Golperjogot

Golperjogot

ভিলেন পর্ব 54 – থ্রিলার প্রেমের গল্প | Romantic Premer Golpo

ভিলেন পার্টঃ ৫৪
Mona Hossain

আকাশ মেঘলাকে খোঁজার জন্য বের হল কিছুদূর যাওয়ার পর দেখল মেঘলা স্কুল ব্যাগ হাতে গুটি গুটি পায়ে হাঁটছে।

মেঘলাকে দেখে আকাশ যেন দেহে প্রান ফিরে পেল।মেঘলার পাশে গাড়ি থামাল।

কিন্তু আকাশের গাড়ি থেকেই মেঘলা দৌড়াতে শুরু করল।

আকাশঃ মেঘলা দাঁড়া বলছি কি হচ্ছে এসব দাঁড়া ছুটছিস কেন?

কে শুনে কার কথা মেঘলা প্রানপনে ছুটছে।

আকাশঃ ও যেভাবে ছুটছে ওর পিছনে আমি ছুটতে থাকলে নির্ঘাত এক্সিডেন্ট করবে তার চেয়ে আমি ওকে লুকিয়ে লুকিয়ে ফলো করি।

মেঘলা পিছন ঘুরে দেখল আকাশ নেই তাই একটু বিশ্রাম নিয়ে ধীরে ধীরে হাঁটতে লাগল আর হেঁটে হেঁটেই স্কুলে গেল।

মেঘলাকে স্কুলে যেতে দেখে আকাশের মন শান্ত হল সে ফিরে এসে অফিসে চলে গেল।বিকালে বাসায় ফোন করে খোঁজ নিয়ে দেখল মেঘলা সময় মতই বাসায় ফিরেছে তাই আর নিশ্চিন্ত হয়ে অফিসের কাজে মন দিল।রাতে বাসায় ফিরে মেঘলার ঘরে যেতে চাইল আকাশ কিন্তু মেঘলা শুয়ে আছে দেখে আর ঘরে গেল না।

খাবার টেবিলে সবাই খেতে রাতের খাবার খেতে বসেছে কিন্তু মেঘলা আসেনি দেখে আকাশ মিলিকে পাঠাল মেঘলাকে ডাকতে।

মিলি ফিরে এসে বলল মেঘলা খাবে না বলেছে।

শায়রা বেগমঃ কি জানি কি হয়েছে মেঘলার সকালেও না খেয়ে গেল দুপুরে বলল কোন ফ্রেন্ডের বার্থডে ছিল সেখানে নাকি খেয়েছে এখনও খেতে আসল না।

আকাশ ব্যাপার টা বুঝতে পারল কিন্তু কাউকে কিছু না বলে চুপচাপ খাওয়া শেষ করল।

খাওয়া শেষ করে মেঘলার নাম ধরে ডাকতে ডাকতে মেঘলার ঘরের দিকে যেতে লাগল আকাশ।

মেঘলার ঘরে যাওয়ার পর আবার সেই একই ঘটনা ঘটল মেঘলা আবারো উধাও হয়ে গিয়েছে।

আকাশ গিয়ে বিছানায় বসে খাবারটা পাশে রেখে বলতে লাগল।

আকাশঃ আমি জানি তুই কোথায় লুকিয়েছিস তাই ঢং না করে বের হ…

মেঘলার কোন সাড়াশব্দ নেই।

আকাশঃ ১ থেকে ৩ গুনব এর মধ্যে বের হবি। তা নাহলে বের করে এনে এমন অবস্থা করব যে নিজেই নিজেকে দেখে ভয় পাবি।

মেঘলা আলমারির ভিতর থেকে বলে উঠল আমি তোকে ভয় পাই না।

আকাশঃ বাহ সাবাস…তাহলে লুকিয়েছিস কেন?

মেঘলাঃ তোকে মুখ দেখাতে চাই না।

আকাশ গিয়ে আলমারির দরজা খুলে মেঘলার দিকে তাকিয়ে বলল।
ভাল ঠিক আছে দেখাতে হবে না বের হয়ে খাবার টা খেয়ে আবার লুকিয়ে যাস।

মেঘলাঃ তোকে মুখ দেখাব না বলেছি না।

আকাশঃ বেশ তো হাত দিয়ে মুখ ঢেকে রাখ তাহলেই তো হল লুকিয়ে থাকার দরকার কি…??যতসব উল্টা পাল্টা চিন্তা ভাবনা। মুখ দেখলে কি ফোসকা পড়বে নাকি ফাউল বের হ বলছি।

মেঘলা বের হচ্ছে না দেখে আকাশ নিজেই মেঘলাকে বের করে আনল।

মেঘলা অভিমানি সুরে বলতে লাগল ছাড় আমাকে আমি তো দুশ্চরিত্র খারাপ মেয়ে তাহলে আমার কাছে এসেছিস কেন?

আকাশঃ হয়েছে অনেক রাগ দেখিয়েছিস আর দেখাতে হবে না এখন খেয়ে নে।

মেঘলাঃ খাব না….

আকাশঃ আচ্ছা বাবা সরি আর এমন বলব না খেয়ে নে প্লিজ।

মেঘলাঃ খাব না বলছি না…

আকাশঃ খেলে বাচ্চা এনে দিব তবুও খেয়ে নে।

মেঘলাঃ সত্যি দিবি তো…??

আকাশ মেঘলার মুখে খাবার দিতে দিতে বলল হুম সত্যি দিব।এবার আমাকে বল তো এই বাচ্চার ভুত তোর মাথায় কে ঢুকিয়েছে..??

মেঘলাঃ কেউ না (খেতে খেতে)

আকাশঃ মিথ্যা বলবি না।

মেঘলাঃ মুভি দেখেছি।

আকাশঃ😳😳

মেঘলাঃ কি হল এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন

আকাশঃনা মানে পাগল কত প্রকার হতে পারে তোকে না দেখলে জানতে পারতাম না। মুভি থেকে বাচ্চা নেওয়ার শখ ভাবা যায় এগুলা?

মেঘলাঃ বাজে কথা বলবি না

আকাশঃ আচ্ছা বলব না তা মুভিতে বাচ্চাটা কি খুব কিউট ছিল নাকি?

মেঘলাঃ বাচ্চা দিবি না তাই না?

আকাশঃ আরে মানা করলাম কখন দিব দিব তুই খাওয়া শেষ করলে আমরা এতিমখানায় গিয়ে মুভির বাচ্চাটার চেয়েও কিউট একটা বাচ্চা নিয়ে আসব ঠিক আছে..??তোর যতদিন ইচ্ছা তোর কাছে রাখিস আমি বন্ডে সাইন করে নিয়ে আসব।

মেঘলাঃ কি বললি তুই..??( রাগে)

আকাশঃ আচ্ছা বাবা ফিরত দিতে হবে না একেবারে দত্তক নিয়ে আসব ঠিক আছে?? মুভির মত বাচ্চা পেলেই তো হল নাকি?

মেঘলাঃ মুভিতে কোন বাচ্চা ছিল না.?? আমি এতিম খানার বাচ্চা চাই না আমার তোর বাচ্চা চাই।

আকাশঃ উফফ আবার..?? কত চিন্তা করে বাচ্চার ব্যবস্থা করলার সেটাও পছন্দ হল না?মেঘলা তুই কি কখনো বড় হবি না?
ধর তোর বাচ্চা হল তুই তাকে মানুষ করতে পারবি?তোকে সামলাতে গিয়েই ত আমি হাঁপিয়ে যাই তুই বাচ্চা মানুষ করবি কি করে?
এখনী কিসের বাচ্চা তোর কি নিজের কোন ভবিষ্যৎ নেই ক্যারিয়ার নেই…??

মেঘলাঃ আমার ক্যারিয়ারের দরকার নেই চাই না উজ্জল ভবিষ্যৎ আমি কিছু চাই না ভাইয়া আমি শুধু তোকে চাই।

আকাশঃ আমি তো আছিই।

মেঘলাঃ কতদিন থাকবি..??আমার পরিক্ষার আরো অনেক দেড়ি ততদিনে যদি তোর মত বদলে যায়…?? আমাদের ভালবাসার ত কোন ভিত্তি নেই আমাকে তুই ছুড়ে ফেলে দিলে আমার পক্ষে কথা বলার মত কেউ নেই একটা বাচ্চা থাকলে অন্তত ওর জন্য হলেও তুই আমায় ছেড়ে যাবি না।আমি জানি তোকে এখন বিয়ে করতে বললে তুই রাজি হবি না কারন তুই বড় মাকে দেওয়া কথার খেলাপ করবি না।তাই চেয়েছিলাম যদি এক্সিডেন্টলি বাচ্চা হয়ে যায় তাহলে সবাই আমাদের বিয়ে দিতে বাধ্য হত।তুই ও।

আকাশঃ তারমানে তুই আমাকে সন্দেহ করে এসব করতে চায়ছিস..??তোর ধারনা আমি তোকে ছেড়ে দিব এই তো?

মেঘলাঃ না আমি তোকে সন্দেহ করি না কিন্তু আমি শুনেছি নিলিমা আপুকে বড় মা বলছিল যেভাবেই হোক তোর সাথে বিয়ে দিবে সোজা ভাবে না হলে বাঁকা ভাবে দিবে।তাই যেন আপু এখন সিনক্রিয়েট না করে ফিরে যায় বড় মা কথা দিয়েছ্র নিলমা আপুকে তাড়াতাড়ি ফিরিয়ে আনবে।

আকাশ মুচকি মুচকি হাসছে,

মেঘলাঃ তুই হাসছিস..??

আকাশঃ কই না তো… তারপর কি হল?

মেঘলাঃ ধর বড় মা যদি অসুস্থ হয়ে যায় আর তোকে অনুরোধ করে নিলিমা আপুকে বিয়ে করতে তুই কি বড় মা কে ফিরিয়ে দিতে পারবি..??

এবার আকাশের মুখের হাসি টা মলিন হয়ে গেল।

মেঘলাঃ কিরে বল না…???আমি জানি তুই পারবি না কারন তুই বড় মাকে ভালবাসিস বাসার সবাই তোকে চাপ দিবে তুই বাধ্য হবি বিয়েতে রাজি হতে। আমাকে শান্তনা দিবি নানাভাবে বুঝানোর চেষ্টা করবি।

মেঘলার কথা শেষ হওয়ার আগেই আকাশ মেঘলাকে জড়িয়ে ধরল।

আকাশঃ চুপ কর মেঘলা…

মেঘলাঃ আমি তোকে হারাতে চাই না ভাইয়া।আমি মুভিতে দেখেছি মা অসুস্থ হয়ে ছেলেকে ইমোশনালি ব্লেকমেইল করে। আমি বলছি না বড় মা এমন টা করবে কিন্তু নিলিমা আপুকে যেহেতু কথা দিয়েছে…

আকাশঃ তাই ভয় পেয়েছিস এই তো?

মেঘলাঃ হুম😔

আকাশ কিছু না বলে উঠে চলে গেল।

মেঘলাঃ বড় মার কথা এমন বল্লাম তাই রাগ করেছিস তাই না? আমি ত বলতে চাই নি তুই জোর করলি।

কিছুক্ষন পর,
আকাশ শার্টের হাত ফোল্ড করতে করতে মেঘলার ঘরে আসল।

মেঘলা শুয়ে শুয়ে কাঁদছে…

আকাশঃ আজব তো কাঁদছিস কেন..??

মেঘলা আকাশের গলা শুনে তাড়াতাড়ি চোখ মুছে উঠে বসল।

আকাশঃ গাড়িতে অপেক্ষা করছি ড্রেস চেঞ্জ করে আয়।

মেঘলাঃ এত রাতে কোথায় যাব..??

আকাশঃ একটু ঘুরে আসি আর তোর মাথা থেকে এসব উল্টাপাল্টা চিন্তা ভাবনা গুলিও দূর করে আসি… বলে আকাশ চলে গেল।

মেঘলাও কিছুক্ষন পর এসে গাড়িতে বসল

আকাশ কোন কথা বলছে না সে গভীর চিন্তায় মগ্ন

মেঘলাঃ তুই কি বেশিই রাগ করেছিস..??

মেঘলার কথায় আকাশ চমকে উঠল।
আকাশঃ কই না তো রাগ করব কেন…

কিছুক্ষন পর আকাশ মেঘলাকে নিয়ে একটা মাজার টাইপের জায়গায় গেল সেখানে একজন ইমাম সহ আকাশের কয়েকজন বন্ধু আছে।

মেঘলাঃ আমরা এখানে কেন এসেছি ভাইয়া…?? আর ইমাম সাহেব এখানে কেন।

আকাশঃ তোকে মেরে কবর দিব জানাযার জন্য ইমাম সাহেব কে এনেছি…

মেঘলা আকাশের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।

আকাশঃ ইমাম সাহেব শুরু করুন।

ইমাম সাহেবঃ মা ৭ লক্ষ ১ টা দেনমহরে আপনি আকাশ খান কে নিজের স্বামী হিসেবে গ্রহন করছেন? যদি আপনি এই বিয়েতে রাজি থাকেন তাহলে বলুন কবুল।

মেঘলা কি বলবে বুঝতে পারছে না সে হতবাক হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।

আকাশঃ তাহলে কি ধরে নিব আমাকে স্বামি হিসেবে আপনার পছন্দ হয় নি।

মেঘলা কেঁদে দিল।

আকাশ মেঘলাকে জড়িয়ে নিল।
আকাশঃ পাগলি কাঁদছিস কেন আজ হোক বা কাল বিয়ে তো হতই এখন করলে ক্ষতি কি? কিন্তু এত রাতে রেস্ট্রি পেপার পেলাম না তাই শরীয়ত মতে পবিত্র কালাম কে সাক্ষি রেখে তোকে বিয়ে করছি আজকের পর তুই আমার বউ হয়ে যাবি।

মেঘলাঃ ভাইয়া…??

আকাশঃ আর কাঁদিস না দেখে চোখ মুছ কিন্তু তুই আমায় কথা দে তুই আর পাগলামি করবি না আর এই বিয়ের ব্যাপারে কাউকে বলবি না।এমনকি নাবিল কেও না।এটা শুধুমাত্র তোর ভয় আর সন্দেহ দূর করার জন্য তোর পরিক্ষার পর আবার ধুমধাম করে আমাদের বিয়ে হবে।

মেঘলাঃ ঠিক আছে বলব না।

ইমাম সাহেব আকাশের বন্ধুদের সাক্ষি রেখে আকাশ আর মেঘকা ২ জনের বিয়ে পড়িয়ে দিলেন।

আকাশ মেঘলাকে নিয়ে ফিরে আসছিল।

আকাশঃ আর কোন ভয় আছে..??

মেঘলাঃ উহু…☺

আকাশঃ এখন অবশ্য বাচ্চা নিতে আমার কোন আপত্তি নেই।আপনি চাইলে আমাদের ফুটফুটে একটা মেয়ে হতেই পারে।ইনফেক্ট আমার একটা কিউট মেয়ে হবে সেটা আমার অনেকদিনের ইচ্ছে.. তবে আগেই বলে দিচ্ছি মেয়ে কিন্তু আমার মত দেখতে হবে তোর মত না।

মেঘলা লজ্জায় মুখ লুকিয়ে বলল ভাইয়া…!!

আকাশঃ হেই কিসব বলছিস..?? এখনো আমি তোর ভাইয়া…??

মেঘলা আকাশে নাক টেনে বলল হুম তোকে আমি সারাজীবন ভাইয়াই ডাকব।

আকাশঃ তাহলে কি আমার বাচ্চারা আমাকে মামা ডাকবে…

মেঘলাঃ সে আমি কি জানি..কিন্তু বাচ্চারা মানে কি আমাদের কয়টা বাচ্চা হবে।

আকাশঃ এই ধর ১০,১২ টা তো অবশ্যই।

মেঘলাঃ কি…??

আকাশঃ আমার বউ এর বাচ্চার এত শখ যে বিয়ের আগেই বাচ্চা বাচ্চা করে তাই কি করব বল আমার ইচ্ছা না থাকলেও নিতে হবে।

মেঘলাঃ ভাল হচ্ছে না কিন্তু…

আকাশঃ হা হা হা…থাক আর লজ্জা পেতে হবে না।

মেঘলাঃ জানিস তুই না অনেক ভাল।

আকাশঃ হ্যা এখন তো ভালই যখন কথা শুনি না তখনি হারামি বজ্জাত ফাউল আরো কি কি জানি হয়ে যাই তাই না..??

মেঘলাঃ হুম তুই হারামি বলেই তো এত ভালবাসি তোকে আই লাভ ইউ ভাইয়া…

আকাশঃ আই লাভ ইউ টু পাগলি।

চলবে…!!!

Leave a Comment