Golperjogot

Golperjogot

ভিলেন পর্ব 55 – থ্রিলার প্রেমের গল্প | Romantic Premer Golpo

ভিলেন পার্টঃ ৫৫
Mona Hossain

আকাশ আর মেঘলা লুকিয়ে বিয়ে করেছে অনেকদিন হয়ে গিয়েছে। যদিও তারা বিষয়টা কাউকে জানায় নি।তাই কোন ঝামেলা হয় নি। নিলিমাও বাসা ছেড়ে চলে গিয়েছে অনেকদিন আগেই তাই আকাশ আর মেঘলার মাঝে এখন আর কোন ঝামেলা নেই। তাদের মাঝে ভালবাসা থাকলেও তাদের যে বিয়ে হয়েছে সেটা ২ জনেই প্রায় ভুলে গিয়েছে তারা আগের মতই স্বাভাবিক প্রেমিক প্রেমিকার মতই আচারন করে।

বেশ ভালই দিন কাটছে আকাশ আর মেঘলার।
মেঘলা মন দিয়ে পড়াশুনা করে আকাশও অফিসের কাজে মন দিয়েছে।

প্রতিদিনের মত আজও মেঘলা স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে আকাশের ঘরে গেল।আকাশ তখন শাওয়ার নিচ্ছে।

মেঘলা আকাশকে ঘরে দেখতে না পেয়ে আকাশকে ডাকতে লাগল।

মেঘলাঃ ভাইয়া কোথায় তুই…

আকাশ ওয়াশরুম থেকেই উত্তর দিল,

আকাশঃ কতবার বলব আমাকে ভাইয়া বলবি না…বউ হতে পারিস না ভাল কথা, অন্তত প্রেমিকা ত হতে পারিস নাকি?

মেঘলাঃ আচ্ছা বাবা বলব না এখন বাইরে আয়।

আকাশঃ আমি শাওয়ার নিচ্ছি মেঘলা।

মেঘলাঃ বেশি দেড়ি হবে..??আসলে আমার কয়েকটা জিনিস লাগত।

আকাশঃ বেড কর্নারে ওয়ালেট আছে নিয়ে যা।

মেঘলাঃ উফফ এত সকালে দোকান খুলেছে নাকি..??

আকাশঃ তো ফিরার সময় নিয়ে আসিস।

মেঘলাঃ আমার এখনী লাগবে।

আকাশঃ আজব তুই কিনতে পারবি না তাহলে আমি কোথায় পাব?আমি কি দোকানদার নাকি আলাদিনের জ্বিন যে বলার সাথে সাথে নিয়ে আসব?

মেঘলাঃ উফফ তোকে বুঝাতে পারছি না… আমি আপাতত ম্যানেজ করে নিয়েছি কিন্তু বেশিক্ষন ম্যানেজ করতে পারব না তাই তুই অফিসে যাওয়ার পথে অবশ্যই কিনে দিয়ে যাবি বুঝেছিস..??

আকাশঃকিসব হিজিবিজি কথা বলছিস কিছুই বুঝতে পারছি না আচ্ছা জিনিস টা কি সেটা বল..

মেঘলাঃ বলতে পারব না লিখে রেখে যাচ্ছি।

আকাশঃ মেঘলা তুই না একটা আজব টাইপের মেয়ে…

মেঘলাঃ বকবক বন্ধ কর আমি চলে যাচ্ছি তুই যাওয়ার সময় দিয়ে যাস ভুলে যাস না যেন…ভুলে গেলে বিপদে পড়ে যাব…

আকাশঃ আচ্ছা বাবা দিয়ে যাব…যা এখন।

মেঘলা স্কুলে চলে গেল আকাশ শাওয়ার নিয়ে বাইরে এসে দেখল মেঘলা বিছানার উপড় একটা কাগজ রেখে গিয়েছে…

আকাশঃ দেখি কি এমন জিনিস যা ম্যাডামের এখনী লাগবে..?? বলে আকাশ কাগজটা হাতে নিল।
পিড়িয়ড প্যাড..???
কাগজের নিচে লিখা আমি ডেট ভুলে গিয়েছিলাম হঠাৎ করেই এমন হল কিন্তু আমি স্কুল মিস দিতে চাইনা। ভাল রেজাল্ট আমাকে করতেই হবে তাই ম্যানেজ করে নিয়েছি।

আকাশঃ পাগলি একটা…

মেঘলার স্কুল মর্নিং শিফটে ৭.৩০ এ সে বেরিয়ে গিয়েছে আকাশের অফিস যদিও ১০ টায় কিন্তু মেঘলার অসুবিধে হবে ভেবে আকাশ অফিস টাইমের অনেক আগেই বেরিয়ে গেল
আকাশ অফিসে যাওয়ার সময়েই প্যাড কিনে নিল।

আকাশঃকিনে ত নিলাম কিন্তু স্কুলে গিয়ে সবার সামনে এটা মেঘলাকে দিলে ব্যাপার টা কেমন হবে.? অনেকেই হয়ত খারাপ ভাব্বে তাছাড়া মেঘলাও আমার কাছ থেকে এটা নিতে হয়ত অস্বস্তিবোধ করবে তারচেয়ে অফিসে গিয়ে আমার পিএ কে দিয়ে পাঠালেই মনে হয় ভাল হবে…

আকাশ অনেক চিন্তা করে মেঘলার স্কুলে গেল না সে অফিসে গিয়েই তার পিএ জেনি কে নিজের রুমে ডাকল।

জেনি আকাশের এসিস্ট্যান্ট মিসেস জেনিফারের মেয়ে। মিসেস জেনিফার হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় আকাশ জেনিকে তার মায়ের চাকরি টা দিয়েছে।

জেনিঃ স্যার আমাকে ডেকেছেন..??

আকাশঃ হুম এটা নিন..

জেনি অবাক হয়ে গেল,স্যার এটা…??

আকাশঃ আমমমম… মানে এটা মেঘলার মানে আমার জিএফ এর ওর স্কুলে গিয়ে দিয়ে আসুন। (আমতা আমতা করে)
কথাটা বলতে গিয়ে আকাশ বেশ ইতস্তত হল।

জেনি আর কিছু না বলে মেঘলার স্কুলে গেল।
স্কুলে গিয়ে মেঘলাকে কমন রুমে ডাকল।

মেঘলাঃ আপনাকে ত ঠিক চিনলাম না।

জেনিঃ আমি জেনি আকাশ স্যারের পার্সনাল এসিস্ট্যান্ট।
কথাটা শুনে মেঘলা অবাক হল।

মেঘলাঃ ভাইয়া এত কম বয়সি এসিস্ট্যান্ট রেখেছে আমাকে ত বলে নি..(মনে মনে)

জেনিঃ কি ভাবছ…??

মেঘলাঃ কই কিছু না ত।জ্বি বলুন আমি কিভাবে আপনাকে সাহার্য্য করতে পারি?

জেনি প্যাকেট টা মেঘলার দিকে ছুড়ে মারল।

মেঘলা অবাক হল,

জেনিঃ এভাবে দেখার কি আছে..? জীবনে এত বেসরম মেয়ে দেখি নি।স্যার তোমার বয়ফ্রেন্ড বলে কি মাথা কিনে নিয়েছো নাকি একটা ছেলেকে দিয়ে এসব কিনাতে লজ্জা করে না কোন মুখে এসবের কথা বললে বলতো,..??

মেঘলাঃ কিসব বলছেন..??

জেনিঃ তোমার ব্যাপারে যতটা শুনেছিলাম তুমি ত দেখছি তার চেয়েও ভয়ংকর।

মেঘলাঃ মানে কি..??

জেনিঃ তোমার যন্ত্রনায় স্যাএ এক দন্ড শান্তি পায় না। স্যার ত সবসময় বলে এই মেয়ের যন্ত্রনায় আমি পাগল হয়ে যাব।এখন দেখছি সব সত্যি বলে তুমি ত দেখছি স্যার কে নিজের গোলাম বানিয়ে রেখেছো।

মেঘলাঃ আপনি একটু বেশিই বলছেন না…??

জেনিঃ একদম না সত্যি তাই বল্লাম।

মেঘলা আর কিছু না বলে চলে গেল।



রাতে আকাশ বাসায় ফিরে মেঘলার ঘরে গেল। মেঘলা শুয়ে আছে দেখে আকাশ বলল,

আকাশঃ শরীর কি বেশি খারাপ…??

মেঘলা জবাব দিল না…

আকাশঃ আপনাকে আমি কিছু জিজ্ঞাসা করছি

মেঘলাঃ উত্তর দেয়ার প্রয়োজন মনে করছি না।

আকাশঃ হঠাৎ মেজাজ খারাপ হল কেন..??

মেঘলা উঠে আকাশের দিকে একটা বালিশ ছুড়ে মেরে বলল তোকে এখান থেকে যেতে বললাম না…??যা বলছি।

আকাশঃ এ বাবা যেতে বললি কখন? মেঘলা পাগলামি করছিস কেন..??

মেঘলাঃ হ্যা হ্যা আমি ত পাগল নিজেও পাগল অন্য সবাইকেও পাগল বানিয়ে দেই।তাহলে আমার কাছে এসেছিস কেন?

আকাশঃ এই কয়েকদিন মনে হয় ম্যাডামের মেজাজ একটু বেশিই খারাপ থাকবে থাক আর বাড়াবাড়ি না করে মানে মানে কেটে পড়ি।
ভেবে আকাশ চলে যেতে চাইল,
আকাশ যখন বাইরে যেতে চাইল তখনী জেনি আকাশকে ফোন দিল।

আকাশ ফোনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল জেনি..?? এতরাতে জেনি আমাকে ফোন করছে কেন কোন ঝামেলা হয় নি তো…??

আকাশ যখন বিড়বিড় করে এসব বলছে মেঘলা ড্যাব ড্যাব করে তার দিকে তাকিয়ে আছে আকাশ সেটা খেয়াল না করে ফোন ধরল,

আকাশঃহুম জেনি বলো…কি হয়েছে..??
আচ্ছা চিন্তা করো না আমি এখনি আসছি।বলে আকাশ ফোন রেখেই বাইরে চলে গেল।

আকাশ বাইরে যাওয়ার সাথে সাথেই মেঘলা আকাশকে ফোন দিল আকাশ ড্রাইভ করছিল তাই ফোন দেখল না।
জেনির মা মিসেস জেনিফারের অবস্থা খারাপ হওয়ায় ডাক্তার আকাশকে ডেকেছে আকাশও তাই তাড়াহুড়ো করে হাসপাতালে চলে এসেছে।
আকাশ যাওয়ার পর ডাক্তার বলল মিসেস জেনিফারের অপারেশন করতে হবে টাকার জন্য আকাশকে ফোন করেছে।
আকাশ বিল দিয়ে দিল রাতেই অপারেশন করা হবে মিসেস জেনিফারের আপনজন বলতে জেনি ছাড়া কেউ নেই তাই আকাশ রাতে হাসপাতালেই থেকে গেল। আর আকাশের ফোনটা গাড়িতে ছিল তাই মেঘলার ফোন দেখল না।
মেঘলা আকাশকে ততক্ষন ফোন করল যতক্ষন না ফোনের চার্জ শেষ হয়ে অফ হয়ে গেল

মেঘলাঃ বাহ ভালই উন্নতি হয়েছে দেখছি এখন পিএ এর সাথে বাইরে রাতও কাটাস এতটাই ব্যস্ত যে আমার ফোন টা পর্যন্ত ধরতে পারলি না?




রাত টা কেটে গেল,
সকালে আকাশ বাসায় ফিরল আকাশের চোখ লাল হয়ে আছে দেখেই বুঝা যাচ্ছে সারারাত ঘুমায় নি এদিকে আরও একজনের চোখ মুখের অবস্থাও খারাপ সেটা আর কারো না মেঘলার।তার অবস্থা আকাশের চেয়ে খারাপ সে সারারাত তো ঘুমাইনি তারউপড় সারারাত কেঁদেছে। কেঁদে কেঁদে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে।

সকালে সবাই যখন নাস্তা করছিল তখন আকাশ ফিরল।
আকাশকে দেখে সবাই জিজ্ঞাসা করতে লাগল সারারাত সে কোথায় ছিল।

আকাশ জবাব দিবে সেই মুহুর্তে মেঘলা খাবার ছেড়ে উঠে গেল।

নাবিলের মাঃ কি হল মেঘলা…উঠে গেলি যে…

মেঘলাঃ স্কুলের দেড়ি হয়ে যাচ্ছে ছোট মা।

নাবিলের মাঃ তোর চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে তোর শরীর ঠিক নেই আজ না হয় স্কুল মিস দে।

মেঘলাঃ আমি ঠিক আছি ছোট মা ইনফেক্ট একটু বেশিই ঠিক আছি আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে চলে গেল মেঘলা।

নাবিলঃ এর আবার কি হল..?? আচ্ছা বাদ দাও মা আকাশ তুই কোথায় ছিলি সে বল।

আকাশঃ আর বলিস না মিসেস জেনিফার আমার এসিস্ট্যান্ট আমার অনুপস্থিতিতে উনিই এতদিন আমার ব্যাবসা সামলেছেন কিছুদিন আগে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন উনার জন্য হাসপাতালে গিয়েছিলাম আন্টি বেচারি আমার জন্য অনেক কিছু করেছে আমারো ত উচিত উনার বিপদে উনার পাশে দাঁড়ানো।

নাবিলঃ ভাল করেছিস আয় এবার খাবি আয়।

আকাশ নাস্তা করে ফ্রেশ হতে গেল ফোন টা চার্জে দিয়ে।

আকাশ ফ্রেশ হয়ে এসে ফোন খুলতেই দেখল ১৫৮ টা কল তাও মেঘলার ফোন থেকে।দেখে আকাশ অবাক হল।

আকাশঃ মেঘলা আমাকে এতবার কল করেছিল কেন..?? কিছু কি হয়েছে…??মেঘলা ফিরলে জিজ্ঞাস করতে হবে।
ভাবতে ভাবতে আকাশ অফিসে চলে গেল।

কিছুক্ষন যেতে না যেতেই বাসায় ফোন আসল মেঘলা স্কুলে হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েছে বাসা থেকে গিয়ে কেউ যেন তাকে নিয়ে আসে…

নাবিল গিয়ে মেঘলাকে নিয়ে আসল।
আকাশ খবর পেয়ে সাথে সাথেই বাসায় চলে আসল।

আকাশঃ মেঘলা কি হয়েছে…??

মেঘলাঃ কই কিছু না তো…

আকাশঃ কিছু না মানে নাবিল যে বলল তুই অসুস্থ।

মেঘলাঃ অসুস্থ না আমি ক্লাসে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম সবাই ভেবেছে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে কিছুই হয় নি।

আকাশঃ থ্যাংকস গড আমি ভাবলাম না জানি কি হয়েছে।

মেঘলাঃ আমি একটু ঘুমাব তুই চলে যা প্লিজ।

আকাশঃ হুম অবশ্যই যাচ্ছি যাচ্ছি আকাশ যেতে যেতে বলল মেঘলা রাতে ফোন দিয়েছিলি..??

মেঘলাঃ কই নাতো

আকাশঃ নাত মানে কি..?? এতবার ফোন দিলি এখন বলছিস না তো।

মেঘলাঃ দিয়েছিলাম বুঝি..?? আমার ত মনে পড়ছে না।

আকাশঃ কোন কারনে আমার উপড় রাগ করেছিস মনে হচ্ছে…??

মেঘলাঃ রাগ করার মত কিছু কি করেছিস..??

আকাশঃ মেঘলা….

মেঘলাঃ তাহলে রাগ করব কেন…??

চলবে…!!!

Leave a Comment