Love Never Ended
ইলোরা জাহান ঊর্মি
অফিস থেকে এসেই রুমের দরজা বন্ধ করে লাইট অফ করে শুয়ে পড়লো আভা। শিরীন বেগম কয়েকবার বাইরে থেকে দরজা ধাক্কিয়ে ডেকে গেছেন। অনেকবার ডাকার পর আভা শুধু একবার সাড়া দিয়ে বলল তার খুব মাথা ধরেছে। শিরীন বেগম ভাবলেন সারাদিন অফিস করায় হয়তো মেয়েটার মাথা ধরেছে।
তাই তিনি আর ডাকাডাকি করলেন না। ডিনার টেবিলে বসে সামিদ শিরীন বেগমকে জিজ্ঞেস করলো,“আভা কোথায়?”
শিরীন বেগম বললেন আভার নাকি মাথা ধরেছে তাই অফিস থেকে এসেই রুমের দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়েছে। সামিদ টেবিল ছেড়ে উঠে আভার রুমের দিকে চলে গেল আভাকে খেতে ডাকার জন্য। আভার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দরজায় জোরে জোরে টোকা দিয়ে আভাকে কয়েকবার ডাকলো। খানিকক্ষণ পর আভা আলগোছে দরজা খুলে দিলো। সামিদ ভেতরে ঢুকে আভার দিকে তাকাতেই চমকে উঠলো।
আভার চোখ মুখ ফুলে আছে। নাকের ডগা আর চোখ দুটো অসম্ভব লাল হয়ে আছে। চোখের কোণে এখনো পানি জমে আছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে যে এতোক্ষণ ধরে দরজা বন্ধ করে কেঁদেছে। সামিদ আভার অবস্থা দেখে ব্যস্ত হয়ে বারবার জিজ্ঞেস করলো ও কেন কাঁদছে। কিন্তু সামিদের প্রশ্নে আভা আবার কেঁদে উঠলো। কান্নার জন্য আভা কথা বলতে পারছে না।
{ Love Never Ended Heart Touching Love Story Bangla }
সামিদ ওকে বিছানায় বসিয়ে ওর পাশে বসে কান্না থামানোর চেষ্টা করতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর আভার শান্ত হলো। তারপর আজ অফিসে ঘটে যাওয়া সব কথা সামিদকে বলল। শুধু ইয়ানার কথা বলতে ভুলে গেল। সব শুনে সামিদ বিস্মিত হয়ে গেল।
সামিদ: আভা তুমি কী শিয়র যে স্যার বিয়ে করেছেন?(চিন্তিত কন্ঠে বলল সামিদ)
আভা: হ্যাঁ। আমার সামনে বসে রাইফ ওর ওয়াইফের সাথে ফোনে কথা বলেছে। আমি সব শুনেছি।(আশ্রুশিক্ত চোখে বলল আভা)
সামিদ: আমি ওনার ফ্যামিলির ব্যাপারে কিছুই জানিনা। জানলে তো তোমাকে বলতামই। রওশন স্যার আর রাইফ স্যার ছাড়া ওনাদের ফ্যামিলির কেউ কখনো অফিসে আসে না। কিন্তু রাইফ স্যার তো তোমাকে আর আমাকে নিয়ে ভুল ধারণা নিয়ে বসে আছে। তুমি সত্যিটা কেন বললে না যে আমি তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড?(প্রশ্নভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল সামিদ)
আভা: তার আর কোনো প্রয়োজন নেই সামিদ। ও বিয়ে করে খুব সুখে আছে। তাহলে আমি কেন শুধু শুধু আমার এতো দিনের জমানো দুঃখ প্রকাশ করতে যাবো ওর কাছে? আমিও ওকে বুঝিয়ে দেবো ও যেমন আমাকে ভুলে অন্য কারো সাথে সুখে জীবন কাটাচ্ছে। আমিও তেমন ওকে ভুলে অন্য কারো সাথে খুব সুখে আছি।(আভার মুখে কঠিন ভাব)
{ Emotional Heart Touching Love Story }
সামিদ: আমি বুঝতে পারছি আভা তুমি কতোটা কষ্ট পাচ্ছো। আমি হাজার চেষ্টা করেও তোমার জন্য অন্য কোনো চাকরি জোগাড় করতে পারিনি। তোমার যা ভালো মনে হয় করো। অনেক রাত হয়েছে। চলো,ডিনার করতে চলো।(মুখ ভার করে বলল সামিদ)
আভা: আমার খিদে নেই। তুমি গিয়ে খেয়ে নাও।(মলিন মুখে বলল আভা)
সামিদ: আভা প্লিজ,এভাবে মুড অফ করে থেকো না। তুমি এমন মুখ করে থাকলে ভালো লাগে না। চলো।
আভাকে একপ্রকার জোর করেই সামিদ ডিনার করতে নিয়ে গেল।
পরদিন আবার ইয়ানা জেদ ধরে রাইফের সাথে অফিসে গেল। আজ আর রুহি বকাঝকা করলো না। কারণ রুহি আজ একটু শপিং করতে বের হবে। রাইফকে বলেছে শপিং শেষ করে সে অফিসে গিয়ে ইয়ানাকে নিয়ে বাড়ি চলে আসবে।
অফিসে পৌঁছে রাইফ জানতে পারলো আভা এখনো পর্যন্ত আসেনি। অথচ সামিদ চলে এসেছে। ততক্ষণাৎ রাইফ সামিদকে ডেকে পাঠালো। রাইফের ডাক পড়েছে শুনেই সামিদ বুঝতে পারলো আভার কথা জিজ্ঞেস করার জন্যই ডাকছে। সামিদ রাইফের কেবিনে যেতেই রাইফ জিজ্ঞেস করলো,
রাইফ: সামিদ সাহেব আপনার ওয়াইফ এখনো আসেনি কেন?
ওয়াইফ শব্দটা শুনেই সামিদ বিরক্ত বোধ করলো। তবু এ নিয়ে কিছু বললো না। আভা যা ভালো মনে হয় করুক। সামিদ একটা দীর্ঘশ্বাস চেপে উত্তর দিল,
সামিদ: আসলে স্যার,ও একটু অসুস্থ। তাই আমাকে বলেছে চলে আসতে। আর ও একটু পরেই আসবে বলেছে। এসে পড়বে হয়তো কিছুক্ষণের মধ্যেই।
অসুস্থ শুনে রাইফ আর কোনো কথা বাড়ালো না। সামিদ রাইফের কেবিন থেকে বেরিয়েই দেখলো আভা অফিসে ঢুকেছে। সামিদ এগিয়ে গিয়ে আভাকে জিজ্ঞেস করলো শরীর সুস্থ হয়েছে কিনা। আভা জানালো সে এখন পুরোপুরি সুস্থ।
গতকাল রাতে খুব বেশি কান্নাকাটি করায় আর না ঘুমানোর কারণে সকালে সত্যি সত্যিই প্রচন্ড মাথা ধরেছে আভার। সামিদে থেকে শুনলো রাইফ তার খোঁজ করেছে। আভা তাড়াতাড়ি রাইফের কেবিনের দিকে ছুটলো। আভা কেবিনে ঢুকে আজও দেখলো ইয়ানা রাইফের পাশের চেয়ারে বসে মনোযোগ দিয়ে ফোনে গেম খেলছে।
{ Bangla love story, Bangla Valobashar Golpo }
ইয়ানাকে দেখেই আভার বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো। তবু নিজেকে সামলে নিয়ে মুখে জোরপূর্বক হাসি টেনে নিয়ে ইয়ানার সাথে কথা বললো। রাইফ হঠাৎ বলে উঠলো,
রাইফ: আপনি তো দেখছি পুরোপুরি সুস্থ। তাহলে আপনার হাসবেন্ড যে বলল আপনি অসুস্থ?(ভ্রূকুটি করে জিজ্ঞেস করলো রাইফ)
আভা: সকালে খুব মাথা ধরেছিল।(নিচু গলায় উত্তর দিল আভা)
রাইফ: আপনাকে প্রথম দিন কী বলেছিলাম মনে আছে নিশ্চয়ই? আপনি আমার পিএ। তাই কোনোরকম গাফিলতি আমি টল্যারেট করবো না। মাইন্ড ইট।(কঠিন কন্ঠে বলল রাইফ)
আভা: ওকে স্যার।
রাইফ: আর হ্যাঁ,আজ থেকে আপনি প্রতিদিন একবার করে পুরো অফিস ঘুরে দেখবেন সবাই ঠিকমতো কাজ করছে কিনা।
আভা ভাবছে রাইফ তাকে খাটানোর ধান্দায় আছে। সপ্তাহে একদিন হলেও মানা যায়। কিন্তু প্রতিদিন একবার করে পুরো অফিস ঘুরে সবার কাজ দেখা সত্যিই খুব বিরক্তিকর কাজ। মনে মনে আভা যথেষ্ট বিরক্ত হলেও মুখে কিছু না বলে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।
রাইফ বলল আজ এই মুহূর্ত থেকেই কাজটা শুরু করে দিতে। আভা এবারো কিছু না বলে মাথা নাড়িয়ে অত্যন্ত বিরক্তির সাথে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল। সকালে সকাল এমনিতেই তার মাথাটা প্রচন্ড ব্যথা করেছিল। এখন আবার পুরো অফিস চক্কর দিলে তো আভা বেহুঁশ হয়ে পড়ে যাবে। মনে মনে রাইফকে বকতে বকতে আভা অফিস ঘুরতে শুরু করলো।
সে খেয়াল করলো অফিসের অনেকে তার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে। এতে আভার মেজাজ আরো বিগড়ে গেল। তাবু মুখ বুজে সহ্য করে সবার কাজের খবর নিচ্ছে। অফিসের অর্ধেকটা ঘুরেই আভা হাঁপিয়ে পড়লো। অফিসটা মোটামুটি অনেক বড়। আভার ইচ্ছে করছে গেইট দিয়ে ছুটে বেরিয়ে যেতে। কিন্তু দারোয়ানও বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে। রাইফ এমন নিয়ম চালু করেছে যাতে কেউ অযথা অফিসের বাইরে যেতে না পারে।
Also, Read Those Heart- Touching Come Back Sad Love Story
………………
আভা হাঁটছে তো হাঁটছেই। একদিকে মুখে বিরক্তির ছাপ আবার ভাবছে আজ প্রথম সে পুরো অফিসটা ঘুরে দেখছে। অফিসটা খুব সুন্দর লাগছে আভার কাছে। কিন্তু তবু তো বিরক্ত লাগছে। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ কারো সাথে জোরে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে নিলো আভা। ভাগ্যিস সে নিজেকে সামলে নিয়েছে। নইলে অফিসের মধ্যে এতো গুলো মানুষের সামনে সত্যি সত্যিই পড়ে গেলে কী লজ্জাজনক অবস্থাতেই না তাকে পড়তে হতো।
এমনিতেই তার মেজাজ বিগড়ানো ছিল এবার গেল আরো বিগড়ে। কঠিন মুখ করে দ্রুত পেছনে ঘুরে দাড়ালো ধাক্কা দেয়া ব্যক্তিকে কয়েকটা কড়া কথা শুনিয়ে দেবে বলে। কিন্তু পেছনে ঘুরে দাঁড়াতেই আভা আর ধাক্কা লাগানো ব্যক্তি দু’জনেই দু’জনকে দেখে থমকে গেল। আভা অস্ফুট স্বরে বলল,
আভা: বুবু!
আভার ডাক শুনে রুহি সম্বিত ফিরে পেলো। কিন্তু পরক্ষণেই আভার দিকে ক্রদ্ধ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চোখ মুখ শক্ত করে বলল,
রুহি: আমাকে বুবু ডাকার অধিকার শুধুমাত্র আমার ভাইয়ের আছে। বাইরের কারো মুখে আমি বুবু ডাক শুনতে চাই না। বিশেষ করে কোনো বিশ্বাসঘাতকের মুখে তো কখনোই না।
রুহির কথা শুনে আভা অবাক হয়ে গেল। রুহিও প্রথম দেখাতেই তার সাথে রাইফের মতো করেই কথা বলছে। কিন্তু কেন? চার বছর আগের ঘটনায় তো আভার কোনো দোষ নেই। আভার চোখে পানি চলে এলো। ছলছল চোখে সে রুহির কাছে এগিয়ে ওর একহাত মুঠোয় ধরে বলল,
আভা: এসব তুমি কী বলছো বুবু? আমি তো সবসময়ই তোমাকে বুবু বলেই ডেকেছি। তুমিই তো বলেছিলে তোমাকে বুবু বলে ডাকতে। তাহলে আজ এমন কথা কেন বলছো তুমি?
রুহি ঝট করে আভার থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলো। তারপর কঠিন কন্ঠে বলল,
রুহি: দূরে থাকো তুমি আমার থেকে। আমি চিনি না তোমাকে। তোমার মতো একটা বিশ্বাসঘাতক,বিষধর মানুষকে আমি আমার চোখের সামনেও দেখতে চাই না। এক্ষুনি সরে যাও আমার সামনে থেকে।
আভা এবার কেঁদেই দিলো। কাঁদতে কাঁদতে আহত কন্ঠে বলল,
আভা: কী বলছো এসব তুমি? কেন বলছো? তুমি তো আমাকে কতো ভালোবাসতে বুবু। তাহলে এতো গুলো বছর পর আমাকে দেখে কেন এমন করছো আমার সাথে? কী করেছি আমি?
রুহি এবার অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
Also, Visit Those Romantic Love Story Article
রুহি: তুমি জানো না তুমি কী করেছো? নাটক করছো আমার সাথে? তোমার জন্য আমার ভাইয়ের জীবন এলোমেলো হয়ে গেছে। আমার হাসিখুশি ভাইটা হাসতে ভুলে গেছে তোমার জন্য। তুমি আমাদের জীবনের একটা অভিশাপ। পালিয়েই তো গিয়েছিলে চার বছর আগে। এখন আবার কেন ফিরেছো? আরেক দফা কষ্ট দেয়ার জন্য? একদফা কষ্ট দিয়ে শান্তি হয়নি তাই না?
আমার ভাইয়ের জীবন এলোমেলো করে দিয়ে নিজে তো খুব সুখে আছো। বিয়ে করেছো,সংসার করছো,টাকা কামাতে এসেছো তাও আবার আমাদের কোম্পানিতেই। কেমন মেয়ে তুমি? লজ্জা করে না তোমার এই মুখ নিয়ে আমার ভাইয়ের সামনে আসতে?
যে ছেলেটা তোমাকে পাগলের মতো ভালোবাসতো তাকেই তুমি দুমড়ে মুচড়ে শেষ করে দিয়ে গেছো। আমার ভাবতেই ঘৃণা লাগছে যে আমি তোমার মতো একটা মেয়েকে নিজের বোন ভাবতাম।
ঘৃণা করি তোমাকে। বুঝতে পেরেছো তুমি? ভুল করেও আর আমার সামনে আসবে না। তোমার প্রতি আমার ঘৃণার পাহাড় আরো বাড়বে তাহলে।
রুহি কাঁদতে কাঁদতে একদমে কথাগুলো বললো। রাগে দুঃখে ফেটে পড়ছে সে। রুহির কথাগুলো পাথরের মতো দাঁড়িয়ে থেকে শুনলো আভা। তার দু’চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে তো পড়ছেই। আভা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলল,
আভা: বুবু তুমি আমাকে ভুল বুঝছো। প্লিজ আমার একটা কথা শোনা।
রুহি: তোমার মতো বাজে মেয়ের মুখ থেকে কোনো কথা শোনার জন্য আমার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই।
আভা: বুবু প্লিজ।
রুহি: দ্বিতীয়বার আর আমাকে বুবু ডাকা তো দূরের কথা আমার সামনেও আসবে না। কান খুলে শুনে রাখো,গত চার বছরে তোমার প্রতি আমার ঘৃণার পাহাড় জন্মেছে। আমি বলছি,তুমি কোনোদিনো সুখী হতে পারবে না। তুমি যেমন অন্যের সুখ কেড়ে নিয়েছো তেমনি আল্লাহ তোমার সুখ কেড়ে নেবে।
কথাগুলো কঠিন কন্ঠে বলে রুহি নিজের চোখ মুছে রাগে গজগজ করতে করতে হনহন করে সেখান থেকে চলে গেল। পেছন থেকে আভা কয়েকবার ডাকলেও ফিরে তাকালো না। অফিসের কেউ এদিকটায় নেই। তাই এই মুহুর্তটুকুর খবর কেউ জানলো না।
আভার ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কাঁদতে। কিন্তু সে পারছে না,যদি কেউ চলে আসে তার কান্নার শব্দ শুনে। আভা তার পাশের একটা চেয়ারে ধপাস করে বসে দুহাতে নিজের মুখ চেপে ধরে শব্দ করে কেঁদে উঠলো। কিন্তু আফসোস তার এই কান্নাটা দেখার মতো কেউ নেই।
Click Here For Next Part চলবে
Love Never Ended Part 8 |