেস হয়ে গিয়েছে।এই দুশ্চিন্তা নিয়ে আমি থাকতে পারব না ম্যাম।

মিসেস আহমেদঃ এত ভালবাসো বউ কে?

আকাশঃ মেঘলা শুধু আমার ভালবাসা নয় ও আমার স্বপ্ন,আমার আশা আমার অভ্যাস,আমার জীবন।

মিসেস আহমেদঃ মেঘলা রাজি হয়েছে?

আকাশঃ ওকে বলিনি, বলবো ও না সার্জারীর পর জানাব তানাহলে রাজী হবে না। ও খুব জেদি যত যাই হয়ে যাক বাচ্চা নষ্ট করবে না।

মিসেস আহমেদঃ কিন্ত আকাশ আবেগ বেশিদিন থাকবে না। তুমার বয়স কম এখন বউয়ের জন্য ভালবাসা থাকলেও যখন বয়স বাড়বে তুমি বাবা হতে পারবে না তোমার পরিবার তুমাকে চাপ দিবে তুমি আবার বিয়ে করবে তখন মেঘলার জীবন টা বেঁচে থেকেও মরার সমতুল্য হবে। তাই ওকে বিষয় টা না জানিয়ে আমি কিছু করতে পারব না।

আকাশঃ হুম ঠিক বলেছেন… মেঘলা যদি আমার শুধু বউ হত তাহলে হয়ত এমটাই ঘটত কিন্তু আমি ওকে শুধু বউয়ের চোখে দেখি না। কখনো ছোট বোনের মত স্নেহ করি কখনো বন্ধুর মত ভালবাসি আবার কখনো পোষা পাখীর মত আদর করি। মেঘলা আমার অভ্যেসে মিশে গিয়েছে আমি বেঁচে থাকতে ওকে কোনদিন ছাড়তে পারব না। আপনি জানেন আমাদের বিয়ের এক মাস হয়েছে আর প্রেমের বয়স প্রায় ১০/১৫ বছর কিন্তু আমি কখনো মেঘলাকে বউ এর মত করে কাছে পাইনি।শুধুমাত্র একদিন ফিজিক্যাল রিলেশান হয়েছিল তাও এক্সিডেন্টলি ২ জনের সম্মতি ছাড়া। যার ফল এই বাচ্চাটা। তারপরেও আমাদের সম্পর্কের এতটুকু পরিবর্তন হয় নি আমার কখনো মনে হয় নি মেঘলাকে আমার কাছে পেতে হবে বা ও কেন বউয়ের মত আচারন করছে না সেটা নিয়েও কোনদিন প্রশ্ন করিনি এরপরেও বলবেন আমি ওকে ছেড়ে দিব?
আসলে মেঘলার জন্মের পর থেকেই আমি জানতাম ও আমার বউ এই এত বছরের সম্পর্কের মধ্যে অনেক ঝড় এসেছে অনেক সমস্যা হয়েছে কিন্তু আমরা কেউ কাউকে ছাড়তে পারিনি কারন আমরা ২ জন ২ জনাতে অভ্যস্ত।মেঘলা মা হতে পারল কিনা সেটা আমার উপড় কোনদিনি প্রভাব ফেলবে না আর এতিমখানা ত আছেই সেখান থেকে না হয় দত্তক নিয়ে নিব।

আর আপনি চিন্তা করবেন না আমার যেকোনো সিধান্তে মেঘলা সম্মতি দিবে যেদিন সার্জারী করতে আসবে বলবেন আমার জন্য ওর একটা কিডনী ডোনেট করতে হবে ও যদি সম্মতি দেয় তখন সার্জারী করবেন না হলে করবেন না।

মিসেস আহমেদঃ কিন্তু…?

আকাশঃ বাচ্চা ছাড়া থাকতে পারব কিন্তু মেঘলাকে ছাড়া না আমার কাছ থেকে আমার ভালবাসাকে কেড়ে নিবেন না প্লিজ..



বর্তমান,

মিসেস আহমেদঃ তুমিই বলো এর পর আমি ওকে কি করে ফিরাতাম…?

মেঘলা যেন কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে ডুকরে কাঁদতে ইচ্ছে করছে তার।কিন্তু ডাক্তার কে সেটা বুঝতে না দিয়ে চলে আসল। রাস্তায় আনমনে হাঁটছে মেঘলা।

মেঘলাঃ আমি কি এমন অন্যায় করেছিলাম খোদা? আমার সাথে এমন কেন হয় বারবার আমাকেই কেন পরীক্ষা দিতে হয়?
আজ আমাকে এই কোন পরীক্ষার সামনে ফেললে? নিঃসন্তান হয়ে বেঁচে থেকে কি করব? পাঁচজন পাঁচটা কথা শুনাবে আকাশের সারাজীবন এক না পাওয়া নিয়ে থাকতে হবে… আর বড় মা..বড় বাবা কি এটা মানবে?কি করেই বা মানবএ আকাশ যে তাদের একমাত্র ছেলে তারই যদি কোনদিন বাচ্চা না হয় বাবা মা হিসেবে কারো পক্ষে কি এটা মানা সম্ভব?শুধুমাত্র আমার জন্য সবার মাঝে একটা অসুম্পর্নতা থেকে যাবে সারাজীবন। আমিই বা কি করব আকাশের সাথে থাকলে যেভাবেউ হোক abortion করিয়ে দিবেই আমি যতই নিষেধ করি আমার কথা শুনবে না আমি না চাইলেও জোরকরে করাবে আমার এখন কি করা উচিত?



এদিকে নেহার বিয়ের তারিখ ঠিক করে মেহমান চলে যাওয়ার পর আকাশ সারাবাড়ি খুঁজেও মেঘলাকে পায় নি।

আকাশঃ নেহা মিলি তোদের বলেছিলাম মেঘলাকে দেখে রাখতে এখন কোথায় ও…? (ধমক দিয়ে)

মিলিঃ ভাইয়া আমরা ব্যাস্ত ছিলাম ভেবেছিলাম মেঘলা হয়ত রুমে গিয়েছে।ও যে বাইরে চলে যাবে বুঝতে পারিনি।

আকাশঃ যখন এত মিষ্টি মিষ্টি কথা বলছিল তখনী বুঝেছিলাম গন্ডগোল আছে।একবার শুধু হাতের কাছে পাই আজ যদি আমি ওর পা ভাঙতে না পারি আমার নাম আকাশ না..



চলবে…!!!

Leave a Comment