Golperjogot

Golperjogot

ভিলেন পর্ব 63 – থ্রিলার প্রেমের গল্প | Romantic Premer Golpo

ভিলেন পার্টঃ ৬৩
Mona Hossain

আকাশ মেঘলাকে রেখে ফিরে আসলো।

নাবিলঃ তুই সত্যি সত্যি মেঘলাকে রেখে আসলি।

আকাশঃ তোর কি মনে হচ্ছিল আমি নাটক করছিলাম?

নাবিলঃ তুই বিশ্বাস করিস মেঘলা এমন কিছু করতে পারে..??

আকাশঃ কোনটা বল তো

নাবিলঃ আকাশ অভিনয় টা বন্ধ কর

আকাশঃ মেঘলার সাফাই গাওয়া টা বন্ধ কর…

নাবিলঃ মেঘলা যেটা করেছে তোর সাথে রাগ করে করেছে এর জন্য পরোক্ষ ভাবে তুই নিজেই দায়ী তাই তোর উচিত মেঘলাকে ফিরিয়ে আনা।

আকাশঃ রাগ…?? ঠিকি বলেছিস এতই রাগ যে অন্য জনের সাথে রাত কাটিয়ে ফেলল।

নাবিলঃ এটা হয়ত অভিনয় ছিল

আকাশঃ আমার তা মনে হয় না।

নাবিলঃ তাহলে আর কি যা বুঝিস তাই কর।

আকাশঃ ভবিষ্যতে ওর ব্যাপারে কিছু বলতে আসিস না প্লিজ।

নাবিল রাগে আকাশের ঘর থেকে চলে গেল।




৭ দিন হয়ে গিয়েছে মেঘলা বাসা থেকে চলে গিয়েছে তাতে আকাশের কোন পরিবর্তন হয় নি আকাশ স্বাভাবিকভাবেই জীবন যাপন করছে।

নাবিল আকাশের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে।কারন তার বিশ্বাস মেঘলা নির্দোষ। আকাশের উচিত মেঘলাকে ফিরিয়ে আনা কিন্তু আকাশ তা করছে না বরং
আকাশ নাবিলের সাথেও কথা বলার চেস্টা করে নি।

এদিকে মেঘলার বাবা মা মেঘলার সাথে কোন খারাপ ব্যবহার করে নি তারা আশায় বসে আছে আকাশ মেঘলাকে নিতে আসবে।

মেঘলাঃ ৭ টা দিন হয়ে গেল নাবিল ভাইয়া ছাড়া আর কেউ আমার খোঁজ নিল না আমাকে ছাড়া আকাশ কিভাবে থাকছে তারমানে কি বাবার কথাই ঠিক আর ওর দরকার নেই তাই না?
ভাইয়া তুই কি সত্যিই আমাকে নিতে আসবি না?

 

আজ মেঘলা চলে যাওয়ার অষ্টম দিন।
আকাশ আর নাবিল একসাথে নাস্তা করছে।

নাবিলঃ সমস্যা কোথায় মেঘলাকে ছাড়া আকাশ কিভাবে থাকছে…?? তাহলে কি সত্যিই আকাশ জেনির ব্যাপারে দুর্বল হয়ে পড়েছে? (মনে মনে)

আকাশ নিজ মনে খেয়ে চলেছে। খাওয়ার মাঝখানে আকাশ হটাৎ নাবিল কে বলল,

আকাশঃ মেঘলাকে ফোন করেছিলি তাই না?

নাবিলঃ আমি কার সাথে কথা বলব আর কার সাথে বলব না তার কয়ফত কি তোকে দিতে হবে?

আকাশঃ কয়ফত কোথায় চাইলাম বলছি আমি মেঘলাদের বাসায় যাব তুই যাবি আমার সাথে..??

এমন কিছুর জন্যই নাবিল অপেক্ষা করছিল তাই আকাশ বলার সাথে সাথেই জবাব দিল।

নাবিলঃ হুম অবশ্যই যাব আমি জানতাম তুই ওকে ছাড়া থাকতে পারবি না।

আকাশের মাঃ এত কিছুর পরেও তুই মেঘলাকে আবার নিয়ে আসবি?

আকাশ কিছু না বলে একটু হাসল তারপর বেরিয়ে গেল।
নাবিল ও গেল।

তাদের পৌছাতে বিকাল হয়ে গেল।
মেঘলা তখন ঘুমাচ্ছিল।

আকাশ গিয়েই মেঘলাকে ডাকতে শুরু করল।
আকাশের গলা শুনেই মেঘলা দৌড়ে নিচে আসল।

মেঘলা আসার আগেই মেঘলার বাবা এসে হাজির হল।

আকাশ কিছু বলার আগেই তিনি বলতে শুরু করলেন,

মেঘলার বাবাঃ নিশ্চুই মেঘলাকে নিতে এসেছো তাই না কিন্তু একটা কথা মাথায় ঢুকিয়ে নাও মেঘলা আর তোমাদের বাসায় যাবে না। তাই গুন্ডামি করে লাভ নেই।

মেঘলাঃ এসব তুমি কি বলছো বাবা?

মেঘলার বাবাঃ চুপ করো সব ভুলে গিয়েছো নাকি সেদিন তোমাকে কিভাবে অপমান করেছে?

আকাশঃ বাহ মেয়ের প্রতি এত ভালবাসা কবে থেকে হল দেখে ভাল লাগল।

মেঘলার বাবাঃ এখনী বাসা থেকে বের হও না হলে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিব।

নাবিলঃ বেশি বেশি বলে ফেলছেন না আংকেল..??

মেঘলার বাবাঃ তোমাদের কানে কি কথা যায় না বলেছি না মেঘলা যাবে না বেরিয়ে যাও।

মেঘলাঃ আমি যাব বাবা…

মেঘলার বাবাঃ মেঘলা (ধমক দিয়ে)

মেঘলাঃ তোরা একটু দাঁড়া আমি চেঞ্জ করে আসছি যাব আর আসব।

আকাশঃ দাঁড়া কোথায় যাচ্ছিস? আর তোকে কেই বা বলল আমরা তোকে নিতে এসেছি..??

মেঘলাঃ মানে…??

আকাশঃ আমি তোকে কেন নিতে আসব..?? নিয়ে যাওয়ার জন্য কি রেখে গিয়েছিলাম নাকি।

আকাশের কথায় সবাই অবাক হল।

নাবিলঃ আকাশ….???

আকাশ নিজের পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে মেঘলার সামনে ধরল।

মেঘলাঃ কি এটা…??

আকাশঃ আপাতত আমার সব কিছু তোর নামে আছে আমি সেসব ফিরত নিতেই এখানে এসেছি তোকে ফিরত নিতে নয়।

আকাশ এমন কথার জন্য মেঘলা প্রস্তুত ছিল না বেশ বড়সড় ধাক্কা খেল সে।

নাবিলঃ আকাশ কি বলছিস তুই…??

আকাশঃ নাটক করছিস কেন তুই জানতি না আমি কেন এখানে এসেছি? নাবিল কি বলবে বুঝতে পারছে না।
কিরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন..?? আমার সময়ের দাম আছে তাড়াতাড়ি সাইন কর।

মেঘলা সাইন করে দিল।

আকাশঃ সরি আংকেল আপনাকে বিরক্ত করার জন্য আপনি নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন আপনার মেয়ের উপড় আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই আর কখনো আপনার বাসায় আসব না এটাই লাস্টবার ছিল বলে আকাশ বেরিয়ে গেল নাবিল ও বাধ্য হয়ে বেরিয়ে আসল।

মেঘলা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চোখের পানি ফেলছে।

আকাশের ব্যবহারে মেঘলার বাবা অবাক হল।
মেঘলার মাঃ এই নাকি সোনার ডিম পাড়া হাঁস..?? যতসব ঝামেলা এসে জুটেছে আমার কপালে। এই তোমাকে বলে দিচ্ছি আমি কিন্তু এই ঝামেলা বয়ে বেড়াতে পারব না যত তাড়াতাড়ি পারো ওকে অন্য জায়গায় রাখার ব্যবস্থা করো।

মেঘলার বাবাঃ আমার সব প্লেন বেহেস্তে গেল শুধু মাত্র তোর জন্য এত চরিত্র খারাপ কারো হয়? একটা ছেলেকেও ধরে রাখতে পারলি না…??

মেঘলার বুঝতে বাকি রইল না আকাশের টাকার জন্যই তার মা বাবা এই কয়েকদিন তার সাথে ভাল ব্যবহার করেছে।এবার তার কপালে দুর্গতি নেমে আসবে সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই।



নাবিলঃ আমি জানতে চাচ্ছি কি হল এটা..??

আকাশঃ কি হল মানে? আমার কষ্টের টাকা অন্যরা খরচ করবে সেটাই চেয়েছিলি নাকি…??

নাবিলঃ তোর টাকা তোর থাকুক তাতে আমার কিছু যায় আসে না কিন্তু আমি জানতে চাচ্ছি তুই আমাকে নিয়ে এসেছিলি কেন?

আকাশঃ তোকে আমি জোর করে এনেছি নাকি..??

নাবিলঃ আকাশ তুই আমার সাথেও গেম খেলবি কখনো ভাবতে পারি নি।

আকাশঃ যাক বুঝতে পেরেছিস তাহলে। হ্যা গেম খেলেছি আর দরকার ছিল বলেই খেলেছি তোকে মেঘলার সাথে যোগাযোগ করতে নিষেধ করলেও তুই শুনতি না তাই তোকে মেঘলার কাছে একটু খারাপ বানাতে হল। আজকের পএ মেঘলা ভাব্বে তুই ও চাস না ও বাসায় যাক তাই ও নিজেই তোর সাথে কথা বলবে না।

নাবিলঃ গুড… প্রশংসা না করে পারছি না।বলে হাঁটতে লাগল নাবিল।

আকাশঃ আরে কোথায় যাচ্ছিস বাসায় যাবি না?

নাবিলঃ আমার ব্যবস্থা আমিই করে নিব আপনার ভাবতে হবে না।

আকাশঃ দাঁড়া নাবিল এত রাগ দেখাচ্ছিস কেন? তুই কি মৌসুমি কে ছাড়িস নি? মেয়েটা তোকে পাগলের মত ভালবাসত তাকে তুই ফিরিয়ে দিস নি..?? তাহলে আমার বেলায় কেন উল্টো নিয়ম হবে?

নাবিলঃ যা জানিস না সেটা নিয়ে কথা বলিস না আকাশ…আর আমি মানতে পারছি না কারন মেঘলা আমার বোন।

আকাশঃ নিজের বোনের সাথে অন্যায় হলে সেটা অন্যায় আর অন্য কারো সাথে অন্যায় না?

নাবিলঃ আকাশ আবারও বল্লাম যা জানিস না তা নিয়ে কথা বলিস না।

আকাশঃ আচ্ছা বলব না আমি যেমন তোর জীবন নিয়ে কথা বলব না তেমনি তুই ও বলিস না।

নাবিলঃ ওকে ফাইন বলব না… বলে চলে গেল নাবিল।
আকাশ ও ফিরে গেল।

এদিকে,

মেঘলার মাঃ এই যে নবাব জাদি সারাক্ষন পায়ের উপড় পা তুলে বসে থাকলেই চলবে? এবার গাঁ টা একটু নাড়াও বাথরুমে কাপড় গুলি রাখা আছে দামি কাপড় ওয়াশিং মেশিনে ধোয়া যাবে না নিজের হাতে ধুয়ে দাও গিয়ে।

মেঘলাঃ আচ্ছা দিচ্ছি বলে বাথরুমে গেল মেঘলা. গিয়ে অবাক হল কারন সেখানে এত কাপড় যে বাথরুমে জায়গা হচ্ছে না।

মেঘলাঃ সবগুলি আজ ধুতে হবে মা…??

মেঘলার মাঃ তো কি..??

মেঘলাঃ বিছানার চাদর পর্দা সব…??

মেঘলার মাঃ আমার মুখে মুখে তর্ক করলে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাসা থেকে বের করে দিব।

মেঘলা আর কিছু না বলে কাপড় ধুতে শুরু করল।

মেঘলাঃ তুই এবার খুশি তো ভাইয়া…?? এমন জীবনেই হয়ত দেখতে চেয়েছিলি তাই সব দিয়েও কেড়ে নিলি বলেছিলাম হোস্টেলে দিয়ে দিতে টাকার জন্য সেটাও করলি না অন্তত কিছু টাকা দিয়ে গেলে হয়ত আমার সাথে এমন কিছু ঘটত না তবে একটা কথা শুনেরাখ আজ আমি প্রতিজ্ঞা করলাম জীবনে যত দুঃখই আসুক আমি আর কোনদিন তোর কাছে ফিরব না কোনদিন না। তুই তোর টাকা নিয়ে সুখে থাকিস।

মেঘলার কাপড় ধুতে ধুতে সন্ধ্যা গড়িয়ে গেল।মেঘলা ভিজা কাপড় চেঞ্জ করতে নিজের ঘরে গেল।

কিন্তু সেখানে গিয়ে আবারো অবাক হল।

মেঘলাঃ কে আপনি আমাএ রুমে কি করছেন।

প্রায় মেঘলার বাবার বয়সী একজন লোক তার দিকে এগিয়ে এসে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে বলল, তুমিই তাহলে মেঘলা।

মেঘলাঃ উফফ কাছে আসছেন কেন কে আপনি…??

লোকটি নিজের ঠোঁট কামড়ে বলল যত টা ভেবেছিলাম তার চেয়েও বেশি…

মেঘলাঃ কিসব যাতা বলছেন আমার রুম থেকে বের হন বলছি।

লোকটিঃ আমি জাফর আহমেদ তোমার মায়ের ভাই অস্ট্রেলিয়া থাকি কিছুদিন আগে দেশে ফিরেছি।

মেঘলাঃ তো আমি কি করব..??

জাফরঃ মেঘলার ভেজা কাপড়ের দিকে তাকিয়ে বলল করার ত অনেক কিছুই আছে সেসব নাহয় সময় মত করা যাবে বলে জাফর রুম থেকে চলে গেল।

মেঘলাঃ কি বাজে নজর লোকটার আবার কোন আপদ এসে জুটল কে জানে এই জীবনে আমার কি শান্তি হবে না..??

 

পেরিয়ে গেল আরও কিছুদিন আকাশ আকাশের মতই আছে মেঘলার খোঁজ নেয়ার প্রয়োজন মনে করে না সে। নাবিল আকাশের সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে দিয়েছে আকাশের অফিসে নাবিল রিজাইন দিয়েছে এখন তারা একসাথে বসে খায় না পর্যন্ত।

হটাৎ একদিন নাবিল নিজে থেকেই হন্তদন্ত হয়ে আকাশের ঘরে আসল।

নাবিল কে দেখে আকাশ বিচলিত হল না।

নাবিলঃ কিছু কথা বলার ছিল

আকাশঃ এখন ব্যাস্ত আছি পরে আয়।

নাবিলঃ আজ মেঘলার বিয়ে

আকাশঃ গুড তো আমার কাছে এসেছিস কেন? ও বুঝেছি যৌতুকের টাকার জন্য?

নাবিলঃ আকাশ..

আকাশঃ না মানে মেঘলার বাবার ত এখন বাজে অবস্থা তোর ও চাকরি নেই তাই ভাবলাম। টাকা লাগলে বল দিয়ে দিচ্ছি।

নাবিলঃ আমি মজা করছি না আকাশ মেঘলার আজ সত্যি সত্যি বিয়ে।

আকাশঃ তুই মজা করছিস এটা কে বলল.?

নাবিলঃ তুই বিয়েটা আটকাবি না

আকাশঃ অবশ্যই না বোনের বিয়ে ভেঙে দেয়ার মত খারাপ ভাই আমি না।

নাবিলঃ পরে কেঁদেও কূল পাবি না

আকাশঃ চোখে এত জল কোথায় সব ত আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে।

নাবিলঃ ভুল হয়ে গিয়েছে আমি ভুলেই গিয়েছিলাম আমি যে আকাশের কাছে এসেছিলাম সে আর নেই আপনাকে বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত বলে নাবিল নিজের ঘরে চলে গেল।

বেশ অনেক্ষন পর,
আকাশ সহ বাসার সবাই বসে বিকালে নাস্তা খাচ্ছে তখন নাবিল সেখানে আসল এসে আকাশের পাশে বসল।

নাবিলঃ কংগ্রাচুলেশনস বড় মা কংগ্রাচুলেশনস আকাশ আজ থেকে তোমরা মুক্ত মেঘলা নামের আপদ আর কখনো তোমাদের বিরক্ত করতে আসবে না।

আকাশঃ উফফ তুই আবার শুরু করেছিস নাবিল।

নাবিলঃ তুই এবার খুশিতো আকাশ? মেঘলার বিয়ে হয়ে গিয়েছে কনে বিদায় ও হয়ে গিয়েছে কাল ওর বৌভাত পরশু অস্ট্রেলিয়া চলে যাচ্ছে মেঘলা।

আকাশঃ ওয়াও গ্রেট মেঘলার বাবাকে যতটা খারাপ ভেবেছিলাম এতটাও খারাপ না দেখছি মেয়ের ভবিষ্যত ভেবেই বিয়ে দিয়েছে।

নাবিলঃ হুম ধুমধাম করে বাবার বয়সি একটা লোকের সাথে বিয়ে দিয়েছেন মেঘলার।বাবার দায়িত্ব পালন করেছেন।

কথাটা শুনে আকাশ দাঁড়িয়ে গেল।
আকাশঃ কার সাথে বিয়ে হয়েছে বললি..??

নাবিলঃ শুনেছি লোকটি সম্পর্কে মেঘলার মামা হয়।

আকাশঃ অন্যকারো সাথে বিয়ে হবে কেন নীরব কোথায়..??

নাবিলঃ নীরব সেদিনের পরের দিনেই রির্টান ডেট ছাড়া বিদেশে চলে গিয়েছে আর কখনো দেশে আসবে না শুনেছি।

আকাশঃ মানে কি? আমাকে আগে বলিস নি কেন..??

আকাশ বের হতে চাইলে নাবিল তাকে আটকে দিল।

নাবিলঃ কোথায় যাচ্ছিস..??

আকাশঃ রাস্তা ছাড় নাবিল।

নাবিলঃ এখন আর হিরোগিরি নাই বা দেখালি বিয়েটা অলরেডি হয়ে গিয়েছে… মেঘলা আপাতত শ্বশুড়বাড়ির রাস্তায় তাই এখন তুই নতুন করে মেঘলার জীবনে ঝামেলা সৃষ্টি কর সেটা আমি চাই না।
দ্যা গেম ইজ অভার নাউ

আকাশঃ ছেলে মানুষি করিস না নাবিল ছাড় আমাকে।

নাবিলঃ মেয়েটা কোনদিন শান্তি পায় নি আর জটিলতা তৈরি করিস না এবার ওকে একটু শান্তিতে থাকতে দে।আস্তে আস্তে স্বামীর সাথে মানিয়ে নিবে।

 

আকাশ নাবিল কে উপেক্ষা করে বাইক নিয়ে বের হল।

কিন্তু নাবিল গিয়ে আকাশের বাইকের সামনে দাঁড়াল।

আকাশঃ কি করছিস নাবিল..??

নাবিলঃ যদি যেতেই হয় আমার লাশের উপড় দিয়ে তোকে যেতে হবে

আকাশঃ যদি তোর মত করে রাগ দেখাতে পারতাম কতই না ভাল হত কিন্তু কার সাথে দেখাব? জীবনে যাদের আপন ভাবলাম কেউই কোনদিন আমার কষ্ট বুঝল না তুই ও বুঝলি না নাবিল…???

নাবিলঃ মানে..??

মেঘলাকে আমি আজ কাল পরশু সব দিনেই ভালবাসি একইভাবে ভালবাসি আর বেসেও যাব।
মেঘলা যদি ধর্ষিতা হত আমি একবারের জন্যেও প্রশ্ন করতাম না.. কিংবা মেঘলা যদি সত্যি নীরব কে ভালবাসত তারপর আমার কাছে এসে ক্ষমা চাইত আমি ক্ষমা করে দিতাম কারন মেঘলার শরিরের প্রতি মোহ আমার কখনই ছিল না যাকে ভালবাসি সে সবসময়ের জন্য সতি। ভালবাসা তো অনুভবে মিশে থাকে তাতে শরীরের কি সম্পর্ক? মেঘলাকে আমি বিছানায় চাই নি ওকে আমি আমার প্রতিটা হাসিতে চাই আমার কান্নার প্রতিটা ফোঁটায় আমি মেঘলাকেই চাই কিন্তু ও যে আমায় চায় নি।

মেঘলা যা যা করেছে সবটাই জেদ দেখিয়ে করেছে। এই জেদের জন্যে ও জীবনের সবকিছু হারিয়েছে তবুও শিক্ষা হয় নি তাই ওকে একটু শাস্তি দিতে চেয়েছিলাম

নাবিলঃ বিয়ে হয়ে যাচ্ছে জেনেও ত বাঁধা দিতে গেলি না…
আকাশঃ কোন মুখে যাব বলতো?
আমি আর কোনদিন মাথা উঁচু করে বলতে পারব না মেঘলা শুধু আমাকে ভালবাসে কখনো বলতে পারব না ও শুধু আমার।আমি ভেবেছিলাম ওর নীরবের সাথে বিয়ে হচ্ছে তাই চুপচাপ ছিলাম তোকে এসব বলি নি কারন আমি জানতাম আমি মন খারাপ করে থাকলে তুই মেঘলাকে বলে দিবি আর মেঘলা নীরব কে বিয়ে করবে না তাই কাউকে বুঝতে দেই নি আমি কষ্ট পেয়েছি।
এখন নিশ্চুই ভাবছিস নীরবের সাথে কেন বিয়ে দিতে চেয়েছিলাম তাই না?

নাবিলঃ হ্যা ঠিক তাই….

আকাশঃ তোর মত আমিও বিশ্বাস করি মেঘলার নীরবের সাথে কোন সম্পর্ক নেই কিন্তু ও যা করেছে তাতে সবাই জেনে গিয়েছে নীরবের সাথে ও রাত কাটিয়েছে তাই আমি যদি আমি বিয়ে ভেঙে দিয়ে নিয়ে আসতাম বাসার সবাই ওর দিকে আংগুল তুলে বলত ও একটা চরিত্রহীনা একসাথে ২ জনের সাথে বেড শেয়ার করে। সারাজীবন এই চরিত্রহীনা সম্মোধন নিয়ে বাঁচতে হত মেঘলাকে এমন কি মেঘলার বাচ্চা কাচ্চাদেরো শুনতে হবে তার মার অতীতে এত জঘন্য একটা অধ্যায় আছে।
তারচেয়ে নীরবের সাথে বিয়ে হলে এই খারাপ কথা গুলি ওকে শুনতে হবে না নীরব ছেলেটা খারাপ যে মেঘলার জন্য নিজের চরিত্রে দাগ লাগাতে পারে আমার হাতে মার খেতে পারে মেঘলার জন্য জেলে যেতে পারে সে অবশ্যই মেঘলাকে ভালবাসে তাই ভেবেছিলাম নীরবের কাছে মেঘলা ভাল থাকবে তাই সরে যেতে চেয়েছিলাম ওদের জীবন থেকে।
কিন্তু ও যে নীরব কে বিয়ে করবে না সেটা কি করে জানব?

 

নাবিলঃ কিন্তু এখন আর জেনেই বা কি হবে বিয়েটা ত হয়ে গিয়েছে।

আকাশঃ তার আগেই আমাদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। মেঘলা আর আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে অনেক আগে নাবিল।

নাবিলঃ কি বলছিস?

আকাশঃ হ্যা এটাই সত্যি।এবার নিশ্চুই আমাকে আর বাঁধা দিবি না?



এদিকে,
গাড়ীতে মেঘলা তার স্বামীর পাশে বসে আছে।

জাফর আহমেদঃ আমি এখনো বুঝতে পারলাম না তুমি এমন একটা কাজ কেন করলে মেঘলা?সম্পর্কে আমি তোমার মামা হই তারচেয়েও বড় কথা আমি তোমার বাবার বয়সি।তুমি আমাকে কেন বিয়ে করলে?

মেঘলা ঘোমটার ভিতর থেকে মুখ বের করে বলল কেন আমাকে বিয়ে করে আপনি খুশি নন?

জাফর আহমেদঃ কি যে বলো না এটাত আমার সৌভাগ্য।

মেঘলাঃ আমি পালাতে চাই এই দেশ ছেড়ে, দেশের মানুষ আর নিজের স্মৃতিদের থেকে পালাতে চাই (মনে মনে)

মেঘলা আর জাফর আহমেদ কথা বলছিল হটাৎ ড্রাইভার গাড়ি থামিয়ে দিল।

জাফরঃ কি হল গাড়ি থামালে কেন?

ড্রাইভারঃ সামনে একটা ছেলে আমাদের সব গাড়ি থামিয়ে দিয়েছে স্যার ছেলেটি বর কনেকে খুঁজছে ।

ড্রাইভার কথা বলতে বলতেই ছেলেটি এসে গাড়ির সামনে দাঁড়াল ছেলেটি আর কেউ না আকাশ…

আকাশ গাড়ীর জানালায় টুকা দিয়ে বলল একটু নামুন প্লিজ…

জাফরঃ কে তুমি…??

আকাশঃ শালা…

জাফরঃ কি…??

আকাশঃ বল্লাম আমি আপনার সালা হই.

জাফরঃ আজব কি চাই..??

আকাশঃ আপনার পাশে বসা মেয়েটিকে

জাফরঃ কিসব আবল তাবল বকছো?

মেঘলাঃ শান্ত হোন প্লিজ ও আমার মামাত ভাই হয়ত আমাদের সাথে দেখা করতে এসেছে।

জাফরঃ ও আচ্ছা তাই বলো কিন্তু এভাবে রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে দেখা করতে হয় নাকি?শালাবাবু কাল বৌভাতে এসো জমিয়ে আড্ডা হবে।

আকাশঃ সরি বৌভাত ত হচ্ছে না

জাফরঃ মানে কি…??

আকাশঃ মানে হল আমি এখন আপনার বউকে নিয়ে যাব বউ ছাড়া বউভাত কি করে হবে..??

জাফর আহমেদ এবার রেগে নেমে আসলেন
সাথে মেঘলাও নামল।

মেঘলাঃ তুই এখানে কি করছিস? প্লিজ সিনক্রেয়েট করিস না

আকাশঃ সাহস দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছি…
দেখি দেখি আমার দিকে একটু তাকা ত? কিরে এর চেয়ে লাল লিপস্টিক ছিল না? আর মেকাপের পুরো গোডাউন টা নিয়ে আসলে পারতি কম হয়ে গিয়েছে।

মেঘলা ঘোমটা টেনে বলল ফালতু কথা বাদ দিয়ে বাসায় যা।

আকাশঃ আমিও সেটাই বলছি চল দেরী করে কি লাভ?

মেঘলাঃ আজব আমি কোথায় যাব?আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে পাগলামি করিস না যা এখান থেকে।

জাফরঃ ঠিক তাই ভাই শুধু শুধু ঝামেলা করে কি লাভ যাও ভাই বাসায় যাও

আকাশ এবার আস্তে করে এগিয়ে গিয়ে জাফর আহমেদের পাশে দাঁড়াল।

আকাশঃ স্বেচ্ছায় রাজি হবেন নাকি ফিগারটা টানব ম্যাডাম?

মেঘলাঃ পাগল হয়ে গিয়েছিস নাকি কি করছিস এসব?
পাগলামি করিস না ভাইয়া দেখ এখানে কত লোকজন সবার সাথে তুই পারবি…??

….ঠিক বলেছিস আকাশের একার পক্ষে এতজনের সাথে পেরে ওঠা সম্ভব না।

মেঘলাঃ নাবিল ভাইয়া… তুই এসেছিস ভাল হয়েছে এই পাগল টাকে নিয়ে যা তো..

আকাশঃ আমি জানতাম তুই আসবি… এবার আর আমায় আটকায় কে। দেখ তো দোস্ত ভাবি কে পছন্দ হয় নাকি..??

নাবিলঃ দেখতে আর পারলাম কই যে বর ঘোমটা টেনেছে যাই হোক সরি আকাশ আমার বুঝতে একটু দেরী হয়ে গেল। তোকে ভুল বোঝার জন্য ক্ষমা চাইছি। যা এবার তোর টা তুই বুঝে নে আমরা এদিক টা বুঝে নিচ্ছি।

মেঘলাঃ তুই ওকে সাপোর্ট করছিস?

নাবিলঃ ভাবি দেবর কে তুই করে বলতে হয় না। বলেই আকাশ আর নাবিল ২ জনেই হেসে উঠল

জাফর আহমেদঃ কি হচ্ছেটা কি এসব? এই তোমাদের কোন ধারনা আছে কার সাথে কি করছো..??

নাবিলঃ কাকু বউ গেলে বউ পাবেন কিন্তু জীবন গেলে…??চারপাশ টা একবার দেখে তারপর কথা বলুন.আপনি কোন বুদ্ধিতে নিজের মেয়ের বয়সী একটা মেয়েকে বিয়ে করলেন?

মেঘলাঃ চুপ কর তোরা এই বিয়েতে আমাকে কেউ জোর করে নি আমি নিজেই উনাকে অনুরোধ করেছিলাম আমাকে বিয়ে করতে।

নাবিলঃ মার খাওয়ার আগে চুপ করে গেলে ভাল হয় না?

আকাশঃ নাবিল তুই ত জানিস এই মেয়ে আমাকে শান্ত থাকতে দিবে না তাই আমি চলে যাচ্ছি তুই কাকুকে একটু বুঝিয়ে দিয়ে আয় কেমন? আমি আমার বউকে একটু বুঝাই গিয়ে।বড্ড অবোঝ বউ আমার।

নাবিলঃ হুম যা বেস্ট অফ লাক।

মেঘলাঃ ছাড় আমাকে আমি তোর সাথে কোথাও যাব না। জোর করে সব হয় না বুঝেছিস…

আকাশঃ জোর করে কি হয় আর কি হয় না তা একটু পরেই বুঝতে পারবি

আকাশ টানতে টানতে মেঘলাকে নিয়ে চলে গেল।

আকাশ মেঘলাকে নিয়ে নিরাপদ দুরত্বে চলে যাওয়ার পর নাবিল ও তার বন্ধুরা জাফর সাহেব সহ সকল বর যাত্রীদের ছেড়ে দিয়ে ফিরে গেল..

চলবে…!!

Leave a Comment